somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অস্ট্রেলিয়ায় উচ্চশিক্ষা: তথ্য ও অভিজ্ঞতা ।

২৫ শে নভেম্বর, ২০১০ দুপুর ১:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমাদের বাংলাদেশ প্রতি রছর অনেক ছাত্র-ছাত্রী উচ্চ শিক্ষার জন্য বাইরে যাচ্ছে লেখাপড়া করার জন্য। তেমনি শুধু আমাদের বাংলাদেশ নয় আরো অনেক দেশের বাইরে থেকে আনেক মানুষ যাচ্ছে অষ্ট্রেলিয়ায় লেখাপড়া করার জন্য।
প্রতি বছর অস্ট্রেলিয়াতে উচ্চশিক্ষার জন্য কয়েক লক্ষ ছাত্র-ছাত্রী বাইরে থেকে আসে । সরকারী হিসেব মতে ২০০৩ সালে এসংখ্যা তিন লক্ষেরও বেশি । আমাদের দেশ থেকেও প্রতিবছর কয়েক হাজার ছাত্র-ছাত্রী পড়তে আসে । তবে যোগ্যতা থাকলেও উপযুক্ত তথ্যের অভাবে আমাদের দেশের অনেকে ইচ্ছে সত্ত্বেও আসতে পারে না । অনেক সময় দেশ-বিদেশের আন্তর্জাতিক ব্যবসায়িক সংস্হা বা মিডিয়ার মাধ্যমে অনেক ছাত্র-ছাত্রী আর্থিকভাবে প্রতারিত হয় । এক্ষেত্রে শুধু অর্থ নয় , ছাত্র-ছাত্রীরা নিজেদের জীবনের মূল্যবান সময়ও হারিয়ে ফেলে । এজন্য দরকার উপযুক্ত ও নির্ভরযোগ্য তথ্য
অস্ট্রেলিয়াতে উচ্চশিক্ষার জন্য সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য তথ্য পাওয়া যাবে দেশটির সরকার নিয়ন্ত্রিত ওয়েবসাইট গুলোতে । কারন , সরকারী ওয়েবসাইট গুলোতে অস্ট্রেলিয়াতে আন্তর্জাতিক ছাত্র-ছাত্রীদের পড়ালেখা বিষয়ক বিভিন্ন পরিবর্তন সংযোজন , ও বিযোজন গুলো নিয়মিত আপডেট করা হয় । এছাড়া ' আইডিপি অস্ট্রেলিয়া ' (International Development Program - Australia) আন্তর্জাতিক ভাবে অস্ট্রেলিয়ান শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোর একমাত্র সমন্বিত প্রতিনিধি । বাংলাদেশে এর অফিস ঢাকার গুলশান ২ নম্বর গোল চক্কর থেকে অল্পদূরে কামাল আতাতুর্ক এভিনিউতে (ফোন: ৯৮৮৩৫৪৫ , ই-মেইল: [email protected]) ।

' অস্ট্রেলিয়ার আন্তর্জাতিক শিক্ষা ' (The Australian Education International) সংস্হার ' স্টাডি ইন অস্ট্রেলিয়া ' (Study in Australia) হচ্ছে অস্ট্রেলিয়া সরকারের আন্তর্জাতিক ছাত্র-ছাত্রীদের পড়ালেখা বিষয়ক অফিসিয়াল ওয়েব সাইট । এখানে সরকার কর্তৃক অনুমোদিত উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান গূলোর নাম , বিভিন্ন বিষয় , পড়ালেখা ও থাকার-খাওয়ার খরচ , বৃত্তি , ভিসা , আবেদন প্রক্রিয়া , থাকা-খাওয়ার সুবিধা , ও অস্ট্রেলিয়ায় জীবনযাপন সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যায় । এছাড়া প্রতিটি অনুমোদিত উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে স্ব স্ব প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানা যেতে পারে ।

অষ্ট্রেলিয়ায় বা অন্য যে কোন দেশে উচ্চ শিক্ষার জন্য যাওয়া একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়ার ব্যাপার । এজন্য একজন ছাত্র বা ছাত্রীকে অনেক আগে থেকে পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি নিতে হয় । আমি সর্বপ্রথম অষ্ট্রেলিয়ায় আসার জন্য পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি শুরু করি ২০০৩ সালে । সে সময় ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সিঙ্গাপুরে মাস্টার্সের গবেষণা কাজে ব্যস্ত ছিলাম । আমি ভর্তির আবেদন পত্রের সাথে বৃত্তির জন্যও আবেদন করি । কিন্তু প্রয়োজনীয় প্রস্তুতির অভাবে আমার IELTS (International English Language Testing System) স্কোর আশানুরূপ না হলে অষ্ট্রেলিয়ার একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভর্তির সুযোগ ও থাকা-খাওয়ার বৃত্তি পেলেও , সবচেয়ে প্রয়োজনীয় টিউশন ফি ও মেডিকেল ইনসুরেন্স পরিশোধকারী IPRS (International Postgraduate Research Scholarships) বৃত্তি পাইনি । পরের বছর বাংলাদেশ থেকে IELTS- এ প্রয়োজনীয় স্কোর করতে সমর্থ হলে আমি পূর্ণ বৃত্তি লাভ করি ।

এখানে স্নাতকোত্তর কোর্সগুলোতে প্রচুর গবেষণা বৃত্তি থাকলেও স্নাতকপূর্ব কোর্স গুলোতে বৃত্তি নেই বললেই চলে । একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রতিটি বিষয়ে মোট সিট ও বৃত্তির সংখ্যা নির্দিষ্ট । সাধারণত যেকোন বিষয়ে বৃত্তিসহ ভর্তির আবেদনকারীকে একই বিষয়ে বৃত্তিছাড়া ভর্তির আবেদনকারীর চেয়ে কয়েকগুন বেশি প্রতিযোগিতায় পড়তে হয় । একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সাধারণত কোনরূপ পক্ষপাতিত্ব না করে সকল আবেদনকারীদের মধ্য থেকে তাদের প্রয়োজনীয় সংখ্যক সবচেয়ে ভাল ছাত্র-ছাত্রীদের ভর্তির সুযোগ দেয় ও এদের মধ্য থেকে শীর্ষস্হানীয় আবেদনকারীদেরকে নির্দিষ্ট সংখ্যক বৃত্তি দেয় ।

বৃত্তি না পেলেও এখানে পার্টটাইম কাজের প্রচুর সুযোগ আছে । পার্টটাইম কাজ হিসেবে একই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রোগ্রামিং , টিউটরিং , মার্কিং ছাড়াও বাইরে অন্যান্য কাজ করা যায় । ছাত্র-ছাত্রীরা সাধারণত সাপ্তাহিক ছুটি ও বছর শেষের লম্বা ছুটিতে (নভেম্বর-ফেব্রুয়ারী) পার্টটাইম চাকুরী করে সারা বছরের পড়ালেখার খরচ যোগাড় করে । উল্লেখ্য , স্টুডেন্ট ভিসার শর্ত হিসেবে এক জন ছাত্র বা ছাত্রী সেমিস্টার চলাকালীন সময়ে সপ্তাহে ২০ ঘন্টা কাজ করতে পারে । বৃত্তি প্রাপ্তদের জন্য কোথাও ( যেমন , মোনাশ বিশ্ববিদ্যালয়ে) সপ্তাহে ১৫ ঘন্টা । তবে বছর শেষের লম্বা ছুটিতে যে যত খুশি কাজ করতে পারে ।

অস্ট্রেলিয়াতে উচ্চশিক্ষার জন্য আসার জন্য ছয়টি মূল ধাপ আছে । এগুলো হল - পড়ার পরিকল্পনা , বিষয় নির্বাচন , ভর্তির আবেদন , ভিসার আবেদন , দেশ ত্যাগের পূর্বে করণীয় , ও অস্ট্রেলিয়াতে পৌঁছার পর করণীয় । নিচে আমরা প্রতিটি ধাপ সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করা হল ।

১. পড়ার পরিকল্পনাঃ
সর্বপ্রথম একজন ছাত্র বা ছাত্রীকে দেখতে হবে তার নিজের ক্যারিয়ারের জন্য কোন ধরনের কোর্স বা বিষয়ে সে আগ্রহী । মানে সে কোন বিষয়ে পড়া লেখা করতে চায় , তার বর্তমান যোগ্যতা কতটুকু , সে যে বিষয়ে আগ্রহী তা শেষ করতে কত সময় লাগবে , এবং সর্বোপরি সে কোথায় এ বিষয়ে পড়তে আগ্রহী তাও ঠিক করা প্রয়োজন । উল্লেখ্য , অস্ট্রেলিয়াতে চার ধরনের পড়ালেখার জন্য একজন ছাত্র বা ছাত্রী আসতে পারে - বিশ্ববিদ্যালয় ডিগ্রী , কারিগরি ডিগ্রী , স্কুল-কলেজ , এবং ইংরেজি ভাষা শিক্ষা ।

এরপর প্রতিটি আন্তর্জাতিক ছাত্র-ছাত্রীকে পড়াকালীন সময়ে খরচের কথা আগেভাগে চিন্তাভাবনা করে পরিকল্পনা করতে হয় । টিউশন ফি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বিষয়ভেদে বিভিন্ন হয় । থাকা-খাওয়ার খরচও অস্ট্রেলিয়ায় জায়গাভেদে বিভিন্ন হয় । মনে রাখা প্রয়োজন , ভিসার আবেদনের সময় প্রয়োজনীয় খরচের সামর্থ্য দেখাতে ব্যর্থ হলে সাধারণত ভিসার আবেদন গ্রাহ্য হয় না । এখানে স্নাতকপূর্ব কোর্সের আন্তর্জাতিক ছাত্র-ছাত্রীদের বেশিরভাগ পুর্ণ খরচ দিয়ে পড়ালেখা করে , কারন স্নাতকপূর্ব কোর্সে আন্তর্জাতিক ছাত্র-ছাত্রীদের বৃত্তির সংখ্যা খুবই সীমিত ও তাদের জন্য কোন রকম ধার বা লোনের ( loan) ব্যবস্হাও নেই । অনুরূপভাবে , ডিপ্লোমা ও অন্যান্য কোর্সগুলোতে বৃত্তি নেই বললেই চলে । তবে , স্নাতকোত্তর গবেষণাভিত্তিক কোর্সে বেশ কিছু বৃত্তি আছে , যেমন , IPRS, AusAid, গ্রেজুয়েট বৃত্তি ইত্যাদি ।
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমিও যাবো একটু দূরে !!!!

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২২

আমিও যাবো একটু দূরে
যদিও নই ভবঘুরে
তবুও যাবো
একটু খানি অবসরে।
ব্যস্ততা মোর থাকবে ঠিকই
বদলাবে শুধু কর্ম প্রকৃতি
প্রয়োজনে করতে হয়
স্রষ্টা প্রেমে মগ্ন থেকে
তবেই যদি মুক্তি মেলে
সফলতা তো সবাই চায়
সফল হবার একই উপায়।
রসুলের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×