পৃথিবীটা যেন তাদের হাতের মুঠোয়। পাখিদের আকাশে কোন সীমানারেখা নেই। নেই কোন বাধা-বিপত্তি। যখন যেখানে খুশি যেতে পারে এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলে। এক দেশ থেকে অন্য দেশে। খাদ্যের সন্ধানে ব্যস্ত থাকে তারা। বিচিত্র তাদের সন্তান পালন, বাসা তৈরির কৌশল। ঝড়, বৃষ্টি, তুষারপাতসহ প্রকৃতির হাজারও প্রতিকূলতা থেকে বাঁচতে তারা পাড়ি জমায় হাজার হাজার মাইল দূরের দেশে। প্রাণী বিজ্ঞানীদের মতে, উপমহাদেশে ২ হাজার ১০০টি প্রজাতির পাখি আছে। তবে এর মধ্যে প্রায় সাড়ে ৩শ' প্রজাতির পাখি হিমালয় পেরিয়ে আমাদের দেশে চলে আসে। এরা শীতের অতিথি পাখি। এ দেশের পাখিপ্রেমীরা বিদেশ থেকে আসা এই পাখিদের অতিথি পাখি না বলে পরিযায়ী পাখি বলেন। পরিযায়ী পাখি মানেই পানিতে এসে বসা ২৫ প্রজাতির হাঁসকে বোঝানো হয়। মেটে রাজহাঁস, রাজহাঁস, মার্গেঞ্জার, নাকটা হাঁস, চখাচখি, রাজমণি হাঁস, বড় সরালি, ল্যাঞ্জা হাঁস, খুন্তে হাঁস, পাতারি হাঁস, ফুলুরি হাঁস, পিয়ং হাঁস, গিরিয়া হাঁস, সিথি হাঁস, নীল শির হাঁস, মান্ডারিন হাঁস, লালঝুটি ভূতি হাঁস, পাতি ভূতি হাঁস, মরচে রঙ ভূতি হাঁস, বিয়ারের ভূতি হাঁস, টিকি হাঁসসহ আরও চার প্রজাতির হাঁস।
■ মেটে বা ধূসর রাজহাঁস ■
■ কালো হাঁস ■
হাঁস দেখতে বেশ বড়, শীতে সংকীর্ণ হয়ে থাকা জলাশয়ে বসে, ফলে একসঙ্গে অনেকগুলো পাখি দেখা যায়। তাই আমাদের মনে গেঁথে রয়েছে অতিথি পাখি মানেই হাঁস। সেপ্টেম্বরের শুরুতে এরা ডেরা বাঁধতে থাকে বাংলাদেশে।
বাংলার ভূখণ্ডে মানুষের বসতির ইতিহাস পাখির পরিভ্রমণের চেয়ে অনেকটাই নতুন, মাত্র ২০ থেকে ৩০ হাজার বছর আগে বাংলায় মানুষের বসতি। তাই বরং বলা শ্রেয় যে বাংলার এ ভূখণ্ডে আমরাই অতিথি।
■ ডুবুরি হাঁস ■
অতিথি পাখি বিশ্বব্যাপী পরিবেশ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শীতের শুরুতে দূর-দূরান্ত থেকে উড়ে আসা হাজারও অতিথি পাখির কলতানে মুখরিত হয় বাংলাদেশের প্রকৃতি। দেশের বিভিন্ন হাওর-বাওর, ছোট-বড় জলাশয়ে মোট ৬৫৩ প্রজাতির পাখি আজ পর্যন্ত পাওয়া গেছে। এগুলোর মধ্যে প্রায় ৩০০ জাতের পাখি পুরো বছর আমাদের দেশে থাকতে পারে না। খাবারের খোঁজে, নিরাপদে বংশবিস্তারের জন্য তাদের এই ভ্রমণ।
■ উত্তরে খুন্তে হাঁস ■
পাখি বিশেষজ্ঞদের মতে, ডিসেম্বর-জানুয়ারি এ দু' মাসে সবচেয়ে বেশি পাখি এদেশে আসে। বাতাসে শীতের আমেজ লাগতেই আমাদের হাওর, বিল, চরাঞ্চলে দেখা যায় হাজার হাজার অতিথি পাখি। ইংল্যান্ডের নর্থ হ্যামশায়ার, সাইবেরিয়া কিংবা এন্টার্কটিকার তীব্র শীত থেকে বাঁচতে এরা পাড়ি জমায় দক্ষিণের কম শীতের দেশে। প্রকৃতিগতভাবেই এ পাখিদের শারীরিক গঠন খুব মজবুত। এরা সাধারণত ৬০০ থেকে ১৩০০ মিটার উঁচু দিয়ে উড়ে যায়। ছোট পাখিদের ঘণ্টায় গতি ৩০ কিলোমিটার। দিনে-রাতে এরা প্রায় ২৫০ কিলোমটার উড়তে পারে। বড় পাখিরা ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার অনায়াসে উড়তে পারে। আশ্চর্যের বিষয় এসব পাখি তাদের গন্তব্যস্থান সঠিকভাবে নির্ণয় করতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এসব পাখির রয়েছে বংশগত সূত্রে পাওয়া বিশেষ দিক নির্ণায়ক ক্ষমতা।
■ গিরিয়া বা জিরিয়া হাঁস ■
■ রাজহাঁস ■
শীতের পরিযায়ী পাখি পরবর্তী পর্ব সমূহঃ
⌂ শীতের পাখি পরিচিতি » হাঁস ■ রঙ বেরঙের শীতের পরিযায়ী পাখি » পর্ব- ২
⌂ শীতের পাখি পরিচিতি » হাঁস ■ রঙ বেরঙের শীতের পরিযায়ী পাখি » পর্ব- ৩
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জুন, ২০২০ সকাল ১১:৩০