somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সাজেক: পোষ্টারের মত সুন্দর

০৭ ই এপ্রিল, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অনেকদিন কাজের চাপে হাঁপিয়ে উঠেছি সবাই, ঘুরতে যাওয়া দরকার, কথাটা বেশ কয়দিন ধরেই আমাদের মুখে মুখে ঘুরছে। আগের সপ্তাহে তিন দিন বন্ধ ছিল, কিন্তু তার সদ¦ব্যবহার করতে পারিনি। কি আর করা পরের সপ্তাহে (০৩.০৪.১৫-০৪.০৪.১৫) আর মিস করলাম না। সম্ভাব্য সবাইকে ফোন দিলাম কিন্তু সাড়া পেলাম ছয় জনের কাছ থেকে। ঠিক হলো, আবার পাহাড়ে যাওয়া যাক। টিকিট কাটলাম খাগড়াছড়ির, শ্যামলী পরিবহনের, কলাবাগান, ঢাকা থেকে উঠব। গন্তব্য হালের ক্রেজ ’সাজেক ভ্যালী’। নির্ধারিত রাতে সবাই হাজির কলাবাগান বাস কাউন্টারে ঠিক রাত দশটাই। খাগড়াছড়ি পৌছালাম সকাল ৭.৩০ টায়, সারারাত ধরে ঝড় বৃষ্টি হয়েছে, শহরের বিদুৎ সংযোগ বিছিন্ন। বাস থেকে নেমে অগত্য পাবলিক টয়লেটে প্রাতকার্য সেরে, নাস্তা করার জন্য বের হলাম। খাবার হোটেলের ব্যাপারটা আবার আমাদের নির্দিষ্ট করা, আশপাশে নোয়াখালী, কুমিল্লা অথবা ফেনীর হোটেল খুঁজি, এর একটা কারণ আছে সেটা হল তারা অন্যদের চেয়ে বেশি প্রফেশনাল। যাক একটা ফেনী হোটেল পেয়ে গেলাম, উদর পূর্তি করে নাস্তা সেরে বের হলাম চাঁন্দের গাড়ীর খোঁজে। আমি এদিক ওদিক তাকাচ্ছি, হটাৎ তিনজন অভিযাত্রী টাইপের লোক এসে বলল ভাই আপনারা কি সাজেক যাবেন? বললাম হুঁ। ওরা বলল ’আমরা মাত্র তিন জন, চাঁন্দের গাড়ীর ভাড়া অনেক বেশি পড়ে যাচ্ছে’, তাই এক সাথে যাওয়া যায় কিনা। আমি মনে মনে ভাবলাম ’ভাই আমি তো আপনাদেরই খুঁজছি। অতপর আমরা ছয় জন আর ওরা তিন জন মোট নয় জনের গ্রæপ করে ফেললাম। দিলীপ দা’র (ড্রাইভার) চান্দের গাড়ী ঠিক করলাম সাড়ে সাত হাজার টাকা আসা-যাওয়া, সে আমাদের আলুটিলা, রিছাং ঝরণা আর সাজেক নিয়ে যাবে।

প্রথম রিছাং ঝরণা দিয়ে যাত্রা শুরূ হল। এক দেড় কিলোমিটার দূরে গাড়ী রেখে ঝরণার উদ্দ্যেশে গেলাম। বেশ খানিকটা খাড়া ঢাল, নামতে তেমন কষ্ট হলো না। অনেকদিন পর ঝরণার সামনে গীয়ে স্থির হয়ে দাড়ালাম, এরপর আর একটু এগিয়ে গেলাম, ঝিরি ঝিরি পানির ছটা শরীরে এসে লাগল, অদ্ভুত ভাল লাগা হৃদয় ছুয়ে গেল। এর আগে জাদিপাঁই, হাঁমহাঁম ঝরনা গেছি। অনেক চড়াই উৎরাই পার হয়ে সেসব জায়গায় পৌছেছিলাম তাই সেখানে পেয়েছিলাম জয় করার আনন্দ, আর রিছং গীয়েও আনন্দ পেলাম, তা হলো খোঁশমেজাজী ভালোলাগা।
রিছং শেষে গেলাম ’আলোক নবগ্রহ ধাতু চৈত্য বৌদ্ধ বিহার’, এটি ঠিক আলু টিলার পাশেই। আহ্ কি সুন্দর, দেখে মনে হলো একটু আগে কেউ সোনালী রং করেছে ।
পাশেই আলুটিলা গুহা, হেঁটে হেঁটেই সেখানে গেলাম, হালকা নাস্তা করে টিকিট কেটে আর তিনটা মশাল কিনে নিয়ে গুহাতে প্রবেশ করলাম, মিনিট দশেক লাগল এমাথা থেকে ওমাথা পৌছাতে, ঘুটঘুটে অন্ধকার ভিতরে, কোথাও কোথাও হাঁটুজল। এই গুহার নাম ’রহস্যময় গুহা’ কেন তা আর বুঝতে বাকি থাকল না! কিছুটা রহস্য তো আছেই।
গুহা ভ্রমন শেষ করে এবার আমাদের সাঁজেকের পথে এগিয়ে যাওয়া। যে যার মতো চাঁন্দের গাড়ীর ছাদে গিয়ে উঠল। আসলে ভুল আমরাই করেছি, উচিৎ ছিলো গাড়ীর ছাদ ভাড়া নেওয়া, তাইলে মনে হয় আরো কমে ভাড়া পাওয়া যেত। এবার শুরু হলো উল্লাস, জীবনে যে একবারও চান্দের গাড়ীর ছাদে পাহাড়ি রাস্তায় ভ্রমন করেনি, তা সে যতই ক·বাজার বীচে সূর্য্য স্নান করূক বা রাঙ্গামাটির ঝুলন্ত ব্রীজে ঝুলে থাকুক তাদের সাধ্যই নাই, কেন মানুষ জীবনের মায়া ত্যাগ করে চাঁন্দের গাড়ির ছাদে উঠে তার কারণ বুঝে! (লাইনটি শরৎবাবুর ’বিলাসী” গল্প থেকে ধার করলাম)। পথে থামলাম দিঘীনালা। পাহাড়ীকা হোটেলে দুপুরের খাওয়া সারলাম। সেখানে লম্বা বাশেঁর তৈরি হুকার মত কিছু একটা খাওয়ার ট্রাই করে ধোঁয়া বের করতে ব্যর্থ হলাম। পথে কিছু বাংলা (!) জিনিসপত্র কিনে নিলাম....। অতপর বেলা সাড়ে তিনটার দিকে গীয়ে পৌছালাম সাজেক। গীয়ে উঠলাম ’আলো রির্সোট’ (আমার কাছে ওদের ফোন নং আছে লাগলে আওয়াজ দিয়েন)। সাজেক ক্যামন লেগেছে তার বর্ননা নিচে দিব। এরপর সবাই ফ্রেশ হয়ে আমরা বেরিয়ে পড়লাম, হ্যাঁ এখানে ঘোরার জায়গা আছে প্রচুর, পাহাড়ের ঢালে আনমনে বসে থাকার ব্যবস্থা আছে, আছে চায়ের দোকানে বসে আদিবাসীদের সাথে খোশগল্প করার সুযোগ। দোলনা আছে। দুলতে দুলতে অনেক দুরের দেশে ভারতের মিজোরাম পাহাড় দেখা যায়। পাহাড়ের নীচে মেঘের আনাগোনাও চোখে পড়ে। আর আমরা যেদিন গেছি তখন ছিল ভরা পূর্নিমা, পূর্নিমার আলো পেয়েছিলাম রাত আটটা পর্যন্ত, যতক্ষন পূর্নিমার আলো ছিল ততক্ষন পাহাড়টা অন্যরকম লেগেছিল। এরপরেই আবার আকাশে মেঘের আনাগোনা। আমরা রির্সোটে ফিরে গীয়ে বাংলা (!) খাবারে মনোনিবেশ করলাম।
উঠলাম ভোর চারটায়, উদ্দেশ্য ভোর রাতের পাহাড়ের আকাশে তারার ঝিলিমিলি দেখা (যা একবার দেখেছিলাম কেওকেরাডং চূড়ায় বছর তিনেক আগে)। তা আর এবার দেখা হল না, কারণ আকাশে কালো মেঘের ঘনঘটা।
শেষমেষ উদ্দেশ্যহীন ভাবে পশ্চিম দিকে সবাই হাঁটা শুরু করলাম, শুনেছি সামনে নাকি একটা গ্রাম আছে। ঘন্টা খানেক হাটার পরে লুসাই পাহাড়ের উপর একটা গ্রাম দেখতে পেলাম। গ্রামের নাম ’কংলাক’। আহ্ পাহাড়ের উপরে অসাধারণএকটা জনবসতি। কি চমৎকার ছিমছাম একটা গ্রাম। আর গ্রামের মানুষগুলি অসাধারণ, বিশেষ করে বাচ্চারা, আমাদের আস্তিন থেকে তাদেরকে চকলেট দিলাম, মিশলাম তাদের সাথে, অন্যরকম ভালো লাগা আমাদের জন্য কারণ তারা আমাদেরকে আগন্তুক মনে করেনি। তারা খুবই মিশুক প্রকৃতির। আর কংলাক গ্রাম থেকে সাজেকের (রূইলুই পাঁড়া) দৃশ্যও মনোরম, দূর থেকে লাল নীল ঘরগুলি পোষ্টারের মতো লাগছিল। মনে হলো এতক্ষনে আমাদের সাজেক আসা সার্থক হলো। এই গ্রামে যদি না আসতাম তাহলে হয়ত এই ভ্রমন নিয়ে ভবিষ্যতে রোমন্থন করার মতো কোন স্মৃতি থাকত না।
এবার আসি সাজেকের গল্পে। ছবির মতো সাজানো, দিনে দুইবার পুরো এলাকা ঝাড়ূ দেয়, একটা পাতাও পড়ে থাকে না। হটাৎ ছবি দেখে যে কেউই স্কটল্যান্ড বা ইংল্যান্ডের একটা শহর ভেবে ভুল করতে পারে। একেবারে সম্পূর্ন রঙিন।
তবে আমার ভালোলাগার জায়গা অন্য রকম, ইট পাথরের শহর থেকে গীয়ে আবার অই রির্সোট-হোটেল-মোটেলের আলিশান ঘরের চেয়ে, বগালেক, কেঁওকেরাডং, বাকলাইপাড়া, প্রাতাপাড়া, বোডিংপাড়া, থানচি, কংলাকপাড়ার কারবারি অথবা হেডম্যানের বাড়ির কাঠের ঘর, পুরোনো কম্বল আর পাহাড়ী মোরগের ঝোলই আমার বেশী ভালো লাগে।
১০টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।

লিখেছেন সাইয়িদ রফিকুল হক, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:১৫



ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।
সাইয়িদ রফিকুল হক

বিএনপি ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে দেশে অনুষ্ঠিত “দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে”-এ অংশগ্রহণ করেনি। তারা এই নির্বাচনের বহু আগে থেকেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×