somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জনৈক জ্ঞানী মানুষের সাথে কথোপকথন এবং কিছু সিদ্ধান্ত।

২১ শে মার্চ, ২০০৮ সকাল ১১:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাস্তববুদ্ধি সম্পন্ন একজন পরিচিত লোকের সাথে কথা হচ্ছিল। এই জ্ঞানটি আমার না থাকায় প্রায়শঃই আমি তার শরনাপন্ন হই। তিনিই আমাকে পিটিয়ে-টিটিয়ে পথে আনেন। উনি না থাকলে আমি যে কবে কোথায় ভেসে যেতাম, কে জানে।

"আপনার সাথে কথা আছে কিছু। একটু সময় দিতে হবে।" আমি মিনমিন করে বলি।
"তোমার সাথে কথা বলতে গেলেই তো আমার প্রেসার বেড়ে যায়। তোমার সাথে কোন রকম আলাপ করা ব্যাপারে ডাক্তারের বারণ আছে।"
"কেন, আমি আবার কি করলাম?"
"তুমি তো করোনা কিছুই। শুধু কিছুদিন পর পর একগাদা উদ্ভট আইডিয়া নিয়ে আমার কাছে আসো। সেগুলো শুনে আমার রক্তচাপ বেড়ে যায়।"
"আজকে সে রকম কিছু বলবোনা আমি। কথা দিচ্ছি।"
"তোমার কথা যদি আমি সব বিশ্বাস করতাম, তাহলে এখন আমাকে রেলস্টেশনে গিয়ে ভিক্ষা করতে হোত। যাকগে-কি বলবে, তাড়াতাড়ি বলো।"
আমি একটু ঢোঁক গিলি। উনার সামনে গেলেই ভয়ে আমার গলা শুকিয়ে যায়। জ্ঞানী মানুষ বলে কথা।
"আমি ইদানিং একটু লেখালেখি করছি।"
"কি রকম?"
"এই মানে যা মনে আসে তাই লিখি।"
"গুড। মনের ভাবটিকে লিখে রাখতে অনেকেই বলেন। খুবই থেরাপিউটিক। মনের ভার লাঘব হয় তাতে। তবে বেশী কাগজ নষ্ট করবে না কিন্তু। কাগজের দুপাশেই লিখবে, আর ছোটছোট করে লিখবে যেন একটা কাগজেই অনেক লেখা যায়। ও হ্যাঁ- লেখার পর কাগজটাকে কুচিকুচি করে ছিঁড়ে তারপর আগুনে পুড়িয়ে ফেলবে। বলা তো যায়না এ লেখা আবার কখন কার হাতে পড়ে। শেষমেশ দেখা যাবে তোমার নামে হয়তো কেউ মানহানীর মামলা ঠুকে দিয়েছে। থেরাপী করতে গিয়ে নিজের বাড়ীঘর খোয়াবে শেষপর্যন্ত।" তিনি হা হা করে হাসেন।

আমিও হাসি। জ্ঞানী লোকদের চিন্তা-ভাবনাই আলাদা। হাজার বছর সময় দিলেও আমার মাথা থেকে মানহানীর সম্ভাবনাটির কথা বেরোত না। এই জন্যেই তো আমি বারবার উনার কাছে ছুটে আসি।

বুক ফুলিয়ে বলি, "সে ভয় নেই আমার। আমি কাগজ-কলমে লিখছি না আজকাল। একেবারে সোজা কম্পিউটরেই লিখি। আর ফাইলটিকেও পাস-ওয়ার্ড প্রটেক্টেড করে রেখেছি যেন আর কেউ পড়তে না পারে।"
"বাহ-তুমি তো দেখি আজকাল ভালই বুদ্ধিমান এর মতো কথা বলছো।"
"তবে লেখাগুলোকে আমি ইতিমধ্যে একটা বাংলা ব্লগসাইটে প্রকাশ করেছি।"
এবার তিনি একটু থমকালেন। "হুমম-প্রকাশও করে ফেলেছো অলরেডী। তা যাক-তোমার ওই ছাইপাঁশ লেখা কেইই বা আর পড়বে?"
"না মানে- কিছু লোকে লেখাগুলোকে পড়েছেও।"
"ও-লোকে তোমার লেখা পড়েও ফেলেছে। তা কেউ কি তোমাকে গালি বা মামলা করার হুমকি-টুমকি দিয়েছে নাকি?"
"না-তা দেয়নি, তবে তারা নিয়মিত লেখা না পোস্ট করলে খুব বকাঝকা করে, দু একজন আন্দোলন করারও হুমকি দিয়েছে।"
"বলো কি? এতো মহা সর্বনাশের কথা। তুমি কি পুলিশকে ফোন করে জানিয়েছো এসব? শেষে ওইসব হুলিগানেরা আবার তোমার বাড়ীর সামনে এসে হাজির না হয়।"
আমি এবার মিটিমিটি হাসি। "আমি কি আর আগের সেই মানুষ আছি? এখন আমার মাথায় অনেক বুদ্ধি। এসব চিন্তা আমি আগেই করে রেখেছি।"
"কি রকম?"
"আমি কি ওখানে নিজের নামে লিখি? আমি লিখি ছদ্মনামে।"
এবার তিনি মুগ্ধ হন। "বা-বা - তুমিতো দেখি বুদ্ধির জাহাজ হে। তা কি ছদ্মনাম নিলে?"
"নির্বাসিত।"
"বাহ-ভালই নাম নিয়েছো। তা এখন সমস্যাটা কি?"
"সমস্যা হচ্ছে যে কিছু কিছু পাঠক আমাকে খোঁচাচ্ছে যেন আমি ওই লেখাগুলোকে একসাথে করে একটা বই বের করে ফেলি।"
"কারা এরা বলোতো? থাকে কোথায়?"
"ওরাওতো আমারই মতোন। ছদ্মনামে লেখে।"
"তা তো লিখবেই। যে বুদ্ধি তোমার মতো গাধার মাথায় এসেছে, সেটা কি আর অন্য দশজনের মাথায় আসবে না?"

জ্ঞানী লোকের দেওয়া অপমান গায়ে মাখতে নেই। আমি চুপ করে থাকি।

তিনি আবার বলেন,"তা তোমার লেখা সিরিজটির নাম কি?"
"ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।"
"সেখানে কি তুমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়ে কিছু লিখেছ নাকি? সামথিং ঐতিহাসিক?"
"না-না, আমি শুধু আমার বন্ধু-বান্ধব, টিচার আর বাবা-মায়ের কথা লিখেছি সিরিজটিতে।"
"হুমম-কানা ছেলের নাম পদ্মলোচন। কিসের মধ্যে কি, পান্তাভাতে ঘি। এ নাম তো চলবে না। লোকেতো এই নাম দেখেই ভাববে যে তুমি বইটিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়ে লিখেছো।"
"তাহলে কি আপনিও বলছেন বই বের করতে?"
তিনি এবার বিরক্ত হন। "সেটা আমি কখন বললাম? আমি বলছি যে যদি তুমি বই বের করো, তাহলে সিরিজটির নাম বদলাতে হবে। দাঁড়াও-তোমাকে জম্পেশ নাম দেই। হাউ এ্যাবাউট 'নির্বাসিত মানুষের আপনজন'?"
নামটা শুনেই আমি মুগ্ধ হয়ে যাই। বাহ-কি চমৎকার নাম! এককথায় সবকিছুই বলা হয়ে যাচ্ছে।
"তুমি আজকেই ব্লগ সাইটে গিয়ে সিরিজের নাম বদলে ফেলবে, বুঝেছো?"
আমি ঘাড় নাড়ি। "আচ্ছা।"
"বইয়ের নামটা তো গেল। এখন সমস্যা তোমার নাম নিয়ে। তুমি কি বইটা নিজের নামেই ছাপবে? নাকি ছদ্মনামে?"
"সেটা তো ঠিক করিনি।"
"আচ্ছা- সেটা নাহয় পরে দেখা যাবে। এখন বলো, যারা তোমাকে বই বের করতে বলছে তারা কি তোমার বই কিনবে? নাকি গাছে তুলে মই কাড়বে?"
"বলছে তো কিনবে।"
"তারা মোট কত জন হবে?"
"তা তো ঠিক গুনিনি। তবে আট-দশ জন তো হবেই।"

জ্ঞানী মানুষটি আমার দিকে বড় বড় চোখ মেলে তাকিয়ে থাকলেন। একেই কি অধিক শোকে পাথর হয়ে যাওয়া বলে?

"তুমি কি বললে? আট-দশ জনের কথায় তুমি নাচছো? আর সেই কথা তুমি আমাকে বলতে এসেছো? ভাগ্যিস, আমি কোন প্রকাশক না। প্রকাশক হলে তোমাকে এক্ষুণি ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বাড়ী থেকে বার করে দিতাম।"
আমি আর কি জবাব দেবো? চুপ করে থাকি।

জ্ঞানী মানুষটি এবার ক্লান্তভাবে সোফায় গা এলিয়ে দেন। হাতের ইশারায় আমাকে চলে যেতে বলেন। বুঝি তার ব্লাডপ্রেসার বেড়েছে আবার। বরাবরের মতো এবারও দায়ী আমি। যত নষ্টের গোড়া।

এইই হচ্ছে ঘটনা।

যাই হোক- কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

(ক) সিরিজটির নাম বদলে "নির্বাসিত মানুষের আপনজন" রেখেছি। শিরোনাম বদলের কাজ চলছে।

(খ) নিজের নামটি এই মুহুর্তে প্রকাশ করছি না। বই যদি কোনদিন বেরোয়, তখন সিদ্ধান্ত নেবো।

(গ) নতুন একটি সিরিজ লেখার পরিকল্পনা করছি। সিরিজটির নাম "কামেহামেহা, মানোয়া পাহাড় এবং আলোহা" রাখবো ঠিক করেছি। বুদ্ধিমানেরা হয়তো এর থেকেই বুঝে নেবেন আমি কি নিয়ে লিখবো এখানে। আপাততঃ সূচীপত্র তৈরীর কাজ চলছে।

(ঘ) হঠাৎ করে একটা পার্ট-টাইম মাস্টারীর চাকরি শুরু করবো এপ্রিলের প্রথম থেকে। সে জন্য লেখা পোস্ট করতে হয়তো দেরী হবে মাঝেমাঝে। (আন্দোলনের হুমকি দিয়ে লাভ নেই।) আশা করছি বিদেশীদের পড়াতে পড়াতে নতুন কিছু লেখার জিনিস পেয়ে যাবো ফাঁকতালে।

(ঙ) বই প্রকাশের ব্যাপারটা নিয়ে অল্পস্বল্প ভাবছি। যদি জানতে পারতাম কতজন তাদের (বা তাদের বাবা-মায়ের) কষ্টার্জিত পয়সা দিয়ে এ বই কিনতে আগ্রহী তাহলে হয়তো একটা ধারণা পাওয়া যেতো।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে মার্চ, ২০০৮ সকাল ১১:৩৬
৪৩টি মন্তব্য ৩০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গণতন্ত্র আর বাক-স্বাধীনতার আলাপসালাপ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩


একাত্তর সালে আওয়ামী লীগের লোকজন আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছিল পাকবাহিনীর প্রধান টার্গেট। যদিও সর্বস্তরের মানুষের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত ছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের পরিবারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:১৩

ফেসবুকে বাঙালিদের মধ্যে ইদানিং নতুন এক ফতোয়া চালু হয়েছে, এবং তা হচ্ছে "দাওয়াতের নিয়্যত ছাড়া কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।"
সমস্যা হচ্ছে বাঙালি ফতোয়া শুনেই লাফাতে শুরু করে, এবং কোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×