অনুগল্প ■ অপেক্ষা
- হ্যালো, তোমার আসতে আর কতক্ষন লাগবে?
- প্রায় চলে এসেছি । আর এক ঘন্টার পথ বাকি আছে।
- আমি একটু পর বাসা থেকে বের হব, আমার আসতে এক ঘন্টা লাগবে।
- ঠিক আছে। তুমি রওনা দাও। আমি ঠিক সময়ের মধ্যেই বাস স্টেশন এ নেমে তোমার মুঠোফোনে কল দিবো।
গাড়ি ছুটছে তো ছুটতে। এই ছুটে যাওয়াতে কোন প্রকার ক্লান্তি নেই। আছে শুধু একরাশ মৃদু সুখের ছোঁয়া। জানালা দিয়ে শীতল বাতাসের ঝাপটা আজ বেশ উপভোগ করছে জিহান। কত জায়গাতে তো যেতে হয় বিভিন্ন প্রয়োজনে কিন্তু আজকের মতো এমন ভালোলাগা সৃষ্টি করে না তখন।
মুঠোফোন পকেটে রেখে ভাবনার জলে ডুব দিল জিহান। জানালা দিয়ে বাহিরে দৃষ্টি রেখে আজ থেকে ঠিক চার বছর আগের স্মৃতিগুলো মনের ঘরে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করলো সেই। হুড খোলা রিকশায় দুরু দুরু বুকে রোদ ঝলমলে দিনে দাপিয়ে বেড়ানো, মেঘলা আবহে লঞ্চ ঘাটে বসে বাদামের খোসা খুলতে খুলতে অপেক্ষার প্রহরগুনা কখনোবা রেল স্টেশনে প্লাটফরমে হাতে হাত রেখে মনের জমানো না বলা কথাগুলো চোখে চোখ রেখে এক নিঃশ্বাসে বলা। মুঠোফোনে ক্রিং ক্রিং টোন- ভাবনার করিডোরে হঠাৎ ছন্দপতন।
- হ্যালো
- শুনছি, বলো।
- আমি এসে পড়েছি। তুমি এখন কোথায়?
- এইতো, আমিও কাছাকাছি চলে এসেছি আর ১৫ মিনিট লাগবে।
- এতক্ষন লাগে আসতে? তোমার পরে বাসে উঠে আমি আগে চলে আসলাম। তাড়াতাড়ি আসো।
- প্লিজ, একটু অপেক্ষা কর। ডানে বামে কোন দিকে গাড়ি যাওয়ার জো নেই। অপ্রত্যাশিত ট্র্যাফিক জ্যাম এ আটকে পড়েছি।
- কোন পরিবর্তন হল না, ৪ বছর পরেও রয়ে গিয়েছো আগের মতো।
- প্লিজ,; প্লিজ
জিহান ভেবেছিল আজ অনেকদিন পর জারাকে সারপ্রাইজ দিবে। ওর আগে গিয়ে পৌঁছে যাবে । হাতে অনেক সময় নিয়ে তাই বাসা থেকে বের হয়েছিল। তা আর হতে দিল না। ছুটির দিনে সকাল সকাল ও রাস্তায় এত যানজট থাকতে পারে কল্পনাতীত। সব ভালোলাগা উবে গেল যানজটের কবলে বিরক্তির ছোবলে। সত্যি নিজের কাছে খুব খারাপ লাগছে। কতক্ষন মেয়েটি একা একা বসে থাকবে। আগেও যতবার দেখা হয়েছে প্রতিবার-ই জারা আগে এসেছে। এই দিকে রাস্তার জট যে খুলবে তার কোন শুভ লক্ষণ নেই। কে কার আগে যাবে তার চিন্তায় দুই পাশের রাস্তায় ব্লক হয়ে গেছে পুরাপুরি। হেঁটে যে যাবে তার ও কোন উপায় নেই। প্রায় সাড়ে তিন কি.মি. পথ বাকি আছে। যানজট না লাগলে অনেক আগেই পৌঁছে যেতে পারতো।
- মেসেনজার এ- কিথ কিথ (পিকচার মেসেজ)
- দেখোতো কেমন লাগছে আজকে আমাকে ?
- সত্যি! সত্যি ! অনেক সুন্দর দেখাচ্ছে।
- তাই বুঝি! তাড়াতাড়ি আসো; আর কতক্ষন একা একা বসে থাকবো; চারপাশের মানুষগুলো না কেমন বাঁকা চোখে তাকাচ্ছে বার বার।
- সোনা আরেকটু অপেক্ষা কর; জট খুলেছে; ভালো করে গাড়ি টানতে পারলে মাত্র ১০ মিনিট লাগবে।
- ঠিক আছে। এর চেয়ে বেশি সময় নিলে আমি সোজা চলে যাব বাড়িতে।
মুঠোফোনে জারার হাসোজ্জ্বল ছবি দেখে সব ক্লান্তি চলে গেল। অন্যরকম সুখের বাতায়ন ছুঁয়ে গেল জিহানের সারা দেহে। ভালোলাগা ভালোবাসাগুলো হয়তো এইভাবে মনুষ্য হৃদয়ে আনন্দের ঝড় তোলে। যেমনটি এখন বয়ে যাচ্ছে জিহানের হৃদয় ভিতরে।
- হ্যালো; আমি এসেছি। তুমি এখন কোথায় আছো?
- মুখে আত্ম তৃপ্তির হাসি নিয়ে (জারা) তুমি ওখানে দাঁড়াও সোনা; আমি আসতেছি।
▪ পূর্বের গল্প সমূহঃ
□ অনুগল্প ■ ছিটমহল
□ অনুগল্প ■ ভোট এবং ভূতুড়ে অভিজ্ঞতা
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে জুন, ২০২০ দুপুর ১২:২২