আর মাত্র কিছু দিন পরে ঘোষিত হবে আমাদের জাতীয় বাজেট। আসন্ন বাজেট নিয়ে এখনি শুরু হয়ে গেছে মাতা-মাতি কোথাও বা কিঞ্চিত হাতা-হাতি। উনুনের হাঁড়ি থেকে চায়ের কাপ, ফিটফাট বাবু থেকে মর্জিনার বাপ সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়বে বাজেটের আলোচনা বা সমালোচনার তিন কোণা, চার কোণা কিংবা খোলা দ্বার গোল টেবিল বৈঠকে। আমিই বা বাদ যাবো কেন ? নিজের এলোমেলো অপরিপক্ষ ভাবনা গুলো তাই সবার মাঝে ছড়িয়ে দেবার সাধ জাগলো। আমাদের দেশটা গণতান্ত্রিক। গণতন্ত্রের লিপিবদ্ধ বা কেতাবি সংজ্ঞা আমার মুখস্ত সেই স্কুল জমানা থেকে কিন্তু গণতন্ত্রের ব্যবহারিক সংজ্ঞার সাথে কেতাবি সংজ্ঞার কোন সাদৃশ্য আমি কখনো খোঁজে পাইনি। রাষ্ট্রের শুরু যদি হয় পরিবার থেকে তবে গণতন্ত্রের শুরু পরিবার থেকে কেন হবেনা ? কিন্তু ছোট বেলায় দেখেছি বড়দের মুখের উপর কোন কথা বলার নিয়ম নেই। গণতন্ত্র ত সেখানেই ভূপাতিত !! স্কুল জীবনে শ্রেণীকক্ষে শিক্ষক যখন গণতন্ত্রের পাঠ পড়াচ্ছেন তখন মন অন্য কোথাও আটকা ছিলো, হয়তো বিকেলের খেলার মাঠে। কিন্তু শিক্ষকের সেটা সহ্য হয়নি চক ডাষ্টারের সেল নিক্ষেপ করে লক্ষ্য ভেদ করতে লাগলেন। তখন আনমনেই বলে উঠেছিলাম হায়রে গণতন্ত্র !! ৯০এ যখন স্বৈরতন্ত্রের বাহক এরশাদকে আমাদের দুই নেত্রী টেনে হিঁচড়ে ক্ষমতা থেকে নামিয়ে দেশে গণতন্ত্রের নিষিক্ত বীজ বপন করলেন তখন তৎকালীন সময়ে অনেকেই এই দুই নেত্রীর বন্দনায় হর্ষ ধ্বনিতে ফেটে পড়েন। শুধু হর্ষ ধ্বনিতে আটকে ছিলেন না। আমাদের দেশের জনগন যে নিমক হারাম নয় তার প্রমাণ দিতে এখন পর্যন্ত পালাক্রমে এই দুই নেত্রীকে আমাদের প্রিয় ভুমি বাংলাদেশকে শোষণ করার লাইসেন্স দিয়ে যাচ্ছেন। সেদিনের সেই স্বৈরাচার বিরোধী নেত্রীরাই আজ নিজের স্বার্থ উদ্ধার করার জন্য স্বৈরাচারী এরাশাদকে যখন নিজ নিজ দলে ভেড়ানোর জন্য কুকুকের মতো কামড়া কামড়ি শুরু করেন তখন আমার ৯০এর হাসিনা খালেদাকে নিয়ে গর্বিত মানুষের চেহারাটা দেখতে খুব ইচ্ছে করে। আমার অনেক কিছুই ইচ্ছে করে। ইচ্ছে করে দেশের অর্থমন্ত্রী হতে। অবশ্য এর পেছনে কিছু কারণ আছে, আমাদের দেশটা গণতান্ত্রিক। এখানে শিক্ষার চাইতে ইচ্ছা শক্তি অগ্রগণ্য (মাঝে মাঝে পেশী শক্তি) একজন এস, এ খালেক যদি নিরক্ষর হয়ে যুগের পর যুগ এম,পি হবার যোগ্যতা রাখেন তবে নিজেকে স্বল্প শিক্ষিত দাবী করে মন্ত্রী হতে দোষ কোথায় ? একজন সাধারণ বি,এ পাশ মানুষ যদি গোটা শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের দায়িত্ব নিতে পারেন তবে আমি একটা বাড়ির (হবু) মালিক একটা ছোট খাটো মার্কেটের মালিক হয়ে গোটা অর্থ মন্ত্রনালয়ের ভার নিতে পারবো না কেন ? বাংলাদেশ সব সম্ভবের দেশ বলে বিশ্বে পরিচিত। তাই আমারও মন্ত্রী হওয়াটা অসম্ভব কিছু নয়, ধরে নিলাম আমিও মন্ত্রী হয়ে গেছি। একেবারে অর্থমন্ত্রী !! অর্থমন্ত্রীর কাজ অর্থ গুণা নাকি কালো অর্থ ওয়াশিং মেশিনে ভরে ধোপার মতো ধুয়ে সাদা করা তা জানিনা তবে উনারা যে প্রতি বছর একটা করে বাজেট পেশ করেন তা ভালো করেই জানি। আমিও এখন বাজেট পেশ করবো তবে তা সম্পূরক নয় সেটা পেশ কার আমার পক্ষে এখন দুঃসাধ্য এমনকি আপনাদেরও ধৈর্য্যে কুলাবেনা।
শিক্ষাঃ বরাবরই দেখে আসছি বাজেটে শিক্ষা খাতকে বেশ গুরুত্ব দেয়া হয়ে থাকে। আমিই বা বাদ যাবো কেন ? শিক্ষা কোন সহজলভ্য বিষয় নয়। কিন্তু আমাদের পূর্বসূরীরা শিক্ষা সামগ্রিকে হাতের নাগালে নিয়ে আসার কারণে যে কেউ গোটা কয়েক বই কিনে ভার্সিটির মতো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও ঢুকে পড়ে। যার ফলে সেখানে শিক্ষার পরিবর্তে সংঘাত লেগেই থাকে। এখন ভার্সিটি মানেই হচ্ছে রণক্ষেত্র। সেখানে গেলাই বুঝা যায় মসির চেয়ে অসি বড়। তাই শিক্ষার প্রকৃত মান বজায় রাখতে সকল ধরনের শিক্ষা সামগ্রির দাম তিন থেকে চারশ ভাগ বাড়িয়ে দেবো তাহলে দেখবো কজনের বুকের পাঠা আছে দু চার খানা বই কিনে ভার্সিটিতে গিয়ে গন্ডগোল বাঁধায়।
শিশু খাদ্যেঃ শিশু খাদ্যের মধ্যে গুঁড়ো দুধ নিয়েই প্রতিবছর হাউ কাউ লেগেই থাকে। কিন্তু সেই গুঁড়ো দুধের দামও চড়া নয় বলে মায়েরা তাদের সন্তানকে বুকের দুধের পরিবর্তে গুঁড়ো দুধের ফিডার মুখে ধরিয়ে দিয়ে ফেসবুকে চলে আসেন। যেকারণে সন্তানেরা মায়ের সংস্পর্শ থেকে বঞ্চিত হয় এবং তারা অনেকটা একাকিত্বের মধ্যে বড় হতে থাকে। ফলে তাদের স্বাভাবিক ভাবে বেড়ে উঠা ব্যহত হয় এবং বড় হয়ে তারাই বেকার জনগোষ্ঠির সাথে হাত মেলায়। কিন্তু এরূপ চলতে দিলে একসময় এদেশ থেকে কর্মঠ মানুষ খোঁজে বের করা যে কত কঠিন হবে তা সহজে অনুমেয় তাই গুঁড়ো দুধের দাম কম করে হলে চার থেকে পাঁচশ ভাগ বাড়িয়ে দেয়া হবে।
শিশুদের খেলনা সামগ্রিতেও বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছি কারণ ওগুলো বেশ সস্তা বলেই বাবা-মায়েরা খেলনা পিস্তল, খেলনা চাকু দিয়ে তাদের সন্তানের মনকে প্রফুল্ল রাখার চেষ্টা করেন কিন্তু কখনো ভেবে দেখেছেন কি যারা ছোট বেলাতেও ছুরি চাকু বা পিস্তলের সঙ্গ পায় তারা বড় হয়ে কি হবে ? তাই তাদেরকে আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে সকল প্রকারের খেলনা সামগ্রির দাম হাজার গুণে বাড়িয়ে দেয়া হবে।
চালঃ বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার আগে জনগনকে বলেছিলো ১০টাকা দরে সবাইকে চাল খাওয়াবে। কিন্তু মাছে ভাতে বাঙ্গালী বলে পরিচিত বাংলাদেশীরা চালের মতো এতো গুরুত্বপূর্ণ জিনিষ এতো সস্তায় কিনবে তা লজ্জাজনক বটে। তাই আমাদের প্রধানমন্ত্রী মুখে বলে যে ভুল করেছিলেন তা বাস্তবায়ন করে দ্বিতীয় ভুলটি করতে চাননি। দেশে এবার আলুর বাম্পার ফলন হয়েছে কিন্তু সেদিকে কারো নজর নেই। তাই হিমাগারে আলু ঠাঁই করাতে না পেরে আলু চাষিরা পড়েছেন বিপাকে। আলু চাষিদের মুক্তি দিতে এবং সেই সাথে চালের উপর ক্রমাগত চাপ কমাতে আলুর দাম যথাস্থানে রেখে চালের দাম দ্বিগুন করা হবে।
ইন্টারনেটঃ দেশে এমনিতেই বেকারের সংখ্যা অনেক এবং সেই হার জ্যামিতিক হারে বাড়ছে। কিন্তু সেদিকে কারোর কোন মাথা ব্যথা নেই। দেশে ইন্টারনেট সহজলভ্য হয়ে যাওয়ায় সেই বেকার জনগোষ্ঠি ইন্টারনেটের মাধ্যেমে ফেসবুক, টুইটার সহ বিভিন্ন ব্লগে ঢুকে পড়ছে। কাজের ধান্ধা না করে দিনের পর দিন রাতের পর রাত তারা নেটে বসে কাটিয়ে দিচ্ছে। সেখানে তারা অপরিচিত বিপরীত লিঙ্গের সাথে অবৈধ প্রণয়ে জড়িয়ে পড়ছে। একই সময়ে একাধিক জনের সাথে এই অবৈধ লীলায় মত্ত হয়ে বাড়াচ্ছে মানবিক মূল্যবোধের অবক্ষয়। এবং নানান কারনে তারা মানিসিক রোগীতে রূপান্তরিত হচ্ছে। এখানে কারো কোন প্রকৃত পরিচয় পাওয়া যায়না। সত্তর বছরে বৃদ্ধরা সতের বছরের যুবক সেজে নানান কু-কর্ম করে যাচ্ছে আবার সতের বছরে ছাওয়াল চল্লিশোর্ধ সেজে মধ্যবয়েসি মহিলাদের সাথে চুটিয়ে প্রেম করে যাচ্ছে। সমাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয় রোধে ইন্টারনেটের মূল্য বৃদ্ধি ছাড়া অন্য কোন উপায় দেখছিনা। তাই ইন্টারনেটের বর্তমান মূল্যকে অন্তত পাঁচ'শ গুণ বাড়িয়ে দেয়া হবে।
যেহেতু এটা সম্পূরক বাজেট নয় তাই মূল্যবৃদ্ধির তালিকা এখানেই স্থগিত করা হলো এবার আসি মূল্যহ্রাসের তালিকায়।
বিদ্যুৎঃ আমাদের দেশে বিদ্যুতের চাহিদার চেয়ে উৎপাদন কম। বিদ্যুৎ সমস্যার মূলে এতো দিন তাই ভাবছিলাম। কিন্তু আসল কারণ কিন্তু উৎপাদনে নয়। একটা উদারণর দিলে পরিষ্কার হয়ে যাবে। যখন পেঁয়াজের দাম থাকে ১০টাকা তখন দেখতাম বাসায় একসাথে ৪/৫ কেজির বেশি পেঁয়াজ আনা হতো না। কিন্তু যখন পেঁয়াজের দাম ৫০টাকা অতিক্রম করে তখন আমার মা মরিয়া হয়ে উঠেন ১০০কেজির এক বস্তা পেঁয়াজ আনার জন্য। তাতেই বুঝে গেছি দাম বাড়লে চাহিদা বাড়ে। আমাদের দেশে বিদ্যুতের দাম উর্ধ্বমূখী বলেই এর চাহিদা অনেক এবং ঘাটতিও অনেক তাই বিদ্যূতের বর্তমান মূল্যে অর্ধেকের নীচে নামিয়ে আনা হবে ফলে চাহিদা কমে যাবে আর যখন তখন আমাদেরকে লোডশেডিং নামক যন্ত্রণায় ঘানি টানতে হবেনা।
নেশাজাত দ্রব্যঃ নেশাজাত দ্রব্য দেশের বিপুল সংখ্যক বেকার জনগোষ্ঠির নাগালের বাইরে থাকার জন্য তারা সেসবের সংস্পর্শ পাচ্ছেনা। তাই সকল প্রকারের নেশাজাত দ্রব্যের মূল্যে অর্ধেকেরও নীচে নামি দেবো। তাহলে তারা এক বোতল ফেন্সি খেয়ে দুই তিন দিন বেহুঁশ হয়ে পড়ে থাকবে। ফলে তাদের মাধ্যেমে অন্য কোন প্রকারের কু-কর্ম সংঘটিত হওয়ার আশংকা প্রায় শূণ্যের কোটায় নেমে আসবে।
মোবাইলঃ এ দেশে ২০০ বছর বৃটিশরা শোষন করেও যতটা নিয়ে যেতে পারেনি বিগত দশ বছরে গ্রামীণফোন তথা অন্যান্ন মোবাইল অপারেটর তারচেয়ে বেশি নিয়ে গেছে, আমি সেদিকে লক্ষ্য করছিনা। আমি লক্ষ্য করছি আমাদের দেশের জায়গা জমি ক্রমশ সংকুচিত হয়ে আসছে নিত্য নতুন বাড়ি ঘর স্থাপনের ফলে। যে কারণে বিকেলের একটুকরো অবসরে খেলার জন্য খেলার মাঠ খোঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা। কিন্তু তাতে আমাদের শারীরিক ও মানিসিক বিকাশ ব্যহত হচ্ছে। এখন বিভিন্ন স্থানে ব্যয়ামাগার স্থাপনের ফলে শারীরিক বিকাশ কিছুটা ঘটলেও মানসিক বিকাশ বাক্সবন্দি হয়ে আছে। তাই সকল মোবাইল অপারেটরের কল চার্জ প্রতি মিনিটে দশ পয়সা-তে নামিয়ে আনবো। তাতে সহজে একে অন্যের সাথে মোবাইলের মাধ্যমে প্রেম বা ভালোবাসার সম্পর্ক স্থাপন করে সহজেই মনকে প্রফুল্ল করে মানসিক বিকাশ আরো বেশি পরিমানে বৃদ্ধি করতে পারবে।
এই মূল্যহ্রাসের তালিকাটা অনেক বেশি দীর্ঘ বলে এখানেই ক্ষ্যান্ত দিলাম। আশা করি আমার এই বাজেট সাধারণ জনগনের কথাই বলবে। তবে বিরোধীরা একটু নড়ে চড়ে উঠতেই পারেন কারণ তাদের কাজই হচ্ছে বিরোধীতা করে যাওয়া। আমাদের সরকারও তাদেরকে মাসোহারা দিয়ে যায় শুধুমাত্র বিরোধীতা করার জন্য।
সুমন আহমদ
সিলেট।
১লা মে ২০১১খৃষ্টাব্দ।
বিঃ দ্রঃ আমার এই লেখাটি নিছক হাস্যরস সৃষ্টির লক্ষ্যে। কোন ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা কোন গোষ্ঠিকে ব্যঙ্গ বিদ্রুপ বা কটাক্য করার জন্য নয় তবুও অজান্তে কেউ যদি কোন প্রকারের কষ্ট পেয়ে থাকেন তবে তার জন্য আমি আন্তরিক ভাবে দুঃখিত।