somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার দেখা জার্মান এবং জার্মানী

১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



(Parliament--of Germany)

আমি আজ প্রায় পাঁচ বছর জার্মানীতে। অনেক দিনই ভেবেছি কিছু একটা লিখি কিন্তু বসার সুযোগ পাচ্ছিলাম না। আজ লিখলাম আমার কিছু অভিজ্ঞতা। প্রথম দিকটায় খুব একটা ভাল লাগাতে পারিনি কারন খাবারে'র সমস্যা আমাকে খুব ভুগিয়েছে। কোন কিছুতেই বাংলাদেশের খাবারের স্বাদ পাচ্ছিলাম না, জেদ ধরলাম আমি জার্মানীতে থাকবই না। এখানে ফ্রোজেন মাছ আমি এখনও খেতে পারিনা শুধু ইলিশ মাছ ছাড়া। আর অন্য সব খাবারে এখন অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছি ।বিশেষ করে সবজি ও ফল। তাছাড়া বার্লিনে বেশ কিছু বাঙ্গালী দোকান আছে ।বাংলাদেশের সব কিছুই এখানে পাওয়া যায় শুধু মাংস ছাড়া। খুব বেশী বাঙ্গালী এখানে নাই । আর আবহাওয়া ও বিরক্তিকর ।শীত কালে প্রচন্ড ঠান্ডা।

জার্মানীতে তুর্কীদের রাজত্ব যেমন লন্ডনে বাঙ্গালীদের রাজত্ব। তারপর আরাবিয়ান। আমার সাথে বেশ কিছু জার্মানদের পরিচয় হওয়ার সৌভাগ্য হয়েছে। বেশ আন্তরিক ওরা। নিজের ভাষার প্রতি ওদের অগাদ শ্রদ্ধা ।ভুল করেও ওরা নিজেদের ভাষার মধ্যে অন্য কোন ভাষার মিশ্রন ঘটায়না। ওরা ইংরেজী জানলেও বলতে চায় না। আমি যদি জার্মান ভাষা ভুলভাবেও ব্যবহার করি তাতেও ওরা খুশি কিন্তু আমি যত শুদ্ধ ইংরেজি বলিনা কেন ওরা খুশি হয়ে ইংরেজিতে কথা বলার জন্য আগ্রহ দেখায় না। আইনে'র ব্যপারে, নিয়ম কানুনে'র ব্যপারে ওরা অনেক সজাগ। আমি দেখিনি কখনও ওরা রাস্তায় রেড সিগনালে রাস্তা পার হয়। রাস্তায় কোন গাড়ি নাই কিন্তু রেড সিগনাল আছে তবুও ওরা গ্রীন সিগনালের জন্য দাঁড়িয়ে থাকে। কোন জার্মান যদি বলে ''আমি দশটায় আসব '',সে কিন্তু ঠিক দশটায় আসবে ,পাঁচ মিনিট আগে পরে কখনও করবেনা কিন্তু যদি কোন সমস্যা হয় তাহলে ফোন করে জানিয়ে দেবে।

ওরা নিজেদের বলে ডয়েচে এবং নিজেদের দেশকে বলে ডয়েচল্যাণ্ড । জার্মানী একটি সোসাল কান্ট্রি। পৃথিবীর অন্য কোন দেশে এতটা সামাজিক নিরাপত্তা আছে কিনা আমি জানিনা। এদেশ কোন বিদেশী যদি জার্মান সিটিজেন বা পারমানেন্ট রেসিডেন্ট হয় তাহলে তার জন্য সকল সুযোগ সুবিধা উন্মুক্ত। তাদের কোন সন্তান যদি জার্মানী'র মাটিতে জন্মায় তাহলে ঐ সন্তান আঠারো বছর পর্যন্ত প্রতি মাসে বেশ ভাল একটা এমাউন্ট পেয়ে থাকে। তারপর তার সকল শিক্ষার যাবতীয় খরচ সরকার বহন করে। উচ্চ শিক্ষার জন্য কোন লোন নিতে হয়না যা পৃথিবীর অনেক উন্নত দেশে করতে হয়। যদি কারো চাকুরী নাই তাহলে সেও বাসা ভাড়া থেকে শুরু করে ভরনপোষনের পুরো সহযোগিতা পেয়ে থাকে এবং তার কর্মসংস্থানের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করে। কোথায় জব পাওয়া যাবে সকল তথ্য তারা দিয়ে থাকে।

টিকেট ছাড়া কেউ আন্ডার গ্রাউন্ড ট্রেন বা বাসে চড়েনা। চেকার সব সময় চেক করেনা কিন্তু যদি চেক করে কাউকে পায় টিকেট ছাড়া তাহলে দুই ইউরো টিকিটের জন্য সত্তর ইউরো জরিমানা দিতে হয়। যদি কেউ এই জরিমানা সময়মত শোধ না করে তাহলে তা সুদে আসলে বাড়তেই থাকে এবং তা না দিয়ে কারো নিস্তার নাই। কোন না কোন ভাবে ওরা নিয়ে নেয় ।ব্যাংক একাউন্ট বন্ধ করে দেয় বা ওকিল নোটিশ পাঠায়। শুধু টিকিট জরিমানা নয় সকল ধরনের জরিমানা'র ক্ষেত্রেই এমন হয় ।যদি কেউ জব করে তাহলে ট্যাক্স দিতে হয় সরকারকে। অনেকে ট্যাক্স ফাঁকি দিয়ে কাজ করে কিন্তু ধরা পড়লে জামিন নাই।

জার্মানীরা নিজের কাজ নিজেরাই করতে পছন্দ করে ।যে কোন কাজ ওরা মনের আনন্দে করে। কোন লজ্জা বা সংকোচ নাই। শিক্ষার কোন অহমিকা নাই। যখন যা পায় তাই করে। ওরা ব্রেড জাতীয় খাবার মানে বেকিং খাবারগুলো বেশী পছন্দ করে সাথে বাটার ,চিজ ,জ্যাম , জ্যালী ,সালাদ ,ফল। রাতের খাবার ওরা সন্ধ্যা ৬ টার মধ্যে শেষ করে ,বেশীর ভাগ জার্মান'ই তা করে। ওরা বিবাহ সম্পর্কটাকে খুব একটা গুরুত্ব দেয় না। আঠারো বছর পর্যন্ত ওরা বাবা মা'র সাথে থাকে তারপর আলাদা থাকে কিন্তু যদি কেউ আঠারো বছরের পর বাবা মা'র সাথে থাকে তাহলে তাকে বাসা ভাড়া এবং খাবারের খরচ দিতে হয়। সে জব করলে জবের বেতন থেকে শেয়ার করে আর জব না থাকলে সরকার পে করে।

এখানে বাবা -মা'রা সন্তানের গায়ে হাত তোলে না। যদি কোন বাবা মা তার সন্তানের গায়ে হাত তোলে এবং সেই সন্তান অভিযোগ করে তাহলে বাবা মাকে আইনের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়। এমনকি বাবা মা থেকে অনেক সন্তানকে নিয়ে শিশুকেন্দ্রে রাখা হয়। কোন সন্তান যদি আঠারো বছরের আগে বলে সে বাবা মার সাথে থাকতে চায়না এবং উপযুক্ত কারন বা তার অভিযোগ সত্যি প্রমানিত হলে সে বাবা মা থেকে আলাদা শিশু বা কিশোর আবাসন কেন্দ্রগুলোতে থাকতে পারে।

জার্মান'রা সঞ্চয়ের প্রতি ওরা আগ্রহী না। প্রতি বছর ওরা জুন থেকে জুলাই মাসে তিন সপ্তাহের জন্য বড় একটা ছুটি ভোগ করে। তখন পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ওরা ভ্রমন করে ছুটি উপভোগ করে। শনি ও রবি দুই দিন সাপ্তাহিক ছুটি। এছাড়াও শীতকালীন বন্ধসহ আরো কিছু সরকারী বন্ধ আছে

এখানে ট্যাক্স স্বাভাবিক ভাবে ৪০% দিতে হয় আর জবের ক্ষেত্রে ট্যাক্সটাও ক্যটাগরি ভেদে পার্থক্য হয়। অনেক চাকুরীজিবী ৫৫% -৬০% ও ট্যক্স দিতে বাধ্য। আর ১০০% ট্যাক্স দিয়ে কাজ করলে চলা খুব কষ্ট। কারন খরচ প্রচুর। আর তাই তুর্কী বা এ্যরাবিয়ানরা প্রচুর বাচ্চা নেয় --কাজ করে না বসে বসে সরকারী পয়সা খায় । এই হল অবস্থা।

আমি শুনেছি মা সন্তান রেস্টুরেন্টে খেতে গেলে মা নিজের বিল দেয় ,সন্তান তার নিজের বিল দেয়। প্রতি রবিবার বাবা মা'র সাথে সন্তান দেখা করে। বৃদ্ধ অবস্থায় খুশি হয়েই ওরা বৃদ্ধাশ্রমে যায় অন্যের বোঝা বা বিরক্তির কারন হতে চায় না।

এখানে হেলথ ইন্সুরেন্স বাধ্যতামূলক তাই যত কঠিন রোগই হোক না কেন সেটা রোগীকে বহন করতে হয় না। এখানে যাতায়াত ব্যবস্থা খুবই ভাল। আন্ডার গ্রাউন্ড ট্রেন ,বাস ,ট্যাক্সি,প্রাইভেটকার ইত্যাদি বার্লিন শহরে ব্যবহৃত যানবাহন। আর যেদিকে তাকাই সেদিকে শুধু সবুজ আর সবুজ আর সবুজ। কত পার্ক বার্লিন শহরে আমার জানা নাই। আমার বাসার পাশেই পাঁচটা পার্ক। আর বার্লিনে দেখার মত আছে বার্লিনের দেয়াল ,টিভি সেণ্টার ,পার্লামেন্ট ,বার্লিন গেইট ,স্প্রে নদী এবং বেশ কিছু মিউজিয়াম এবং অসংখ্যা পার্ক। জার্মানীর অন্যান্য শহরের থেকে বার্লিনে সব কিছুই সস্তা।

জার্মান ভাষা না জানলে জার্মানীতে চলা ফেরা ,চাকুরী প্রায় অসম্ভব
। অনেকে স্টুডেন্ট ভাষা না জেনে এসে বিপদে পড়েন কারন পার্ট টাইম জবগুলোও জার্মান না জানলে প্রায় অসম্ভব। কারন ভাষা শিখতে শিখতেই প্রায় দুই বছর লেগে যায়। দেশ থেকে ভাষাটা শিখে আসলে ভাল।

আর কি! নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করলাম। একান্তই আমি আমার চোখে যতটা দেখেছি ,কাজ করতে গিয়ে যতটা উপলব্দি করেছি এবং পরিচিত জার্মানদের কাছ থেকে যতটা শুনেছি তারই একটা অবকাঠামো দাঁড় করাতে চেষ্টা করেছি মাত্র। আশা করি ভুল -ত্রুটি হলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টি !!!!



(Chancellors-office in Berlin)



(স্প্রে নদী --বার্লিনের বুক দিয়ে বয়ে গেছে)




(আন্ডার গ্রাউন্ড ট্রেন)



(পর্যটকদের জন্য বাস )




(পর্যটকদের জন্য রিক্সা)








(বার্লিনের প্রধান রেল ষ্টেশান--ইউরোপের যেসব ট্রেন বার্লিনে আসে সেগুলো এখানেই থামে এবং‍ ইউরোপগামী ট্রেন গুলো এখান থেকেই ছাড়ে।)





(ইউরোপা সেন্টার--ইউরোপের দেশগুলোর দোকান নিয়ে এই সেন্টারটি)





(এটা একটা ঘড়ি--কাঁচের পাত্রগুলো সাদা থেকে সবুজে স্থানান্তরিত হয়---সময়ের সাথে-

(আর আমার এই পোষ্টটি নক্ষত্র ব্লগে সৃজনশীল প্রতিযোগিতায় ২য় স্থান অধিকার করেছিল)

সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:৫৬
২০টি মন্তব্য ২০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হালহকিকত

লিখেছেন স্প্যানকড, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:১২

ছবি নেট ।

মগজে বাস করে অস্পষ্ট কিছু শব্দ
কুয়াসায় ঢাকা ভোর
মাফলারে চায়ের সদ্য লেগে থাকা লালচে দাগ
দু:খ একদম কাছের
অনেকটা রক্তের সম্পর্কের আত্মীয় ।

প্রেম... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×