somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলায় ফটোগ্রাফি: ৪ এপার্চার

২৭ শে অক্টোবর, ২০১০ সন্ধ্যা ৭:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

যারা ছবি তোলা শিখে ফেলেছেন তাদের কাছে এই পোষ্টের কোন মুল্য থাকবে না বিধায় এটি পড়ে দয়া করে সময় নষ্ট করবেন না।


লেখাটির কপিরাইট আমি নিজের কাছেই রাখছি!
© russel.mahmud

এই লেখাটি ধীরে ধীরে পুরোটা শেষ করার ইচ্ছে আমার আছে। এ লেকাটিকে আরো ভালো করতে কারো মন্তব্য কিংবা উপদেশ থাকলে জানাবেন। ধন্যবাদ।...



গত কয়েকদিন ধরে যেসব লেখা এখানে প্রকাশিত হচ্ছে তাতে একজন ডিজিটাল ফটোগ্রাফারের জন্য প্রয়োজনীয় প্রাথমিক ধারনা এখানে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। মুলত আমি চেষ্টা করছি যেন প্রাথমিক পর্যায়ে একজন ফটোগ্রাফার অটো মোড থেকে বেরিয়ে আসার প্রাথমিক ধারনাটি এখান থেকে পান। এর আগের পোষ্টগুলিতে মুলত এক্সপোজারের মুল তিন বিষয়ের দুটি আইএসও এবং শাটার স্পীড নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। আমাদের আজকের বিষয় তৃতীয়টি: এপার্চার।

মুল বিষয়ে যাওয়া আগে বলে নেই,এই এপার্চার বিষয়টিকে রপ্ত করতে পারলে আপনি আপনার তোলা ছবিগুলোতে ক্রিয়েটিভ হওয়ার সুযোগ পাবেন। এখানেই লুকিয়ে আছে ফটোগ্রাফির ম্যাজিক।

এপার্চার কি? সহজ কথায় এপার্চার হলো ছবি তোলার সময় লেন্স কতখানি খোলা রয়েছে সেটি। আপনি যখন ক্যামেরার শাটার রিলিজ বোতামে চাপ দিচ্ছেন, সেটি ক্যামেরার লেন্স/ ফিল্মের সামনে একটি ছোট্ট জানালা খুলে দেয়। তার কারনেই ক্যামেরার ভেতরে আলো প্রবেশ করতে পারে। এখানে এপার্চার হলো সেই জানালার আকার। জানালার আকার যত বড় হবে ততই বেশি আলো প্রবেশ করবে আর আকার যত ছোট ততই কম আলো প্রবেশ করবে।

সাধারনত এপার্চার মাপা হয় এফ-স্টপ দিয়ে। বেশিরভাগ সময় এগুলো এভাবে লেখা হয়, যেমন এফ/২.৮, এফ/৫.৬, এফ/৮, এফ/২২ এরকম। একটার থেকে আরেকটা এফ স্টপ-এ গেলে আলো হয় দ্বিগুন বৃদ্ধি পায় অথবা অর্ধেকে নেমে আসে। যেমনটা শাটার স্পিডের ক্ষেত্রেও আমি বলেছিলাম।

তাহলে একটু মনে রাখুন, শাটার স্পিড এক ধাপ বাড়িয়ে দিয়ে যদি আপনি এপার্চার একধার কমিয়ে দেন তাহলে আসলে আপনি একই পরিমান আলো আপনার ক্যামেরার ভেতরে প্রবেশ করতে দিচ্ছেন।

নতুন ফটোগ্রাফাররা একটি বিষয়ে একটু ঝামেলায় পড়েন এই ভেবে যে এপারচারের নম্বর যত বড় হবে ততই বেশি আলো ক্যামেরায় প্রবেশ করবে। আসলে এপার্চারের ক্ষেত্রে নম্বর যত কম হবে সেটি তত বড় জানালা নির্দেশ করবে। একই ভাবে বড় নম্বরগুলিতে জানালার আকার ছোট হতে থাকবে। তার মানে হলো এফ/২.৮ আসলে কিন্তু এফ/২২ এর তুলনায় অনেক বড় জানালা বোঝায়। শোনাতে উল্টো মনে হলেও এটিই মনে রাখতে হবে বেশী করে।

ডেপথ অব ফিল্ড এবং এপার্চার: ছবি তোলার সময় এপার্চারে পরিবর্তানের কারনে ছবিতে বেশকিছু প্রভাব পরে। এর মাঝে যেটি আপনি মনে রাখতে হয়তো উৎসাহিত হবেন সেটি হলো ছবির ডেপথ অব ফিল্ডের পরিবর্তন।

সহজ কথায় ডেপথ অব ফিল্ড হলো আপনার তোলা ছবিতে যে জায়গাটি ফোকাসে থাকে। ডেপথ অব ফিল্ড বেশী হলে পুরো ছবিটাতে যা আছে সবই পরিস্কার দেখা যাবে। ধরুন একটি সিড়ির ২০ টি ধাপ আছে, আপনি এক মাথা থেকে ওই সিড়ির ছবি তুলেছেন। বেশি ডেপথ অব ফিল্ড হলে দেখবেন ক্যামেরার কাছের দিককার ধাপ থেকে শুরু করে সবকটি ধাপই পরিস্কার দেখা যাচ্ছে। সহজ কথায় বলা যায় সাধারনত বড় নম্বরের এপার্চারে তোলা ছবির ডেপথ অব ফিল্ড বেশি হয়।

আবার ডেপথ অব ফিল্ড কম হলে দেখবেন, ছবির একটি অংশ পরিস্কার। আগে যে সিড়ির উদাহরনটি দিলাম, সেটি দিয়েই বোঝানো যায় ব্যাপারটি। ২০ টি সিড়ির মধ্যে যদি মাঝের দুটি পরিস্কার দেখা যায় আর সামনে পেছনে বাকি ধাপ গুলো ছবিতে ঝাপসা হয়ে আসে তাহলে ডেপথ অব ফিল্ড হলো ছবির পরিস্কার হয়ে আসা এক কিংবা দেড়ফুট ওই অংশটুকুই। সাধারনত কম নম্বরের এপার্চারে তোলা ছবির ডেপথ অব ফিল্ড কম হয়।

তারমানে হলো ডেপথ অব ফিল্ড এর উপরে এপার্চারের প্রভাব অনেক। এখানে লেন্সেরও প্রভাব আছে, সেটি নিয়ে আমরা পরে আলোচনা করবো আশা করি। ছোট নম্বরের এপার্চার যেটিতে সবচেয়ে বড় জানালা থাকে সেখানে ডেপথ অব ফিল্ড কম হয়। আর বেশি নম্বরের এপার্চার যেখানে জানালা ছোট হয়, সেখানে আপনি ডেপথ অব ফিল্ড বেশি পাবেন।

ঝামেলা না করে সহজে বলি, ছোট এপার্চার নম্বর মানে ছোট ডেপথ অব ফিল্ড, বড় এপার্চার নম্বর মানে বড় ডেপথ অব ফিল্ড।

সবচেয়ে ভালো হয়, ক্যামেরা নিয়ে বেরিয়ে দুর থেকে একটি ফুলের ছবি তোলার চেষ্টা করুন। একই জায়গায় দাঁড়িয়ে ফুলের ক্লোজ আপ ছবি তুলুন। প্রতিটি ছবি তোলার আগে এক ধাপ করে বড় এপার্চার দিন। ছবিগুলোর পার্থক্য নিজেই দেখুন। তাহলেই বুঝবেন এপার্চারের উপরে নিয়ন্ত্রন কতটা পার্থক্য এনে দিতে পারে ছবিতে।

কোথায় কেমন ডেপথ অব ফিল্ড: ধরুন আপনি দিগন্ত বিস্তৃত ফসলের মাঠ দেখাতে চাইছেন। যেখানে ক্যামেরার কাছের জিনিস থেকে শুরু করে দুরের আকাশ পর্যন্ত যা আছে তা পরিস্কার দেখাতে হবে। যাকে বলা হয় ল্যান্ডস্কেপ ফটো। এখানে ডেপথ অব ফিল্ড দরকার বড়। তাই বড় নম্বরের এপার্চার ব্যবহার করতে হবে এখানে।

অনদিকে কারো একক ছবি তুলতে চাইছেন। যাকে বলে, পোট্রেট ছবি। সেখানে আসলে কম ডেপথ অব ফিল্ড দরকার। একানে আরো দরকার আপনার সাবজেক্টের পরিস্কার ছবি এবং তার সামনে-পেছনে ব্লার। এমনটা চাইলে আপনার দরকার কম নম্বরের এপার্চার।

এছাড়াও ম্যাক্রো ছবি তোলার ক্ষেত্রে কম নম্বরের এপার্চার দরকার। কারন ম্যাক্রো ছবিতে মুল সাবজেক্টটিকেই সবার নজরে আসা প্রয়োজন। আর সাবজেক্ট ছাড়া বাকি সব কিছু থাকবে ব্লার বা আউট অব ফোকাস। সেক্ষেত্রে কম ডেপথ অব ফিল্ডই যুক্তিযুক্ত।

আশা করি এপার্চারের ব্যাপারটি বোঝাতে পেরেছি। এটি দিয়েই শেষ হচ্ছে এক্পোজার-এর প্রাথমিক পাঠ।

এক নজরে চারটি পাঠের আলোচ্য ছিলো

১. এক্সপোজারের প্রাথমিক পাঠ
২. আইএসও
৩. শাটার স্পিড
৪. এপার্চার

সামনে টিউটোরিয়াল গুলোতে আমরা দেখবো কিভাবে ডিজিটাল ক্যামেরার বভিন্ন সেটিংস এবং ফিচার গুলো নিয়ে কাজ করা যায়। এছাড়াও কিছু টিপস এন্ড ট্রিক্সও দিতে চেষ্টা করবো সবার জন্য।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে অক্টোবর, ২০১০ রাত ৮:০৪
১৯টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

×