ছাদে হাঁটতে হাঁটতে আড়চোখে আবারও তাকালো নূপুর। আজও বাসার সামনের পার্কটাতে বসে আছে ছেলেটা। পরনে জিন্স প্যান্ট আর গায়ে সবুজ রংয়ের পোলো গেন্জী। হাতে প্রতিদিনের মতোই একটা রক্তলাল গোলাপ ফুল। কার্বন ফ্রেমের চশমার আড়ালে শান্ত দুইটা চোখে ওদের বাসার ছাদের দিকে তাকিয়ে আছে। প্রথম দিকে নূপুর এইসব তাকানো'কে খুব একটা পাত্তা দিত না। কিন্তু গোলাপ ফুল বলে কথা, তাও আবার রক্তলাল। দেখলেই বুকের মাঝে কেমন যেন আইঢাই করে! আজ নিয়ে প্রায় পনেরদিন। মায়া মায়া চোখে ছেলেটার দিকে একবার তাকায় নূপুর। যতক্ষণ ও ছাদে থাকে ততক্ষণ ছেলেটা বসে থাকে হাতে ফুলটা নিয়ে। আহ! এত ভালাবাসা বুকে নিয়ে কিভাবে ছেলেটা এত নিশ্চুপ হয়ে বসে থাকে? ওর খুব জানতে ইচ্ছে করে।
গতকালকে নূপুর রিকশা নিয়ে বাসার সামনে থেকে মার্কেটে যাচ্ছিল। পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখে ছেলেটি আগের জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে। বেশ কয়েক দিন হলো ছেলেটি ওকে ফলো করছে। কিন্তু কেন? ছেলেটি কি তাহলে নূপুর'কে ভালোবাসে ? যদি বেসেই থাকে তাহলে সাহস করে বলে ফেললেই তো পারে। ভীতুর ডিম কোথাকার, ফোন নম্বর চাইতে সাহস না পেলে ফেসবুক আইডিটা তো চাইতে পারে। অদ্ভুত, মুখে বলতে সাহস না থাকলে ম্যাসান্জারে গদগদ প্রেমের একটা sms করুক। ইচ্ছে করছে, যেয়ে ছেলেটার সব ভয় কাটিয়ে দিতে! কিন্তু এভাবে আর কত দিন......
ছেলেটিকে নিয়ে কি বান্ধবীদের সঙ্গে কি আলাপ করা যায়? নাহ, সবাই মিলে পঁচাবে। বলবে, এমন একটা গাধা ছেলে তোর প্রেমে পরেছে? তাহলে ফেসবুকে একটা স্ট্যাটাস...নাহ, সেখানেও সমস্যা আছে, সবাই জেনে যেতে পারে। তাহলে কি করবে এখন ও? বিষয়টা তো সহজে হজমও করা যাচ্ছে না। ছেলেটির চোখ তো নয় যেন ঘায়েল করার যন্ত্র। মুখ টিপে টিপে হাসে নূপুর। বোকা ছেলে! এভাবে কি প্রেম করা যায়! এত ভীতু হলে হবে?
পরদিন সকাল থেকেই বৃষ্টি, কয়েকদিন আগে হলেও নূপুর ভার্সিটিতে যেত না। মেঘলা দিন খুব ভালো লাগে ওর। কিন্তু আজকের বিষয়টা ভিন্ন, বাইরে ওকে বেরোতেই হবে! আজ নূপুর শাড়ি পরবে, নীল শাড়ি, হাতে পরবে কাঁচের চুড়ী। আচ্ছা ছেলেটি কি হলুদ পাঞ্জাবি পরবে আজ? কী জানি। বাসা থেকে বাইরে যেতেই চোখে পড়ল দুটো কদমফুল হাতে ছেলেটি দাঁড়িয়ে। কদমফুল দেখে বুকে ঢুম করে একটা ধাক্কা খেল নূপুর। এত রোমান্টিক ছেলেটা। ওর চোখে যে প্রায় জল আসার উপক্রম।
ছেলেটির দিকে এগিয়ে গেল ও। ভীতুটার ভয় আজকে কাটাতেই হবে। এত ভয় পাবার কি আছে? ও কি বাঘ না ভাল্লুক?
নূপু্র'কে এভাবে এগিয়ে আসতে দেখে ছেলেটি অপ্রস্তুত হয়ে গেল। কি বলবে বুঝতে পারছে না।
নূপুর কাছে গিয়ে বললঃ
- আপনি একটা ভিতুর ডিম। আমাকে এত ভয় পান কেন?
- স্যরি
- একটা সহজ বাংলা কথা উচ্চারণ করে মুখ ফুটে বলতে পারেন না। এভাবে আমার জন্য কতদিন এখানেই বসে থাকবেন?
ছেলেটি অবাক হয়ে গেল। কিছুটা ইতস্ততঃ করে বললোঃ
- ইয়ে মানে, আপনি আসলে যা ভাবছেন ব্যাপারটা তা নয়।
ঠিক সেই মুহূর্তে আরেকটা রিকশা এসে দাড়ায় সেখানে। ছেলেটি গটগট করে সেদিকে হেঁটে চল যায় আর তারপর রিকসায় যেয়ে উঠে।
নূপুর তাকিয়ে দেখে, রিকশায় একটি মেয়ে লাল রংয়ের শাড়ি পরে বসে আছে।
ছেলেটি মেয়েটির হাতে কদমফুলগুলো দিয়ে রিকশায় মেয়েট্রা পাশে যেয়ে বসলো
নূপুর হতভম্ব হয়ে গেল। হায় খোদা, এর মানে এত দিন ও যা ভেবে এসেছে তার সবই ভুল?
ছেলেটি অন্য একটা মেয়ের জন্য এখানে প্রতিদিন এসে অপেক্ষা করতো!
আর ও কি না......................
সবাইকে ধন্যবাদ ও শুভ কামনা রইল।
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত @ নীল আকাশ, আগস্ট, ২০১৮
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ সকাল ১০:৫৭