somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দুখিনী মা বিমলা

০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৭ রাত ৯:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রতীকী ছবি গুগল সার্চ

ছেলেটাকে বুকে আগ্লেই হাসেন দুখিনী মা,অথচ
কতশত কষ্টবোধ অন্তরে লুকানো বিমলা'র!
সমাজের অবহেলা আর নির্মম বাস্তবতার সাথে
যুদ্ধ করেই যে চলতে হয় তার প্রতিনিয়ত!
যুদ্ধ করতে হয় বর্ষা রাতে ঘুম থেকে জেগে
ছোট্ট ছনের ঘরের চুয়ে পড়া বৃষ্টির সাথে-
পানি যেন না লাগে গায় আদরের ছোট্ট খোকার।
পেটে ক্ষুধা ছেড়া কাঁথা সমাজের দুঃসহ বৈষম্য
নিয়মিত কঠিন বাস্তবতার নির্মম আঘাতেও
ছেলের মুখ চেয়ে হেসে ওঠেন 'দুখিনী মা বিমলা'!
হয়তো বুনেন মনে নতুন কোন স্বপ্ন-বেঁচে থাকার।
এভাবেই যায়দিন স্বামীপরিত্যক্তা-হয়ে অবহেলিত।

এ'বাড়ি ও'বাড়ি কত খাটুনি খাটতে হয় সারাদিন!
ছেলেকে খাওয়াতে হবে, 
ভালো শার্ট-প্যান্ট দিতে হবে কিনে,
বাড়ি বাড়ি করে জ্বি-এর কাজ কতটুকুই তহবিল!
কতদিন নিজে না'খেয়ে তুলে দেয় ভাত ছেলের মুখে,
ভাবে, খোকা একদিন বড় হবে,ঘুচবে সকল আঁধার।।

কত স্বপ্ন আর দারিদ্র্যতার নির্মম কষাঘাতে
পেরিয়ে যায় সময়- দিন মাস বছরের পর বছর।
বেড়ে উঠে দিনদিন আদরের ছোট্ট ছেলে-
পরের বাড়ি কাজ করে- টাকা এনে বলে মা-ধর;
কত আনন্দ তখন-
ফেলে আসা কষ্টের সমাহার বিমলার চোখে মুখে,
অনেক সুখ অনুভবে, লায়েক হয়েছে খোকা তার!

দূর গাঁয়ে কাজ দেয় ছেলেকে,
শুনে দুষ্টবুদ্ধি হারিয়ে বোধ-বিচার,
অধিক অর্থ লোভেই শুনেছি!

একমাত্র ছেলের দূর প্রবাস বিরহে পুড়ায় মা'কে।
বুকে পাথর চাঁপা কষ্ট রেখেও ভাবে-দূরেই থাক!
শূন্যতা না হয় আমাকেই ঘিরে থাকুক দিনরাত,
তাতেও যে হই সুখী- কষ্টই তো জীবন আমার!
বারে বারে আসা দীর্ঘশ্বাস চেপে রাখে বিমলা!
কিছুদিন পরপর হতে থাকে মা-ছেলের সাক্ষাত।

ভালোই চলছিল সব,
বিমলার মুখে ফুটেছিল হাসি;
বিপত্তির শুরু যখন বউ নিয়ে ছেলে এল বাড়ি!
দিনরাত ঝগড়াটে বউয়ের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে
সাধ জাগে বড়ই দেখবার- ছেলের মুখ খুশিখুশি।

তাই কি আর হয় দেখা...!
মায়ের মলিন মুখ, বউয়ের খুচখুচ অত্যাচারে-
বিষিত ছেলের মন-জীবন যেন বড়ই বিতৃষ্ণার!

এমনি করেই পেরোয় বছর কয়েক...!
সব কষ্ট যন্ত্রণা ভুলে যান
যখন ছেলের ঘরে আসে নতুন সন্তান।

নাতি সুখে তৃপ্ত বিমলা আঁকে কতনা সুখের ছবি!
সারাদিন খেলা করে নাতি নিয়ে-ঘুরে বাড়ি বাড়ি।

কিছুদিন পর সেই সুখটুকুনও হারাতেই হয়...!
দুঃখের শ্রাবণে ভাসে বিমলার আঁকা সুখস্মৃতি।
নাতি নাই, ছেলে নাই
নাই তার চোখে ঘুম,
কষ্টের ভারে ক্লান্ত হৃদয়-
দুশ্চিন্তা জমতে থাকে ধীরেধীরে
নয়ন-আকাশে জমে ওঠে মেঘ-বারবার ঝরে বৃষ্টি;
কেমন আছে নাতি-ছেলে!
শহরবাসী সন্তান-বিরহে দুঃসহ যন্ত্রণায় হয় ক্ষয়।

পথের দিকেই চেয়ে চেয়ে ভাসে দুখিনী-মা'র বুক!
ছেলে তার আসবে কবে ফিরে বাড়ি-সেই প্রতীক্ষা,
ঘুমহীন হয় রাতভোর, খাবারদাবারে অমনোযোগ;
দিনদিন শুকিয়ে যাচ্ছে শরীর,বেড়ে চলেছে অসুখ।

অবশেষ একদিন সকল অপেক্ষার হলো অবসান;
দুনিয়াজোড়া আঁধারে ঢেকে ফিরে এসেছে সন্তান,
জীবনভর কষ্টের সাথে যুদ্ধজয়ী দুখিনী মায়ের
সেদিন হয়েছিল নির্মমভাবে পরাজয়....!
আশা ভরসার সমস্ত ধার হয়েছিল বন্ধ,সময়ের
নির্মমতায়-আত্মচিৎকারে কাঁপছিল বাতাসের বুক
জনমদুখিনী মা দেখছিল চির-ঘুমন্ত ছেলের মুখ;
স্রষ্টা-বুকেও হয়তো জমেছিল সংশয়...!!

একমাত্র সন্তান শোকেজরজর বিমলা'র অন্তর,
দিনরাত কাঁদেন- সামনেই রাখেন ছেলের কবর;
সমাজের সহযোগিতায় দত্তক দেয়া হয় নাতিন,
একা নিঃস্ব সেই দুখিনী মা'র বিমর্ষ-বদন মলিন।
স্বামীপুত্র হারা নিঃশেষ মা কতই আর দুঃখ সয়!
বিদায়ের আগে হল'না কভু তার পৃথিবী সুখময়।

কতনা অতৃপ্ত আত্মা নিয়ে ছেড়ে গেছেন দুনিয়া;
আজ ভাবি! ভাসাই দুচোখ তোমাকে মা স্মরিয়া।


'বিমলা' আমার গোষ্ঠীবর্গ। আমার আম্মা 'পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর'-এর ভিজিটর পোষ্টে চাকরি করতেন। সেই সুবাদে বিমলা জ্বি(ফুফু)কে হয়তো অনেক মা ডেকেছি। তার আদরে শান্ত হয়েছি না জানি কতদিন! আমাদের সংসারে বিমলা জ্বি বেশিরভাগ সময় কাজ করতেন। গ্রামের গৃহস্থালি কাজকর্ম আম্মা একা একা সামলে উঠতে পারতেন না। তাই বিমলা জ্বি-এর সহযোগিতা মনে রাখার মতো। সে(বিমলা জ্বি) তার জীবনে সুখের মুখ দেখতেই পারেনি। আমার যতদূর মনে আছে সে এক সন্তান নিয়ে ভাই ভাবিদের যন্ত্রণাময় কথা সহ্য করে নিজের বাপের ভিটেবাড়িতেই সামান্য একটা ছোনের ঘরেই জীবন পার করেছেন। ফুফুটি আমার শেষ পর্যন্ত বড়ই কষ্ট আর দুঃসহ যন্ত্রণা বুকে নিয়ে পৃথিবী ছাড়েন একমাত্র ছেলে হারানো শোকেজরজর হয়ে। আমার কেন জানি বারবার মনে পড়ে সেই ফুফুকে। মাঝেমধ্যে নীরব শ্রাবণধারাও বয়ে যায়....। তাই ভাবলাম স্মরণীয় করে রাখি জনমদুখিনী সেই মা'কে। একটা গল্প লেখার ইচ্ছে আছে আমার এই ফুফুকে নিয়ে, অনেকটা লিখেছিও। হয়তো কোনদিন পোষ্ট আকারে প্রকাশ করে রাখবো আমার ব্লগে।
আল্লাহ্ তা'আলা বিমলা ফুফুকে বেহেশত নসিব করুক এমনটাই প্রত্যাশা রাখি সবসময়।

সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৭ রাত ৯:০৪
২২টি মন্তব্য ২২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×