666-number of the beast (Part 01)
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
(১)
কিশোর বয়সে “অশুভ সংকেত” নামে অসাধারণ একটা হরর-থ্রিলার বই পড়েছিলাম। সেখানে ৬৬৬ সংখ্যাটিকে দেখানো হয়েছিল শয়তানের প্রতীক হিসেবে। বইটা এতোই ভালো ছিল যে সেটা পড়ার পর থেকে ৬ সংখ্যাটার ব্যাপারে কিছু অদ্ভুত ধারণা আমার মনে পাকাপাকি ভাবে গেঁথে গিয়েছিল।
আমি ধরেই নিয়েছিলাম ৬ সংখ্যাটার মধ্যে আসলেই সমস্যা আছে। শুধু তাই না, এই ব্যাপারে সেসময় আমি বেশ গবেষণা চালিয়েছিলাম। এবং গবেষণার ফলাফল হিসেবে এই সংখ্যাটা সম্পর্কে কিছু অদ্ভুত আর মজার জিনিষ জানতে পেরেছিলাম।
যেমন, আমি দেখলাম ৬ হচ্ছে একটি নিখুঁত সংখ্যা বা পারফেক্ট নাম্বার। নিখুঁত সংখ্যা হচ্ছে সেই সব পূর্ণ সংখ্যা যাদের ধনাত্মক গুণনীয়কগুলো যোগ করলে সেই সংখ্যাটি পাওয়া যায়। অর্থাৎ,
৬=১x২x৩ আবার ৬=১+২+৩।
আরেকটা ব্যাপার হচ্ছে ৬ হল প্রথম নিখুঁত সংখ্যা। আর এটিই এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত একমাত্র নিখুঁত সংখ্যা যা মৌলিক সংখ্যা দিয়ে গঠিত।
৬ নিয়ে এতো মাতামাতির কারণ আমার জন্ম মার্চের ৬ তারিখ। ইন্টারেস্টিং ব্যাপার হচ্ছে, ৬-ই মার্চ বছরের ৬৫-তম দিন। অর্থাৎ, বছর শেষ হতে ঠিক ৩০০ দিন বাকি থাকে। এছাড়াও নিউমারোলজি ব্যাবহার করে আমার জন্ম তারিখ (৬-৩-১৯৮৩) দিয়ে আরও কিছু মজার জিনিষ বের করা যায়।
যেমন, আমার জন্ম তারিখের সবকয়টা সংখ্যা যোগ করলে আমার জন্ম সংখ্যা ৩ পাওয়া যায়।
৬+৩+১+৯+৮+৩=৩০
আবার ৩+০=৩
এখন এই ৩ সংখ্যাটাকে আমার জন্ম ১৯৮৩ কে ভাগ করলে পাওয়া যায় ৬৬১, যা একটি মৌলিক সংখ্যা এবং শয়তানের সংখ্যার (৬৬৬) খুব কাছাকাছি। আবার, ৬+৬+১ করলে পাই ১৩ - যা, আবারো একটি মৌলিক সংখ্যা এবং এটিও একটি অশুভ সংখ্যা হিসেবে পরিচিত। এই কারনেই সম্ভবত আমি নিজে এবং আমার বন্ধুবান্ধব সবকয়টাই ইবলিশ শ্রেণীর।
(২)
যাই হোক, এই ৬৬৬ এর উৎপত্তি কোথায় সেটা বের করতে গিয়ে আমি পেলাম খ্রিষ্টানদের New Testament এর Book of Revelation (যোহনের কাছে প্রত্যাদেশ) যেখানে এই সংখ্যাটাকে বলা হয়েছে Mark of the beast অর্থাৎ অশুভ পশুর সংখ্যা।
ব্যাপারটা বুঝতে হলে Book of Revelation সম্পর্কে একটু ধারণা নিতে হবে। Book of revelation একধরনের স্বপ্নে প্রাপ্ত ঐশীবানীর মতো। নিজেকে যোহন (John) হিসেবে উপস্থাপিত করে বইয়ের শুরুতেই তিনি বলেন যে তিনি একদিন প্যাটমোস দ্বীপে ধর্ম প্রচার করছিলেন। সেসময় হঠাৎ করেই তার কাছে অলৌকিকভাবে ঐশ্বরিক বার্তা আসে যা তাকে সবাইকে জানিয়ে দেয়ার আদেশ দেয়া হয়।
Book of Revelation এ দুই ধরনের পশুর কথা বলা হয়েছে ত্রয়োদশ অধ্যায়ে। তবে দ্বাদশ অধ্যায়ে বলা হয়েছে মূল শয়তান সম্পর্কে যাকে আমরা ইবলিশ শয়তান নামে চিনিঃ-
“১২-৩) এরপর স্বর্গে আর এক নিদর্শন দেখা দিল, এক প্রকাণ্ড নাগ দেখা গেল, যার রঙ ছিল লাল, তার সাতটি মাথা, দশটি শিং আর সাতটি মাথায় সাতটি মুকুট।”
“১২-৯) এই বিরাট নাগ হল সেই পুরানো নাগ যাকে দিয়াবল বা শয়তান বলা হয়, সে সমগ্র জগতকে ভ্রান্ত পথে নিয়ে যায়।”
ইহুদী ধর্মগ্রন্থেও এই ধরনের সাপের উল্লেখ আছে। আদিপুস্তকের (Genesis) বর্ণনা অনুযায়ী এই সাপ-ই ইভকে নিষিদ্ধ ফল খাইয়েছিল।
যাই হোক, এই সাপ স্বর্গে এক গর্ভবতী মহিলার পেছনে ধাওয়া করে। উদ্দেশ্য খুবই খারাপ। মহিলার সন্তান জন্ম নিলে তাকে হত্যা করা। কিন্তু বিশেষ ব্যাবস্থায় সেই মহিলা সাপের হাত থেকে রক্ষা পানঃ-
১২-৫ স্ত্রীলোকটি এক পুত্র সন্তান প্রসব করল, যিনি লৌহ দণ্ড দিয়ে সমস্ত জাতিকে শাসন করবেন। তার সন্তানকে ঈশ্বরের সিংহাসনের কাছে নিয়ে যাওয়া হল;
১২-৬ আর সেই স্ত্রীলোকটি প্রান্তরে পালিয়ে গেল, সেখানে ঈশ্বর তার জন্য একটি স্থান প্রস্তুত করে রেখেছিলেন, সেখানে সে বারশো ষাট দিন পর্যন্ত প্রতিপালিতা হবে।
এরপর সেই সাপের সাথে মীখায়েল ও তার অধীনে অন্যান্য স্বর্গদূতদের যুদ্ধে লেগে যায়। যুদ্ধে সাপ হেরে যায়। তাকে স্বর্গ থেকে পৃথিবীতে, সমুদ্রে ছুঁড়ে ফেলা হয়।
(3)
এই পর্যায়ে প্রথম পশুর আগমন ঘটে। দ্বিতীয় পশুর বর্ণনা সরাসরি Book of Revelation থেকেই পড়া উচিৎ। নাহলে মজাটা পাওয়া যাবে নাঃ
সমুদ্র থেকে উঠে আসা পশু – দূষিত রাজনৈতিক ক্ষমতাঃ
১৩-১ এরপর আমি দেখলাম সমুদ্রের মধ্য থেকে একটা পশু উঠে আসছে, তার দশটা শিং ও সাতটা মাথা; আর তার সেই দশটা শিং-এর প্রত্যেকটাতে মুকুট পরানো আছে। তার প্রতিটি মাথার ওপর ঈশ্বরের নিন্দাসূচক বিভিন্ন নাম।
(এখানে একটা জিনিষ উল্লেখ করা জরুরী বোধ করছি। দিয়াবল বা শয়তানেরও সাতটি মাথা, দশটি শিং আর সাতটি মাথায় সাতটি মুকুট ছিল। এইখানেও দশটা শিং ও সাতটা মাথা যুক্ত প্রাণী পাওয়া গেল।)
১৩-২ য়ে পশুটিকে আমি দেখলাম, তাকে দেখতে একটা চিতা বাঘের মতো। তার পা ভাল্লুকের মতো, তার মুখটা সিংহের মুখের মতো। সমুদ্র তীরের সেই নাগ তার নিজের ক্ষমতা, তার নিজের সিংহাসন ও মহাকর্তৃত্ত্ব এই পশুকে দিল।
১৩-৩ আমি লক্ষ্য করলাম যে তার একটি মাথায় যেন এক মৃত্যুজনক ক্ষত রয়েছে; কিন্তু সেই মৃত্যুজনক ক্ষতটিকে সারিয়ে তোলা হল। এই দেখে সমস্ত জগতের লোক আশ্চর্য হয়ে গেল; আর তারা সেই পশুর অনুসরণ করল।
১৩-৪ ঐ পশুকে এমন ক্ষমতা দেবার জন্য লোকেরা সেই নাগের আরাধনা করতে লাগল। তারা সেই পশুরও আরাধনা করে বলল, ‘এই পশুর মতো আর কে আছে, কেই বা এর সঙ্গে যুদ্ধ করতে সক্ষম?
১৩-৫ গর্ব করার ও ঈশ্বর নিন্দা করার জন্য সেই পশুটিকে অনুমতি দেওয়া হল। বিয়াল্লিশ মাস ধরে এই কাজ করার ক্ষমতা তাকে দেওয়া হল।
(**এই ৪২ মাসের মধ্যেও একটা ইন্টারস্টিং মিল আছে। আমরা ত্রিশ দিনে যদি মাস গণনা করি তাহলে ৪২ মাস= ৪২*৩০ দিন = ১২৬০ দিন। মনে করে দেখেন, দ্বাদশ অধ্যায়ের সেই গর্ভবতী মহিলাও ঠিক ১২৬০ দিন প্রতিপালিত হবেন।)
১৩-৬ তাতে সে ঈশ্বরের অপমান করতে শুরু করল, ঈশ্বরের নামের, তাঁর বাসস্থানের আর স্বর্গবাসী সকলের নিন্দা করতে লাগল।
১৩-৭ ঈশ্বরের পবিত্র লোকদের সঙ্গে যুদ্ধ করতে ও তাদের পরাস্ত করবার ক্ষমতা তাকে দেওয়া হল; আর জগতের সমস্ত বংশ, লোকসমাজ, ভাষা ও জাতির ওপর কর্তৃত্ত্ব করার ক্ষমতাও তাকে দেওয়া হল।
চিন্তা-ভাবনা করার মতো অনেক কিছু পাওয়া গেল। তবে প্রথম পশুর সাথে দিয়াবলের মিল থাকা আর সে যে খারাপ কাজ করা ছাড়া আর কিছু পারে না বা করবে না সেটা বোঝা গেল। কিন্তু দশটা শিং ও সাতটা মাথার রহস্য বোঝা গেল না।
(4)
এবার দ্বিতীয় পশু সম্পর্কে জানা যাকঃ-
স্থলভূমি থেকে উঠে আসা পশু – দূষিত ধর্মীয় ক্ষমতাঃ
১৩-১১ এরপর আমি পৃথিবীর মধ্য থেকে আর একটি পশুকে উঠে আসতে দেখলাম, মেষশাবকের মতো তার দুটি শিং ছিল, কিন্তু সে নাগের মত কথা বলত।
১৩-১২ সে ঐ প্রথম পশুটির সমস্ত কর্তৃত্ত্ব প্রথম পশুর উপস্থিতিতে প্রযোগ করল এবং সেই শক্তিবলে বিশ্বের সকল লোককে প্রথম পশুটির আরাধনা করতে বাধ্য করল, যার মাথার ক্ষত সেরে গিয়েছিল।
১৩-১৩ দ্বিতীয় পশুটি মহা অলৌকিক সব কাজ করতে লাগল, এমন কি সকলের চোখের সামনে আকাশ থেকে পৃথিবীতে আগুন নামাল।
১৩-১৪ এইভাবে সে প্রথম পশুর সেবার্থে তাকে প্রদত্ত শক্তির বলে অলৌকিক কাজ করে পৃথিবীবাসীদের ঠকাল। সে পৃথিবীর লোকদের বলল, ‘য়ে পশু তরবারির আঘাতে আহত হয়েও বেঁচে উঠেছে, তার সম্মানার্থে একঢি মূর্তি গড়।
১৩-১৫ একে এমন ক্ষমতা দেওয়া হল যাতে সে প্রথম পশুর প্রতিমার মধ্যে প্রাণ সঞ্চার করতে পারে, য়েন সেই প্রতিমা কথা বলতে পারে ও য়ে সেই পশুর প্রতিমার আরাধনা না করে তাকে হত্যা করার আদেশ দেয়।
১৩-১৬ এই পশু কি ক্ষুদ্র, কি মহান, ধনী ও দরিদ্র, স্বাধীন ও ক্রীতদাস, সকলকে তাদের ডানহাতে অথবা কপালে এক বিশেষ চিহ্নের ছাপ দিতে বাধ্য করাল।
১৩-১৭ যাদের পশুর নামের ছাপ ও সংখ্যাসূচক ছাপ ছিল না তারা কেনা বেচার অধিকার হারাল।
১৩-১৮ যে বুদ্ধিমান সে ঐ পশুর সংখ্যা গণনা করুক। এরজন্য বিজ্ঞতার প্রযোজন। ঐ সংখ্যাটি একটি মানুষের নামের সংখ্যা আর সেই সংখ্যা হচ্ছে ছয়শ ছেষট্টি।
বিভিন্ন সূত্র থেকে যা বুঝতে পারলাম এই দ্বিতীয় পশু হচ্ছে False Prophet, নকল নবী। কারণ সে অলৌকিক কাজ করে লোকজনকে বিভ্রান্ত করে সেই শয়তানের উপাসনা করতে বাধ্য করবে। আবার ১৩-১৫ থেকে এটা স্পষ্ট যে সে প্রতিমার মধ্যেও প্রাণ সঞ্চার করতে সক্ষম। কোথায় যেন মিল পাচ্ছি। ইসলাম ধর্মে যে দাজ্জালের কথা বলা হয়েছে, এটাই কি সেই নকল নবী? ৬৬৬ কি তাহলে দাজ্জালের সংখ্যা?
To be continued...
১৭টি মন্তব্য ১৬টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)
ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন
মামুনুলের মুক্তির খবরে কাল বৃষ্টি নেমেছিল
হেফাজত নেতা মামুনুল হক কারামুক্ত হওয়ায় তার অনুসারীদের মধ্যে খুশির জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ তো বলল, তার মুক্তির খবরে কাল রাতে বৃষ্টি নেমেছিল। কিন্তু পিছিয়ে যাওয়ায় আজ গাজীপুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন
'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'
নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন
বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ
আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন
ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা
গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন