somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বায়োগ্রাফি পর্ব-৪: শুভ জন্মদিন মরগান ফ্রিম্যান

০১ লা জুন, ২০১৪ দুপুর ২:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



অভিনেতা মরগান ফ্রিম্যান একজন চলচ্চিত্র পরিচালক ও সুবক্তা । আফ্রিকান বংশোদ্ভুত এ অভিনেতা জন্মগ্রহণ করেন আমেরিকার টেনেসির মেম্ফিসে । ১৯৩৭ সালের ১ ই জুন জন্ম নেয়া এ অভিনেতা শিক্ষকের সন্তান । তার পিতামাতা মর্গান পোর্টারফিল্ড ফ্রিম্যান ও নি রিভারি । তার শৈশব কেটেছে মিসিসিপি ,গ্যারি ,ইন্ডিয়ানা, শিকাগোর মত বিভিন্ন জায়গায় ।মর্গান ফ্রিম্যান এর অভিনয় জীবন শুরু হয় মাত্র নয় বছর বয়সে তার স্কুলে একটি নাটকে অভিনয়ের মাধ্যমে । এরপর তিনি ব্রডস্ট্রীট স্কুলে তার শিক্ষাজীবন শুরু করেন । তিনি মাত্র বার বছর বয়সে দেশব্যাপী অনুষ্ঠিত নাট্য প্রতিযোগিতায় পুরস্কার জেতেন । প্রথম তার তার নাট্যকলা প্রদর্শিত হয় “হ্যালো ডলি” এর মিউজিকের মাধ্যমে ।


১৯৫৫ সালে ব্রডস্ট্রীট থেকে তিনি স্নাতক সম্পূর্ণ করেন ,তিনি জ্যাকসন স্টেট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নাট্যকলায় স্কলারশিপ পান । এরপর তিনি রাডার টেকনিশিয়ান হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবাহিনীতে কাজ করেন । পরবর্তীতে তিনি লস এঞ্জেলসে চলে যান এবং সেখানে অভিনয়ের ওপর পেসাডেনা নাট্যশালায় শিক্ষা গ্রহণ করেন ।১৯৬০ সালের গোড়ার দিকে নাচের ওপর সানফ্রান্সিস্কোতে শিক্ষা গ্রহণ করেন এবং ক্যালিফোর্নিয়ার লস এঞ্জেলসে প্রতিলিপি কেরানি হিসেবে কাজ করেন । এরপর তিনি নিউইয়র্কে বাস করেন এবং ১৯৬৪ সালের ওয়ার্ল্ড ফেয়ারে একজন নৃত্যশিল্পী হিসেবে কাজ করেন । এ সময়ে ফ্রিম্যান সানফ্রান্সিস্কোর অপেরা রিং মিউজিক্যাল থিয়েটার গ্রুপের একজন সদস্যও ছিলেন ।


ফ্রিম্যান দ্য রয়েল হান্ট অফ দ্য সান ট্যুর কোম্পানির ভার্সনে অভিনয় করেন এবং চলচ্চিত্রে একজন এক্সট্রা অভিনেতা হিসেবে ১৯৬৫ সালে তাকে দেখা যায় “পউনব্রোকার” চলচ্চিত্রের মাধ্যমে, যেখানে তার চরিত্র ছিল একজন পথচারীর । তার অভিনয় জীবনের পূর্ণাঙ্গ অভিষেক হয় মূলত ১৯৭১ সালে মুক্তি পাওয়া চলচ্চিত্র “ হু সেইস আই কান্ট রাইড এ রেইনবো”তে । তার পরবর্তী চলচ্চিত্র ১৯৭৩ সালে রিলিজ পাওয়া চলচ্চিত্র “ব্লেড” । এরপর টিভি মুভি “আউট টু লন্স” তে তিনি অভিনয় করেন । ১৯৭১-১৯৭৭ সাল পর্যন্ত তিনি টিভি সিরিয়াল “দ্য ইলেকট্রিক কোম্পানি”তে অভিনয় করেন । ১৯৮০ সালের পর থেকে ফ্রিম্যান চলচ্চিত্রে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করতে শুরু করেন । “ড্রাইভিং মিস ডেইজি(১৯৮৯)” , “গ্লোরি(১৯৮৯)” , “দ্য শোশাংক রেডেমশান(১৯৯৪)” এর মত বেশকিছু চলচ্চিত্রে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে নিজের চলচ্চিত্রজগতে দারুণভাবে অভিনয়ের নান্দনিকতার প্রকাশ ঘটান ।

৭০ দশকেও ফ্রিম্যান অভিনয় করতে থাকেন চলচ্চিত্রের পাশাপাশি মঞ্চেও । তার অভিনীত “ডেস্ক” এবং “ক্ল্যারেন্স”
নাটক ডারওয়েন্ট পুরস্কার জয়ী , পাশাপাশি ১৯৭৮ সালে “জেন্টস” চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্যে “টনি” পুরস্কারের জন্যে মনোনীত হন । ১৯৮০ সালে নিউইয়র্ক শেক্সপিয়র ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে তিনি তার “এন্টি হিরো” চরিত্রের জন্যে এবং “মাদার কারেজ ও হার চিলড্রেন” কাজের জন্যে দুটি “ওভি অ্যাওয়ার্ড” পান । ১৯৮৪ সালে মেসেঞ্জার হিসেবে তার কাজের জন্যে তিনি আবার “ ওভি অ্যাওয়ার্ড” পান । ১৯৮৭ সালে তিনি আবারও “ওভি অ্যাওয়ার্ড” পান । “স্ট্রিট স্মার্ট” চলচ্চিত্রের জন্যে পার্শ্ব চরিত্রে, “ড্রাইভিং মিস ডেইজি” ও “শোশাংক রেডেমশান” চলচ্চিত্রের জন্যে প্রধান চরিত্রে তিনি যথাক্রমে ১৯৮৭,১৯৯০ এবং ১৯৯৫ সালে অস্কার মনোনয়ন পান । অবশেষে ২০০৫ সালে তার অভিনীত চলচ্চিত্র “ মিলিয়ন ডলার বেবি” এর জন্যে তিনি অস্কার পান । বেস্ট পারফর্মন্সের জন্যে “ড্রাইভিং মিস ডেইজি” চলচ্চিত্রে ১৯৯০ সালে তিনি পান “গোল্ডেন গ্লোব” অ্যাওয়ার্ড এবং বেস্ট অ্যাক্টিং টিম হিসেবে অভিনেত্রী জেসিকা টেন্ডি’র সাথে “ড্রাইভিং মিস ডেইজি” চলচ্চিত্রের জন্যে পান “বার্লিন ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল” অ্যাওয়ার্ড । ২০১১ সালে পান আমেরিকান ফিল্ম ইনস্টিটিউট থেকে “লাইফ টাইম এচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড” । ফ্রিম্যান এ পর্যন্ত ৫৬ টি পুরস্কার এবং ৪৫ বার বিভিন্ন পুরস্কারের জন্যে নমিনেশন পান ।


ফ্রিম্যানকে টেলিভিশনের পর্দায় প্রথম দেখা যায় শিশুদের টেলিভিশন ওয়ার্কশপে বিভিন্ন চরিত্রে, ১৯৭১ সালে তাকে দেখা যায় “দ্য ইলেকট্রিক কোম্পানি”তে । পরবর্তীতে তিনি শিশুদের এডভেঞ্চার ঘরনার ফিচার ফিল্ম “হু সেইস আই কান্ট রাইড এ রেইনবো !”তে অভিনয় করেন । ১৯৭৩ সালে থ্রিলারধর্মী চলচ্চিত্র “ব্লেড” এ তাকে ছোট একটি চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যায় । ১৯৭৯ সালে মুক্তি পাওয়া চলচ্চিত্র “ জুলিয়াস সিজার” এ “কেস্কার” চরিত্রে অভিনয় করেন । প্রতিভাবান এ চলচ্চিত্র অভিনেতা ও নির্মাতা ১৯৮৯ সালে অভিনয় করেন মহাকব্যিক গৃহযুদ্ধের চলচ্চিত্র “গ্লোরি”তে, যাতে স্থান পায় আফ্রিকান ক্রীতদাসদের কথা ।


৯০ এর দশকে অভিনেতা ফ্রিম্যান যেন হলিউডের অভিনয় জগতে শক্ত অবস্থান নেয়া শুরু করেন । ১৯৯২ সাল তার “পাওয়ার অফ ওয়ান” এবং “আন ফরগিভেন” চলচ্চিত্র মুক্তি পায় । ১৯৯৪ সালে মুক্তি পায় তার “শোশাংক রেডেমশান” চলচ্চিত্র এবং ১৯৯৫ সালে “সেভেন” চলচ্চিত্রে ফ্রিম্যানের দেখা মিলে, যাতে ফ্রিম্যান অভিনয় করে গোয়েন্দা চরিত্রে । চলচ্চিত্রগুলোতে তার অভিনয়শৈলী দর্শকে দারুণভাবে নাড়া দেয় এবং তাকে একজন সুঅভিনেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে তুলে । ২০০৩ সালে জনপ্রিয় চলচ্চিত্র “ব্রুস অলমাইটি”তে তাকে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয়ে দেখে চলচ্চিত্রমোদীরা। ২০০৪ সালে আরেক বিখ্যাত অভিনেতা ক্লিন স্টুড এর পরিচালনায় “মিলিয়ন ডলার বেবি” চলচ্চিত্রে ফ্রিম্যান ক্লিন স্টুড এর সাথে জুটিবদ্ধ হয়ে অভিনয় করেন, এ চলচ্চিত্র তাকে এনে দেয় “অস্কার” পুরস্কারের স্বাদ । ২০১৩ সালে মুক্তি পায় তার অভিনীত চলচ্চিত্র “Now You See Me” .


ফ্রিম্যান এর আরও কিছু পরিচয় আছে, সাবলীল এ অভিনেতা একজন চলচ্চিত্র পরিচালক । তিনি একজন নামকরা বক্তা , এছাড়া মর্গান ফ্রিম্যান ১২ টি চলচ্চিত্র ও টিভি সিরিজের প্রোডিউসার । এ পর্যন্ত অভিনেতা হিসেবে তিনি ১০৬ টির অধিক চলচ্চিত্র ও টিভি সিরিজে অভিনয় করেন ।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই জুন, ২০১৪ সকাল ১১:১৪
১১টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদির হত্যাকান্ড ও সরকারের পরবর্তি করণীয়!

লিখেছেন আহলান, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৫১

হাদির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। সে দেশকে ভালোবেসে, দেশের মানুষকে ইনসাফের জীবন এনে দিতে সংগ্রাম করেছে। তাকে বাঁচতে দিলো না খুনিরা। অনেক দিন ধরেই তাকে ফোনে জীবন নাশের হুমকি দিয়ে এসেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব রাজ্যে উত্তেজনা: হাদির মৃত্যুতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪২

রোম যখন পুড়ছিল নিরো নাকি তখন বাঁশি বাজাচ্ছিল; গতরাতের ঘটনায় ইউনুস কে কি বাংলার নিরো বলা যায়?



বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদটি সবসময় ছিল চ্যালেঞ্জিং।‌ "আল্লাহর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২২


ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×