somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পুনর্জাগরন

০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ৯:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

খুব গরম পড়েছে। মাথার উপর ফ্যান চলছে। কিন্তু গরম কমার লক্ষণ নাই। কেমন যেন ভ্যাপসা গরম। কয়টা বাজে? ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম পৌনে সাতটা। নাহ! সময় আজকে আর যাবে না। সবাইকে সাড়ে সাতটায় মধ্যে ফয়সালের বাসায় আসতে বলা হয়েছে। এখনও অনেক সময় বাকি। গরমে অস্থির লাগছে।
আমি ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে নিলাম - কে কে আসল এখন পর্যন্ত ? সামি আর জুয়েল কর্নারে বসে মোবাইল নিয়ে কি যেন দেখছে। আবিদ , বাবু, শুভ্র আর সুমন আছে, টেলিভিশন নিয়ে ব্যস্ত। দীপন আর অমলেশ আসেনি এখনও। ফোন করেছিল, বলল রাস্তায় আছে। বাইরে বারান্দায় আরও দুই একজন তো আছেই। সফিক আর আজিজ আসেনি এখনও। গতকাল জেল থেকে ছাড়া পেয়েছে শুনেছিলাম, দেখা হয়নি এখনো। আল্লাহই জানে জেলে ওদের দিনকাল কেমন কেটেছে।
ঘরের ভেতর সবাই কেমন যেন একটা চাপা উত্তেজনা নিয়ে চুপচাপ শান্ত হয়ে বসে আছে। আজকে একটা টেনশনের দিন। ওরা কিভাবে এমন শান্ত থাকতে পারে কে জানে? আমি ভাই পারি না। অল্পতেই আমার টেনশন লাগে।
দিনকাল খুব খারাপ। রাত দশটার পর কারফিউ শুরু হয়ে যায়। অনেক কষ্টে বাবা-মা কে বুঝিয়ে তারপর এখনে এসেছি। বাবা যদি ভুলেও জানত যে আমি ওদের সাথে দেখা করতে এসেছি তাহলে মনে হয় জ্যান্ত কবর দিয়ে দিত।
আজ থেকে প্রায় তিন বছর আগে, বছরের মাঝা মাঝি সময়ে দেশে একটা ভয়াবহ দুর্যোগ ঘটে যায়। অজানা একটা রোগে দেশের শিশুরা আক্রান্ত হতে থাকে। প্রাথমিক অবস্থায় রোগের লক্ষণ ছিল জ্বর আর প্রচণ্ড মাথা ব্যাথা। তিন চার ঘণ্টা পর রোগী বমি করা শুরু করত। যারা বমি করত না তারা ডিলুস্যনাল হয়ে পড়ত। অদ্ভুত প্রলাপ বকার পর একসময় ওরা নেতিয়ে পড়ে ঘুমিয়ে যেত। সেই ঘুম আর ভাঙত না। এভাবে ১০-১২ টা শিশু একই ভাবে মারা যাবার পর সরকার দায় সারা ভাবে একটা মেডিকেল টিম গঠন করে নিজেদের দায়মুক্ত করল। কিন্তু অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে সেই মেডিকেল টিমের এক মেধাবী ডাক্তার অক্লান্ত পরিশ্রম করে রোগের কারণ বের করে ফেললেন। এবং তিনি আবিষ্কার করলেন এক ভয়াবহ লোমহর্ষক ঘটনা।
আমাদের দেশে শিশুদের সরকারিভাবে বিভিন্ন সময় টিকা দেয়া হয়। প্রতি বছর এই টিকা দান কর্মসূচীতে লক্ষ লক্ষ সরকারি টাকা খরচ হয়। কম বেশি দুর্নীতিও হয়। এদিকে গত কয় বছর ধরে বিদেশি এক ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি পরীক্ষামূলক ভাবে আমাদের দেশে একটি ভ্যাকসিন লঞ্চ করতে চাইছিল। অনেক ডাক্তার – বিশেষজ্ঞ সেই সময় পরীক্ষামূলক ভাবে হলেও এই ভ্যাকসিন দেয়ার বিরোধিতা করেছিলেন। লাভ হয় নি। বরং সেই ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানির চোখ ধাঁধানো বিজ্ঞাপন আর আন্তর্জাতিক সনদ দেখে সাধারণ মানুষ খুব সহজেই সেই সেসব আপত্তির কথা ভুলে যায়। পরীক্ষামূলক ভ্যাকসিন শেষ পর্যন্ত প্রচলিত হয়ে যায়।
সেই মেডিকেল টিমের ডাক্তার সাগর দেখতে পান, সেই পরীক্ষামূলক প্রচলিত ভ্যাকসিন মানুষের দেহে বিশেষ একটি রোগ প্রতিরোধে সক্ষম হলেও এটি মানব দেহকে অন্য একটি বিশেষ ভাইরাসের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয় করে দিচ্ছে! অথচ আমাদের শরীর প্রাকৃতিক ভাবেই এই জীবাণু প্রতিরোধে সক্ষম ছিল। আর সবচেয়ে আশ্চর্যের ব্যাপার হল, সেই ভাইরাস ছড়ায় ফুলের পরাগায়নের মাধ্যমে। রুক্ষ শীতের শেষে, যখন ছোট শিশু-কিশোরেরা খোলা মাঠে প্রান্তরে জীবনের আলো জ্বালিয়ে ছুটে বেড়িয়েছে, নিরীহ সেই ভাইরাসটি বসন্তের রঙ্গিন বাতাসে ভর করে আশ্রয় নিয়েছে সেই কোমল দেহগুলোতে। প্রজন্মের পর প্রজন্মে।
ডাক্তার সাগর তার রিসার্চের কাগজটি মেডিকেল টিমের টিম লিডারকে দেখান। টিম লিডার রিপোর্ট করেন স্বাস্থ্য সচিবকে। সচিব জানান স্বাস্থ্য মন্ত্রীকে। এই স্বাস্থ্য মন্ত্রীই এক দশক আগে এই ভ্যাকসিন অনুমোদন করেছিলেন। তারপর তার দল নির্বাচনে হেরেছে, তিনি দল পালটে সরকারী দলে যোগ দিয়েছেন।এই মন্ত্রী আর সচিব সম্পর্কে শালা-দুলাভাই। রিপোর্ট নিয়ে শালা-দুলাভাই তার দলের খুব ঘনিষ্ঠ আর বিশ্বস্ত কয়জনকে নিয়ে মিটিং করলেন। মিটিং শেষে শালা-দুলাভাই টিম লিডারকে ডাকলেন। দেশে ডাক্তারদের যোগ্যতা সম্পর্কে নানান অভিযোগ করলেন, মেডিকেল টিমের মধ্যে এইধরনের “অশিক্ষীত” ডাক্তার কিভাবে সুযোগ পেল সেটা নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করলেন। সাগরকে তারা মানসিক ভারসাম্যহীন বলে তার দাবি ভিত্তিহীন বলে উল্লেখ করে সেই রিপোর্ট ধ্বংস করে ফেলতে আদেশ করলেন।
টিম লিডার মাথা নিচু করে মন্ত্রণালয় থেকে চলে এলেন। সাগর তার প্রিয় ছাত্রদের মধ্যে অন্যতম। ওর মেধা সম্পর্কে তার মনে কোন সন্দেহই নেই। দুপুরে সাগর এলো তার সাথে দেখা করতে।
“মিনিস্টার সাহেব কি বললেন স্যার?” বসতে বসতে জিগ্যেস করে সাগর।
“ও সব রিপোর্টের কথা ভুলে যাও সাগর।”
“কেন স্যার? কি হয়েছে? “ সাগর বিস্ফোরিত চোখে স্যারের দিকে তাকিয়ে দেখে তার শ্রদ্ধেয় স্যার মাথা নিচু করে রেখেছে।
“তুমি ওদের সাথে পারবেনা সাগর। Forget it. Now, leave me alone.” খুব ঠাণ্ডা স্বরে কথাগুলো বলে চেয়ার ছেড়ে উঠে জানালার কাছে গিয়ে দাঁড়ালেন। সাগরের জবাবের অপেক্ষা না করে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে রইলেন।
“ এই অনন্যায় মেনে নেয়া যায় না স্যার। আমি মিডিয়ার সব কিছু প্রকাশ করে দেবো।” দৃঢ় কণ্ঠে কথাগুল বলে রুম থেকে বেরিয়ে যায় সাগর।
পরদিন তার ফ্ল্যাটে সাগরকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়।
অনেক তোলপাড় হয় সে সময়, কিন্তু সব কিছু চাপা পড়ে যায়। আমরাও সব কিছু ভুলে যাই। কিন্তু প্রকৃতি তার প্রতিশোধ নেয় ঠিকই। সাগর মারা যাবার পরবর্তী বছর গুলতে সেই ভাইরাসে চিরতরে ঘুমিয়ে যেতে থাকে দেশের শিশু কিশোরেরা। প্রতি বছর মৃতের সংখ্যা বাড়তে থাকে।আজ থেকে দেড় বছর আগে মহামারীতে মারা যায় প্রায় চার লাখ মানুষ! এসব নিয়ে দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি হয়। শুরু হয় মারামারি, হত্যা, রাহাজানি। একসময় সব কিছু নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। দেশে জরুরী অবস্থা ঘোষণা করা হয়। এই জরুরি অবস্থার মধ্যেও মাঝে মাঝে সহিংসতার খবর পাওয়া যায়।
সেসব কথা মনে পড়ে বুকে একটা দীর্ঘশ্বাস জমা হয়। আমি আর কিছুক্ষণ খেলা দেখে উঠে পড়লাম। আর অপেক্ষা করতে ভাল লাগছে না। টেনশন লাগছে। একটা সিগারেট খাওয়া দরকার। এখানে আবার রুমের ভেতর সিগারেট খাওয়া যায় না। বারান্দায় গিয়ে খেতে হবে। সবাই যথারীতি ফ্লোরে শুয়ে-বসে আছে। সাবধানে সবাইকে সরিয়ে সরিয়ে জায়গা করে বারান্দায় গিয়ে দেখি অন্ধকারে কারা যেন আগে থেকেই বসে সিগারেট খাচ্ছে। রুম্মন আর ফুয়াদ। আমাকে দেখে বসার জায়গা করে দিল। আমি সিগারেট ধরিয়ে হেলান দিয়ে বসলাম ওদের সাথে। বারান্দায় একটু বাতাস আছে। গরমটা কম লাগছে।
“কিরে কয়টা বাজে?”
“সাতটা” জবাব দিলাম
“ধুর! এত আগে আসা ঠিক হয় নাই।আমরা তো কাছে থাকি। সবাই আসলে একটা ফোন করতি, বাইকে একটানে চলে আসতাম।” বলে রুম্মন টোকা দিয়ে সিগারেটটা বারান্দা দিয়ে ফেলে দেয়।
“ দোস্ত, সব প্ল্যান ঠিক আছে তো?” ফুয়াদ জিগ্যেস করে।
“এত চিন্তা করিস না।”, যেন নিজেকে বুঝাই - “সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে”।
হয়তো সব ঠিক হবে, হয়তো কিছুই ঠিক হবে না। কিন্তু এভাবে বেঁচে থাকা যায় না। আজ রাতে আমরা কারফিউ ভেঙ্গে পথে নামবো। আমরা একা না, নামবে আরো অনেকেই। অনেক আন্দোলন হয়েছে আর না। এবার প্রয়োজনে যুদ্ধ হবে, গোলাগুলি হবে – হবে রক্তপাত ।
আজিজ ঠিকই বলে, “সব সমস্যা আমাদের সিস্টেমে। আমাদের আন্দোলন সরকার বা কোন ব্যাক্তির বিরুদ্ধে না, সিস্টেমের বিরুদ্ধে। আমরা সিস্টেমের পরিবর্তন চাই। আর... রক্ত ছাড়া পরিবর্তন হয় না বন্ধু!”
প্রয়োজনে আমরা তাই করবো। রক্তের বন্যায় দেশটাকে ভাসিয়ে দেব। কিন্তু এতগুলো নিষ্পাপ প্রাণের মৃত্যুর গ্লানি নিয়ে কবরে যাবো না কখনোই!
====

আঁধারে হঠাৎ কয়টা মশাল জ্বলে উঠল। সাথে সাথে ব্জ্র কণ্ঠে স্লোগান ধরলো আজিজ। মিছিল্টা এগিয়ে যেতে লাগলো পুলিশের রাইফেলে সাজানো আর কাঁটাতারে ঘেরা নগরের প্রাণ কেন্দ্রের দিকে। আধো অন্ধকারে ছেয়ে যাওয়া রাতের নিরবতার চাদর ফুঁড়ে বেরিয়ে এল কয়েকটি যুবক। আজ ওরা ঘরে ফিরবে না

সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে আগস্ট, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:৫৯
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কর কাজ নাহি লাজ

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪


রাফসান দা ছোট ভাই
ছোট সে আর নাই
গাড়ি বাড়ি কিনে সে হয়ে গেছে ধন্য
অনন্য, সে এখন অনন্য।

হিংসেয় পুড়ে কার?
পুড়েপুড়ে ছারখার
কেন পুড়ে গা জুড়ে
পুড়ে কী জন্য?

নেমে পড় সাধনায়
মিছে মর... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাঁর বোতলে আটকে আছে বিরোধী দল

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



সেই ২০০৯ সালে তিনি যে ক্ষমতার মসনদে বসলেন তারপর থেকে কেউ তাঁকে মসনদ থেকে ঠেলে ফেলতে পারেনি। যারা তাঁকে ঠেলে ফেলবে তাদের বড়টাকে তিনি বোতল বন্দ্বি করেছেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ১৬ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৪



কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?
আমার খুবই জরুরি তার ঠিকানাটা জানা,
আমি অনেক চেষ্টা করেও ওর ঠিকানা জোগাড় করতে পারছিনা।

আমি অনেক দিন যাবত ওকে খুঁজে বেড়াচ্ছি,
এই ধরুণ, বিশ-একুশ বছর।
আশ্চর্য্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ব্লগার ভাবনা:কথায় কথায় বয়কট এর ডাক দেয়া পিনাকীদের আইডি/পেইজ/চ্যানেল বাংলাদেশে হাইড করা উচিত কি? ব্লগাররা কি ভাবছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:১৩



অপূর্ব একজন চমৎকার অভিনেতা। ছোট পর্দার এই জনপ্রিয় মুখকে চেনেনা এমন কেউ নেই। সাধারণত অভিনেতা অভিনেত্রীদের রুজিরোজগার এর একটি মাধ্যম হইল বিজ্ঞাপনে মডেল হওয়া। বাংলাদেশের কোন তারকা যদি বিদেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×