মুসলিম সমাজে প্রচলিত শিরকী আক্বীদা ও বিদআতী রসম-রেওয়াজ সমূহের অধিকাংশেরই মূল উৎস হল জাল ও যঈফ হাদীস সমূহ। আসুন জেনে রাখি সে হাদীসগুলো যেন আমাদের কেউ বিভ্রান্ত করতে না পারে।
৪১। যে ব্যক্তি হারাম পন্থায় (অন্যকে বিপদগ্রস্থ করে) সম্পদ অর্জন করল, আল্লাহ তাকে নরকে নিয়ে যাবেন। {হাদীসটি সহীহ নয়}
৪২। নবীগণ হচ্ছেন নেতা, ফকীহগণ হচ্ছেন সর্দার আর তাদের মজলিসগুলো হচ্ছে অতিরিক্ত। {হাদীসটি বানোয়াট}
৪৩। আসমান ও যমীনের মাঝে রমাযান মাস ঝুলন্ত থাকে। তাকে যাকাতুল ফিতর না করা পর্যন্ত আল্লাহর নিকট উঠিয়ে নেয়া হয় না। {হাদীসটি দুর্বল} [এটি একটি বহুল প্রচলিত হাদীস]
৪৪। যে ব্যক্তি মল-মুত্র ত্যাগ করল, অতঃপর ওযু করল না সে আমার সাথে কর্কশ আচরণ করল। যে ব্যক্তি ওযু করল, অতঃপর সালাত আদায় করল না সে আমার সাথে কর্কশ আচরণ করল। যে ব্যক্তি সালাত আদায় করল, অতঃপর আমাকে ডাকলো না, সে আমার সাথে কর্কশ আচরণ করল। যে ব্যক্তি আমাকে ডাকলো আর আমি তার ডাকে সাড়া দিলাম না তার সাথে আমি রুঢ় আচরণ করলাম। অথচ আমি রুঢ় আচরণকারী প্রতিপালক নই। {হাদীসটি জাল} [এটি একটি বহুল প্রচলিত হাদীস]
৪৫। যে ব্যক্তি বায়তুল্লাহ যিয়ারত করল, অথচ আমাকে যিয়ারত করল না, সে আমার ব্যাপারে রূঢ় আচরণ করল। {হাদীসটি জাল} [এটি একটি বহুল প্রচলিত হাদীস]
৪৬। যে ব্যক্তি আমাকে এবং আমার পিতা ইব্রাহীমকে একই বছরে যিয়ারত করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। {হাদীসটি জাল} [এটি একটি বহুল প্রচলিত হাদীস]
৪৭। যে ব্যক্তি হজ্জ করবে, অতঃপর আমার মৃত্যুর পর আমার কবর যিয়ারত করবে, সে যেন ঐ ব্যক্তির ন্যায় যে জীবদ্দশায় আমার সাথে সাক্ষাৎ করেছে। {হাদীসটি জাল} [এটি একটি বহুল প্রচলিত হাদীস]
৪৮। সন্তান তার পিতার উত্তম ভূমি। {হাদীসটির কোন ভিত্তি নেই}
৪৯। যে ব্যক্তি তার পিতা-মাতা উভয়ের কবর অথবা যে কোন একজনের কবর প্রত্যেক জুম'আর দিবসে যিয়ারত করবে, তাকে ক্ষমা করে দেয়া হবে এবং তাকে সৎ কর্মশীলদের তালিকায় লিপিবদ্ধ করা হবে। {হাদীসটি জাল} [এটি একটি বহুল প্রচলিত হাদীস]
৫০। যে ব্যক্তি তার পিতা-মাতা উভয়ের কবর প্রত্যেক জুম'আর দিবসে যিয়ারত করবে। অতঃপর তাদের উভয়ের নিকট অথবা পিতার কবরের নিকট সূরা ইয়াসিন পাঠ করবে, প্রতিটি আয়াত অথবা অক্ষরের সংখ্যার বিনিময়ে তাকে ক্ষমা করে দেয়া হবে। {হাদীসটি জাল} [এটি একটি বহুল প্রচলিত হাদীস]
৫১। বহু সন্তানের পিতা দরিদ্র সৎ মু'মিন বান্দাকে আল্লাহ ভালবাসেন। {হাদীসটি দুর্বল} [এটি একটি বহুল প্রচলিত হাদীস]
৫২। তোমাদের কারোর উপর যখন তার পশুটি বোঝা স্বরূপ হয়ে যাবে অথবা তার স্ত্রীর চরিত্র অথবা তার পরিবারের যে কোন একজনের চরিত্র মন্দ হয়ে যাবে, তখন সে যেন তার কানে আযান দেয়। {হাদীসটি দুর্বল}
৫৩। তোমরা বৃদ্ধদের ধর্মকে আঁকড়ে ধর। {হাদীসটির কোন ভিত্তি নেই}
৫৪। যখন কেউ শেষ যামানায় এসে যাবে এবং মতামতগুলো বিভিন্নরূপ হয়ে যাবে, তখন তোমরা মফস্বলবাসী ও নারীদের ধর্মকে ধারণ করবে। {হাদীসটি জাল}
৫৫। দ্রুত চলা মু'মিনের উজ্জলতাকে বিতাড়িত করে দেয়। {হাদীসটি নিতান্তই মুনকার}
৫৬। যদি নারী জাতি না থাকত, তাহলে সত্যিই সত্য আল্লাহর ইবাদাত করা হত। {হাদীসটি জাল} [এটি একটি বহুল প্রচলিত হাদীস]
৫৭। আমার উম্মতের মতভেদ রহমত স্বরূপ। {হাদীসটির কোন ভিত্তি নেই} [এটি একটি বহুল প্রচলিত হাদীস]
৫৮। আমার সাহাবীগণ নক্ষত্রের ন্যায়, তোমরা তাদের যে কোন একজনের অনুসরণ করলে পথপ্রাপ্ত হবে। {হাদীসটি জাল} [এটি একটি বহুল প্রচলিত হাদীস]
৫৯। যখনই তোমরা কিতাবুল্লাহ হতে কিছু প্রাপ্ত হবে তখনই তার উপর আমল করবে। তা ছেড়ে দিতে তোমাদের কারো ওযর চলবে না। যদি কিতাবুল্লাতে (সমাধান) না থাকে, তাহলে আমার নিকট হতে (সমাধান হিসাবে) প্রাপ্ত অতীত সুন্নাহকে গ্রহণ করতে হবে। যদি আমার পক্ষ হতে অতীত কোন সুন্নাতে সমাধান না মিলে, তাহলে আমার সাহাবীগণ যা বলেছেন তা গ্রহণ করবে। কারণ আমার সাহাবীগণ আসমানের নক্ষত্রের ন্যায়। অতএব তোমরা যে কোন জনের কথা গ্রহণ করলেই হেদায়াত প্রাপ্ত হবে। আমার সাহাবীগণের মতভেদ তোমাদের জন্য রহমত স্বরূপ। {হাদীসটি জাল} [এটি একটি বহুল প্রচলিত হাদীস]
৬০। আমার মৃত্যুর পরে যে বিষয়ে আমার সাহাবীগণ মতভেদ করেছে, সে বিষয়ে আমি আমার প্রভুকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম। তাই তিনি আমাকে অহী মারফত জানিয়েছেন, হে মুহাম্মাদ! তোমার সাথীগণ আমার নিকট আসমানের নক্ষত্রতুল্য। যাদের কতকজন অন্যজনের চেয়ে অতি উত্তম। অতএব যে ব্যক্তি তাদের মতভেদকৃত বস্তু থেকে কিছু গ্রহণ করেছে সে আমার নিকট সঠিক পথের উপরেই রয়েছে। {হাদীসটি জাল} [এটি একটি বহুল প্রচলিত হাদীস]
চলবে ...
মূলঃ আল্লামা মুহাম্মাদ নাসিরুদ্দীন আলবানী (রহঃ)
অনুবাদঃ আবূ শিফা মুহাম্মাদ আকমাল হুসাইন বিন বাদীউয্যামান৪১। যে ব্যক্তি হারাম পন্থায় (অন্যকে বিপদগ্রস্থ করে) সম্পদ অর্জন করল, আল্লাহ তাকে নরকে নিয়ে যাবেন। {হাদীসটি সহীহ নয়}
৪২। নবীগণ হচ্ছেন নেতা, ফকীহগণ হচ্ছেন সর্দার আর তাদের মজলিসগুলো হচ্ছে অতিরিক্ত। {হাদীসটি বানোয়াট}
৪৩। আসমান ও যমীনের মাঝে রমাযান মাস ঝুলন্ত থাকে। তাকে যাকাতুল ফিতর না করা পর্যন্ত আল্লাহর নিকট উঠিয়ে নেয়া হয় না। {হাদীসটি দুর্বল} [এটি একটি বহুল প্রচলিত হাদীস]
৪৪। যে ব্যক্তি মল-মুত্র ত্যাগ করল, অতঃপর ওযু করল না সে আমার সাথে কর্কশ আচরণ করল। যে ব্যক্তি ওযু করল, অতঃপর সালাত আদায় করল না সে আমার সাথে কর্কশ আচরণ করল। যে ব্যক্তি সালাত আদায় করল, অতঃপর আমাকে ডাকলো না, সে আমার সাথে কর্কশ আচরণ করল। যে ব্যক্তি আমাকে ডাকলো আর আমি তার ডাকে সাড়া দিলাম না তার সাথে আমি রুঢ় আচরণ করলাম। অথচ আমি রুঢ় আচরণকারী প্রতিপালক নই। {হাদীসটি জাল} [এটি একটি বহুল প্রচলিত হাদীস]
৪৫। যে ব্যক্তি বায়তুল্লাহ যিয়ারত করল, অথচ আমাকে যিয়ারত করল না, সে আমার ব্যাপারে রূঢ় আচরণ করল। {হাদীসটি জাল} [এটি একটি বহুল প্রচলিত হাদীস]
৪৬। যে ব্যক্তি আমাকে এবং আমার পিতা ইব্রাহীমকে একই বছরে যিয়ারত করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। {হাদীসটি জাল} [এটি একটি বহুল প্রচলিত হাদীস]
৪৭। যে ব্যক্তি হজ্জ করবে, অতঃপর আমার মৃত্যুর পর আমার কবর যিয়ারত করবে, সে যেন ঐ ব্যক্তির ন্যায় যে জীবদ্দশায় আমার সাথে সাক্ষাৎ করেছে। {হাদীসটি জাল} [এটি একটি বহুল প্রচলিত হাদীস]
৪৮। সন্তান তার পিতার উত্তম ভূমি। {হাদীসটির কোন ভিত্তি নেই}
৪৯। যে ব্যক্তি তার পিতা-মাতা উভয়ের কবর অথবা যে কোন একজনের কবর প্রত্যেক জুম'আর দিবসে যিয়ারত করবে, তাকে ক্ষমা করে দেয়া হবে এবং তাকে সৎ কর্মশীলদের তালিকায় লিপিবদ্ধ করা হবে। {হাদীসটি জাল} [এটি একটি বহুল প্রচলিত হাদীস]
৫০। যে ব্যক্তি তার পিতা-মাতা উভয়ের কবর প্রত্যেক জুম'আর দিবসে যিয়ারত করবে। অতঃপর তাদের উভয়ের নিকট অথবা পিতার কবরের নিকট সূরা ইয়াসিন পাঠ করবে, প্রতিটি আয়াত অথবা অক্ষরের সংখ্যার বিনিময়ে তাকে ক্ষমা করে দেয়া হবে। {হাদীসটি জাল} [এটি একটি বহুল প্রচলিত হাদীস]
৫১। বহু সন্তানের পিতা দরিদ্র সৎ মু'মিন বান্দাকে আল্লাহ ভালবাসেন। {হাদীসটি দুর্বল} [এটি একটি বহুল প্রচলিত হাদীস]
৫২। তোমাদের কারোর উপর যখন তার পশুটি বোঝা স্বরূপ হয়ে যাবে অথবা তার স্ত্রীর চরিত্র অথবা তার পরিবারের যে কোন একজনের চরিত্র মন্দ হয়ে যাবে, তখন সে যেন তার কানে আযান দেয়। {হাদীসটি দুর্বল}
৫৩। তোমরা বৃদ্ধদের ধর্মকে আঁকড়ে ধর। {হাদীসটির কোন ভিত্তি নেই}
৫৪। যখন কেউ শেষ যামানায় এসে যাবে এবং মতামতগুলো বিভিন্নরূপ হয়ে যাবে, তখন তোমরা মফস্বলবাসী ও নারীদের ধর্মকে ধারণ করবে। {হাদীসটি জাল}
৫৫। দ্রুত চলা মু'মিনের উজ্জলতাকে বিতাড়িত করে দেয়। {হাদীসটি নিতান্তই মুনকার}
৫৬। যদি নারী জাতি না থাকত, তাহলে সত্যিই সত্য আল্লাহর ইবাদাত করা হত। {হাদীসটি জাল} [এটি একটি বহুল প্রচলিত হাদীস]
৫৭। আমার উম্মতের মতভেদ রহমত স্বরূপ। {হাদীসটির কোন ভিত্তি নেই} [এটি একটি বহুল প্রচলিত হাদীস]
৫৮। আমার সাহাবীগণ নক্ষত্রের ন্যায়, তোমরা তাদের যে কোন একজনের অনুসরণ করলে পথপ্রাপ্ত হবে। {হাদীসটি জাল} [এটি একটি বহুল প্রচলিত হাদীস]
৫৯। যখনই তোমরা কিতাবুল্লাহ হতে কিছু প্রাপ্ত হবে তখনই তার উপর আমল করবে। তা ছেড়ে দিতে তোমাদের কারো ওযর চলবে না। যদি কিতাবুল্লাতে (সমাধান) না থাকে, তাহলে আমার নিকট হতে (সমাধান হিসাবে) প্রাপ্ত অতীত সুন্নাহকে গ্রহণ করতে হবে। যদি আমার পক্ষ হতে অতীত কোন সুন্নাতে সমাধান না মিলে, তাহলে আমার সাহাবীগণ যা বলেছেন তা গ্রহণ করবে। কারণ আমার সাহাবীগণ আসমানের নক্ষত্রের ন্যায়। অতএব তোমরা যে কোন জনের কথা গ্রহণ করলেই হেদায়াত প্রাপ্ত হবে। আমার সাহাবীগণের মতভেদ তোমাদের জন্য রহমত স্বরূপ। {হাদীসটি জাল} [এটি একটি বহুল প্রচলিত হাদীস]
৬০। আমার মৃত্যুর পরে যে বিষয়ে আমার সাহাবীগণ মতভেদ করেছে, সে বিষয়ে আমি আমার প্রভুকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম। তাই তিনি আমাকে অহী মারফত জানিয়েছেন, হে মুহাম্মাদ! তোমার সাথীগণ আমার নিকট আসমানের নক্ষত্রতুল্য। যাদের কতকজন অন্যজনের চেয়ে অতি উত্তম। অতএব যে ব্যক্তি তাদের মতভেদকৃত বস্তু থেকে কিছু গ্রহণ করেছে সে আমার নিকট সঠিক পথের উপরেই রয়েছে। {হাদীসটি জাল} [এটি একটি বহুল প্রচলিত হাদীস]
চলবে ...
মূলঃ আল্লামা মুহাম্মাদ নাসিরুদ্দীন আলবানী (রহঃ)
অনুবাদঃ আবূ শিফা মুহাম্মাদ আকমাল হুসাইন বিন বাদীউয্যামান
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই মার্চ, ২০১১ সকাল ১১:২৮