সবদেশে সব যুগে এক ধরণের বলদের দল থাকে যারা উপযুক্ত সময়ে হাম্বা হাম্বা করে। এখন আমি কনফিউজড কেন এরা এরকম তা নিয়ে। আসলেই কি বোকা, না কি চরম চিকন শয়তান যাদের কোন বিশেষ প্রাপ্তিযোগ আছে অথবা উদ্দেশ্য আছে? প্রথম কারণটা প্রযোজ্য হলে তাদেরকে দেখে মনে হয় একদল মুরগী কেএফসির চিকেনের স্বাদ নিয়ে মুল্যবান মতবিনিময় সভা করছে। আর দ্বিতীয় কারণ প্রযোজ্য হলে কিছু বলার নেই। এই কারণের অস্তিত্ব বাংলাদেশে প্রচুর বিদ্যমান।
অপ্রাসঙ্গিক একটা কথা, পাগলা সব দলেই আছে। শাহবাগিদের বিপক্ষের কিছু পাগলাকে দেখছি 'হু যেই করুক ভালো হইছে। বাংলার মাটিতে নাস্তেক পশুদের ঠাই হবে না' ইত্যাদি ইত্যাদি বলে হুংকার দিতে। কেউ কেউ আছেন আবার 'খুন করাটা ঠিক হয়নাই তবে দেখো এ কি করছিলো' টাইপের মিনমিনে বয়ান নিয়ে আসছেন। এরা হচ্ছে ঐ প্রজাতির বুদ্ধিমান যারা শিয়াদের উপর হামলা হওয়ার পর বলতে থাকে 'এ ধরণের হামলা ঠিক না তবে দেখো শিয়ারা কিন্তু মুসলিম না'।
খুব বেশিদিন আগের কথা না। শাহবাগিরা এই দেশে পরিস্কার বিভক্তি তৈরী করেছিলো। স্বাধীনতার চেতনা। এই চেতনায় পোক্ত হতে হলে জামায়াত শিবিরকে, এবং তাদের সঙ্গদোষে সমাজচত বিএনপিকেও পরিত্যাগ করতে হবে। 'ঐ পত্রিকা পড়া যাবেনা। এই ব্যাংক বয়কট করো। ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানের লিষ্টি করো। স্কুল ভেঙ্গে দাও। ভাড়াটে তাড়িয়ে দাও। লিষ্টি ধরে ধরে সমাজ থেকে বের করে দাও। এই টিভিতে স্বাক্ষাতকার দিবো না, একজন বাংলাদেশী হয়ে কিভাবে এই টিভিতে চাকরী করো হু'!
আমরা শিখেছিলাম এই দেশে একমাত্র বৈধ দেশপ্রেমিক দল হলো আওয়ামী লীগ। তাদের সাথে থাকা বামপন্থী দলগুলো স্পর্শের কল্যাণে ক্ষত্রিয় শ্রেণীতে উন্নীত হয়েছে। আর 'বাকী সব মেথর সম্প্রদায়'! আওয়ামী লীগের সাথে একমত না? সুতরাং বাংলাদেশ বিরোধী। বড় হুজুর মাওলায়ে চেতনা জাফর ইকবাল ফতোয়া দিছিলেন, আওয়ামী লীগ হলো স্বাধীনতার দল। শুনেছিলাম 'হু দরকার হলে কয়েক কোটি মানুষ মেরে ফেলতে হবে অসুবিধে নাই। পছন্দ না হলে নিজের দেশ পাকিস্তান চলে যাও'।
কিন্তু নিয়তির নির্মম পরিহাস। সেই বাঙালীয়ানা ডিভাইডের মঘা মঘা উদ্যোক্তারা এখন আচমকা সুর পাল্টে ফেলেছেন। যুদ্ধের উন্মাদনার মাঝে দেখি তারা কোমল প্রভাতী রাগভৈরবীর টান মারছেন। বঙদেশীয় শাহবাগি প্রগতিশীলদের মুখে কবি লেখক শিল্পী সমাজের জবানে আজ নতুন বয়ান, 'বিচার চাই না, শুভবুদ্ধির উদয় হোক! ঘৃণার চাইতে ঐক্যের ডাক বড়'!! মাইরি। 'এ কী কথা শুনি তব মন্থরার মুখে'!! এইসব দেখলাম আমরা। দেখলাম কিভাবে ঘৃণার চাষাবাদ হয়। শুধু চাষাবাদ না। বাম্পার ফলন। গ্রেট ডিভাইড।
কেনু? কেনু? ঐক্যের ডাক এখন বড় হোবে কেলা? কুতায় গেলু আমার মুক্তিযুদ্দের মহান চেতুনা? কুতায় আমাকে হিসাব দাও!! ফিরিয়ে দাও আমার মুক্তিযুদ্দ!
যখন গনতন্ত গলা টিপে হত্যা করে হলো, যখন বিনাবিচারে অসংখ্য মানুষকে মারা হয়েছে, মব লিঞ্চিং করে ফাঁসি দেয়া হয়েছে, রিমান্ডে অত্যাচার করা হয়েছে পাইকারী দরে ক্রসফায়ার করা হয়েছে তখন শুভবুদ্ধির উদয় হয়নাই। এখন রহস্যজনকভাবে নিজেরা মারা যাওয়ার সময় অনেক শুভবুদ্ধি বায়া বায়া পড়তেসে। সিসিটিভি ফুটেজ পুলিশে নিয়ে যাওয়ার পর হারায়া গেলে, অথবা সিসিটিভি বন্ধ থাকলে, কিংবা মটর সাইকেলের রঙ পাল্টায়া গেলে এইরকম অনেক শুভবুদ্ধির উদয় হয় আর কি।
মনে পড়ে ছোটবেলায় সাধারণ জ্ঞান বইয়ে একটা কমন প্রশ্ন ছিলো, বিড়াল কখন ঘাস খায়?
এদিকে আরেক দল বিড়াল এখনো জোরসে ম্যাও ম্যাও চালিয়ে যাচ্ছে, এরাও অবশ্য ঘাস খাবে সময় হলে। যখন জুমার নামায পড়তে গিয়ে তার অথবা তার ভাইয়ের হাত-পা বোমায় উড়ে যাবে, যে কোন দিন বাংলাদেশের কোন মসজিদ অথবা স্কুলের বিস্ফোরিত ছিন্নভিন্ন ছবি এসে যাবে পত্রিকায়, তখন এদেরও শুভবুদ্ধির উদয় হবে। কারণ কবিগুরু বলেছিলেন, জগতং বিড়ালং ঘাস ভক্ষণং তপঃ। অর্থ্যাৎ, জগতের নিয়ম হলো সকল বিড়ালকেই কখনো না কখনো ঘাস খেতে হয়।
অভিজিত রায়ের বাবা অজয় রায়ও বাবা, এবং ফয়সল আরেফিন দীপনের বাবা ফজলুল হকও বাবা। কিন্তু দুই বাবার মাঝে বড় একটা পার্থক্য আছে। অজয় রায় নিজ ছেলেকে হারানোর পরও সাহস করে সত্য কথা বলতে পারেননি, বলতে পারেননাই তার ছেলে কিভাবে বাংলাদেশের নোংরা রাজনীতির বলি হয়েছে। কিন্তু ফজলুল হক এতো কষ্টের মাঝেও শান্তভাবে বলেছেন, 'আমার ছেলে হত্যার বিচার দরকার নেই'।
সত্য কথার বিশেষ একটা শক্তি আছে। ফজলুল হকের এ কথার পর অভিজিত রায়ের স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যাও ফেসবুকে ষ্ট্যাটাস দিয়ে এখন এক সুরে গান ধরেছেন, 'আমিও কোনদিন অভিজিত হত্যার বিচার চাইতে আসবো না'। বিনোদন পেলাম। কেন গো? মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ পদক্ষেপ ইত্যাদি ক্ষেপের মধুর মধুর মজা এক নিমেষে বাতাসে উবে গেলো? মাইরি বলচি দিদি যা দেকালেন আর কি! ফজলুল হকের এ কথাটা নগন্য এবং সামান্য মনে হতে পারে, কিন্তু আসলে এই কথার শক্তি এবং ভার অনেক বেশি। সুতরাং যাদের সমস্যা আছে তাদের অনেক জ্বলুনি হবে।
জ্বলুনির প্রাথমিক উদাহরণ হিসেবে আওয়ামী লীগের অন্যতম পান্ডা মাহবুবুল আলম হানিফ কিছু কথা বলেছে। এর মধ্যে একটা হলো 'একজন পিতা হয়ে পুত্র হত্যার বিচার চান না, এটা পিতা হিসেবে আমাকেও লজ্জ্বিত করেছে'। পাগলা হানিফের আবেগি লজ্জ্বাও বিনোদন দিলো। স্বীকার করতেই হবে যে পলিটিশিয়ানরা বাংলাদেশের শাহবাগি তরুণ প্রজন্ম থেকে আবেগ ব্যবহার করার আধুনিক টেকনিকগুলো ধীরে ধীরে শিখে নিচ্ছে।
তবে হানিফের আসল মর্মবেদনা অন্য কোথাও 'হয়তো তার পিতা বিএনপি জামায়াতের মতাদর্শে বিশ্বাসী বলেই পুত্র হত্যার বিচার চাননি। নিজ দলের লোকদেরকে বিচারের কাঠগড়া থেকে বাঁচাতে পুত্র হত্যার বিচার চান না দীপনের বাবা'। কিছু বলার নেই ছোট্ট একটা কথা ছাড়া। হানিফ এখন আর মানুষ নেই, সে পুরোপুরি আওয়ামী শুয়োর হয়ে গেছে।
হানিফের মতো পশুদের জ্বলুনির কারণটা অবশ্য খুব সাধারণ। এরা বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থাকে ফাঁপা করে দিয়েছে। সুতরাং ফজলুল হক যখন বলেন 'বিচারের দরকার নাই' তখন 'রাজার গায়ে কাপড় নাই' এই কথাটা চিৎকার করে সবার সামনে বলে দিয়ে উলঙ্গ রাজাকে বিব্রত করা হয়। এই স্পর্ধা রাজার পারিষদদেরকে কষ্ট দেয়। বিচারের দরকার নাই মানে! আমরা বিচার করবোই হু। বিচার করতে করতে স্বাধীনতার চেতনা একদম পোক্ত করে ফেলবো ।
আমাদের শ্রদ্ধেয় ষাড় বহুদিন যাবত ট্যাঁফোঁ করছেন না। তিনি কি এখন একটা সাদাসিধে পয়দা করবেন 'তোমরা যারা বিচার চাওনা তোমরা স্বাধীনতার শত্রু'? শামিম ওসমান হুংকার দিয়েছিলো 'খেলা হবে', আওয়ামীরা ওভাবে সমস্বরে হুংকার দিতে থাকবে 'বিচার হবে'। দরকার হলে শত শত জর্জ মিয়া তৈরী করা হবে।
আমি সেই দিনের অপেক্ষায় আছি যে দিন, হানিফ যে কবে চোখ পিটপিট করে বলবে দীপনের বাবাও হত্যার সাথে জড়িত ছিল।
বিনোদন ইজ এভ্রিহোয়ার। এন্ড ট্রাই টু এনজয় ইট!!!
সবাইকে ধন্যবাদ ও শুভ কামনা রইল।
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত @ নীল আকাশ, নভেম্বর, ২০১৫