somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্প; ডুবে যাই বিষের নীলে!

২২ শে নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১১:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



সেই কখন থেকেই ছোট বাচ্চাটা চিৎকার করছে। নবজাতকের আগমনে আনন্দের জোয়ার বইছে কিন্তু বাবা হবার খুশির কোন ছাপ অন্তু'র মুখে দেখা যাচ্ছেনা। সবাই অন্তুকে অভিনন্দন জানাচ্ছে, হাসপাতালের কেবিন ভরে গেছে ফুলে ফুলে। অন্তু'র খুব ইচ্ছা করছে চিৎকার করে সবাইকে বলতে -আমি বাবা হয়েছি, প্রথম সন্তানের বাবা। কিন্তু- এই “কিন্তু” শব্দটা বার বার দেয়াল হয়ে দাঁড়াচ্ছে তাদের পিতা ও পূত্রের মাঝখানে। হাসপাতেলের ধবধবে সাদা বিছানায় শুয়ে আছে তিথি, পাশেই শুইয়ে রাখা হয়েছে কচি প্রাণটাকে। ইশারায় অন্তুকে ডাকছে তিথি, অন্তু সাড়া দিয়ে তিথি'র পাশে গিয়ে বসে। ছোট্র করে তিথিকে মা হবার জন্য অভিনন্দন জানায়। নবজাতককে হাত বুলিয়ে দেয়। তিথি প্রশ্ন করে, “তোমাকে এমন দেখাচ্ছে কেন অন্তু? সব ঠিক আছেতো?”
অন্তু মাথা নেড়ে জানায় সব ঠিক আছে। আস্তে আস্তে বলে, “আমি ওঠি তিথি, আমার অফিসে একটু ঝামেলা যাচ্ছে তাই কিছুটা টেনশনে আছি। আসব আবার আগামীকাল।”

রাত ন'টা। ঢাকা শহরের রাস্তা ঘাটগুলোর কোন বিশ্রাম নেই। হাসপাতাল থেকে বের হয়ে অন্তু ভাবল একটা রিক্সা নেবে, একা একা সারা রাত রিক্সায় করে ঘুরবে কিন্তু পরক্ষণেই সিদ্ধান্ত বদলে নিল, ভাবল শুধু শুধু বেচারা রিক্সাওয়ালাকে খাটিয়ে কি লাভ! সাতপাঁচ ভেবে হাঁটারই সিদ্ধান্ত নিল। শরৎ এর আকাশ বেশ পরিষ্কার কিন্তু সোডিয়ামের বাতিগুলোর দাপটে চাঁদের আলো উপভোগ করার সাধ্য কার! সারাদিন আজ একটা বেশ ধকল গেল তিথিকে নিয়ে। যাক সব কিছু ঠিকমতই হয়েছে। পিচ্চিটা দেখতে একেবারেই তিথির মত হয়েছে। আবারও অন্তু'র ফোন বেজে উঠল। সারাদিন ধরে এই এক যন্ত্রণা, সমস্ত আত্মীয় স্বজনরা ফোন দিচ্ছে, তিথি'র ও বাচ্চা'র খবর নিচ্ছে। অন্তু ভাবল ফোনটা সুইস অফ করে দিবে কিন্তু পারলনা!

বিয়ের পাঁচ বছর পর সন্তান এল। বিয়ের এতগুলো বছর ওরা এতই পরস্পরের প্রতি প্রেমের মহিমায় উদ্ভাসিত ছিল যে তাদের সন্তান নেবার কথাটি একটিবার ও মাথায় আসেনি। তিথি একটা সরকারি ব্যাংকে চাকুরী করে আর অন্তু একটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে বেশ ভাল বেতনের একটা জব করে। বিয়ের আগে ওরা দুজনই খুলনা ইউনিভার্সিটিতে পড়তো। সেভাবেই জানাশোনা থেকে প্রেম, পরিনতিতে বিয়ে। ঢাকাতেই আছে ওরা। লেকসিটিতে অন্তু নিজের জন্য একটি ফ্ল্যাট কিনেছে ওখানেই থাকে ওরা।

হাঁটতে হাঁটতে অন্তু কখন যে বাসার সামনে পৌঁছাল টেরই পেলনা। গেটের তালা খুলে বাসায় ঢুকল কিন্তু কেন জানি সব কিছুই অচেনা লাগছে, অস্বস্তি লাগছে। মনে হচ্ছে মস্ত বড় আকাশটা বুঝি ভেঙ্গে পড়বে! কিন্তু মুখ ফুটে কাউকে সে কিছু বলতে পারছেনা। তিথি'র মুখ জ্বলজ্বল করছে মাতৃত্বের খুশিতে কিন্তু সে খুশি দেখে অন্তু'র মাথায় খুন চেপে যাচ্ছে। এইতো সেদিনের কথা, তিথিই তাকে বাবা হবার সংবাদটি দিয়েছিল। বাসায় খুব বড়সড় একটা পার্টি হয়েছিল। অন্তু ও তিথির সব কাছের বন্ধুরা এসেছিল। অন্তু তিথিকে অবশ্য বলেছিল, দেখো তিথি এসব না করলেই কি নয়! তিথি বলেছিল, “কেন, করলে কি সমস্যা!” অন্তু আর কিছু বলেনি।

মাঝে মাঝে অন্তু'র বেশ ভাবনা হয় তিথিকে নিয়ে। বয়স ত্রিশের কোঠা পেরিয়েছে অথচ একফোঁটা বয়সের ছাপও নেই। যেখানেই যায় তিথিই সবার মধ্যমনি হয়ে উঠে। এতে অন্তুর কোন ক্ষোভ নেই, হিংসাও নেই কিন্তু মাঝে মাঝে কতগুলো লোলুপ চোখ মনে হয় তিথিকে গিলে খাবে -এই দৃশ্যগুলো অন্তুকে বড় পীড়া দেয়, সহ্য করতে পারেনা। কিন্তু তিথিকে সে জানে বেশ ভালই জানে। তিথিকে কোনদিন সে বলেনি, কোন ব্যাপারেই বাঁধা দেয়নি। কিন্তু তিথি কি সে সুযোগটা নিতে পারে না? না কক্ষনোইনা---এমনটাই অন্তুর বিশ্বাস।

বাসায় এসে শাওয়ার নিতে ইচ্ছা করলনা অন্তু'র। হাতে রিপোর্টটি নিয়ে বসে আছে। বার বার দেখছে কিন্তু নিজের মনটাকে কোনভাবেই প্রবোধ দিতে পারছেনা। ভাবছে কি করবে! কিভাবে শুরু করবে!

মায়ের গলা শোনা গেল। “কিরে খাবিনা? আমি খাবার দিচ্ছি।”
অন্তু বলে, না মা ক্ষুধা নাই।” পরক্ষণেই মা প্রশ্ন করলেন, “তিথি কেমন আছে, দাদা ভাই কেমন আছে? তিথি'র জন্য খুব কষ্ট হচ্ছে, কি ধকলটাই না গেল মেয়েটার উপর দিয়ে! আগামী কাল সকাল ভোরেই আমাকে হাসপাতালে রেখে আসিস।”
অন্তু বলল, আজ সারা দিন ওখানেইত ছিলে, তিথি'র জন্য এত খারাপ লাগার কি আছে? মা ছেলে দুজন'ই ভাল আছে। কাল যেতে চাও যেও কোন সমস্যা নাই। এখন যাও আমি ঘুমোবো।” অন্তু'র কথায় মা কি খুব কষ্ট পাচ্ছে? নিজের মনকেই জিজ্ঞাসা করছে বার-বার। মা কোন কথা না বলে ভেতরে চলে গেল। অন্তু জানে মা শুধুই আদিখ্যাতা করছে, কোনকালেই মা তিথিকে ভালবাসেনি, ভালবাসেওনা। বিয়ের পরপর অন্তু ও তিথি খুলনায় বাবা -মা'র সাথেই ছিল একবছর। কোনোদিন পারেনি এই দুই নারীকে একসুতোয় গাঁথতে। অফিস সেরে বাসায় এলে ওদের দুজনের অভিযোগের আঙ্গুল একে অপরের দিকে। তিথিকে যতই বলি সমঝোতা কর কিন্তু না সে একই কথা, “আমাকেই কেন বল? তুমি তোমার মাকেও বল।পরের মেয়ে বলে যত সমঝোতা আমারই করতে হবে! মা বলে কি সে কোন ভুল করতে পারেনা?”
মাকে যখন বলি, “ মা নিজের মেয়ে হলে কি করতে? মেয়ে হিসেবে মেনে নাও কোন সমস্যা থাকবেনা। ভুল করলে তাকে ক্ষমা করে দাও, বুকে টেনে নাও যেটা তুমি নিজের সন্তানদের জন্য কর।” মা আমার তেলে বেগুনে জ্বলে ওঠল বলল, “বউয়ের আঁচল ধরেছিস ধর কিন্তু মাকে জ্ঞান দিতে আসবিনা, একটা বউ ঠিক করতে পারেনা স্বামী হয়েছে!”

অন্তু জানে তার মাকে, তাই চুপ হয়ে চলে যায়। কিন্তু সে অবাক হয় যখন দেখে তিথি'র সাথে বাবা'র খুব খাতির। দুজনে মিলে খুব গল্প করে, চা- কফি খায়, বাবাকে খবরের কাগজ পড়ে শুনায়। তাই অন্তু তিথি'র দোষ দিতে পারেনা, সে জানে সমস্যা মা'রই বেশী, সে চায়না তার সংসারে অন্য কেউ চাবির গোছা হাতে নিক। ক্ষমতা হারাবার ভয়ে মা তিথিকে সহ্যই করতে পারতনা।কিন্তু তাই বলে এসব নিয়ে নতুন বউয়ের সাথে অশান্তি আর কত ভাল লাগে! তিথিও মানবার বা দমবার পাত্রী নয়।

অন্তু ভাবল ওরা বউ শ্বাশুড়ি একসাথে থাকলে সংসারে দাবানল ছড়াতে বেশীদিন লাগবেনা। তাই সে ঢাকা বদলী হবার জন্য চেষ্টা শুরু করল, বেশীদিন লাগেনি ছ'মাসের মধ্যেই ওরা ঢাকায় চলে এল। বাবা মা'র জন্য অন্তুর খুব খারাপ লেগেছিল কিন্তু বাবা'ই তাকে বেশ স্বান্তনা দিয়েছে, “ দেখ তুই ভাবিসনা, সব ঠিক হয়ে যাবে। তোর মা'র শরীরে এখনও বেশ শক্তি আছে তাই সে তার সংসারে তিথিকে তার জায়গাটা ছেড়ে দিতে পারছেনা, দেখ কদিন পর শরীর নরম হয়ে আসবে তখন আর সংসারের ভার নিতে পারবেনা তখন ঠিকই তিথি'র কাছেই সব দায়-দায়িত্ব তুলে দিবে। তোদের নতুন সংসার সুন্দরভাবে শুরু কর, আর আমরা মাঝে মাঝে যাব।”
বাবা'র কথায় অন্তু বেশ জোর পেয়েছিল। মা যদিও ছেলে'র জন্য বেশ মন খারাপ করেছে এবং তিথিকেই দোষারোপ করে বলছে, “আমার ছেলেকে আমার কাছে থেকে আলাদা করে দিয়ে খুব অন্যায় করেছো সেজন্য তোমাকে কখনও মাফ করবোনা।” অথচ অন্তু জানে এখানে তিথি'র কোন হাতই ছিলনা , তিথি কোনদিন বলেনি আলাদা হবার কথা। মাকে বুঝাতে যায়নি অন্তু, “মা যা বুঝে বুঝুক।”

এতগুলো বছর ওদের আসা যাওয়া ছিল খুলনায়। কিন্তু মা আসেনি কখনও ঢাকায়, বাবা এসেছে বেশ ক'বার। কিন্তু আজ মায়ের মুখ থেকে তিথি'র জন্য আলগা আদর দেখে অন্তু'র বেশ বিরক্তই লাগছিল। অন্তু জানে তিথি'র সন্তানের আগমনে তিথি'র উপর থেকে সকল নিষেধাজ্ঞা উঠে যাবে। বংশের প্রদীপকে নিয়েই হয়ত টানাটানি শুরু হয়ে যাবে, হয়ত মা বলবে ছেলেকে খুলনায় আবার পোষ্টিং নিতে নয়ত মা নিজেই বাবাকে নিয়ে ঢাকায় চলে আসবে। এতে অন্তু'র মাথা ব্যথা নাই। যেটা নিয়ে মাথা ব্যথা সেটা নিয়েই সে এখন ভাবতে চায়।

একবছর আগেই অন্তু'র ফ্যামিলি ডাক্তার তাকে পুরো চেক আপ করেছিল। কোন সমস্যা'র জন্য নয় নিজের কৌতুহলেই। কিন্তু ডাক্তার যা বললেন তা শুনার জন্য কোনভাবেই সে প্রস্তুত ছিলনা বারে বারে ভাবছিল যদি ডাক্তার বলত, “আপনার ক্যান্সার হয়েছে” সেটাও সে মেনে নিতে পারত কিন্তু তা না বলে ডাক্তার সরাসরি বললেন, “আপনি কখনও বাবা হতে পারবেননা।” অন্তু নির্বাক হয়ে বসে রইল, ডাক্তার বেশ বুঝালেন যে, “এটা এত বড় সমস্যা নয় যে এটার জন্য জীবন থেমে থাকবে! এমন অনেক সন্তান পৃথিবীতে আছে পিতৃ-মাতৃহীন। এমন একটা সন্তানকে বুকে তুলে নিলে কি ক্ষতি! আমাদের আরও উদার হতে হবে।” এসব জ্ঞানের কথা অন্তু'র কান দিয়ে ঢুকলনা। কোন কিছু না বলেই সে ডাক্তারের চেম্বার থেকে বের হয়ে এল।

আসতে আসতে সারা রাস্তায় ভাবছে তিথিকে সে কিভাবে খবরটা দিবে! তাড়াতাড়ি দিতে পারলেই সে হালকা হত। কিন্তু তিথি যদি তাকে ছেড়ে চলে যায়! না তিথি এমন করবেইনা। তাদের ভালবাসার উপর বিশ্বাস আছে তার। কিন্তু কিভাবে শুরু করবে এটাই বুঝতে পারছিলনা। আবার ভাবছে যখন তিথি বাচ্চা নেবার পরিকল্পনা করে তখন না হয় তিথিকে সম্পূর্ণ ব্যাপারটা খুলে বলবে। এসব সাত-পাঁচ ভাবতে ভাবতে এর মধ্যে একদিন অন্তু'র অফিস থেকে জানাল তাকে সিঙ্গাপুর যেতে হবে দু'মাসের জন্য। এই খবর তিথির মনকে খারাপ করবে নিশ্চিত তাই এর চেয়ে বেশী খারাপ খবরটা অন্তু তিথিকে দিতে পারলনা।

তিথিকে রেখেই সে রওনা হয়ে গেল কিন্তু মনটা বেশ খারাপ। কারন এর আগে দু'জন দুজনকে ছেড়ে এতদিন কখনও থাকেনি। তিথি বেশ কান্না করল। দু'মাস খুব কষ্ট হয়েছে দু'জনারই। তবে অন্তু নিয়মিত যোগাযোগ রেখেছে। তিথিকে তার মা'র বাসাতে থাকতে বলেছিল তখনও কিন্তু তিথি রাজী হয়নি। দু'মাস পর অন্তু ফিরে এল কিন্তু কেমন জানি মনে হল সবকিছু! ভাবল দেশে ছিলনা বলে এমন মনে হতে পারে! আস্তে আস্তে সাহস যোগাচ্ছিল তিথিকে কথাটি বলার জন্য, এরই মধ্যে একদিন অফিস থেকে বাসায় ফিরে কলিংবেল চাপতেই তিথি দরজা খুলে তাকে জড়িয়ে ধরে চিৎকার করে বলেছিল, “ অন্তু তুমি বাবা হতে যাচ্ছ।” নিজের কানকে কোনমতেই বিশ্বাস করাতে পারছেনা অন্তু। তিথিকে বলল, “কি বলছো তোমার মাথা ঠিক আছে?” তিথি বলল, “কি যে বলনা তুমি! এই দেখ ডাক্তারের রিপোর্ট। দু'সপ্তাহ বেবী'র বয়স।” অন্তু বার বার রিপোর্টটি দেখল। সে দেশে এসেছে প্রায় একমাস। এর মধ্যেই তিথি কনসিভ করেছে।

অন্তু পরদিন ডাক্তারে'র কাছে গেল এবং বলল, “ডাক্তার সাহেব আপনি আমাকে আরও একবার পরীক্ষা করুন, আমার মনে হয় কোথাও কোন ভুল আছে।” ডাক্তার বললেন, “ এমন মনে হবার কারন?” কিন্তু অন্তু চেপে গেল ঘটনা। ডাক্তার আবার পরীক্ষা করলেন, রিপোর্ট একই এল। অন্তু দৌড়ে ছুটল অন্য ডাক্তারের কাছে --না কোন লাভ নেই, সে একই রিপোর্ট। এখন সে কি করবে ভেবে পাচ্ছেনা। কেন এমন হল, কি করে এ সম্ভব কোন মতেই সে এর হিসেব মিলাতে পারছেনা। ডাক্তারের ওখান থেকে মন খারাপ নিয়ে অফিসে গেলনা ফোন করে দিল। এর পর সারাদিন ধানমন্ডি লেকে'র পাড়ে গিয়ে বসে রইল। ফোনটা সুইচ অফ করে দিল। তার বেশ কান্না আসছে ---কিন্তু কাঁদতে পারছেনা।

সন্ধ্যার পর বাসায় রওনা হল। ড্রাইভারকে ছেড়ে দিয়েছিল তাই এখন একটা ট্যাক্সি খোঁজ করছিল এবং পেয়েও গেল। এসে বাসায় দেখে মহাআয়োজন। নিজের ও তিথি'র সকল বন্ধুরা এসেছে। তিথি বলল, “তোমাকে সারাদিন ফোন দিয়েই পাচ্ছিনা। অফিসে ফোন দিলাম ওরা বলল তুমি অফিসের বাইরে আছ কাজ নিয়ে। কিন্তু ফোন বন্ধ দেখে ভাবলাম চার্জ নাই। আর তোমাকে আরও একটা সারপ্রাইজ দিব বলে সবাইকে ডেকেছি।” অন্তু'র ভাল লাগেনি তিথি'র এই আয়োজন। তিথি'র সারপ্রাইজের চাপে তার দম বন্ধ হয়ে আসছে। পার্টি'র সবাইকে শরীর ভালনা এই অজুহাতে বেডরুমে গিয়ে শুয়ে পড়ল। তিথিকে বলল, “টেনশন করার দরকার নেই। তুমি থাক সবার সাথে।”

এভাবেই দিন যাচ্ছে। তিথিও অফিস নিয়ে ব্যস্ত থাকে তাই অন্তু'র এই পরিবর্তন খুব একটা খেয়াল করছেনা। এর মধ্যে অন্তুও নিজেকে ব্যস্ততার মাঝে ডুবিয়ে দিয়েছে, বিদেশে দু'তিনটা ট্যুর করেছে।প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ট্যুর করছে, আর মাঝে মাঝে ঢাকায় থাকলেও হোটেলে গিয়ে থকেছে।এই ন'মাসে সে ত্রিশ দিন বাসায় ছিল কিনা সেটাই সন্দেহ। এনিয়ে তিথি'র বেশ অভিযোগ, সে বলে, “স্বামীদের এই সময়েই স্ত্রীদের পাশে থাকা খুব জরুরী আর এই সময়ে তোমার অফিস থেকে তোমাকে ট্যুরে পাঠায়। ছেড়ে দাও এমন চাকুরী।” অন্তু বল, “কি করব বল সুযোগতো বারবার আসেনা। তুমি বরং তোমার মা'র কাছে গিয়ে না হয় থাক এই সময়টা। তোমার খেয়াল রাখার কেউত থাকা চাই।” কিন্তু তিথি রাজী হয়না, অন্তু জানে তিথি কখনও রাজী হবেনা। তবুও বলার জন্য বলা।

অন্তু এই নিয়ে কোন প্রশ্ন করেনি তিথিকে। সে যে কিছু জানে সেটা কিছু বুঝতেই দেয়নি। ভাবছে যাক তিথি মা হবার সুযোগ থেকে বঞ্চিত থাকবে কেন? কিন্তু কে সে ভাগ্যবান তার জানতে একবারও ইচ্ছা হলনা। তার অনুপস্থিতিতে সে কোনদিন অনুসন্ধান করতে যায়নি তিথি কি করে, কার সাথে মেশে! এমনকি তিথি'র মোবাইলটাও খুলে দেখনি কোনদিন। সে জানতে চায়না, কোন কিছুই জানতে চায়না।

এই দিনটার অপেক্ষায় ছিল অন্তু যেদিনটা তিথি মা হবে। আজ সে দিনটাকে উপভোগও করল সে। ভাবল এখন তিথিকে তার পুরুস্কার দেয়া যায়। রাতে বসে একটা চিঠি লিখল অন্তু। কাল এটা তিথিকে পাঠাবে। নিজের ফ্ল্যাট'টা তিথি'র বাচ্চাটিকে দিয়ে গেল। আর তার যত কথা যত প্রশ্ন ছিল সবই লিখে গেল চিঠিতে। তিথি যা বুঝার বুঝুক, তাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ অন্তু দেবেনা এটাই তিথি'র শাস্তি।

সকাল দশ'টা বাজে। অন্তুকে বহনকারী প্লেনটি দু'ঘন্টা পর লণ্ডনের উদ্দেশ্যে যাত্রা করবে। অন্তু শেষ বারের মত দেশকে বিদায় বলল কারন সে জানেনা সে আর কখনও ফিরবে কিনা-----!
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১১:১০
৩৫টি মন্তব্য ৩৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×