উচ্চ ভিজিট ছাড়া যিনি কোনোদিন আসেন না, সেই মহারাজ ফ্রিতেই এলেন। তারপর উদ্দেশ্যপ্রোণোদিতভাবে কাউকে উদ্দেশ্য করে মাইকে বয়ান শুরু করলেন। যাকে উদ্দেশ্য করে বললেন, সে তখন অসুস্থ হয়ে লেপের নিচে। তিনি তাঁকে সম্মুখ তর্কযুদ্ধে না ডেকেই(পারবেন না জেনেই) দূর থেকে তাঁর বক্তব্যে যা বললেন, তার সারাংশ হলো এই, শিক্ষাগ্রহণের কোনো প্রয়োজনই নাই, শিক্ষিত না হয়েও বড় মানুষ হওয়া যায়, দেবী সরস্বতীর পূজা করা যায়। তিনি এমপি মমতাজ আপার প্রসঙ্গ টেনে বললেন, তিনি তো গ্রাম থেকে এসেছেন, শিক্ষিত নন, তবু তিনি জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী(তাঁর রুচির প্রশংসা করতে হয়) এবং এমপি। সুতরাং, শিক্ষার কোনো দরকার নাই। টাকা-পয়সাই হলো সব। অনলি ধান্দা অ্যান্ড ভন্ডামি ইজ রিয়াল।
.
তিনি ঠিকই বলেছেন, ভুল বলতে পারেন নাকি তিনি? তিনি হলেন দেবতা। তিনি ঠিকই বলেছেন, শিক্ষিতরা কেন সরস্বতী দেবীর পূজা কমিটিতে থাকবে? অশিক্ষিত স্বল্পশিক্ষিত কিংবা নেশাখোরেরাই তো থাকবে। তারা এই রাত ১:৩০ টার সময়েও সাউন্ডবক্সে বেস বাড়িয়ে গানের তালে মদ খেয়ে তাদের মা সরস্বতীর সামনে নাচবে, সেই শব্দে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়বে, ছাত্রছাত্রীরা পড়তে পারবে না ঘুমাতে পারবে না, শিক্ষকরা পড়াতে যেতে পারবে না ঘুমহীন চোখ নিয়ে। ঠিকই তো, পড়ালেখার কী দরকার?
.
আসলেই তো, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানকে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বানিয়ে কোটি টাকা নিজের পকেটে আনতে কি শিক্ষিত হতে হয়? অভুক্ত পাগলটির সামনে থেকে খাবারের প্লেট কেড়ে নেয়া কি শিক্ষিত লোকের কাজ? মন্দিরের সামনের উঠোনে ভুল করে জুতা নিয়ে ঢুকেছে বলে অসহায় বাচ্চাকোলে মহিলাটিকে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করতে কি শিক্ষা লাগে? দেশ-বিদেশ ঘুরে ধর্মের কথা বলে ভিক্ষে করতে কি প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা লাগে?
.
লাগে না। শুধু লাগে ধর্মীয় গ্রন্থের কিছু বানানো গল্পকে বিশ্বাসযোগ্য করে উপস্থাপনের যোগ্যতা, পোশাকে দেবতা-দেবতা ভাব, ধান্দাবাজদের সহযোগ, আর লাগে অবুঝ অন্ধভক্তদেরকে মোহবিষ্ট করে রাখার মতো অদ্ভূত সম্মোহনি শক্তি, ব্যাস! তাহলেই যাচ্ছেতাই করা যায়। যাকে খুশি নাস্তিক বানিয়ে দেয়া যায়, যাকে খুশি 'নরকে যাবে' বলে দেয়া যায়। বিরুদ্ধাচরণ করলেই সগোত্রীয় যে কাউকে দূরে সরিয়ে দেওয়া যায়। আবার যুক্তিতে না পেরে শত্রুর সাথেও আপোষ করতে সময় লাগে না।
.
মজার ব্যাপার হলো, এদেরকে কেউ ভন্ড বলতেও সাহস পায় না! অসহায় সেই বিধবাটিকেই শুধু অপমানিত হতে হয়, যিনি দীর্ঘ ১৭ বছর সেই মহারাজের প্রতিষ্ঠানেই প্রায় বিনে পয়সায় দাতব্য সেবা দিয়েছেন, তার বাড়িঘরই শুধু বছরের পর বেদখল থেকে যায়! এসব দেখেও না দেখার ভান করতে এবং দখলদারদের পক্ষে থাকতেও মহারাজদের শিক্ষাদীক্ষার প্রয়োজন পড়ে না। পড়ে কী?