somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চিলেকোঠার প্রেমে (১ম পর্ব)

৩০ শে মার্চ, ২০১৩ দুপুর ১২:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দরজাটা খোলা মূলতঃ বাতাস আসার জন্য.. সেই যে কারেন্ট গেছে আবার কখন আসবে কে জানে.. আকাশটা দেখা যাচ্ছে ধূসর মেঘে ঢাকা.. সন্ধ্যা প্রায় হয়েই যাচ্ছে.. গোধূলীর আকাশটা দেখা যাচ্ছে না.. দেখা যেত যদি জানালা দিয়ে মুখ বাড়ানো হয়.. কিন্তু বিছানা থেকে উঠতে ইচ্ছে করছে না রাজুর.. বৃষ্টি মনে হয় আরেক পশলা নামবে.. আষাঢ় মাসে আকাশের কোন তালগোল নেই.. সারাদিন মেঘলা আকাশ আর হঠাত্‍ হঠাত্‍ গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি, মাঝে মাঝে তুমুল বৃষ্টি.. রাজুর চিন্তা এখন বৃষ্টি না আসা নিয়ে.. বৃষ্টি আসলেই পানি ঢুকে পড়ে রুমের ভিতরে.. বিছানাপত্র অনেক সময় বেখেয়ালে থাকলে ভিজে যায়.. চিলেকোঠায় থাকার শাস্তিটা মনে হয় এটাই.. রাজু মনে মনে চাইছে যেন বৃষ্টি না আসে.. বৃষ্টি নামলেই অযথা কাজ বাড়বে আর সময়মত যেতে পারবে না টিউশনিতে.. ঢাকার অলিগলি রাস্তাতে একটু বৃষ্টিতেই পানি উঠে যায় নয়ত কাদায় ভরে যায়..

-কি ব্যাপার দীপ্ত? লেখা রেখে অন্য কি চিন্তা করছো?
-না স্যার চিন্তা করছি রাতে যদি বৃষ্টি আসে তবে ছাদে যাব ভিজতে..
-আচ্ছা বৃষ্টি আসুক.. পড়ো এখন..
হায়রে কেউ বৃষ্টি আসার জন্য দোয়া করে আর কেউ না আসার জন্য.. মুচকি হাসল সে.. মাসের আজ অর্ধেকের মতো চলে গেছে বেতন এখনো পায় নি, বেতন চাওয়ার মত ইচ্ছা নাই তার.. দিবে হয়তো বা কোনো সমস্যায় আছে এটা ভেবে আর চায় না..

ফোনটা হঠাত্‍ বেজে উঠল..
-কই তুমি?
-বাসায় যাচ্ছি..
-একটু আসতে পারবা? আমার বাসার সামনে..
একটা হালকা দীর্ঘশ্বাস ফেলল রাজু.. এখন হেঁটে হেঁটে এসেছে সেই কলাবাগান থেকে.. আবার এখন যদি ওর বাসায় যেতে হয় তবে জিগাতলা যেতে হবে.. পকেটে টাকাও তেমন নেই.. হেঁটে যাওয়া ছাড়া উপায়ও নেই.. টাকা নেই বলে এখন কমদামের সিগারেট টানে.. সিগারেটের টাকা বাঁচিয়ে কেবল ওর বাসার সামনে যাওয়া যায়..
-কি চুপ হয়ে আছো যে?
-আচ্ছা আসতেছি..

আজকে রাফাকে নিচে দেখে কিছুটা অবাক হল রাজু.. অন্য সময় রাফা শুধু তাকে দেখতে চায় আর সে রাস্তায় দাঁড়ায়.. করিডোর থেকে দুমিনিট দেখে রাফা চলে যেত.. তারপর ফিরে আসত সে..
রাফার হাতে দেখল একটা খাম..
-ধরো এটা?
-কি এর মধ্যে?
-ঐটা জেনে তোমার দরকার নেই.. দিছি ব্যাস, এখন চলে যাও..
রাজুর মেজাজটা খারাপ হয়ে গেল.. এত কষ্ট করে আসল আর একটুও ভালো করে দেখতে পারল না.. গ্যারেজ থেকে বের হয়ে রাস্তায় গিয়ে খামটা খুলল..

এই মেয়েটা অনেক পাগলামি করে হয়তো খামের মধ্যেও পাগলামির কোন চিহ্ন আছে.. মাঝে মাঝে মেয়েটার পাগলামি আকাশ ছুঁয়ে যায়.. একবার রাত একটার সময় ফোন করে বলেঃ আমার না তোমাকে নিয়ে বৃষ্টিতে ভিজতে ইচ্ছে করছে.. আসো না এখন?
মোহাম্মদপুর থেকে রাতেই রওনা দিল ঝুম বৃষ্টির মাঝে..
রাজু আবার না করতে পারে না ওর কোন কথায়.. ভালবাসে বলে হয়তো ওর সব পাগলামিতে সায় দিয়ে যায়..

খামটা খুলে দেখলো কিছু টাকা.. অবাক হওয়াটা রাজুর বৈশিষ্ট্যের মধ্যে নাই.. তাই তেমন অবাক হল না.. এমন সময় রাফা ফোন দিলঃ কি দেখছো খামের ভিতর?
-টাকা দেওয়ার মানে কি? কিনে দিতে হবে নাকি কিছু??
-না, এই টাকা তোমার..
-এই টাকা আমার মানে? তোমার টাকা আমি নেব কেন?
-আরে বাবা, তোমার সবকিছু আমার না? আর আমার সবকিছু তোমার না? তাই এটা তোমার জিনিস তোমাকেই দিলাম.. তোমার হাতে টাকা নেই আমি জানি.. হ্যাঁ, আর শোনো এই টাকা পারলে একদিনেই খরচ করে ফেলো?
-না খরচ করব না..

চিলেকোঠায় ফিরতে ফিরতে রাত ১১টা.. এর মধ্যে বৃষ্টি হয়েছে.. রুম খুলে দেখে ভিতরে পানির ছড়াছড়ি.. মেজাজটা খারাপ হয়ে গেল.. পানি পরিষ্কার করতে হবে তারপর ঘুম..

এই চিলেকোঠা থেকেই ঘনিষ্ঠতা শুরু হয় রাফার সাথে.. রাফার প্রচন্ড দুর্বলতা আছে চিলেকোঠার প্রতি.. পরিচয়ের পর যখন শুনল রাজু চিলেকোঠায় থাকে, বলে উঠলঃ আমাকে নিয়ে যাবা? আমার অনেক দিনের স্বপ্ন চিলেকোঠায় থাকার.. বাবা মা মেয়ে হয়েছি বলেই দেয় না চিলেকোঠায় থাকতে,ছেলে হলে অবশ্যই দিত..
রাজু বললঃ অসুবিধা কোথায়? একেবারে চলে আসো আমার চিলেকোঠায়.. দুজন একই সাথে থাকব..
রাফা হেসে বললঃ ফাজিল পোলা.. শখ কত..
মাঝেমধ্যে রাফা আসে এই চিলেকোঠায়.. রুমের সবকিছু ঠিকঠাক মতো সাজিয়ে রেখে যায়.. যাওয়ার সময় বলে যায়ঃ পারলে আজকেই রুমটা অগোছালো করে ফেলো?

রাজু ওর জন্য একটা পায়েল কিনল আর এক বক্স চকোলেট.. এই মেয়েটা এখনো বাচ্চাদের মতো চকোলেট খেতে পছন্দ করে.. আজ বেতন পেয়ে অনেক টাকাই খরচ হয়ে গেল.. বিকেলের সোনালী রোদ মেঘলা আকাশের ফাঁক দিয়ে যেন আলো ছড়াচ্ছে.. প্রকৃতির এইরূপ দেখে মনটা ভালো হয়ে গেল তার.. আজ রাফার সাথে দেখা করার কথা তাই এগুলা কিনেছে.. মেয়েটাকে মাঝে মাঝে পাগলী আর রহস্যময় মনে হয়.. অনেকক্ষণ হয়ে গেছে দাঁড়িয়ে আছে রবীন্দ্র সরোবরের পাশে.. এখানেই আসার কথা রাফার.. অপেক্ষা করতে করতে একটার পর একটা সিগারেট টানতে থাকে.. এদিকে আবার সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে.. রাফাকে আবার সন্ধ্যার আগে বাসায় যেতে হবে..

আজ তিন দিন ধরে চেষ্টা করছে একটার পর একটা কল দিচ্ছে কিন্তু ফোন বন্ধ.. মেসেজগুলোও ডেলিভারড হচ্ছে না.. কি হলো মেয়েটার??? ভাবছে কি করলে ওর সাথে যোগাযোগ করতে পারবে কিন্তু কোন বুদ্ধিই মাথায় আসছে না.. সেদিন রাত আটটা পর্যন্ত রবীন্দ্র সরোবরে অপেক্ষা করেছে সে কিন্তু রাফা আসেনি.. সেদিন বিকেল থেকে ফোন বন্ধ.. অস্থিরতা চরম পর্যায়ে পৌছে গেছে তার.. রাফার বাসার কেউ তাকে চিনে না গেলে সমস্যা হতে পারে তাই যেতেও পারছে না.. তার কোন বান্ধবীকেও চিনে না.. রাফার সাথে তার কোন মিউচ্যুয়াল ফ্রেন্ডও নাই ফেইসবুকে.. মাথাটা পুরোই আউলে গেছে তার.. কাল রাত থেকে কিছুই খায় নি.. একটার পর একটা সিগারেট খেয়েই যাচ্ছে মাঝে মাঝে পানির তেষ্টা পেলে খাচ্ছে.


দ্বিতীয় পর্বঃ Click This Link

তৃতীয় পর্বঃ Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে মার্চ, ২০১৩ দুপুর ১২:২২
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পানির অপচয় রোধ: ইসলামের চিরন্তন শিক্ষা এবং সমকালীন বিশ্বের গভীর সংকট

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪৬

পানির অপচয় রোধ: ইসলামের চিরন্তন শিক্ষা এবং সমকালীন বিশ্বের গভীর সংকট



পানি জীবনের মূল উৎস। এটি ছাড়া কোনো প্রাণের অস্তিত্ব সম্ভব নয়। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন:

وَجَعَلۡنَا... ...বাকিটুকু পড়ুন

মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫….(৭)

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৭

ষষ্ঠ পর্বের লিঙ্কঃ মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫-….(৬)

০৬ জুন ২০২৫ তারিখে সূর্যোদয়ের পরে পরেই আমাদেরকে বাসে করে আরাফাতের ময়দানে নিয়ে আসা হলো। এই দিনটি বছরের পবিত্রতম দিন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে shoot করে লাভবান হলো কে?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:২৪


শরিফ ওসমান হাদি যিনি সাধারণত ওসমান হাদি নামে পরিচিত একজন বাংলাদেশি রাজনৈতিক কর্মী ও বক্তা, যিনি জুলাই গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে গঠিত রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র হিসেবে পরিচিত। তিনি ত্রয়োদশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধা রাজাকারি পোষ্ট ......

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৬


আমি স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার কাছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বা পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের তুলনা—এসব নিয়ে কোনো আবেগ বা নস্টালজিয়া নেই। আমি জন্মগতভাবেই স্বাধীন দেশের নাগরিক, কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা কেন ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন রাখেনি?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২০



কারণ, কোল্ডওয়ারের সেই যুগে (১৯৭১সাল ), আমেরিকা ও চীন পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো; ইন্দিরা বাংলাদেশে সৈন্য রেখে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর সাথে বিতন্ডায় জড়াতে চাহেনি।

ব্লগে নতুন পাগলের উদ্ভব ঘটেছে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

×