somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দুই মিনিট নিরবতা, এখনকার শিক্ষা ব্যাবস্থার জন্য

৩১ শে মে, ২০১৬ রাত ১:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আচ্ছা, জি পি এ মানে কি? জানা নেই।
এস এস সি মানে কি জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট?
“আমি জিপিএ ৫ পেয়েছি” এর ইংরেজি কি I am GPA 5?
শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস কি ১৭ই অগাস্ট?
বিজয় দিবস কি ২৬শে ডিসেম্বর?
রন সংগীত কি রবিন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছেন?
“অপারেশন সার্চ লাইট” কি রোগীর অপারেশানের সময় উপরে যেই লাইটগুলো জ্বলে সেগুলো?
নেপালের রাজধানীর নাম কি নেপচুন?
নিউটনের সুত্র কি শুধুই গাছ থেকে আপেল পড়ার তত্ব?
পিথাগোরাস কি ঔপন্যাসিক ছিলেন?
জানি না বাবা। তবে এই ধরনের উত্তরগুলো এইবারের এস এস সি পরীক্ষায় কতিপয় জিপিএ ৫ ধারি ছাত্র ছাত্রীদের কাছ থেকে পাওয়া। জানি না এই ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যত কি। জানি না তারা কতটুকু শিখেছে।
আমি হচ্ছি ২০০১ সালের এস এস সি পাশ যখন থেকে গ্রেডিং পদ্ধতি প্রথম শুরু হয়েছিল। পরীক্ষা শুরুর মাত্র কয়েকদিন আগে জানতে পেরেছি ফলাফল নাকি গ্রেডিং পদ্ধতিতে মুল্যায়ন হবে। স্টার মার্ক, লেটার, সম্মিলিত মেধা তালিকা এই ব্যাপারগুলো যখন আমাদের চেতনায় ঢুকে আছে তখন হটাত করে গ্রেডিং সিস্টেমের ব্যাপারটা বুঝতে আমাদের অনেক সময় লেগে গিয়েছিল। জানিনা তখন থেকেই শিক্ষাব্যাবস্থার চরম অধঃপতন তখন শুরু হয়েছিল কিনা। আমরা বুঝতে পারিনি। আমরা যারা নব্বই এর দশকে শিক্ষা জীবন শুরু করেছি আমাদের সময়টা ছিল শিক্ষা ব্যাবস্থার উল্যেখযোগ্য ট্রানজিশন পিরিওড। বলা যায় ফাউন্টেন পেন বিলুপ্ত হয়ে বলপেনের ব্যাবহার শুরু হয় আমাদের সময় থেকে। আমি যখন ওয়ানেও ভর্তি হইনি তখন আমার বড় ভাই ও বোনকে দেখেছি ফাউন্টেন পেন দিয়ে লিখতে। দেওয়াল কালি ঝাড়ার অপরাধে আব্বুকে দেখেছি ভাইয়াকে শাসন করতে।
আমার যখন হাতে কলম এল তখন শুরু হয়েছে ইকোনো ডিএক্স এবং রাইটার বলপেনের যুগ। জানিনা তাতে শিক্ষা প্রযুক্তির কি উতকর্ষ সাধিত হয়েছে তবে কলমের ক্যাপ ছিল কান খোচানোর জন্য বেশ সুবিধাজনক। অভিজাত বলপেনের মধ্যে তখন ছিল রেডলিফ। ১২ টাকা দামের এই বলপেনটি ছিল তখন বেশ লোভনীয়। বাবা আমাকে একবার রেডলিফ বলপেন কিনে দিয়েছিলেন পরিক্ষায় ভালো নাম্বার পাবার পুরষ্কার স্বরুপ। এই বলপেনের ধাতব অগ্রভাগ ছিল দৃষ্টিনন্দন, দেখে মনে হত কলম নয় যেন চন্দ্রযান এপোলো-১১। এই কলমের দিকে তাকিয়ে থেকে স্বপ্নের ঘোরে যেন চাদের দেশে হারিয়ে যেতাম।
বড় ভাই বোনের যখন স্কুলের বই কেনা হত তখন তার প্রথম পাঠক ছিলাম আমি। নিজের বই না পড়লেও তাদের বইগুলো যেন এক সপ্তাহেই হেফজ করে ফেলতাম। বিজ্ঞান বই কিছু না বুঝলেও ছবি দেখে মন ভরে যেত। এখনকার ক্লাস ফোর ফাইভের বাচ্চাদের বই খুলতে ভয় লাগে, বই এর ভেতর আছে সেক্স এডুকেশান। তখন ইংরেজি সাহিত্য ছিল। অলিভার টুইস্ট, ডক্টর জ্যাকেল এন্ড মিস্টার হাইড, গিফট অব দ্যা ম্যাজাই, লাঞ্ছিওন কত সুন্দর সুন্দর গল্প ছিল। আমার আপু গল্পগুলো বাংলায় অনুবাদ করে আমাকে শোনাতো। আমাদের সময় থেকে ইংরেজী শিক্ষার ফরমেট চেঞ্জ হয়ে গেল। শুরু হয়ে গেল গল্পের অংশবিশেষ পড়া, পুরো গল্পের মজা থেকে বঞ্ছিত হতে শুরু করলাম। সাহিত্যের রস আস্বাদন থেকে আমরা বঞ্চিত হলাম। ভাইয়ার ফিজিক্স ক্যামিস্ট্রি বইগুলো ছিল ইয়া মোটা। আমাদের সময় থেকে সাইজ হয়ে গেল এক তৃতীয়াংশ। ভাইয়াদের ভুগোল ছিল। সেই বই এর পাতা উলটে ম্যাপে কত দেশ বিদেশ ঘুরেছি। আমাদের সময় থেকে ভুগোল বাদ হয়ে গেল। এই রকম অনেক উল্যেখযোগ্য পরিবর্তন আমাদের শিক্ষা সন থেকেই শুরু হয়ে গেল। সায়েন্টিফিক ক্যালকুলেটার এল। হারিয়ে গেল লগ সারনি, স্লাইড রুলের মত অংক করার উপকরন।
আমাদের সময় থেকে আমরা ধ্বংসের তরীতে উঠে গেছি। যেতে যেতে খুব কাছ থেকে দেখেছি আগের যুগের শিক্ষার স্বর্নযুগ।
আমি চারটি লেটার সহ স্টার মার্ক পাওয়া সিনিয়র ভাইদের তেল চটচটে চুল এবং চশমা পরা চেহারায় মেধা এবং বুদ্ধির দীপ্তি দেখেছি। এখনকার মুরগি মার্কা হেয়ারকাট, হাতে ব্রেসলেট গলায় মালা দেয়া ছেলেটা যখন এ প্লাস পেয়ে যায় তখন পড়াশোনা ব্যাপারটাই তামাশা।
আমি পত্রিকায় ছাপা বোর্ডে মেধা তালিকায় প্রথম মোটা জোড়া ভ্রুযুগলের আপুটির চোখের গভীরে দেখতে পেয়েছি একজন সফল ভবিষ্যত নামকরা ডাক্তারকে।
মাত্র ৬০ শতাংস মার্ক পেয়ে ফার্স্ট ডিভিশনে পাশ করা ভাইটিকে দেখেছি তার মৌলিক মেধার জোরে বুয়েটে চান্স পেতে। এখনকার লক্ষ লক্ষ এ প্লাস ধারিদের মধ্য থেকে এদের কি খুজে বার করতে পারবে কেউ? সম্ভব কি?
এস এস সির রেজাল্ট প্রকাশের পর পাশের বাসার আপুটি যখন এসে মিষ্টি দিয়ে গেলেন তখন মিষ্টি খেয়ে ভীষন লজ্জা পেয়েছি তারপর খেলা ফেলে রেখে পড়তে বসেছি। এই মিষ্টির মুল্য এখন আর কতটুকু অবশিষ্ট আছে?
পাড়ার সাড়ে নয়শ মার্ক পেয়ে স্ট্যান্ড করা ভাইটিকে দেখে আমার জীবনের লক্ষ্য স্থির করেছি, অনুপ্রেরনা নিয়েছি। তার দেখাদেখি ১৬ ঘন্টা পড়ার চেষ্টা করেছি। কিন্তু কোথায় সেই মার্ক মিল্ল? সাড়ে ঊনআশি মার্ক পেয়ে এ প্লাস পেয়ে গেছি গোটা কয়েক সাবজেক্টে।
পেছনের বেঞ্চিতে বসা পড়ায় অমনোযোগী যে ভাইটি নানা দুষ্টামির কারনে স্যারদের কাছে নিয়মিত মার খেত সেও আর্মিতে কমিশন্ড অফিস্যার হিসেবে চান্স পেয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিল তারপর একদিন সে স্কুলে এসে যে স্যার তাকে পেটাতেন উনাকে পা ছুয়ে সালাম করল, স্যার তাকে বুকে জড়িয়ে কেঁদে ফেললেন। এখনকার স্যারদের হাতে কি সেই জাদুর বেত আছে? থাকবে কেন? অল্প বয়েসেই যে ছাত্রদের ভিতর বড়সড় ইগোর থিওরি ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে এখন।
আমার ছাত্রজীবনেও পেছনের বেঞ্চিতে বসা অনেক কিংবদন্তির দেখা পেয়েছি যাদের প্রতিভা ছিল চাপা যা পরবর্তীতে প্রথম সারির ছাত্রদেরও ছাড়িয়ে গেছে। এখনকার সময়ের কতিপয় ডাবল গোল্ডেন ধারি ছাত্ররা তখনকার পেছনের বেঞ্চের ছাত্রদের নোখের সমান যোগ্যতা রাখে কি?
সেই স্বর্নযুগে ক্লাশ অব ক্লান ছিল না। ফুটবল ছিল। হা ডু ডু ছিল। লুকোচুরি খেলা ছিল। ছিল ফ্রিতসবি নামের এক চাকতির ন্যায় খেলনা যা ছুড়ে খেলা হোতো। আমাদের সময় ছিল কোমল পানিয়ের সিলযুক্ত ইও ইও নামের এক খেলনা। লুডূ খেলা ছিল। পাশের বাসার ঢাকা মেডিক্যালে চান্স পাওয়া আপুটাও হোস্টেল থেকে বাসায় আসলে আমার সাথে লুডু খেলতে বসে যেতেন।
এখনকার ছেলেমেয়েরা বাচ্চা বয়েসে স্মার্টফোন হাতে পেয়ে অনেক স্মার্ট হয়ে গেছে কিন্তু জ্ঞানী হয়নি। তারা খুব সহজে আপ্লোড, ডাউনলোডের ব্যাপারগুলো বোঝে কিন্ত তাদের কাছে পিথাগোরাসের উপপাদ্য যেমন জটিল ছিল তেমন জটিলই রয়ে গেছে। তাদের কাছ থেকে যদি স্মার্টফোন কেড়ে নেওয়া হয় এবং সমস্ত টেকনলজি থেকে দূরে সরিয়ে আমাজন জঙ্গলে নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয় তাহলে মনে হয়না তারা বানরের চেয়ে বেশি বুদ্ধিমত্বার পরিচয় দেবে। অনেকের কাছ থেকে স্মার্টফোন কেড়ে নেওয়াটা যেন কোমায় যাওয়া রোগির শরীর থেকে লাইফ সাপোর্ট খুলে ফেলার মত। আর্কিমিডিস বা পিথাগোরাসের সময় পৃথিবীটা ছিল অনুন্নত এবং বোকা, মানুষগুলো ছিল বুদ্ধিমান। এখন ইন্টারনেটের যুগে যা বেড়েছে তা হল কালেকশান অব ইনফরমেশান। এভাবে তথ্য প্রযুক্তির কল্যানে পৃথিবিটা হয়ে গেছে মানুষের চেয়ে বুদ্ধিমান। মানুষগুলো এখন টেকনলোজির ইলেকট্রোম্যাগনেটিক ওয়েভের সাগরে নিমজ্জিত আপাত স্মার্ট অথচ বোকা প্রানী। যখন ডাটা অনেক বেশি তখন প্রসেসর বেশি ইন্টেলিজেন্ট না হলেও চলে। স্মার্টফোন ছাড়া একজন মানুষ যেন এখন অসম্পুর্ন।

সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে মে, ২০১৬ রাত ১:৫২
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:০২



ইউটিউব হুজুর বললেন, মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে। তখন নাকি নিজ যোগ্যতায় ঈমান রক্ষা করতে হয়। আল্লাহ নাকি তখন মুমিনের সহায়তায় এগিয়ে আসেন না। তাই শুনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ধুর বউ কে শাড়ি উপহার দিলেন ব্যারিস্টার সুমন। বাটার প্লাই এফেক্ট এর সুন্দর উদাহারন।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



এক দেশে ছিলো এক ছেলে। তিনি ছিলেন ব্যারিস্টার। তার নাম ব্যারিস্টার সুমন। তিনি একজন সম্মানিত আইনসভার সদস্য। তিনি সরকার কতৃক কিছু শাড়ি পায়, তার জনগণের মাঝে বিলি করার জন্য।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×