somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গোলাপ এবং তার কাঁটার যন্ত্রণা

০৪ ঠা আগস্ট, ২০১৭ বিকাল ৩:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জেলখানায় হাত-পা বাধা অবস্থায় এক আসামীর খুব কাছেই ফুটেছে খুব সুন্দর একটি গোলাপ। দেখেই প্রেমে পড়ে যাওয়ার মতো। ছেলেটির আক্ষেপ, আরও আগে কেন গোলাপটি তার জীবনে এলো না? কিছুদিনের আলাপচারিতায় গোলাপের মনটাও বুঝতে পারলো সে; কষ্টের স্মৃতি আছে সেই মনে, আছে ভালোবাসাও। ছেলেটি ভালো করেই জানে, এই কারাগার থেকে বের হয়ে গোলাপের কাছে যাওয়া তার জন্য প্রায় অসম্ভব। তবুও সে হৃদয়পদ্মে জন্ম নেওয়া এই আবেগ আর এই ভালোবাসাকে অসম্মান করতে চায় না। গোলাপটিও ভাবে, ভবিষ্যতে কী হবে তা ভেবে এখনই হতাশ হওয়া কেন? এমন ভালোলাগা তো আর জীবনে বারবার আসে না! সুতরাং, আস্তে আস্তে ছেলেটি গোলাপের প্রেমে পড়ে গেলো। গোলাপটিও সারাদিন ছেলেটির দিকেই মুখ করে বসে থাকতো, ভালোবাসামাখা মজ্জায় সেই মুখ হতো অবনত।
.
একদিন সেই আসামীকে অন্য একটি কারাগারে সরিয়ে নেয়া হলো। সেখান থেকে গোলাপটির দেখা মেলে না। সারাক্ষণ অস্থিরতায় ছটফট করে ছেলেটি, গোলাপের মনেও শূণ্যতা সৃষ্টি হয়। অথচ প্রকৃতি নাকি শূণ্যতা পছন্দ করে না! আউট অব সাইট, আউট অব মাইন্ড! তাই, প্রাকৃতিক নিয়মেই সুন্দর গোলাপের আশপাশে ভ্রমরসহ অন্যান্য পোকা তার পাণিপ্রার্থী হয়ে ভিড় জমায়। গোলাপ গাছটির পরিচর্যাকারী নতুন ছেলেটিও গোলাপের প্রেমে পড়ে যায়। সে খুব চালাক। ও খুব ভালো করেই জানে, এটাই সুবর্ণ সুযোগ। ধীরে ধীরে গোলাপের সব বন্ধু, লালপিঁপড়া কালোপিঁপড়া পাশের গাছের ফুলটার সাথে কৌশলে খাতির জমায় সে।
.
এতে দারুণ কাজ হলো। এতদিন সেই ছেলেটির প্রতি ভালোবাসা থেকে অন্য কাউকে ধারেকাছে ঘেঁষতে দিতো না ও, সবসময় গায়ের খুব কাছেই বড় বড় কাঁটা জাগিয়ে রাখতো। একদিন বন্ধুদের প্ররোচনায় আর সেই মালির লেগে থাকায় কাজ হলো। তাকে বোঝানো গেলো, সেই ছেলেটি আর কোনোদিনই ফিরে আসবে না। কাজেই, ওর কথা ভেবে শুধু শুধু তোমার নিজের জীবন-যৌবন শেষ করার কিছু নেই। গোলাপটিও অনেক কষ্টে আস্তে আস্তে ছেলেটিকে হৃদয়ের এক কোণে দাফন করে ফেললো। সব স্মৃতি সব কথা ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করলো। এভাবে একদিন, মালি সফলতার সাথে গোলাপটি ছিঁড়ে নিয়ে নিজের করে নিতে সক্ষম হলো।
.
কিছুদিন পর ছেলেটিকে আবার সেই আগের কারাগারে আনা হলো। এখানে আসার আগে ও মনে মনে দৃঢ় সংকল্প করেছিল, যে করেই হোক এবার কারাগার থেকে মুক্ত হয়েই সে গোলাপের হাত ধরে ছুঁটে পালাবে। কিন্তু হায়! গোলাপটাকে আর সেই গাছে দেখা গেলো না। গাছে ফুটন্ত অন্য গোলাপগুলি তাকে বিন্দুমাত্র আকর্ষণ করতে পারলো না। সে খুব কষ্ট পেলো। খোঁজ নিয়ে খাওয়ার সময় থাল ধোয়ার বাহানায় সে মালির বাসায় গেলো। গোলাপ বললো, 'তোমার আমার সম্পর্ক কেউ মেনে নেবে না, জেনেই আমাকে মনে পাথরচাপা দিয়ে এ কাজ করতে হয়েছে। তুমি চলে যাও, সম্ভাবনা নয় নিশ্চয়তার দিকে যাও। আমি সুখে আছি, আমায় সুখে থাকতে দাও'।
.
এর কিছুদিন পর, সকালবেলা কারাগারের পাহাড়াদারের ডাকাডাকি শুনে প্রধান কারারক্ষী সেখানে গিয়ে দেখেন, সেই কারাগারে সেই ছেলেটি রক্তাক্ত অবস্থায় মরে পড়ে আছে। ডান হাতের কব্জির ভেইন তার ক্ষতবিক্ষত, পাশেই পড়ে আছে সেই গোলাপের কাটাভর্তি একটি ডাল! পিছের দেয়ালে রক্ত দিয়ে লেখা, 'ভালোবাসি'।

দেব দুলাল গুহ / দেবু ফরিদী
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×