
Fortress of war বা যুদ্ধের দুর্গ , চলচ্চিত্রের নাম দিয়েই চলচ্চিত্রের গল্প ও বিষয়বস্তু সম্পর্কে প্রথমেই একটা ধারণা দিয়েছেন এর নির্মাতা আলেকজান্ডার কট । যুদ্ধের কাহিনীকে উপজীব্য করেই ১৩৮ মিনিটের এই রাশিয়ান চলচ্চিত্রে উঠে এসেছে জার্মান নাৎসি বাহিনীর হত্যাযজ্ঞের গল্প । চলচ্চিত্রটির মাধ্যমে পরিচালক যুদ্ধের দিনের মুহূর্তগুলো ফ্রেমে আবদ্ধ করার চেষ্টা করেছেন , আরেকবার মনে করিয়ে দিয়েছেন জার্মান নাৎসি বাহিনীর বর্বরতার কথা ।

এক কিশোরের চোখ দিয়ে দেখা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার ধ্বংসযজ্ঞের মুহূর্ত উঠে এসেছে “Fortress of war চলচ্চিত্রে । যে কিশোর সাশা একিমভ প্রেমে পরেছিল কিশোরী অ্যানা’র , কিন্তু যুদ্ধ যখন শুরু হয় তখন স্বাভাবিকভাবে সেই যুদ্ধে মানুষের স্বাভাবিক জীবনে আঘাত আসে এবং সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় মানুষের মানবতা । শত্রু পক্ষ মেতে ওঠে বিপক্ষ দেশের মানুষকে হত্যা করার ধ্বংস লীলায় । সেখানে নারী-শিশু – বৃদ্ধের কোন আলাদা স্থান নেয় , সবাই অবশ্যম্ভাবীভাবে সেই যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত হয় । কিশোর সাশা একিমভ এর প্রেমেও সেই যুদ্ধের ঝাপটা এসে পরে ।

এ চলচ্চিত্র দর্শকের জন্যে নির্মাণ করতে পরিচালক আলেকজান্ডার কট পাঁচজন লেখকের সহায়তা নিয়েছেন । পাঁচজন লেখকের সমন্বয়ে এ চলচ্চিত্রের গল্প প্রস্তুত হয় , যেই গল্পের পরতে পরতে জায়গা পায় নাৎসি বাহিনী দ্বারা ঘটানো হত্যাযজ্ঞের কথা , ধ্বংসের কথা , যুদ্ধের বর্বরতার কথা । সেই সময়ের পটভূমি কাগজে পরিচালকের জন্যে উঠিয়ে তুলতে লেখক এলেক্স দুদ্রায়েভ , ভ্লাদিমির এরিয়মিন, একাত্রিনা টিরডাতোভা , ইগর উগলনিকভ এবং কনস্টাটিন বরোভয়েভ ভূমিকা রাখেন ।
১৯৪১ সালের ২২ জুন রাত শেষ হয়ে ভোর আসছে , ঠিক এমন মুহূর্তে জার্মান নাৎসি বাহিনী রাশিয়ায় Brestskaia দুর্গের কাছে এসে পৌঁছায় তাদের “বারবোশা অপারেশন ” শুরু করতে । আবসা আলোয় Brestskaia দুর্গের মানুষ ঘুমিয়ে আছে তখন , কিন্ত ভোরের আলো ফোটার সাথে সাথে যে সোভিয়েত রাশিয়ার রেড আর্মিদের দুর্গে যে আচমকা আক্রমণের স্বীকার হবে কেউ কেউ আন্দাজ করতে পারেনি তখনও । শুরু হয়ে যাওয়া অতর্কিত এ হামলায় দুর্গে থাকা শিশু , নারী , বৃদ্ধরা একের পর এক ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকে ।

রাশিয়ার রেড আর্মিরাও একসময় প্রতিরোধ তৈরি করে । নাৎসি বাহিনীর অতর্কিত বিমান হামলা এবং গোলন্দাজ বাহিনীর হামলায় বিপর্যস্ত তখন রেড আর্মি । আর কিশোর সাশা একিমভ দেখছে তার কিশোর চোখ দিয়ে সেই যুদ্ধের ভয়াবহতা । কিভাবে কয়েকটি ঘণ্টার মধ্যে পাল্টে গেছে এতদিনের পরিচিত দুর্গের চিত্রপট । ভোর হওয়ার আগেও পরিচিত মানুষগুলো কি নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছিল , সেই ঘুম এখন কিভাবে চিরস্থায়ী না ফেরার দেশে চলে গেলো তা চোখের সামনে দেখতে থাকে কিশোর সাশা একিমভ ।

ছবির প্রাণ বলতে প্রথমেই বোঝায় ছবিটির গল্প এবং অভিনেতা - অভিনেত্রীদের অভিনয় । এ চলচ্চিত্রে কিশোর চরিত্রে অভিনয় করা কিশোর সাশা একিমভ অসাধারণ অভিনয় করেছেন ।একজন কিশোর কিভাবে একটা চলচ্চিত্রের প্রাণবিন্দু হয়ে চমৎকার একটা চলচ্চিত্রে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত অভিনয় দক্ষতা দেখিয়ে যায় তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ ছিল এ চলচ্চিত্রে সাশা একিমভ এর অভিনয় । রাশিয়ান এ চলচ্চিত্রে অভিনয় দিয়ে দর্শকের চোখের নজর কাটার মত অনেক দৃশ্য ছিল যাতে প্রতিটা অভিনেতা -অভিনেত্রী অভিনয় মুগ্ধ করে । কিশোর সাশা একিমভ এর পর সবচেয়ে বেশি নজর কাটেন রেড আর্মির তিন সেনা কর্মকর্তা কিঝহেভাটভ , ফমিন , গেভ্রিলভ । তাদের চোখ- মুখে যুদ্ধের দিনের মুহূর্তগুলো দারুণভাবে ফুটে উঠে । বারবার সেই চোখগুলো যেন কিছু কথা বলতে চায় , কিছু করতে চায় ।
চলচ্চিত্রটির ক্যামেরার কাজ , কস্টিউম ডিজাইন ছিল খুব প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য । একটা চলচ্চিত্রে যত বিষয়ে ভালো করলে সেই চলচ্চিত্রকে একটি ভালো চলচ্চিত্রের তকমা দেয়া যায় , তার সবকিছু বিদ্যমান Fortress of War চলচ্চিত্রে । কস্টিউম ডিজাইনের জন্যে এ চলচ্চিত্র পুরস্কার পায় । সাউন্ড , লোকেশনের সাজানো সবকিছুই ছিল একটা যুদ্ধের আবহ সৃষ্টি করার জন্যে আদর্শ । প্রতিটা বিভাগেই চলচ্চিত্রটি পুরস্কারের জন্যে মনোনীত হয় । সিনেমাটোগ্রাফির জন্যে "এশিয়া -প্যাসিফিক স্ক্রিন অ্যাওয়ার্ড" এ মনোনীত হয় ।
রুশ ভাষায় নির্মিত চলচ্চিত্রটি মুক্তি পায় ২০১০ সালে । বেলারুশ ও রাশিয়ায় দৃশ্যায়িত চলচ্চিত্রটি বক্স অফিসে $4,569,371 আয় করে । এতে কেন্দ্রীয় কয়েকটি চরিত্রে অভিনয় করেন আলেক্সি কোপাসভ, আন্দ্রে মারজলিকিন, পাভেল দিরেভিয়াংক , আলেকজান্ডার করশুনভ ।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে মার্চ, ২০১৫ রাত ৯:৩৬

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



