somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সমুদ্রযাত্রা (২)

১৫ ই জুন, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আগের পর্বঃ সমুদ্রযাত্রা (১)
Click This Link

(৩) বিরতিহীন যাত্রা



ষড়যন্ত্রকারীরা কোন একটা ঝামেলা লাগিয়ে দ্বিতীয় গ্রুপের কাছে দায়িত্ব ছেড়ে দিয়ে কেটে পড়ে। এরা খুব সিরিয়াস টাইপের লোক। কোন সমস্যাই এঁদের কাছে সমস্যা না। যেকোন ঝামেলা ম্যানেজ করাই এঁদের কাজ। সুমন ভণ্ড (শব্দটা হবে ভক্ত। কিছু ভণ্ডামির জন্য ধরা খেয়ে ভক্ত হয়ে গেছে ভণ্ড) , অন্তু, মুণ্ডু ভাই (আসল নাম মঞ্জুর, আমাদের আদরের নাম মুণ্ডু ), সজীব এই গ্রুপের সদস্য। সজীব আছে আবার দুই জন। একজন বাড়া সজীব আরেকজন আঠা সজীব। সব নামেরই শানে নুযূল আছে। এঁদের নামেরটা বলা যাচ্ছে না। সে এক বিরাট ইতিহাস, ঘরে ছিল না কেরাসিন। আফসোসের ব্যাপার, বিস্মৃত কোন এক কারনে আঠা সেবার আমাদের সাথে যেতে পারে নাই। কোথাও ঘুরতে গেলে সজীবের উপস্থিতি ছিল বাধ্যতামুলক। আঠা সজীব মানেই ব্যাপক বিনোদন।
১০০ কেজির ওপর ওজনের বিশাল দেহের অধিকারী অন্তুকে আমরা নেতাজী বলে ডাকি। পেটের মত তার হৃদয়টাও বিশাল। নেতাজী এই গ্রুপের লিডার। নেতাজীর নামে এই গ্রুপের নাম নেতাজী গ্রুপ।
হুড়মুড় করে তো রওনা দিলেই হল না। টাকা-পয়সা কত লাগবে, কোথায় থাকব, কি খাব, বাজেট কত – এইসব জটিল প্রশ্নের খুব সহজ এবং যুগান্তকারী সমাধান সবসময় এঁদের মাথা থেকে বের হয়ে আসে।
নেতাজীর পারমিশন নিয়ে যাত্রার শুরুতেই সুমন সবার কাছ থেকে কিছু টাকা তুলে ফেলল। টাকা চাইতেই দেখা গেল বেশীর ভাগের কাছেই টাকা নেই। এর কাছে টাকা চাইলে ওকে দেখিয়ে দিচ্ছে। কিন্তু ভন্ডর সাথে ভন্ডামি করে কোন লাভ হল না। টাকা তুলে সুমন নেতাজিকে জানাল যে রওনা দেয়া যায়।
মুণ্ডু ভাইকে বাস ঠিক করতে বলে নেতাজী সবার উদ্দেশ্যে একটা ভাষন দিলেন, “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম!ভাইয়েরা আমার! আমরা প্রথমে বহদ্দারহাট মোড় থেকে বাসে করে কক্সবাজার যাব। কক্সবাজারে রাতে থাকব। সকালে নাস্তা করে যেতে হবে টেকনাফ জাহাজ ঘাটে। সেখান থেকে জাহাজে সেইন্ট মার্টিন। সেইন্ট মার্টিন এক রাত থেকে পরদিন দুপুরে ফিরতি যাত্রা করতে হবে। প্যাকেজ প্রোগ্রাম।”
নেতাজীর প্রস্তাব সবাই হাততালি দিয়ে স্বাগত জানাল।
জুয়েল হাত তুলে জানাল যে তার কিছু বলার আছে। বিরক্তি নিয়ে নেতাজি ভুরু কুঁচকে জুয়েলকে এক মুহূর্ত দেখে কি যেন ভাবলেন। তারপর মুখে আরও গাম্ভীর্য এনে মাথা সামান্য নেড়ে অনুমতি দিলেন,
“যা বলার সংক্ষেপে বল।”
“নেতাজী, আমরা কি সেইন্ট মার্টিন দুই দিন থাকতে পারি না? আবার কবে না কবে যাই!” , সমর্থন পাবার আশায় জুয়েল ঘুরে সবার দিকে তাকিয়ে বলে, “ কয়দিনের আর জীবন! আজকে মরলে কালকে দুই দিন! ঠিক না রে?”
জুয়েলের আধ্যাত্মিক কথায় সবাই মাথা নেড়ে সায় দিল। ঠিকই তো। আজকে মরলে কালকেই তো মৃত্যুর দুই দিন হয়ে গেল। আজকে একদিন, কালকে একদিন - দুইদিন। সহজ হিসাব।
নেতাজী কোমরে হাত দিয়ে জুয়েলকে প্রশ্ন করলেন, “সুমনের হাতে কত টাকা দিয়েছিস তুই?”
জুয়েল দাঁত বের করে অমায়িক হাসি হেসে বলল, “পুরা একশ টাকা দিসি !”
টাকার পরিমান শুনে সবার মধ্যে হাসির ফোয়ারা ছুটে যায়।
“একশো টাকায় তুই সেইন্ট মার্টিন যাবি?” রেগে লাল হয়ে অন্তু জিজ্ঞেস করে।
নেতাজীর রাগ দেখতে জুয়েলের ভালই লাগছে। আরও ক্ষেপানোর জন্য বলল, “নেতাজী থাকতে টাকা নিয়া টেনশন? হা হা , যা শুনাইলেন নেতাজী।”
কথা শেষ করার আগেই অন্তু জুতা খুলে জুয়েলের দিকে ঢিল দিল। অল্পের জন্য নিশানা মিস। সবাই হতাশায় মাথা নাড়ল। ধুর! এত কাছ থেকে গায়ে লাগাতে পারল না? আফসোস!
ইতিমধ্যে মুণ্ডু ভাই এসে জানালেন বাস রেডি।
হা হা হি হি করতে করতে সবাই হুড়মুড় করে বাসে উঠে বসল।আমরা এই বাসে করে যাব বহদ্দার হাট।




চট্টগ্রাম মূল শহর থেকে প্রায় চব্বিশ কিলোমিটার দূরে পাহাড়, সবুজ আর স্বচ্ছ নীলাকাশের প্রান্তে লুকিয়ে আছে আমাদের ইঞ্জিনিয়ারিং ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাস। লুকিয়ে আছে বলছি কারন দিগন্ত বিস্তৃত ধান ক্ষেতের মাঝ দিয়ে আঁকাবাঁকা রাস্তায় চলতে চলতে হঠাৎ করে ক্যাম্পাসটা সামনে চলে আসে।
আমাদের ক্যাম্পাস থেকে বহদ্দারহাট বাস টার্মিনাল পর্যন্ত মুড়ির টিন মার্কা কিছু বিরতিহীন বাস চলে। আই মিন, তখন চলত। এখন চলে কিনা জানি না।
এই মুড়ির টিন বাসগুলো ঘণ্টায় ত্রিশ কিলোমিটারের বেশী বেগে ছুটতে পারে না। ঘুমানোর জন্য আদর্শ গতি। না ঘুমাতে পারলেও অসুবিধা নাই। মন ভাল থাকলে স্লো-মোশনে প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য উপভোগ করার ব্যবস্থা আছে। এছাড়াও মুড়ির টিনের আরেকটা বোনাস এন্টারটেইনমেন্ট আছে। সেটা হল ছাদ।
মুড়ির টিনের ছাদে করে যে ভ্রমন করে নাই তার অভিজ্ঞতার অংশে অনেক বড় একটা শুন্যস্থান রয়ে গেছে। শূন্যস্থান না বলে ব্ল্যাক হোল বলা উচিৎ। বিকেলের নরম রোদে মেঘহীন আকাশের সৌন্দর্য, ত্রিশ কিলোমিটার বেগে চলা মুড়ির টিনের ছাদে অন্য রকম হয়ে ধরা দেয়। পূর্ণিমা রাতে বাসের ছাদে শুয়ে তারা গুনতে গুনতে মনে হয় আর বেঁচে থেকে লাভ নেই। বেহেশতে তো পৌঁছেই গেছি!



(৪) সমুদ্রস্নান



ঘন্টাখানেক পর, বহদ্দার হাট পৌঁছে একদল গেল কক্সবাজারের বাসের খোঁজে। আর বাকিরা একটা হোটেলে হালকা নাস্তা করল।
কক্সবাজারে পৌছাতে বেশী রাত হলে সারারাত না খেয়ে থাকতে হবে – এই আশঙ্কায় নাস্তা করেই আমরা বাসে উঠে পরলাম। টাকার পরিমান কম বলে ভাল বাস পাওয়া গেল না। বাসের সিটগুলো ইটের চাইতে শক্ত আর এত চাপা যে হিসেব করে বসতে হয়। সিটের ব্যাপারটা কিন্তু কেউ টের পেল না। কারন গভীর রাত পর্যন্ত জেগে, সবাই আবার খুব সকালে ঘুম থেকে উঠেই কোন রকমে নাস্তা করে রওনা দিয়েছে। ক্লান্তিতে বাসে উঠেই সবার ঘুম পেয়ে গেল
ঘুম ভাঙ্গল কক্সবাজার পৌঁছে। রাত তখন সাড়ে নয়টা।
কক্সবাজারে আমরা আগেও এসেছি। কিন্তু প্রতিবারই দিনের বেলায়। সূর্যাস্ত দেখেই প্রস্থান। রাতের কক্সবাজার অন্যরকম সুন্দর লাগল। বাস থেকে নেমে, গাঁটটি বোঁচকা নিয়ে রিক্সায় হোটেলের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।
আগে থেকে হোটেল ঠিক করা ছিল না। কারন রওনা দেয়ার আগে হোটেলের সন্ধান কেউ দিতে পারল না। কক্সবাজারে পৌছার পর অন্তু জানাল, আমরা উঠবো হোটেল সিগালে। সব রিকশাওায়ালাই দেখলাম হোটেল সিগাল চেনে। চাঁদের আলোয় রিকশা যখন সৈকতের পাশ দিয়ে যাচ্ছিল তখন রাতের নির্জনতা ছাপিয়ে দূর থেকে সমুদ্রের মৃদু গর্জন ভেসে ভেসে আসছিল। এক কথায় অসাধারন অনুভুতি।
হোটেল সিগাল পৌঁছে আমাদের বাইরে দাঁড় অন্তু ভেতরে গেল রুম ঠিক করতে। পাঁচ মিনিট পরই অন্তুকে দেখলাম গুলির মত ছিটকে বাইরে বেরিয়ে আসতে। আমরা অন্তুকে ঘিরে ধরলাম। সবার মুখে একই প্রশ্ন,
“কিরে, কি হয়েছে? কোন সমস্যা?”
অন্তু শুধু বলল, “তোদের দুই একটার কিডনি বেচলেও এই হোটেলের একদিনের ভাড়া উঠবে না।”
“হায়! হায়! কি সর্বনাশ! অফ সিজনে এত ভাড়া?” আমাদের সবার মুখ শুকিয়ে আমসি হয়ে গেল। কে যেন অন্তুকে জিজ্ঞেস করল, “তাহলে এখন?”
নেতাজী সবাইকে আশ্বস্ত করল, “সমস্যা নাই। দেখতেসি কি করা যায়।”
দীপনকে ডেকে বললেো, “দিপন, তুই সবাইকে নিয়ে একটা হোটেলে খেতে বস। আমরা হোটেল ঠিক করে আসছি।”
আমি, অন্তু, সুমন, সজীব আর মুণ্ডু ভাই রয়ে গেলাম।
“কিরে কি ব্যাপার?”, জিজ্ঞেস করলাম।
“অবস্থা তো খারাপ। টাকা যে পরিমান আছে তাতে সেইন্ট মার্টিন তো ভেলায় ভেসে যেতে হবে।”, চিন্তিত নেতাজী জবাব দিল।
দুঃশ্চিন্তার কথা। আমরা সেখানে দাঁড়িয়ে একটা হিসেব করে নিলাম বাদ বাকি জার্নিতে আর কত টাকা লাগতে পারে। সেখান থেকে বের করা হল, কক্সবাজারে হোটেলের পেছনে ম্যাক্সিমাম কত টাকা খরচ করা যেতে পারে। হিসেবে দেখা গেল, ঝামেলা আছে। ডাবল বেডের একটা রুমে মিনিমাম চার জনকে থাকতে হবে।
আমি বললাম, “নাহ! কোন হোটেল মালিক রাজী হবে না।”
সজীব একটা মুচকি হাসল। বলল, “তোরা খেতে যা। আমি আর মুণ্ডু ভাই হোটেল ঠিক করে আসছি যা।”
এখানে সজীবের পরিচয় না দিলে মুচকি হাসির রহস্য পরিস্কার বোঝা যাবেনা। জুবায়ের আলী সজীব খুলনার ছেলে। অল-স্কয়ার বয়। সে দেখতে যেমন হ্যান্ডসাম, তেমনি তার লোকজনকে মুগ্ধ করার ক্ষমতা। আবার যে কোন খেলাধুলায় অপ্রতিদ্বন্দ্বী। তুখোড় ছাত্রনেতা। রাজনীতি করলেও সিজিপিএ প্রথম দশ জনের ভেতর। এমনকি ওকে একবার তবলিগ জামাতের আমির হিসেবেও দেখা গেছে। এত কিছুর পরও ভেতরে এক বিন্দু অহংকার নাই।
মানুষকে ম্যানেজ করার এক অস্বাভাবিক ক্ষমতা আছে ওঁর। মুচকি হাসি হাসল সে একারনেই। যদি বলতাম ফ্রি থাকা লাগবে তাহলে হয়ত হাসত না। টাকা দিয়ে থাকব, সেটা ব্যবস্থা করতে আর সমস্যা কি?
আমাদের খাওয়া দাওয়া শেষ হতে হতে, সজীব ফোন করে জানাল হোটেল ম্যানেজ হয়ে গেছে।
আমরাও লটবহর নিয়ে হোটেলের দিকে আগালাম।
মেইন রোড থেকে একটু ভেতরের দিকে “হোটেল তাজ”।
গিয়ে দেখি রিসেপ্সনে সজীব আর মুণ্ডু ভাই কঠিন আড্ডা জমিয়ে ফেলেছে এক লোকের সাথে। আমাদের দেখে সেই ভদ্রলোক কাকে যেন ইশারা করলেন। এক অ্যাটেন্ডেন্ট এগিয়ে এসে আমাদের ডেকে নিয়ে গেলেন রুমের দিকে। সজীব বলল, তোরা রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নে। আমরা খাওয়া দাওয়া করে আসছি।
ডাবল-ট্রিপল মিলিয়ে মোট পাঁচটা রুম নেয়া হয়েছে। অর্থাৎ থাকার জন্য পর্যাপ্ত বিছানা আছে। কিভাবে এটা সম্ভব হল আল্লাহই জানেন। আমরা যে যার রুম ভাগ করে নিয়ে আলাদা হয়ে গেলাম।
আধ ঘণ্টার মধ্যে সবাই গোসল করে ফ্রেশ হয়ে রওনা দিল সমুদ্র দেখতে। সমুদ্রের এত কাছে এসে সমুদ্র স্নান হবে না?
সি বিচ পৌঁছে সবাই শিশুর মত দৌড়াদৌড়ি শুরু করল। অফ সিজনে এমনিতেই এখানে লোকজন কম। আর এত রাতে নিরাপত্তার অভাবে কেউ বিচে আসেনি। ফাঁকা বিচ পেয়ে কে যে কি করবে বুঝে উঠতে পারল না। হৈ হৈ করতে করতে কেউ কেউ পানিতে নামল।
ভাগ্য ভাল যে সেদিন জোয়ার ছিল। তারপরও সাবধানের মার নেই। সবাইকে সতর্ক করে দিয়ে আমিও পানিতে নেমে পরলাম।
জোয়ার ভাটা একসময় মনে থাকল না। সমুদ্রের ঢেউ আমাদের আনন্দে ভাসিয়ে নিয়ে গেল। সমুদ্রের গর্জনের সাথে আমাদের প্রাণখোলা হাসি মিলে মিশে একাকার হয়ে গেল।
কি যে একটা অপার্থিব দৃশ্য! পানিতে নেমেই একজন আরেকজনকে পানি ছিটিয়ে গোসল করিয়ে দিল। কিছুক্ষণ পর পানি ছিটানোর খেলা পুরনো হয়ে গেল। এবার শুরু হল বালি ছোড়া। মুঠো ভর্তি বালি নিয়ে একজন আরেক জনের পেছন সারা সি বিচ দৌড়ে বেড়াচ্ছে। আনন্দের শেষ নেই।
এর মধ্যে দিপন,খালেদ আর সমীর কবি হয়ে সমুদ্রের পাড়ে বসে পড়ে ছিল। ছেলেদের হইহল্লা তাদের কাব্যিক ভাবে ভীষণভাবে ব্যাঘাত করল। কারন ক্রস ফায়ারে পড়ে দুই একটা বালির ঢিল ওদের গায়েও পড়েছে।
বিরক্ত হয়ে একসময় দিপন লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়াল। গলায় রাগ ঢেলে বলে উঠল, “অ্যাই , তোরা কি এখনও পোলাপান? বুড়া দামড়া একেকটা। অথচ তোদের কাজ কারবার দেখলে মনে হয় এখনও ফিডার খাস। যত্তশব!”
কথাটা আমাদের খুব আঘাত করেছে এমন ভাব নিয়ে সুমন বলল, “কি বলতে চাস তুই?”
দিপনের জবাব আসল “বলতে চাচ্ছি দূরে গিয়ে মর।”
আর যায় কোথায়! কথায় আছে, পাগলকে কখনো মাঝ নদীতে নিয়ে ক্ষেপাতে হয় না। কথা শেষ করা মাত্র কে যেন ডাক দিল “বুড়া গুলিরে নিয়ে পানিতে চুবা”।
সাথে সাথে সবাই তিন কবিকে চ্যাং দোলা করে নোনা পানিতে ডুবিয়ে দিল। আবার শুরু হল পানিতে মাতামাতি বালি ছোঁড়াছুড়ি।
কিছুক্ষণ পর জুয়েল এগিয়ে এসে আমাকে জিজ্ঞেস করল, “ কিরে নেতাজী কোথায়?”
আমি তো অবাক। আমরা তো একসাথেই নিচে নামলাম। ও কি বিচ পর্যন্ত আসেনি? অন্তু যে এতক্ষণ আমাদের সাথে নেই সেটা তো খেয়ালই করিনি। ডুবে টুবে যায়নি তো আবার? কি সর্বনাশ! ফোনও তো দেখি বন্ধ!
সাথে সাথে সব কয়টা মাথা গুনে দেখলাম। নাহ, শুধু নেতাজী মিসিং। হায় হায়! কি হল? নেতা কি ডুবে গেল নাকি? একজন একজন করে জিজ্ঞেস করলাম। কেউ কিছু বলতে পারল না। দলের মধ্যে এত্ত বড় একটা পাহাড় নাই আর কেউ খেয়াল করল না?একজন শুধু বলল আবিদ আর অন্তুকে সব শেষে নামতে দেখেছে।
খোঁজো খোঁজো, আবিদকে খোঁজো। আবিদকে একটু দূরে পাওয়া গেল। সমুদ্রের দিকে তাক করে হিসি করছে।
আঁতকে উঠে আমি বললাম, “আরে হারামজাদা, এইটা একটা কাজ করলি তুই?”
ধরা পড়ে আবিদ কাচুমাচু হয়ে গেল। কিন্তু কি করবে হিসি একবার শুরু হয়ে গেলে আর তো ঠেকানোর উপায় নাই!
যা হোক, এসব দেখলে এখন চলবে না। জিজ্ঞেস করলাম, “ নেতাকে দেখেছিস?”
হিসি করতে করতেই আবিদ জবাব দিল, “ হ্যাঁ দেখেছি তো!আমরা তো একসাথেই নামলাম?”
“নামলাম তো অন্তু কোথায়? এখানে তো নেই!”
প্যান্টের চেইন লাগাতে লাগাতে আবিদ অবাক হয়ে বলল, “নাই?” চারপাশে অন্তু কে খুজে না পেয়ে বলল, “ও তো বলল তোরা যা আমি আসছি। তারপর দেখলাম রিক্সা নিয়ে কোথায় যেন গেল।”
“আরে গাধা! জিজ্ঞেস করবি না কোথায় যাচ্ছে?”
“জিজ্ঞেস করেছিলাম। শুধু বলল, কাজ আছে।”
বুক থেকে একটা পাথর নেমে গেল। তারমানে অন্তু একদিকে আসেনি। কিন্তু এত রাতে কোন দিকে গেল? চিন্তার কথা!
এদিকে আবিদের কারবার শুনে সবাই এতক্ষণে পানি ছেড়ে উঠে এসেছে। নেহায়াত অন্তুকে পাওয়া যাচ্ছে না বলে সবাই টেনশনে আছে নাহলে নগত একটা গণ কিল খেতে হত আবিদকে।
আরও কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে হোটেলের দিকে রওনা দিলাম সবাই। হয়ত বিচে আসতে ইচ্ছা করেনি বলে “কাজ” শেষ করে হোটেলে ফিরে গেছে।
নেতাজিকে পাওয়া গেল ডিসট্রিক্ট রোডের পাশে দাঁড়ানো অবস্থায়। দূর থেকেই বিশাল বপু অন্তুকে চিনতে পারা যায়।
কিন্তু রাস্তার পাশে এভাবে দাঁড়িয়ে আছে কেন ছেলেটা?
আমাদের দেখে চিনতে পেরে অন্তুও এগিয়ে এলো। সবাই একসাথে জিজ্ঞেস করলাম, “কিরে কি হইসে তোর?”
“মোবাইলে ফ্লেক্সির দোকান খুঁজে পাচ্ছিলাম না। এক রিকসা ওয়ালা বলল টাকা দ্যান এনে দিচ্ছি। একশ টাকা দিয়ে পাঠাইলাম এক ঘণ্টা আগে। এখনও আসার নাম নাই।”
অন্তুর কথা শুনে আমরা হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খেলাম। বেয়াক্কেলটা এক ঘণ্টা ধরে রিকসাওয়ালার জন্য এখানে দাঁড়িয়ে আছে! হায় কপাল!
জুয়েল হাসতে হাসতে কোন রকমে বলল, “ নেতাজী, রিকশাওয়ালা কি আপনার তালুই লাগে? হা হা হা।” হাসি আর থামতেই চায় না। একটু থেমে বলল, “যা দেখাইলেন নেতাজী!" আবার হাসি।
অন্তু ঘটনা বুঝতে পেরে বিব্রত। আমতা আমতা করে বলল, “আমার কি দোষ? বাটপারটা এমন ভাবে বলল যে মনে হল আসলেই যাবে আর আসবে।”
কিছুক্ষনের মধ্যে সবার হাসি থেমে আসে। অন্তু রিকসাওয়ালা যে দিকে গেছে সেদিকে দেখতে গেল। যারা একটু কম ভিজেছে তারা অন্তুর সাথে গেল। শেষ চেষ্টা করে দেখা যাক কি হয়। আমাদের সারা গায়ে বালি কিচ কিচ করছে বলে আমরা হোটেলে চলে এলাম। গোসল করে এক ঘুম


পরবর্তী পর্বঃ সমুদ্রযাত্রা(৩)
Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে জুন, ২০১৩ রাত ৯:৫৮
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মনা মামার স্বপ্নের আমেরিকা!

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ১৪ ই জুন, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

শুরুটা যেভাবে



মনা মামা ছিলেন একজন মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। তার বাবা একজন ব্যবসায়ী ছিলেন, আর মনা মামা তার বাবার ব্যবসা-বাণিজ্য দেখাশোনা করতেন। ছোটবেলা থেকেই তার স্বপ্ন ছিল অনেক টাকা কামানো।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ জার্সিতে নেমন্তন্ন খেতে গিয়ে পেয়ে গেলাম একজন পুরনো ব্লগারের বই

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৪ ই জুন, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৭



জাকিউল ইসলাম ফারূকী (Zakiul Faruque) ওরফে সাকী আমার দুই ঘনিষ্ঠ বন্ধুর ঘনিষ্ঠ বন্ধু; ডাঃ আনিসুর রহমান, এনডক্রিনোলজিস্ট আর ডাঃ শরীফ হাসান, প্লাস্টিক সার্জন এর। ওরা তিনজনই ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের একই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বেনজীর তার মেয়েদের চোখে কীভাবে চোখ রাখে?

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ১৪ ই জুন, ২০২৪ বিকাল ৩:০৬


১. আমি সবসময় ভাবি দুর্নীতিবাজ, ঘুষখোর যারা মিডিয়ায় আসার আগ পর্যন্ত পরিবারের কাছে সৎ ব্যক্তি হিসেবে থাকে, কিন্তু যখন সবার কাছে জানাজানি হয়ে যায় তখন তারা কীভাবে তাদের স্ত্রী,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগের সাতকাহন

লিখেছেন বিষাদ সময়, ১৪ ই জুন, ২০২৪ রাত ৮:০১

অনেকদিন হল জানা আপার খবর জানিনা, ব্লগে কোন আপডেটও নেই বা হয়তো চোখে পড়েনি। তাঁর স্বাস্খ্য নিয়ে ব্লগে নিয়মিত আপডেট থাকা উচিত ছিল। এ ব্লগের প্রায় সকলেই তাঁকে শ্রদ্ধা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্মস্মৃতি: কাঁটালতা উঠবে ঘরের দ্বারগুলায় (চতুর্থাংশ)

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৪ ই জুন, ২০২৪ রাত ৯:২৭


আত্মস্মৃতি: কাঁটালতা উঠবে ঘরের দ্বারগুলায় (তৃতীয়াংশ)
আমার ছয় কাকার কোনো কাকা আমাদের কখনও একটা লজেন্স কিনে দিয়েছেন বলে মনে পড়ে না। আমাদের দুর্দিনে তারা কখনও এগিয়ে আসেননি। আমরা কী খেয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×