ফরাসি ভাষায় Train de Vie এর ইংরেজি অর্থ Train of life , যার বাংলা হচ্ছে “জীবনের ট্রেন” । বহতা নদীর মতন জীবনটাকে একটা চলন্ত ট্রেনের সাথে তুলনা করলে , সেই ট্রেন একটা সময় কোন একটা গন্তব্য বেছে নেবে । অম্ল-মধুর সেই গন্তব্য মানুষের জীবনে কতটা আপন হয়? জীবনটাকে মানুষ কতটা ভালোবাসে ? তা হয়ত মানুষ ঠিক উপলব্দি করে আবার করেনা । কবির লেখা কবিতায় কি আসলেই জীবনের পুরো রং টা উঠে আসে নাকি জীবনটা কোন রৈখিকতা পায় ? সেই ব্যাখ্যায় জীবনটা অন্যরকম পরিণতি পায় । গল্পের স্বাদ জীবনের প্রতিচ্ছবি হয়ে থাকে , তাতে জীবনের মুহূর্তগুলোই উঠে আসতে থাকে । জীবন কোন অর্থ খুঁজে পেতে চায় জীবনের মাঝেই । মানুষ সুন্দর একটা জীবন প্রত্যাশা করতে ভালোবাসে । আর সেই প্রত্যাশা নিয়ে ট্রেনের যাত্রীদের জীবনের কথা উঠে আসে ।
মধ্য ইউরোপের ছোট একটি গ্রাম । অন্য যেকোন সময় গ্রামটার মানুষের জীবনের ব্যস্ততা থাকতো শুধুই নিজেদের নিয়ে । কিন্তু কিছু মুহূর্ত আছে যা মানুষের মাঝে কিছু পরিবর্তন নিয়ে আসে । মানুষ আর প্রতিদিনকার মতন তাদের স্বাভাবিক জীবন অতিবাহিত করতে পারেনা । সময়ের স্রোতে মানুষকে নিজের পরিচিত ভুবন একসময় ছাড়তে হয় , সবকিছু নিজের মতন হয়না । পরিচিত আলো-বাতাস ছাড়তে হয় , ছাড়তে হয় নিজের বেড়ে ওঠা আবাসস্থলকে । জীবনটা এখানে অন্যরকম হয় , অন্যরকম সময় হয় । জীবনের মানে এখানে ভিন্নরকম ভিন্ন কিছু , ঠিক নিজের মতন সময় হয়না । সব যেন ঘটতে থাকে বৈপরীত্য ।
১৯৪১ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় । জার্মান নাৎসি বাহিনী ক্রমাগত ইহুদিদের হত্যা করছে ও বিভিন্ন এলাকা দখল করছে, আর এরকম একটা মুহূর্তে উদ্বিগ্ন মধ্য ইউরোপের একটা গ্রামের ইহুদি গ্রামবাসী বেঁচে থাকার জন্যে উপায় খুঁজতে থাকে । তাদের স্বাভাবিক জীবনেও ছন্দপতন ঘটে । তারা জানতে পারে ইহুদি হওয়ার অপরাধে জার্মান নাৎসি বাহিনীর কাছে তাদেরও হত্যার স্বীকার হতে হবে । তারা তাদের গ্রামের দিকেই এগিয়ে আসছে । গ্রামের নেতৃত্বস্থানীয়রা ঠিক করে একটা ট্রেন তৈরি করবে , যে ট্রেন তাদের নাৎসি বাহিনীদের হাত থেকে রক্ষা করে পৌঁছে দেবে নিরাপদ স্থান প্যালেস্টাইনে ।
গন্তব্য কি আসলে এতই সহজ , যেখানে চারপাশে ক্রমাগত জার্মান নাৎসি বাহিনীর আধিপত্য । বেঁচে থাকার অর্থ এ মানুষগুলোর কাছে পালিয়ে বেড়ানো হয়ে ওঠে । নিজেরাই তৈরি করে ফেলে নিজেদের ট্রেন । স্মৃতির গ্রাম , শৈশব সবকিছু নিজেদের মনে বন্দী করে ক্রমাগত ট্রেন তৈরি করতে মরিয়া হয়ে ওঠে । একসময় তৈরিও হয়ে যায় । কিন্তু ট্রেন চালাবে কে !!! গ্রামের কেউইতো কখনো ট্রেন চালায়নি । অদ্ভুত অভিজ্ঞতা আর নিজেদের মাঝে শুরু হয় আলোচনা । নিজেদের মধ্যে একজন আনকোরা মানুষ ট্রেন চালানোর দায়িত্ব পায় । যে মানুষ একদম একা , যে শুধুই মানুষকে ভালোবাসে । কিন্তু সে জানেনা তার জন্যে আধো কেউ অপেক্ষায় আছে কিংবা নাই । কিন্তু তবুও সেই মানুষটা আনন্দ খোঁজে , বোকাসোকা মানুষটা ঝুঁকি নেয় সামনে থেকে ট্রেন চালনায় । তাকেই প্রথম স্বীকার হতে হবে হয়ত জার্মান নাৎসি বাহিনীর সম্মুখে । ঠিক যেন হাতের মুঠোয় অনেকগুলো পরিচিত মানুষের জীবনের দায়িত্ব নিজের কাঁধে নেয়া । সাথে চলতে থাকে সময় থেকে মুক্তি পাওয়ার আশা ।
Celluloid Diary
ট্রেনকে ঘিরে ঘটতে থাকে ঘটনা , অন্যদিকে নাৎসি বাহিনী হন্যে হয়ে খুঁজতে থাকা । ফ্রেন্স ও জার্মান ভাষায় নির্মিত ছবিটি মুক্তি পায় ১৯৯৮ সালে ফ্রান্সে । ভিন্ন ভাষার এ চলচ্চিত্রে উঠে আসে একের পর এক যুদ্ধের সময়ের কথা । পরিচালক রাদি মিহাইলিনু’র লেখা অবলম্বনে চলচ্চিত্রে প্রাণ পায় যুদ্ধের দিনের সাধারণ মানুষের জীবনের তীক্ষ্ণ অভিজ্ঞতা । গুচ্ছ গুচ্ছ বেদনার গল্প , সাথে প্রতিনিয়ত স্মৃতি হাতড়ে বেড়ানো ও অজানা আশংকা আর নিজেদের মাঝে উঠে আসা বন্ধন ।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে মার্চ, ২০১৫ ভোর ৪:২৭