-হ্যালো, আঙ্কেল। একটু অবণীকে দেয়া যাবে?
-না। তুমি কে?
-আমি অবণীর বন্ধু ফাহাদ। ও কি খুব ব্যস্ত?
-হ্যা। অবণীর আজ বিয়ে। সে তার ঘরে বিয়ের শাড়ি পড়ে তৈরী হচ্ছে।
এটুকু বলেই অবণীর বাবা ফোন কেটে দিলেন। ফাহাদ অবণীর কাছে শুনেছে ওর বাবা ফোনে কখনও আধামিনিটের বেশি কথা বলেন না। আজ তার প্রমাণ পেয়ে গেল। কিন্তু অবনী এখনও ঘরেই আছে এটা শুনে একটু চিন্তা হচ্ছে ফাহাদের।
আজ তাদের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিন। ঠিক এগারোটায় অবণীর এখানে উপস্থিত থাকার কথা। এখন পৌনে এগারো বাজে।
দোতলার বারান্দা থেকে ফাহাদ আকাশ দেখল কিছুক্ষণ। অদ্ভূত কারণে এই দুপুর ছুঁইছুঁই সকালেও আকাশ ভোরবেলার স্নিগ্ধ ভাব ধরে আছে।
বারান্দা থেকে ঘরে ঢুকল ফাহাদ। সোফার উপর থেকে তিনজোড়া আধখোলা চোখ এখন তার দিকে চেয়ে আছে। অদ্রি, শশী আর আবির সোফায় আধশোয়া হয়ে বসে টলছিল।
অদ্রি চোখ ঘষতে ঘষতে বলল, কি আসবেনা অবণী?
-এখনও বাড়িতে। ওর বাবা ফোন ধরেছিল। বলল দেয়া যাবে না।
ফোনটা সোফায় ছুঁড়ে ফেলে আবিরের পায়ে মাথা রেখে পা ঝুলিয়ে শুয়ে পড়ল ফাহাদ।
আজ অবণী আর ফাহাদের পালিয়ে বিয়ে করার কথা। অবশ্য ফাহাদ পালিয়ে বিয়ে কথাটা বলতে নারাজ। তার এই ব্যাপারে যুক্তি আছে। সবাই পালিয়ে বিয়ে করাকে খারাপ চোখে দেখে। কিন্তু কেউ বুঝতে চায়না দু’জন প্রকৃত প্রেমিক-প্রেমিকা কখন পালিয়ে বিয়ে করে।
এক অস্ট্রেলিয়া প্রবাসীর সাথে আজ অবণীর বিয়ে। বিয়ে ঠিক হয়েছে এক সপ্তাহ আগে। আর ওরা পালিয়ে বিয়ে করবে এটা ঠিক হয়েছে চারদিন আগে। অবণী চারদিন সময় নিয়েছিল ফাহাদের কাছে তার পরিবারকে মানাতে। কিন্তু গতরাতে অবণী ফোন করে বলল, তার বাবার রাগের ভয়ে সে কিছুই বলতে পারেনি। আগামীকাল যেন ঠিক এগারোটায় ফাহাদ আবিরদের বাসায় থাকে।
শশী, অদ্রি, আবির এরা ফাহাদ আর অবণী দু’জনেরই বন্ধু। ফাহাদ ব্যাপারটা বলতেই প্ল্যান করে ফেলল তিনজন। ঠিক এগারোটায় সবাই আবিরদের বাসায় থাকবে। আবিরের বাবা-মা দু’জনই হজ্জে গিয়েছেন। এজন্য আবিরদের বাসাটাই ভাল।
এদিক থেকে শশী গাড়ি নিয়ে আসবে। ওর বাবা ড্রাইভার ছাড়া শশীকে গাড়ি দেয়না। এজন্য ড্রাইভারকে ম্যানেজ করে ফেলেছে পাঁচশ টাকা খরচ করে। অবণী আসতেই ওরা কাজ়ী অফিসে যাবে গাড়িতে করে। তারপর সবাই মিলে খেতে যাবে পুরান ঢাকায়।
খাওয়া-দাওয়া শেষে ফাহাদের বাড়িতে একবার ঢু মারা হবে। ফাহাদ রাতে বড়আপাকে বলে রেখেছে। বড়আপা মা কে মানাতে পারবে কিন্তু বাবাকে নিয়েই যত সমস্যা। অবশ্য বড়আপা প্রেগনেন্ট এজন্য ফাহাদ বাড়তি সুবিধা পেতেও পারে। বাবা বড়আপার সাথে বেশি তর্ক করবেন না এজন্য। ফাহাদের বাসায় না মেনে নিলে আবার আবিরের বাসায় ফিরে আড্ডা হবে।
এইটুকু পর্যন্ত প্ল্যান হয়েছে।
কিন্তু অবস্থা যা দাঁড়িয়েছে তাতে এত মানুষের ভালবাসার মাঝেও ফাহাদের খুব একা লাগছে। হঠাৎ খুব ভয় করছে ওর। অবণী না আসলে কি হবে? যদি কোনভাবেই বাড়ি থেকে বের হতে না পারে?
শতপ্রশ্নের সামনে দাঁড়িয়ে ফাহাদ কাঁপছিল প্রায়। অবনী ওই অস্ট্রেলিয়ান গরুটার সাথে বিয়ের স্টেজে বসে আছে ভাবতেই গায়ে কাঁটা দিচ্ছে ফাহাদের।
প্রথমে ফাহাদ অপ্রস্তুতই হয়ে গেল প্রায়। তার বন্ধুরা মাঝে মাঝে তাকে কাঁদিয়েই ছাড়ে। তবে প্রতিবারই হাসতে হাসতে কাঁদতে হয়। এইবেলায় শশী ‘অবণী, বাড়ি আছ?’ আবৃত্তি শুরু করেছে। কি দারূণ করছে মেয়েটা। এদিকে আবার আবির ঘাড় মাসাজ করে দিচ্ছে ফাহাদের। সবই ওর টেনশন কমানোর জন্য।
ফাহাদ এক ঝটকায় উঠে বলল, দোস্ত চল। ওর বাড়ির দিকে এগোই। সাড়ে এগারো বাজে।
শশী বলল, যদি অবণী অন্য রাস্তায় এসে আমাদের দেখা না পায়? রাস্তায় আমাদের দেখা নাও হতে পারে।
ফাহাদ বলল, তাহলে তুই আর অদ্রি থাক। আমি আর আবির যাই।
আবির এবার ইতস্তত করে বলল, দোস্ত, দেখ। যদি অবণীর বিয়ে হয়ে যায় তাহলে ওখানে গেলে তোর আরও কষ্ট হবে।
হঠাৎ ঝরঝর করে বৃষ্টি পড়া শুরু করল। তখনই ফাহাদের ফোনটা বেজে উঠল।
শশী ফোন ধরে বলল, হ্যা অবণী, বল।
ফাহাদের চোখে হাসি খেলে গেল। সাথে আচমকা দুঃসংবাদের ভয়ও আছে। তবে নিজেকে স্বান্ত্বনা দিল ফাহাদ, অবণী যখন ফোন করেছে তখন নিশ্চয়ই দুঃসংবাদ দেয়ার জন্য নয়।
-তোর সাথে কথা বলবে।
শশী ফোনটা ফাহাদের দিকে ছুঁড়ে দিল।
-হ্যালো?
ফাহাদের হৃদস্পন্দন বেড়ে যাচ্ছে। মনে হলো এই একটা ফোনকলের উপর ভাসমান ভেলার মত দাঁড়িয়ে আছে সে।
-হুম। আচ্ছা শোন, আবিরের বাড়ির নাম্বারটা যেন কত? আমি অনেকক্ষণ মেইনি রোডে দাঁড়িয়ে। কোন রিক্সা পাচ্ছিনা।
ফাহাদের মনে হলো সে ভেলার বৈঠা পেয়ে গেছে। তার হৃদস্পন্দন আরো বেড়ে গেল।
-অবণী, দাঁড়াও! আসছি....
ফাহাদ অবণীপাণে ছুটতে লাগল। বৃষ্টির জলে সদ্য ভেজা মাটি তার নগ্ন পা দুটিকে অভ্যর্থনা জানাচ্ছে মৃদু শিস বাজিয়ে।
আলোচিত ব্লগ
আমার কথা: দাদার কাছে—একজন বাবার কিছু প্রশ্ন

দাদা,
কেমন আছেন? আশা করি খুবই ভালো আছেন। দিন দিন আপনার ভাই–ব্রাদারের সংখ্যা বাড়ছে—ভালো তো থাকারই কথা।
আমি একজন খুবই সাধারণ নাগরিক। ছোটখাটো একটা চাকরি করি, আর নিজের ছেলে–মেয়ে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন
ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন
মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন
তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।
দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন
মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।