ফরিদপুরের মধুখালিতে মন্দিরে আগুন ধরানোর অভিযোগে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে দুজন নির্মাণশ্রমিক মুসলিমকে। বিভিন্ন মিডিয়া থেকে যা জানলাম, তা শুনে এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই।
তারা আসলেই মন্দিরে আগুন ধরিয়েছে কিনা সে ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যায়নি এখনও। তেমনটা নিশ্চিত হলেও প্রশাসন-পুলিশের কাছে তাদেরকে তুলে দেওয়া উচিত ছিলো। মামলা দিয়ে প্রতিকার চাওয়া যেতো। আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া ঠিক হয়নি।
এ ঘটনা খুব খারাপ একটা বার্তা দিলো। সারা বিশ্ব দেখলো যে ক্ষেত্রবিশেষে হিন্দুরাও সংখ্যায় বেশি হলে জ*ঙ্গীগোষ্ঠীদের মতো হিংস্র হয়ে উঠতে পারে। ফরিদপুর শ্রী অঙ্গন দক্ষিণ পল্লীতে হিন্দু প্রভাবশালীদের অত্যাচার-নির্যাতন-হামলার শিকার আমরা অনেকদিন ধরেই। প্রতিকার পাচ্ছি না প্রশাসন-পুলিশ-নেতাদের জানিয়েও। উক্ত প্রভাবশালীদের সিন্ডিকেটের কাছে সাধারণরা জিম্মি, তারা চাইলেও আমাদের পাশে দাঁড়াতে পারে না। সংখ্যায় বেশি বলে নেতারাও ওদের পক্ষে থাকে। আবার আশপাশের মুসলিমরা আমাদের শুভাকাঙখী হলেও হিন্দু পল্লীতে থাকি বলে কেউ এগিয়ে এসে আমাদের পক্ষ নিতে পারে না, শুধু দূর থেকে দু:খপ্রকাশ করে। কেননা তারা আসলে এটাকে শ্রী অঙ্গন মন্দির ও হিন্দু প্রভাবশালীরা সংখ্যালঘু অত্যাচার হিসেবে দেখাবে।
আবার মধুখালির ঘটনায় ফিরে আসি। মন্দিরে অগ্নিসংযোগ ও একটা হামলার ঘটনার খবর পেয়ে ইউএনও ও থানার ওসি ঘটনাস্থলে গেলে তাদেরকেও প্রায় ৬ ঘন্টা আটকে রাখা হয়েছে, আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপর হামলা চালানো হয়েছে। এসব নিন্দনীয় কাজ। যারা আগুন লাগিয়েছে, যারা মানুষ খুন করেছে এবং যারা সরকারি কাজে বাধা দিয়ে হামলা করেছে তাদের সকলের আইনত বিচার চাই।
কিছুদিন আগে মধুখালির পাশের উপজেলা বোয়ালমারী থেকে আমাকে ৪০০ কিমি দূরে বদলি করা হয় জনস্বার্থে। Pinaki Bhattacharya - পিনাকী ভট্টাচার্য এর উস্কানিমূলক মিথ্যা ভিডিওর সূত্র ধরে ঐ এলাকায় জামাত-শিবির-মৌলবাদিরা প্রভাবশালীদের ইন্ধনে আমার উপর এমন হামলার প্রস্তুতি নেয়, হুমকি দিতে থাকে। তা প্রশাসন-পুলিশকে জানিয়ে নিরাপত্তা চাইলে মাউশি ডিজি স্যারের কাছে মায়ের চিকিৎসার জন্য বহি:বাংলাদেশ ছুটি চাইতে গেলে ছুটি না দিয়ে ধমক দিয়ে আমাকে 'ভারতের দালাল বলে'(ভারতে চিকিৎসা করাতে যেতে চেয়েছি বলে) বদলি করে দেওয়া হয়। এর ফলে আমার আদরের বিড়ালের ছানা না খেয়ে পেয়ে মারা গেছে। চিকিৎসার অভাবে ভারতে আমার কাকিমা মারা গেছেন। আমার ফেসবুক পেইজ প্রশাসন মুছে দিয়েছে (হুমকিদাতাদের ভাষ্যমতে)।
অথচ বিজ্ঞজনদের ভাষ্য, উচিত ছিলো উভয়পক্ষের বক্তব্য শোনার পর ব্যবস্থা নেওয়া। অসুস্থ মাকে ফরিদপুরে একা রেখে অসুস্থ আমি এতোদূরে কী করে চাকরি করবো তা কর্তারা ভাবেন নি। আমি চলে যাওয়াতে অনেকেই খুশি। যারা কলেজ ফান্ডের টাকা ভূয়া ভাউচারে তুলে জাতীয় দিবস পালন করতো না, বঙ্গবন্ধুর ছবি ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ছবি কলেজে রাখতো না, জাতীয় শোক দিবসসহ অন্যান্য দিবস পালন করতো না, কলেজে জামায়াত-শিবিরের দূর্গ বানিয়েছিলো, যারা চায় না কলেজে গান-বাজনা-বইমেলা হোক, যারা চায় না উপজেলার একমাত্র সরকারি কলেজটিতে শিক্ষার্থীসংখ্যা দুশো ছাড়াক, যারা চায় ইচ্ছামতো সেখানে নকল হোক, যারা চায় সরকারি কলেজকে পঙ্গু বানিয়ে রেখে দুটি বেসরকারি কলেজকে সরকারি করতে, তারা সবাই খুশি। স্থানীয় এমপি তথা মন্ত্রী মহোদয়, প্রশাসন-পুলিশও হয়তো খুশি, ইসলামপ্রেমী হিসেবে নিজেদেরকে জাহির করা গেছে বলে।
আমরা আবহমান কাল থেকে ফরিদপুরে হিন্দু-মুসলিম শান্তিতে বসবাস করছি। এখানে একজনের বিপদে আরেকজন এগিয়ে আসে। গোয়ালচামট শান্তি-শৃংখলা উন্নয়ন পরিষদের সহ-সভাপতি আমার বাবা কবি বাবু ফরিদী যখন শালিসে রায় দিতেন, সবাই তা শ্রদ্ধার সাথে মেনে নিতেন। ইদানিং সেই অবস্থান থেকে বিচ্যুতি দেখা যাচ্ছে। এই সম্প্রীতিতে যেন কেউ আঘাত হানতে না পারে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় থাক। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে দেশটা আমাদের সকলের।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:২১