somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রূপগঞ্জে নিরপরাধ মানুষের মৃত্যু : যৌনহয়রানির প্রতিবাদে সোচ্চার শিক্ষকের প্রাণ নাশ : কিবোর্ড সিপাহীর দু'পয়সা

২৫ শে অক্টোবর, ২০১০ রাত ২:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১.
"রূপগঞ্জের সহযাত্রী"- নামের গল্পটি ২০০৪-তে যখন আমি লেখি, তখন রূপগঞ্জ নামটি আমার কল্পনার হলেও আমি জানতাম, এই নামে এই দেশে একটা জায়গা নিশ্চয় আছে । আর এখন আমি জানি, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ জায়গাটিতে বাপ-দাদার ভিটে মাটির ন্যায্য হিস্যার প্রতিবাদে, ন্যায্য মূল্য পাবার আকুতিতে, কিম্বা শেষ সম্বল ভিটে-মাটি না ছাড়ার যৌক্তিক প্রতিবাদে সেখানকার মানুষ নির্বিচার গুলিতে প্রাণ হারায় । গুলিতে তাদের প্রাণ হরণ করে, এই দেশের প্রাণ রক্ষাকারী হিসাবে নিয়োজীত বাহিনী ! তাদের অপরাধ, সরকারের প্রয়োজনে যে জমি সরকার, 'ইচ্ছাস্বাধীন' ভাবে নিয়ে নিচ্ছে, সে জমির মালিক হিসাবে তারা জমির বর্তমান বাজার মূল্য পেতে চায়, নামমাত্র দামে তাদের জমি দখলের বা বাপ-দাদার ভিটে - মাটি ত্যাগের সরকারী ফতোয়াকে তারা অস্বীকার করে !

আমাদের মুক্তিযুদ্ধ যখন চলেছিল, আমরা জানি, প্রাণের মায়া ত্যাগ করে, বাপ-দাদার ভিটে মাটির মায়া ছাড়তে না পেরে, সে মাটি কামড়ে মৃত্যুকে মাথার উপরের শূলের মতো ঝুলিয়ে রেখে অনেকে পড়েছিলো ।

২.
'ইভ টিজিং' শব্দটিতে কখনই এর ভয়াবহতা, এমনকি নিকৃষ্টতা পুরোপুরি উঠে আসেনা । 'যৌন হয়রানি' শব্দটিই এক্ষেত্রে যথার্থ হতে পারে । পুরুষের লুলুপতার শিকার নারী কতোভাবেই না হতে পারে, পুরুষ প্রজাতিটির সে কথা অজানা নয় । পুরুষ প্রজাতিটির কেউ কেউ বিকৃতিতে পশু প্রজাতি হয়ে উঠলে, তখন আমরা ধর্ষণের খবর পায়, কিম্বা অনেক ধর্ষণের খবর ধর্ষিতা এবং তার পরিবার সজ্ঞানে চেপে যায়, সামাজিক ভাবে আরো বেশী হেনস্থা না হবার লজ্জায়, সেসব খবর আমরা পাইনা । আমরা খবর পাই, পুলিশের হেফাজতে নারী তার সম্ভ্রম হারায় এবং অসহায়ত্বের শেষ বিন্দুতে , নারীটি তার স্বেচ্ছামৃত্যুতে প্রতিবাদ জানিয়ে যায় । তারও বহু বছর পর আমরা খবর পাই, কিশোরী, যৌন হয়রানীর শিকার হয় পুরুষের জীভ দ্বারা ; সহ্য ক্ষমতা ছাড়িয়ে গেলে কিশোরী তখন লজ্জায়, ঘৃণায় পুকুরে ঝাপিয়ে লজ্জার সঙ্গে নিজের জীবন ধুয়ে ফেলে চিরতরে। তারওপর আমরা খবর পাই , ৫ বছরের কিশোরী ধর্ষীতা হয়ে প্রাণ হারায় । তারও অনেকদিন পরে, 'যৌনহয়রানীর' বিরুদ্ধে আমাদের আইনপ্রস্তুতকারীরা সজাগ হয়ে আইন তৈরী করে, এবং তারও পরে, যৌনহয়রানীর প্রতিবাদ করতে গিয়ে নাটোরে শিক্ষক মিজানুর রহমান পিশাচদের আঘাতে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে হেরে যান । কিন্তু জিতে যান আদর্শের সঙ্গে । তার অগণিত ছাত্র-ছাত্রী যখন প্রিয় শিক্ষকের জন্য কেঁদে বুক ভাসায়, তখন তার ছাত্র যারা নন, তারাও হয়তো শ্রদ্ধার সঙ্গে প্রিয়জন হারাবার বেদনাবোধ করেন ।

বিনা প্রাণে আমাদের অর্জিত হয়না কিছুই । শ্রদ্ধেয় প্রতিবাদী শিক্ষক মিজানুর রহমানের প্রাণের বিনিময়ে এবার যদি, পথে ঘাটে , প্রান্তরে নারীর যৌন হয়রানীর প্রতিকার এদেশে কিছু মেলে !

৩.
কলম সৈনিকের সমার্থক হয়ে কি-বোর্ড সিপাহীরা কি-বোর্ডে ঝড় তুলতে পারে । তা দেখে টিপ্পনি কেটে কেউ অবজ্ঞার হাসির সঙ্গে শ্লেষ মিশিয়ে বলতেও পারে,- 'বাপু ! তোমাদের কি -বোর্ড বিপ্লবে কার কি উপকার প্রাপ্তী হয় ! আমি তবু, কি বোর্ড সিপহী-ই হতে চাই । কি-বোর্ডের ভাষাতেই প্রতিবাদ জানাতে চাই । প্রতিবাদের যে দরজাটা আমার জন্য খোলা সেটা কাজে লাগাতে চাই ।

সরকার তথা সেনাবাহিনীর অযৌক্তিক এবং অন্যায়ভাবে জমিদখলের প্রতিবাদে সোচ্চার মানুষদের স্যালুট জানাই । এই প্রতিবাদীরাই এই দেশকে নতুন মানচিত্র এবং পতাকা দিয়েছে । এই দেশকে টিকিয়ে রাখবে, প্রাণ দিয়ে হলেও অন্যায় এর প্রতিবাদ করতে পারা মানুষরাই ।


সবকিছু সহ্যে'র মধ্যে নিয়ে আসার আমাদের নিত্য প্রতিযোগীতায়, যে দু'একটা আলোর রেখা ধূমকেতুর মতো হঠাৎ আমরা দেখতে পাই, শ্রদ্ধেয় শিক্ষক মিজানুর রহমান এর মতো, বিরলপ্রজ সেইসব পথ দেখানো আলোর রেখাগুলোর প্রতি দাঁড়িয়ে সম্মান জানাই ।



"কলম সৈনিক এবং কি-বোর্ড সিপাহীদের হাতগুলো, এবং হৃদয়গুলো সচল থাক !"


১২টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×