somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিশ্বের প্রথম প্রোগ্রামার এক মেয়ে'র কথা

২৪ শে মার্চ, ২০০৯ দুপুর ১২:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আজ একটি বিশেষ দিন...
দিনটির নাম, Ada Lovelace Day!

কে সেই বিশেষ নারী?
আপনারা কেউ কি চেনেন তাকে?
কেন আজ তার নামে বিশেষ দিবস?

তিনি অনেক কারণেই চেনার মতো একজন অসাধারণ নারী। আজ বলবো তাঁর কিছু কথা।

১০ ডিসেম্বর ১৮১৫ সালে তাঁর জন্ম হয় লন্ডনের সম্ভ্রান্ত পরিবারে কবি লর্ড বায়রনের কন্যা এবং একমাত্র সন্তান হিসেবে। ক্ষণজন্মা এই নারী যাপন করে গেছেন একটি ছোট্ট অথচ বিশেষত্বময় এক জীবন। মাত্র ৩৬ বছর বেঁচে ছিলেন। ১৮৫২ সালের ২৭ নভেম্বর তাঁর মৃত্যু হয়, জরায়ুর ক্যান্সার এবং অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে।
পুরো নাম তাঁর অ্যাডা অগাস্টা কিং, আর ডাকা হতো কাউন্টেস অফ লাভলেস বা শুধুই অ্যাডা লাভলেস নামে।

আরেক বিশেষ স্মরণীয় ব্যক্তির বন্ধু ছিলেন তিনি, যিনি কম্পিউটারের জনক হিসেবে খ্যাত। স্যার চার্লস উইলিয়াম ব্যাবেজ যখন তার ডিফারেন্স মেশিন বা এনালিটিক্যাল এঞ্জিন নামক কম্পিউটার আবিষ্কারের নেশায় মত্ত, তখন এই তুখোড় প্রতিভাধর নারী ছিলেন তার পাশে। অ্যাডা তার গণিতবিষয়ক বিশ্লষণী ক্ষমতার দ্বারা বুঝতে পেরেছিলেন এই কম্পিউটারগুলোর নাম্বার ক্রাঞ্চিং এর অমিত সম্ভাবনা সম্পর্কে । সে সময় ইংল্যান্ড বিজ্ঞান থেকে কিছুটা দূরেই যেনো অবস্থান করছিল। চার্লস ব্যাবেজ তাই লিখে গেছেন তাঁর Decline of Science in England বইয়ে। আর এমন একটা সময়ে এই অসামান্যা নারী চার্লস ব্যাবেজকে যেসব সম্ভাবনার কথা জানান তা তার কাজকে আরো বেগবান করেছিল। অ্যাডা অগাস্টা'কে এখন বিশ্বের প্রথম কম্পিউটার প্রোগ্রামার ধরা হয়!

বায়রনের সৎ-বোন অগাস্টা লেই এর নামে মেয়ের নাম রাখা হয়, আর বায়রন তাকে অ্যাডা নাম দেন। মাত্র একমাস যখন অ্যাডা'র বয়স তখন থেকে তার মা অ্যানাবেলা তাকে নিয়ে আলাদা হয়ে যান।

ছোট থেকেই অ্যাডা কিছুটা অসুস্থ্তায় ভূগছিলেন, প্রচণ্ড মাথাব্যথা হতো এবং দৃষ্টি প্রতিবন্ধকতা হতো। ১৮২৪ সালে তাঁর বাবা মারা যান, যদিও তিনি তার দায় বহন করতেন না। ১৮২৯ থেকে তিনি হাম এবং পক্ষাঘাতগ্রস্ততায় ভূগছিলেন। কিন্তু ক্র্যাচে ভর দিয়ে হলেও শিক্ষা চালিয়ে গিয়েছেন। ১৮৩২ এ যখন তাঁর বয়স ১৭ তখন তার বিশেষ গাণিতিক প্রতিভার স্ফুরণ ঘটে। তাঁর ছেলেবেলা থেকেই মা তাঁকে গণিতে দক্ষ করে তুলতে চাইতেন বাবার প্রভাব(কবিত্ব, মা কী জানতেন কোডিংও এক ধরণের কবিতা? ;)) যাতে কোনোভাবেই মেয়ের মধ্যে প্রতিফলিত না হয় এই ভেবে(১৮৪১ সালের আগে জানতেনই না লর্ড বায়রন তাঁর বাবা!)। বাসায় গৃহশিক্ষকেরা বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষা দিতেন তাঁকে। আমরা ডি-মরগ্যানের যুক্তির গণিত পড়ে থাকি, সেই ডি-মরগ্যান সাহেবও তাঁর শিক্ষক ছিলেন! :)

স্যার চার্লস ডিকেন্স, স্যার চার্লস হুইটস্টোন এবং বিজ্ঞানি মাইকেল ফ্যারাডে'র সাথেও তাঁর জানাশোনা ছিল। ১৮৩৩ সালের ৫ জুন তাঁর সাথে পরিচয় হয় বিশ্ববিখ্যাত স্যার চার্লস ব্যাবেজের সঙ্গে!

চার্লস ব্যাবেজের সঙ্গে তাঁর বেশ ঘনিষ্ঠ এবং রোম্যান্টিক সম্পর্কও গড়ে ওঠে। ব্যাবেজ অ্যাডার অসাধারণ ধীশক্তি, সাবলিল লেখনী এবং প্রতিভায় মুগ্ধ ছিলেন। ব্যাবেজ অ্যাডা সম্পর্কে নিজের লেখায় অ্যাডাকে The Enchantress of Numbers অাখ্যা দিয়েছেন।

Forget this world and all its troubles and if
possible its multitudinous Charlatans — every thing
in short but the Enchantress of Numbers.


চার্লস ব্যাবেজ, যিনি তাঁর সময়ের লোকদের কাছে অনেকটা পাগল হিসেবেই পরিচিত ছিলেন, তাঁর নতুন ধ্যান ধারণাকে মাত্র গুটিকয়েক যে ক'জন বুঝতে পেরেছিলেন তন্মধ্যে অ্যাডা অগ্রগণ্য। যদিও ইতিহাসবেত্তাদের গলদঘর্ম হতে হয়, অ্যাডা কতোটা প্রভাব বিস্তার করেছিলেন ব্যাবেজের উদ্ভাবনী কাজে তা খুঁজে পেতে। কেননা, ব্যাবেজ কারো প্রতি কৃতজ্ঞতা সচেতনভাবে স্বীকার করেননি।

অ্যাডা'র সম্পর্কে কিছু কুৎসা আছে যে, তিনি মদ্যপান করতেন, জুয়া খেলতেন, স্ক্যান্ডাল হতো তাকে নিয়ে.. কিন্তু খুব জোরালো প্রমাণ নেই সেসবের।

লেডি অ্যানি ব্লান্ট ছিলেন, তাঁর সুযোগ্যা কন্যা যিনি মধ্যপ্রাচ্য ভ্রমণ করেন এবং সেখানে উন্নত প্রজাতির ঘোড়ার সংকর ঘটান।

তাঁকে মর্যাদা দিতে আমেরিকার প্রতিরক্ষা বিভাগের প্রণিত প্রোগ্রামিং ভাষার নামও রাখা হয় Ada


অ্যাডা'র মতো সেজেছেন এক মডেল।

Conceiving Ada নামে তাঁকে নিয়ে একটি মুভিও আছে। মাইক্রোসফটের প্রোডাক্ট অথেনটিসিটি হলোগ্রামে তাঁর ছবিও আছে জানা যায় উইকিপিডিয়া থেকে।

Woolley, Benjamin (February 2002). The Bride of Science: Romance, Reason, and Byron's Daughter এ বইটি পড়ে দেখার খুব ইচ্ছে হচ্ছে।

আর হ্যাঁ তাঁর কম্পিউটিং এবং প্রোগ্রামিং এ বিশেষ অবদানের কারণে আজকের এই ২৪ মার্চকে Ada Lovelace Day হিসেবে বিশ্বব্যাপী উদযাপন করা হয়ে থাকে।


আর.. হ্যাঁ আমি কিন্তু অ্যাডার প্রেমে পড়ে গেছি.. ;)

Click This Link এখানে তাকে নিয়ে ব্লগ করার অনুরোধ করা হয়েছে। আমি অনুরোধটি দেখার আগেই পোস্টটি লিখেছি আর ওখানে লিঙ্ক করে দিয়েছি।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই জানুয়ারি, ২০১২ রাত ১:১৯
১৯টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×