somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মাযহাব সম্পর্কিত সংক্ষিপ্ত আলোচনা - ৪র্থ পর্ব

১৬ ই মার্চ, ২০১১ দুপুর ১২:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পূর্বের পর ...

মাযহাব বলতে কি বুঝায়?
মাযহাবের সঠিক অর্থ চলার পথ, কিন্তু মাযহাব অনুসারীগণ এর অর্থ করেন মত ও পথ। এই অর্থে দুনিয়ার যত মত ও পথ আছে সবই মাযহাব। ইমাম আবু হানিফার মত ও পথ হানাফী মাযহাব। অনুরূপ ইমাম মালেকের মত ও পথ মালেকী মাযহাব, ইমাম শাফেয়ীর মত ও পথ শাফেয়ী মাযহাব ও ইমাম আহমাদ বিন হাম্বলের মত ও পথ হাম্বলী মাযহাব। তা হলে নবী মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর মত ও পথ নিঃসন্দেহে মুহাম্মদী মাযহাব। আর সকলের মত ও পথের চেয়ে মুহাম্মদের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মত ও পথ যে অতি উত্তম ও উত্কৃষ্ট মত ও পথ এ কথা কোন মুসলমানকে বলে দিতে হবে না। কাজেই অন্যান্য সকলের মত ও পথকে বর্জন করে মহানবীর মহাপবিত্র মত ও পথেই আমাদেরকে চলতে হবে। অন্য কারো মতে ও পথে চলার জন্য নির্দেশ নাই।

যে সকল ইমামদের নামে মাযহাবের নামকরণ হয়েছে তাদের জন্মের আগে মাযহাব ছিল না, তাঁদের যামানায় মাযহাবের উদ্ভব হয় নাই। মাযহাব হয়েছে তাঁদের মৃত্যুর বহুদিন পরে। ইমাম আবু হানিফার জন্ম ৮০ হিজরীতে, মৃত্যু ১৫০ হিজরীতে; ইমাম মালেকের জন্ম ৯০ হিজরীতে, মৃত্যু ১৭৯ হিজরীতে; ইমাম শাফেয়ীর জন্ম ১৫০ হিজরীতে, মৃত্যু ২০৪ হিজরীতে; আর ইমাম আহমাদ বিন হাম্বলের জন্ম ১৬৪ হিজরীতে, মৃত্যু ২৪১ হিজরীতে। যেদিন ইমাম আবু হানিফার মৃত্যু হল সেই দিন ইমাম শাফেয়ীর জন্ম হয়েছে। এই দুই জনের পরস্পরের সঙ্গে কারো দেখা সাক্ষাত হয় নাই। মাযহাবের উদ্ভব হয়েছে ৪০০ হিজরীতে। ইমাম আবু হানিফার মৃত্যুর ২৫০ বত্সর পরে। এই চার ইমামের জন্মের পূর্বেও ইসলাম ছিল, মুসলিম ছিল। তখন যদি কারোর মত ও পথের প্রয়োজন না হয়ে থাকে তাহলে ৪০০ বত্সর পরে প্রয়োজন হবার বা ফরয হবার কোন যুক্তি থাকে না। তখনও মুসলিমদের কাছে কুরআন ও হাদীস ছিল, এখনও আছে, কাজেই কুরআন ও হাদীসই যথেষ্ট। সুতরাং নির্ভুল কুরআন হাদীসই মুসলিমদের মেনে চলতে হবে। চার মাযহাবের কোন একটিও মেনে চলার জন্য আল্লাহ ও রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নির্দেশ নাই।

চার মাযহাব ফরয হবার কোন দলীল নেই
আমাদের সমাজে প্রচার রয়েছে চার মাযহাবে চার ফরয। কিছু একটি ফরয হলে তা সমস্ত মুসলিম জাতির জন্যই ফরয হওয়ার কথা। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে মাযহাব অনুসরণের কারণে মুসলিম জাতি বিভক্ত হয়ে পড়েছে। অর্থাৎ যিনি হানাফী মাযহাবের অনুসরণ করেন, তিনি হাম্বলী, মালেকী ও শাফেয়ী মাযহাবের অনুসরণ করেন না। এমনিভাবে অন্য মাযহাবীরাও একে অন্যের মাযহাব মানেন না। তাদের কথা হল চার ফরয তথা চার মাযহাবের যে কোন একটি মানলেই হল। তাহলে তো পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের এক ওয়াক্ত মানলে বা পড়লেই হয়। চার মাযহাব ফরয করতে কোন নবীর আগমন ঘটেনি বরং অজ্ঞ জাহেল ব্যক্তিরাই মাযহাব ফরয দাবী করে মুরতাদ, কাফেরের পরিচয় দিয়েছে। যাদের নামে মাযহাব মানা হচ্ছে তাঁরা কি আদৌ এ মাযহাব তৈরী করেছেন? প্রকৃত ঘটনা হল এই যে, ইমামগণ প্রচলিত মাযহাব তৈরী করেন নি বা কাউকে তৈরী করতেও বলেননি এবং তাদের উপর চার মাযহাব ফরযও হয়নি। বরং চারশত হিজরীর পর, অতিভক্তির পরিণতির কারণে এই চার মাযহাবের উদ্ভব হয়।

যদি ধরেও নেয়া হয় যে ইমামগণ চার মাযহাব তৈরী করেছেন, কিন্তু তা ফরয হল কি ভাবে? তাঁরাতো নবী ছিলেন না। তাদের নিকট ওহীও আসত না। এগুলি তাঁদের নামে মিথ্যা অপবাদ ব্যতীত আর কিছুই না। তাঁদের সময় এবং তাঁদের পূর্বে একটি মাযহাবই ছিল। তাঁরা ঐ একটি মাযহাবকেই মানতেন এবং অন্যকে মানতে বলতেন। ঐ একটি মাযহাবই ফরয যা নবী মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর উপর অবতীর্ণ করা হয়েছে।

হাদীসকে আঁকড়ে ধরার প্রতি ইমামগণের উপদেশ
চার ইমামকে (রহঃ) আমাদের তরফ হতে আল্লাহ উত্তম বদলা দান করুন। তাঁরা প্রত্যেকেই তাদের নিকট যে হাদীস সমূহ পৌঁছেছিল সে অনুযায়ী ইজতেহাদ করেছিলেন। তাঁদের মধ্যে যে মতানৈক্য হয়েছিল তার বিশেষ কারণ হল এই যে, কারো নিকট কতক হাদীস পৌঁছেছিল যা অন্যের নিকট পৌঁছেনি, কারণ তদানীন্তন যুগে হাদীস সংকলিত হয় নি। আর হাদীসের হাফেযগণ বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিলেন, কেউ ছিলেন হিজাযে (মক্কা ও মদীনায়), আর কেউ ছিলেন শ্যামে (সিরিয়ায়), কেউ বা ইরাকে, আবার কেউ মিসরে অথবা অন্যান্য ইসলামী দেশে। সে যুগে এক স্থান হতে অন্য স্থানের যোগাযোগ ছিল অত্যন্ত কঠিন ও কষ্টকর। কাজেই আমরা দেখতে পাই যে, ইমাম শাফেয়ী (রহঃ) যখন ইরাক ছেড়ে মিসরে গেলেন তখন তিনি ইরাকের পুরাতন মাযহাব ত্যাগ করলেন। কেননা ততক্ষণে তাঁর সামনে বহু নুতন নুতন সহীহ হাদীস উপস্থাপিত হয়েছিল।

ইমামগণের মধ্যে মতানৈক্যের একটি উদাহরণ উল্লেখ করা যেতে পারে যে, ইমাম শাফেয়ীর (রহঃ) মতে কোন মহিলাকে স্পর্শ করলে ওযু নষ্ট হয়ে যায়। অপরদিকে ইমাম আবু হানিফার (রহঃ) মতে ওযু নষ্ট হয় না। দুই ইমামের মতামতের এই বৈষম্যতার কারণে আমাদের অপরিহার্য কর্তব্য হল, কুরআন ও সহীহ হাদীসের দিকে প্রত্যাবর্তন করা। কারণ মহান আল্লাহ তায়ালা বলেছেনঃ
"ফায়িন তানাযা'তুম ফি শাইয়িন ফারুদ্দুহু ইলাল্লাহি ওয়ার রাসূলী ইন কুনতুম তু'মিনুনা বিল্লাহী ওয়াল ইয়াওমিল আ'খীরী, যালিকা খাইরুওওয়া। আহসানু তা'বীলান।"
"অতঃপর কোনো ব্যাপারে তোমরা যদি একে অপরের সাথে মতবিরোধ করো, তাহলে সে বিষয়টি (ফয়সালার জন্যে) আল্লাহ তায়ালা ও তাঁর রসূলের দিকে ফিরিয়ে নিয়ে যাও, যদি তোমরা (সত্যিকার অর্থে) আল্লাহর ওপর এবং শেষ বিচার দিনের ওপর ঈমান এনে থাকো! (তাহলে) এই পদ্ধতিই হবে (তোমাদের বিরোধ মিমাংসার) সর্বোত্কৃষ্ট উপায় এবং বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহের ব্যাখ্যার দিক থেকেও (এটি) হচ্ছে উত্তম পন্থা।
{সূরা আন্ নিসা, আয়াত ৫৯}

আর আমরাতো কেবল আল্লাহর নিকট হতে অবতারিত কুরআনের অনুসরণ করার জন্য আদিষ্ট হয়েছি। আর রাসূল (সঃ) সহীহ হাদীসের মাধ্যমে তার ব্যাখ্যা দান করেছেন। তাই এরশাদ হচ্ছেঃ
"ইত্তাবিয়ু মা উনযিলা ইলাইকুম মির রাব্বিকুম ওয়ালা তাত্তাবিয়ূ মিন দুনুহি আউলিয়াআ কালিলাম্‌মা তাযাক্কারুন।"
"(হে মানুষ, এ কিতাবে) তোমাদের মালিকের কাছ থেকে তোমাদের কাছে যা কিছু পাঠানো হয়েছে তোমরা তার (যথাযথ) অনুসরণ করো এবং তা বাদ দিয়ে তোমরা অন্য কোনো অলি আউলিয়ার পৃষ্ঠপোষকদের অনুসরণ করো না; (আসলে) তোমরা খুব কমই উপদেশ মেনে চলো।"
{সূরা আল আ’রাফ, আয়াত ৩}

সত্য কোন সময় একাধিক হতে পারে না। প্রকৃত সত্য হল, ওযু ভঙ্গের কারণগুলির মধ্যে কোন মহিলাকে স্পর্শ করা অন্তর্ভুক্ত নয় বিধায় কোন মহিলার শরীর স্পর্শ করলে ওযু ভঙ্গ হবে না।

সুতরাং কোন মুসলিমের সামনে কোন সহীহ হাদীস উপস্থাপিত হলে তাকে একথা বলা জায়েয নয় যে, এটা আমাদের মাযহাব বিরোধী। কারণ সমস্ত ইমামের ইজমা (ঐকমত্য) হচ্ছে যে সহীহ হাদীস গ্রহণ করবে এবং ঐ সমস্ত মতবাদ পরিহার করবে যা সহীহ হাদীসের পরিপন্থী।

চলবে ...

* সংকলন- মুহাম্মদ আবু হেনা
২০টি মন্তব্য ১৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×