গত ২৯শে অক্টোবর কারমিক কোয়ালা নামে উবুন্তুর সর্বশেষ সংস্করণ বের হয়েছিলো সবাই জানেন। আমি প্রতিবারই নতুন ইনস্টল না করে আপগ্রেড করে নিই। তবে গত দু'বার আপগ্রেডের সময় আমার ল্যাপটপের অবস্থা কাহিল হয়ে গিয়েছিল। কারণ আর কিছুনা জিপি'র দুর্বল ট্রান্সফার রেটে প্রচুর সময় নেয়। আর এভাবে অনেক চাপ পড়ে প্রসেসর এবং হার্ডডিস্কের উপর।
এবার চেষ্টা করলাম ২এমবিপিএস গতির একটি লাইনে দিয়ে প্রায় ৭/৮ঘন্টা জুড়ে। কিন্তু লাইনটা শেয়ার্ড ছিলো তাই দেখলাম আর গত্যন্তর নাই। টরেন্ট দিয়েই নামালাম। কিন্তু ক্লিন ইনস্টল করার পক্ষপাতী ছিলাম না। অনেক সময় নিয়ে সেট করা কাজের মেশিনকে পুরো কাজের উপযোগী করে কাস্টমাইজ করতে যে সময় লাগবে তা করতে ইচ্ছুক নই।
উপায় পেলাম এখানে । আরো মজার হলো, এই উপায়ে আমার iso ডাউনলোড করেও সিডি/ডিভিডি'তে বার্ন করার প্রয়োজন হবেনা। অল্টারনেট সিডি/ডিভিডি ব্যবহার করতে চাইলাম আরেকটি বিশেষ কারণে সেটি হলো, এটি ওদের দাবীমতে সম্পূর্ণ নেট কানেকশন ছাড়া আপগ্রেড করার উপায়। টরেন্ট নামিয়ে ফেললাম। প্রায় ৪০০কেবি/সে গতিতে নেমে গেলো নিমিষেই। কিন্তু গোল বাঁধলো, নেট ছাড়াই আপগ্রেড করতে গিয়ে। প্রায় ১১০০ এর মতো প্যাকেজ সে নিলো ভার্চুয়ালি মাউন্টেড সিডি'র ইমেজ থেকে। কিন্তু বাকীসব নেট থেকেই নামাতে চায়। অনেকভাবে চেষ্টা করলাম উপেক্ষা করার। প্রায় ৩০মিনিট নানাভাবে চেষ্টার পর গুগল করে দেখি, নেট কানেকশন ছাড়া আপগ্রেড করার কথা বলা থাকলেও এটা বাস্তবে ফেইলড কেস। অনেকেই কমপ্লেইন করেছে। অগত্যা, বাসায় চলে আসলাম আর আপগ্রেড করলাম জিপি দিয়ে।
এভাবে আপগ্রেড করার পরীক্ষা চালাচ্ছিলাম এটি পরীক্ষা করার জন্য যে সবাইকে যখন উবুন্তু বিতরণ করবো তখন যাতে তাদের পুরানো সিস্টেমকে সহজেই নেট ছাড়া আপগ্রেড করা যায় এমন উপায় দেখানো যায়। তাছাড়া আমরা এমন সলিউশন খুঁজছি যেটা নেট ছাড়াই সকল ধরণের মিউজিক এবং ভিডিও কোডেক ইনস্টল করা থাকবে এমন কাস্টমাইজ করা প্যাকেজ। এমন কতোগুলো প্যাকেজ আছে অবশ্য যেমন: মিন্ট, আল্টিমেট ইত্যাদি। তবে, দেশের জন্য বাংলা বা অন্যান্য প্রয়োজনীয় অনুসঙ্গগুলোও দেয়া চাই তো। তাই নিজস্ব কাস্টোমাইজেশনের চেষ্টা আরকি।
যাহোক, আপগ্রেড ঠিকমতো হলেও বেশ কিছু সমস্যা পেলাম। এবং এক্সপার্টরা সাধারণত নিষেধই করে থাকে আপগ্রেড করতে। কারণ, আপগ্রেডে অনেক ফিচারই কাটা পড়ে। আপওয়ার্ড বা ব্যাকওয়ার্ড কম্প্যাটিবিলিটি না থাকার কারণেই। তাছাড়া, বাস্তবিক অবস্থায় অনেকে অনেকভাবে নানা সেটিংয়ে নানাকিছু ব্যবহার করে থাকে। এতো এতো সম্ভাব্য অবস্থার জন্য সর্বংসহা সিস্টেম ডেভেলপ করা আসলেও কঠিন। আগেরবার আপগ্রেডে যা যা সমস্যা পেয়েছিলাম:
১. ইউনিফাইড স্ট্যাটাস ইন্ডিকেটর কাম পাওয়ার বাটনটি ক্র্যাশ করা।
২. আপডেট নোটিফিকেশন উধাও।
এধরণের আরো কিছু ছোট অথচ বিরক্তিকর সমস্যা রয়ে গিয়েছিলো হার্ডি থেকে ইন্ট্রেপিড এবং তারপর ইন্ট্রেপিড থেকে জন্টি জ্যাকালোপে আপগ্রেডের সময়। এবার তেমন সমস্যা না হলেও কিছু উদ্ভট সমস্যা পাচ্ছি। যেমন, জিপি মোডেমটি আগে অটোকানেক্ট করতো এখন কয়েকটি বিকল্প উপায়ে কানেক্ট করার চেষ্টা করতে হয়।
কারমিকে Ext4 ফাইল সিস্টেম আছে যেটি এখনো আমি ব্যবহার করছিনা। এতে grub2 ও দেয়া হয়েছে যা কিনা ১.৯ সংস্করণের। আগের সংস্করণের গ্রাব থাকাতে আমার গ্রাব বুট স্ক্রিনে একটা মেনু থাকলো upgrade-from-grub-legacy এটা দেখিয়ে নতুন গ্রাব'এ যাবার ব্যবস্থা। তো কয়েকদিন ওভাবেই চালাচ্ছিলাম। একবার খেয়াল হলো, নতুন গ্রাবটাকেই এবার এনাবল করে দেই। যেই ভাবা সেই কাজ, ঘুমাবার আগে upgrade-from-grub-legacy কমান্ড দিয়ে ঘুমালাম।
ওমা, সকালে উঠে তো আর বুট হয়না।
Error 15 দেখায় কেবল, আর কোনো ট্যা-ফো নেই। গ্রাব এর সাইট থেকে লাইভ সিডি দিয়ে গিয়ে দেখে আসলাম ১৫ এর মানে হচ্ছে কোনো ফাইল পাচ্ছে না। আমি আবার লেটেস্ট কার্নেলগুলো ট্রাই করি নতুন ড্রাইভার বা ফিচার পাবার আসায়। কিন্তু রিসেন্টলি কয়েকটি নতুন কার্নেল বেশ সমস্যা করে: ১. awn-manager উধাও করে দেয় ২. সাউন্ড কার্ড থেকে পালসেটিং দুপ-দুপ করে শব্দ হয় প্রায় ১০সেকেন্ড পর পর ৩. অনেক কিছুই ক্রাশ করে।
তাই সেগুলো কনফিগ থেকে মুছে দিলাম। তবে, অনেক সময়ই আমি প্রসেডিউরিক্যাল মেথড ফলো করিনা। যখন যেভাবে যা সলভ করা দরকার ঘুটঘাট অফ করে দেই। তো এরফলে সমস্যাটা দেখা দিলো এবার। কিন্তু সেটা একটা বাগ নি:সন্দেহে। গ্রাব পুরানো বা লিগ্যাসি সংস্করণে কোনো কিছু না বলেই চলছিলো, এমকি ট্রায়াল মোডেও তাই। কিন্তু যেই সম্পূর্ণ গ্রাব২ ইন্সটল করে দিলাম সেই হলো ঝামেলা।
এখন বলি সেটা সমাধান করলাম কী করে।
প্রথমে লাইভ সিডি থেকে টার্মিনাল উইন্ডোতে গেলাম।
sudo fdisk -l দিয়ে দেখে নিলাম কি কি ড্রাইভ আছে। আমার জানাই আছে তবু আপনাদের জন্য বললাম।
এবার মাউন্ট করবো নিজের ড্রাইভকে।
mkdir /mnt দিয়ে ফোল্ডার করে নিন, যদি এ নামে না থাকে।
যাদের বিশেষ ধরণের কাজ নেই তারা মাত্র দুটি ড্রাইভ করেই উবন্তুতে কাজ করতে পারেন। আমিও সেই অবস্থার জন্যই বলছি। মনে করুন আমার উবুন্তুতে মাত্র একটি "/" পার্টিশন আছে যা সবকিছুর রুট। আর আছে একটি সোয়াপ swap।
তো আমি sudo mount /dev/sda8 /mnt দিয়ে আমার মূল রুটটিকে লাইভসিডির এমএনটি ফোল্ডারে মাউন্ট করে নিলাম।
এবার সবডিভাইসগুলোকেও মাউন্ট করতে হবে। তবে ডিভাইসগুলো যেহেতু ব্লকপার্টিশন না তাই একে বাইন্ড করতে হবে।
কমান্ডটি এমন:
sudo mount -o bind /dev /mnt/dev
অথবা,
sudo mount --bind /dev /mnt/root/dev
এবার মজার কাজ করতে হবে। ভার্চুয়ালি আপনি আপনার মূল সিস্টেমকে পুরোপুরি /mnt ফোল্ডারে স্থানান্তরিত করেছেন। এখন কারেন্ট রুটকে ঐ ফোল্ডারে ইমুলেট করবেন। কীভাবে?
sudo chroot /mnt /bin/bash
এটি করার পর আপনি দেখবেন যে সব ফোল্ডার গুলো আপনার নিজের ফোল্ডারের মতো কাজ করছে, যা যা পরিবর্তন ঘটাবেন তা আপনার মূল সিস্টেমে ঘটবে।
এবার গ্রাব নতুন করে ইনস্টল করতে
sudo grub-install /dev/sda দিলাম
এবং রিকনফিগার করতে
dpkg-reconfigure grub-pc দিলাম
sudo nano /boot/grub/menu.lst
দিয়ে কার্নেল ফাইলের লিস্ট চেক করে দেখলাম। একটি ছাড়া বাকিগুলো কমেন্ট করে রাখলাম।
কাজ শেষ যেহেতু তাই Ctrl+D বা exit লিখে রুট মোড থেকে বেরিয়ে এলাম।
এখন আনমাউন্ট করতে হবে,
sudo umount /mnt/dev
sudo umount /mnt
প্রথমেই ডিভাইস এবং পরে মূলরুট। এখনে উল্লেখ্য যারা রুট ছাড়াও আরো পার্টিশন ব্যবহার করেন তাদের অন্যান্য কয়েকটি পার্টিশনও মাউন্ট করে নিতে হবে। যেমন /boot
ব্যাস আপাতত কাজ শেষ। লেখাটি অনিচ্ছাকৃত বড়ো হয়ে গেলো তাই দু:খিত। আরো বেশ ক'টি সমস্যা পেয়েছি এবং সমাধানও করেছি কিন্তু সেগুলো আলাদা লেখাতে দেবো ভাবছি।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই জানুয়ারি, ২০১২ সকাল ১১:৪০