somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জাহান্নামের ভয়াবহ শাস্তি- পর্ব ২

০২ রা জুন, ২০১২ সকাল ১০:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আগের পর্ব...
জাহান্নামের অবস্থান
ওলামায়ে আহলুস সুন্নাহ্ ওয়াল জামা‘আত ঐক্যমত পোষণ করেন যে, বর্তমানে জাহান্নাম সৃষ্ট অবস্থায় বিদ্যমান, পূর্বের পর্বে উল্লেখিত দলীল সমূহ যার স্পষ্ট প্রমাণ বহন করে। কিন্তু বর্তমান অবস্থান নিয়ে ওলামায়ে কেরামদের মধ্যে মতভেদ পরিলক্ষিত হয়, যা পর্যালোচনা করলে তিনটি মত পাওয়া যায়। প্রথম মত : বর্তমানে জাহান্নাম মাটির নীচে অবস্থিত। দ্বিতীয় মত : বর্তমানে তা আসমানে অবস্থিত। তৃতীয় মত : জাহান্নামের বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালাই অধিক জ্ঞাত যা মানুষের জ্ঞানের বাইরে। আর এই মতটিই ছহীহ। কারণ, জাহান্নামের অবস্থান সম্পর্কে কুরআন ও ছহীহ হাদীছ থেকে কোন দলীল পাওয়া যায় না।

হাফেয সুয়ূতী (রহ.) বলেন, জাহান্নামের বর্তমান অবস্থান আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত অন্য কেউ জানে না। আর আমার নিকটে এমন কোন অকাট্য দলীল নাই যার উপর ভিত্তি করে জাহান্নামের অবস্থান নির্দিষ্ট করা যেতে পারে।*৮*

শায়খ অলিউল্লাহ দেহলভী (রহ.) বলেন, জান্নাত ও জাহান্নামের নির্দিষ্ট অবস্থান সম্পর্কে কোন স্পষ্ট দলীল নাই। বরং তা আল্লাহ তা‘আলার ইচ্ছাধীন। আল্লাহ তা‘আলার সৃষ্টি ও বিশ্বজগৎ আমাদের আয়ত্তের বাইরে।*৯* আল্লামা ছিদ্দীক হাসান খান এই মতটিকেই ছহীহ মত বলে আখ্যায়িত করেছেন।

হাশরের দিনের ভয়াবহ অবস্থা
হাদীছে এসেছে, আনাস ইবনু মালিক (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছা.) বললেন, কাফিরদেরকে হাশরের মাঠে মুখের মাধ্যমে হাঁটিয়ে উপস্থিত করা হবে। তখন এক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! মুখের ভরে কাফিরদেরকে কিভাবে হাশরের ময়দানে উঠানো হবে? তিনি বললেন, দুনিয়াতে যে সত্তা দু’পায়ের উপর হাঁটান, তিনি কি ক্বিয়ামতের দিন মুখের ভরে হাঁটাতে পারবেন না? তখন কাতাদাহ (রা.) বললেন, আমাদের প্রতিপালকের ইয্‌যতের কসম! অবশ্যই পারবেন।*১০*

অন্য হাদীছে এসেছে, আয়েশা (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন। রাসূলুল্লাহ (ছা.) বলেছেন, মানুষকে হাশরের মাঠে উঠানো হবে শূন্য পা, উলঙ্গ দেহ এবং খাৎনা বিহীন অবস্থায়। আয়েশা (রা.) বলেন, আমি তখন বললাম, হে আল্লাহ্‌র রাসূল (ছা.)! তখন তাহলে পুরুষ ও নারীগণ একে অপরের দিকে তাকাবে। রাসূলুল্লাহ (ছা.) বললেন, হে আয়েশা! এরকম ইচ্ছে করার চেয়ে তখনকার অবস্থা হবে অতীব সংকটময়। (কাজেই কি করে একে অপরের দিকে তাকাবে)।*১১*

জাহান্নামের স্তর
আল্লাহ তা‘আলা তাঁর বান্দাদের পাপ অনুযায়ী শাস্তি প্রদান করার জন্য জাহান্নামের বিভিন্ন স্তর এবং স্তরভেদে তাপের তারতম্য সৃষ্টি করেছেন। যেমন- তিনি মুনাফিকদের স্তর উল্লেখ করে বলেছেন, ‘মুনাফিকগণ জাহান্নামের নিম্নতম স্তরে থাকবে’ {সূরা নিসা: ১৪৫}।

তিনি অন্যত্র বলেন, ‘প্রত্যেকে যা করে তদনুসারে তার স্থান রয়েছে।’ {সূরা আনআম: ১৩২}

তিনি অন্যত্র বলেন,
‘যে আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টির অনুসরণ করেছে সেকি তার মত যে আল্লাহ্‌র ক্রোধ নিয়ে ফিরে এসেছে? আর তার আশ্রয়স্থল জাহান্নাম এবং তা কতই না মন্দ প্রত্যাবর্তনস্থল। তারা আল্লাহ্‌র নিকট বিভিন্ন মর্যাদার। আর তারা যা করে, আল্লাহ তার ওপর সজাগ দৃষ্টি রাখেন।’ {সূরা আলে-ইমরান: ১৬২-১৬৩}।

জাহান্নামের দরজা সমূহ
জাহান্নামের দরজা মোট সাতটি যা আল্লাহ তা‘আলা পবিত্র কুরআন মাজীদে ইরশাদ করেছেন, ‘অবশ্যই জাহান্নাম তাদের সকলেরই প্রতিশ্রুত স্থান, উহার সাতটি দরজা আছে, প্রত্যেক দরজার জন্য পৃথক পৃথক শ্রেণী আছে’ {সূরা হিজির: ৪৩-৪৪}।

অত্র আয়াতের ব্যাখ্যায় হাফেয ইবনে কাছীর (রহ.) তাঁর তাফসীরে উল্লেখ করেন, জাহান্নামের প্রত্যেক দরজায় শয়তান ইবলীসের অনুসারীদের কিছু অংশের প্রবেশের কথা লিখা আছে, তারা সে দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে, পালানোর কোন পথ থাকবে না।*১২*

প্রত্যেক জাহান্নামী তাদের আমল অনুযায়ী জাহান্নামের দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে এবং তার নিম্নতম স্তরে অবস্থান করবে। আলী (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘জাহান্নামের সাতটি দরজা আছে যা পর্যায়ক্রমে একটি অপরটির উপর অবস্থিত, সর্বপ্রথম প্রথমটি, অতঃপর দ্বিতীয়টি, অতঃপর তৃতীয়টি পূর্ণ হবে, অনরূপভাবে সবগুলো দরজাই পূর্ণ হবে’।*১৩*

এখানে দরজা বলতে স্তরকে বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ, জাহান্নামের সাতটি স্তর রয়েছে যা একটি অপরটির উপর অবস্থিত এবং তা পর্যায়ক্রমে পূর্ণ হবে।

যখন কাফিরদেরকে জাহান্নামের নিকটে নিয়ে আসা হবে তখন তার দরজা সমূহ খুলে দেয়া হবে, অতঃপর তারা চিরস্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য সেখানে প্রবেশ করবে।

আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, ‘কাফিরদেরকে জাহান্নামের দিকে দলে দলে তাড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হবে, যখন তারা জাহান্নামের নিকটে উপস্থিত হবে তখন ইহার প্রবেশদ্বারগুলি খুলে দেয়া হবে এবং জাহান্নামের রক্ষীরা তাদেরকে বলবে, তোমাদের নিকটে কি তোমাদের মধ্য হতে রাসূল আসেনি যারা তোমাদের নিকট তোমাদের প্রতিপালকের আয়াত তেলাওয়াত করত এবং এই দিনের সাক্ষাত সম্বন্ধে তোমাদেরকে সতর্ক করত? তখন তারা বলবে অবশ্যই এসেছিল। বস্তুত কাফিরদের প্রতি শাস্তির কথা আজ বাস্তবায়িত হয়েছে’ {সূরা যুমার: ৭১}।

অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা কাফিরদেরকে লক্ষ করে বলবেন, ‘জাহান্নামের দ্বারসমূহে প্রবেশ কর স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য। কত নিকৃষ্ট অহংকারীদের আবাসস্থল।’ {সূরা যুমার: ৭২}।

জাহান্নামীদেরকে জাহান্নামে নিক্ষেপের পর তার দরজাসমূহ এমনভাবে বন্ধ করে দেয়া হবে যা হতে বের হওয়ার কোন অবকাশ থাকবে না।

আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, ‘আর যারা আমার নিদর্শন প্রত্যাখ্যান করেছে, তারাই হতভাগ্য। তারা পরিবেষ্টিত হবে অবরুদ্ধ অগ্নিতে’ {সূরা বালাদ: ১৯-২০}।

আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, ‘দুর্ভোগ প্রত্যেকের, যে পশ্চাতে ও সম্মুখে লোকের নিন্দা করে, যে অর্থ জমায় ও তা বার বার গননা করে, সে ধারণা করে যে, তার অর্থ তাকে অমর করে রাখবে, কখনও না, সে অবশ্যই নিক্ষিপ্ত হবে হুতামায়, তুমি কি জান হুতামা কি? ইহা আল্লাহর প্রজ্জ্বলিত হুতাশন, যা হৃদয়কে গ্রাস করবে, নিশ্চয়ই ইহা তাদেরকে পরিবেষ্টন করে রাখবে দীর্ঘায়িত স্তম্ভসমূহে’ {সূরা হুমাযাহ্: ১-৯}।

ইনশাআল্লাহ চলবে ...

রচনাঃ
শরীফুল ইসলাম বিন জয়নাল আবেদীন
লিসান্স, মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়,
সঊদী আরব।

*৮* ছিদ্দীক হাসান খান, ইয়াক্বযাতু উলিল ই‘তিবার মিম্মা ওরাদা ফী যিকরিল জান্নাতি ওয়ান নার, দারুল আনছার ছাপা, আল-ক্বাহেরাহ, প্রথম প্রকাশ ১৩৯৮ হিজরী ও ১৯৭১ খৃষ্টাব্দ, পৃঃ ৪৭।
*৯* ঐ।
*১০* বুখারী, ‘হাশরের অবস্থা কেমন হবে’ অধ্যায়, হা/৬৫২৩, বাংলা অনুবাদ, তাওহীদ পাবলিকেশন্স ৬/৫২।
*১১* বুখারী, ‘হাশরের অবস্থা কেমন হবে’ অধ্যায়, হা/৬৫২৭, বাংলা অনুবাদ, তাওহীদ পাবলিকেশন্স ৬/৫৩।
*১২* তাফসীর ইবনে কাছীর, দারুল আন্দালুস ছাপা, বৈরূত, ৪/১৬৪।
*১৩* তাফসীর ইবনে কাছীর, দারুল আন্দালুস ছাপা, বৈরূত, ৪/১৬৪।
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কম্বলটা যেনো উষ্ণ হায়

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৭


এখন কবিতার সময় কঠিন মুহূর্ত-
এতো কবিতা এসে ছুঁয়ে যায় যায় ভাব
তবু কবির অনুরাগ বড়- কঠিন চোখ;
কলম খাতাতে আলিঙ্গন শোকাহত-
জল শূন্য উঠন বরাবর স্মৃতির রাস্তায়
বাঁধ ভেঙ্গে হেসে ওঠে, আলোকিত সূর্য;
অথচ শীতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৬

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

শহীদ ওসমান বিন হাদি, ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

হ্যাঁ, সত্যিই, হাদির চিরবিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার এই মুহূর্তটিতেই তার খুনি কিন্তু হেসে যাচ্ছে ভারতে। ক্রমাগত হাসি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

'জুলাই যোদ্ধারা' কার বিপক্ষে যুদ্ধ করলো, হ্তাহতের পরিমাণ কত?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৫১



সর্বশেষ আমেরিকান ক্যু'কে অনেক ব্লগার "জুলাই বিপ্লব" ও তাতে যারা যুদ্ধ করেছে, তাদেরকে "জুলাই যোদ্ধা" ডাকছে; জুলাই যোদ্ধাদের প্রতিপক্ষ ছিলো পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, ছাত্রলীগ; জুলাই বিপ্লবে টোটেল হতাহতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?

লিখেছেন এ আর ১৫, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৩

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?


হাদিকে মারল জামাত/শিবির, খুনি নাকি ছাত্রলীগের লুংগির নীচে থাকা শিবির ক্যাডার, ডাকাতি করছিল ছেড়ে আনলো জামাতি আইনজীবি , কয়েকদিন হাদির সাথে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×