বহুদিন পর একটা ছবি দেখে খুব ভালো লাগলো। মাথাটা এখনও ঝিম মেরে আছে। শেষটায় কেঁদেই ফেলেছিলাম আমি, এইতো একটু আগে। নাহ, চিরায়ত কোন বাংলা ছবি দেখে কাঁদার মতো ছেলে আমি নই। আমি কেঁদেছি যে ছবিটি দেখে, সেটি হল The Imitation Game । কোথায় যেন মিলে গেলো, যেন নিজের সাথে মিল খুঁজে পেলাম । আমিও যে এমন একা, আমারও যে প্রকৃত বন্ধুসংখ্যা নিতান্তই নগণ্য, আমিও যে সবার থেকে একটু আলাদা, আমার চিন্তা-ভাবনাগুলি আলাদা, আর আমাকেও যে কেউ বোঝে না! ছবিটি দেখুন । দেখে বলুন, এতো সুন্দর আর ব্রিলিয়্যান্ট কাজের এমন পরিণতি কি মেনে নেয়া যায়?
অ্যালেন টিউরিং এর নাম শোনেননি অনেকেই, আমি নিশ্চিত করে বলে দিতে পারি। আমিও তাঁর সম্পর্কে বেশি কিছু জানতাম না। কিন্তু আমাকে জানতে হল। আপনাদেরকেও জানতে হবে, যখন আমি বলব- টিউরিং ছিলেন একজন বিখ্যাত গণিতবিদ, কেম্ব্রিজের একজন প্রফেসর, যিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এমন এক যন্ত্র আবিষ্কার করেন, যা হিটলারের নাৎসি বাহিনীর গোপন সংকেত বুঝতে এবং তা থেকে শত্রুসেনার অবস্থান সনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছিল। দুই ডজন ইউরোপীয় দেশ দখল করেও পরাক্রমশালী হিটলার মূলত পরাজিত হয়েছিলেন এই যন্ত্রটির কাছেই! হ্যাঁ, এই ‘টিউরিং ম্যাশিন’ এর কারণেই সেই বিশ্বযুদ্ধ কমপক্ষে দুই বছর আগে শেষ করা গিয়েছিল এবং বাঁচানো গিয়েছিল প্রায় ১৪ মিলিয়ন প্রাণ! তবে, গোটা ব্যাপারটাই গোপন রাখা হয়েছিল। দীর্ঘ ৫০ বছর ধরে টিউরিং ও তাঁর দলের এই অবদানের কথা ছিল ব্রিটিশ টপ সিক্রেট। সেই মেশিনই পরবর্তীতে আধুনিকীকরণের মাধ্যমে আমরা হাতে পেয়েছি আজকের কম্পিউটার, আমার এই ল্যাপটপে আমি লিখছি!
অথচ, যে মানুষটার কল্যাণে এত কিছু পেলাম, তিনিই কিনা বেঁচে থাকতে যোগ্য সম্মান পান নি! কেউ তাঁকে বোঝেনি, কেউ তাঁকে তাঁর মতো ভালো থাকতে দেয়নি। ছোটবেলায় স্কুলে সহপাঠী সবচেয়ে কাছের বন্ধুটির সাথে গড়ে ওঠা সম্পর্ক, বন্ধুর মৃত্যুর পর পরবর্তীতে বয়সকালে রুপ নেয় সমকামিতায়। কিন্তু ব্রিটেনে তখনও সমকামিতা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। নিজের একরোখা আর চাছা-ছোলা ব্যবহারের কারণে শত্রু কম বানাননি, তাঁরাই যা করার করলো। টিউরিং এর গোপন কথাটি জেনে গেলো সবাই। শাস্তি হিসেবে অপশন দুটি- জেলে যাও, নয়তো স্লো পয়জনিং গ্রহণ করো! সেই পয়জনিং এই ধীরে ধীরে নিঃশেষ হয়ে যাও, অতঃপর আত্মহত্যা? আমার মেনে নিতে কষ্ট হয়। মাত্র ৪১ বছরেই সব শেষ। এই ২০১৩ তে এসে ব্রিটেন তাঁর ভুল বুঝতে পেরেছে। মিলেছে রাণীর স্বীকৃতি । কিন্তু, তাতেই কি সব হিসেব চুকে যায়? যিনি দিলেন এতকিছু, তাঁকে আমরা কি দিলাম?
আসলে, ভুল সময়ে ভুল জায়গায়, ভুল করে কিছু মানুষ জন্মগ্রহণ করে, তারপর প্রতিনিয়ত নিজেকে হারিয়ে খুঁজে। এইসব মানুষদের আগামী দিনগুলোতে কেউ না কেউ বুঝুক, মৃত্যুর পরে নয়, আগেই।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




