somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার শৈশব-আমার সবচেয়ে সুখের দিন

০৬ ই নভেম্বর, ২০০৭ রাত ৯:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার আব্বুর সরকারি চাকরি।তাই ক'দিন পরপরই এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় বদলি হতে হত।আব্বুর সাথে সাথে আমরাও নতুন নতুন জায়গায় যেতাম।নতুন জায়গা,নতুন স্কুল,নতুন বন্ধু-দারুণ ইন্টারেস্টিং লাগত!আমাকে কেউ যদি জিজ্ঞাসা করে আমার সবচাইতে সুখের দিন কোনগুলো. . . .এক মুহূর্তও দেরী না করে নির্দ্বিধায় আমি বলব আমার মফস্বল শহরে কাটানো দিনগুলো।

অনেকে ভেবে থাকেন,মফস্বলে বুঝি ভালো লেখাপড়ড়া হয় না,নানা বিষয়ে সুযোগ-সুবিধা কম. . .ইত্যাদি ইত্যাদি।কিন্তু আমি তাদের সাথে কখনোই একমত নই।আমার তো মনে হয় এতটা সময় মফস্বলে কাটিয়েছি বলেই জীবনটাকে প্রতি মুহূর্তে উপভোগ করতে পেরেছি।আনন্দের সাথে লেখাপড়া করেছি,বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত থেকেছি-মাটির সাথে মিশে মনের আনন্দেই সব করেছি,কখনো কিছু চাপিয়ে দেয়া হয়নি।তাই বুঝি অর্জিত শিক্ষাটুকু অনেক বেশি স্থায়ী হয়েছে,আনন্দের হয়েছে।

আমার মনে আছে,ছোটবেলায় বিকেল হলেই আমরা ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা বেরিয়ে পড়তাম ছোট ছোট পায়ে-বউছি,গোল্লাছুট,বদন.কানামাছি খেলতে।প্রায়ই দৌড়ে দৌড়ে চলে যেতাম দূরের মাঠে. . .ধানেক্ষেতের মাঝখান দিয়ে ছুটে যেতাম ট্রেন দেখতে. . . . .ঠিক যেন 'পথের পাঁচালি'-র দুর্গা ।

ছিপ দিয়ে মাছ ধরা ছিল আমার কাছে নেশার মতো।অনেক সময় বিকেলবেলা সাইকেল নিয়ে বেরোতাম-টই টই করে কত জায়গা যে ঘুরতাম তার ইয়ত্তা নেই।আর লেখাপড়ার পাশাপাশি চলত নানা অনুষ্ঠানের জন্য নাচ-গান-নাটকের মহড়া;আহা!কী মধুর সে দিনগুলো!

আমার সবচেয়ে সুখের দিনগুলোর একটা বড় অংশ জুড়ে আছে আমার দাদাবড়ি আর নানাবাড়ি।বগুড়া শহরের মড়িয়া গ্রামে আমার দাদাবাড়ি,রাজশাহী-র আড়ানী-তে নানাবাড়ি।এ ছোট্ট দুটো গ্রামের সবুজ ঘাস-মাঠ,নীল আকাশ,কাদা-মাটি-আলো -বাতাস-পানি . . . .স-অব-সবকিছু আমার অস্তিত্বের সাথে মিশে আছে ।

গ্রামে গিয়ে পুকুরে ঝাঁপ মারা,দিনভর সাঁতার কাটা,শীতের সময় পুকুরের পানি কমে গেলে পা ডুবিয়ে মাছ ধরা,শীতের সময় জোছনা রাতে আগুন ধরিয়ে ওম নেয়া আর গল্পের ঝুড়ি খুলে বসা,চাদর মুড়ি দিয়ে যাত্রা কিংবা সার্কাস দেখতে যাওয়া,ঝড়ের ভিতর আম কুড়াতে বেরোনো-এ সবের সাথে কি কোন কিছুর তুলনা হয়??যখনই স্মৃতিগুলো হাতড়ে বেড়াই মনে হয়,আমার শৈশবটা বিভূতি-শরতের উপন্যাসের চাইতে কম বৈচিত্র্যময় নয়!

এখন আব্বুর চাকরি আর আমার পড়াশোনা-দু’কারণেই ঢাকায় থাকি।বদলি হওয়া-হওয়িও নেই।জীবনটা অনেক বেশি যান্ত্রিক হয়ে যাচ্ছে।তাই সময় পেলেই স্মৃতিগুলো নাড়াচাড়া করি।আব্বু-আম্মুকে ধন্যবাদ দিই আমাকে এতো সুন্দর একটা শৈশব উপহার দেবার জন্য। মেয়ে বলে তারা কখনো আমাকে আলাদাভাবে দেখেননি।সব-সময় ভালো রেজাল্ট করতাম,তাই ছুটোছুটিতেও ছিল অবাধ স্বাধীনতা।

এ পর্যন্ত অনেক সুখের দিন এসেছে।জাতীয় পর্যায়ে পাঁচবার স্বর্ণপদক পাওয়া কিংবা ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি বা এসএসসি-এইচএসসি-তে গোল্ডেন ফাইভ পাওয়া কিংবা ঢাবি-র ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম হওয়া-এদিনগুলোও আমার সুখের দিন,কিন্তু আমি বিশ্বাস করি,আমার শৈশবটা যদি এমন রঙিন না হতো,আমার পে এসব সাফল্যের কানাকড়িও পাওয়া সম্ভব হতো না।বিভিন্ন জায়গায় গেছি,অনেক শিক্ষক এবং বিখ্যাত মানুষের সংস্পর্শ পেয়েছি,তাঁদের দোয়া পেয়েছি,নানা অভিজ্ঞতা হয়েছে-তা দিয়ে নিজের জীবন গড়ার চেষ্টা করছি,ভুলগুলো শোধরাবার চেষ্টা করছি।

ছোট ছোট গ্রাম,উপজেলা,জেলা শহরগুলোর যে কাদা- মাটি গায়ে মেখে আমি বেড়ে উঠেছি,সে মাটির সোঁদা গন্ধ কখনো মিলিয়ে যাবার নয়।চোখ বন্ধ করে যখন সোনালী দিনগুলোর কথা মনে করি,উপলব্ধি করি,আমিই পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ।এ স্মৃতিগুলো আমার কাছে সবচেয়ে দামী-এরাই আমাকে সামনে এগোবার প্রেরণা দেয়,সুন্দরভাবে বাঁচতে শেখায়,পৃথিবীর সবচাইতে সুখী মানুষ করে তোলে। আর সেজন্যই আমি আমার রঙিন শৈশবকে মৃত্যুর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত আঁকড়ে ধরে রাখতে চাই. . . . .মৃত্যুর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত. . . .

(বি.দ্র.-লেখাটি যাযাদি'র টিন এ্যান্ড টেকনোলজি-তে প্রকাশিত হয়েছিল)

সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই নভেম্বর, ২০০৭ রাত ১০:৪২
৭৯টি মন্তব্য ৪টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশ একদিন মাথা উঁচু করে দাঁড়াবেই

লিখেছেন নতুন নকিব, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:৫৩

বাংলাদেশ একদিন মাথা উঁচু করে দাঁড়াবেই

ছবি এআই জেনারেটেড।

ভিনদেশী আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে সত্যের বজ্রনিনাদে সোচ্চার হওয়ার কারণেই খুন হতে হয়েছে দেশপ্রেমিক আবরার ফাহাদকে। সেদিন আবরারের রক্তে লাল হয়েছিল বুয়েটের পবিত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজাকারের বিয়াইন

লিখেছেন প্রামানিক, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:০৪


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

রাজাকারের বিয়াইন তিনি
মুক্তিযোদ্ধার সন্তান
ওদের সাথে দুস্তি করায়
যায় না রে সম্মান?

কিন্তু যদি মুক্তিযোদ্ধাও
বিপক্ষতে যায়
রাজাকারের ধুয়া তুলে
আচ্ছা পেটন খায়।

রাজাকাররা বিয়াই হলে
নয়তো তখন দুষি
মেয়ের শ্বশুর হওয়ার ফলে
মুক্তিযোদ্ধাও খুশি।

রচনা কালঃ ১৮-০৪-২০১৪ইং... ...বাকিটুকু পড়ুন

দাসত্বের শিকল ভাঙার স্বপ্ন দেখা এক ক্রান্তদর্শী ধূমকেতু ওসমান হাদী।

লিখেছেন মুঃ গোলাম মোর্শেদ (উজ্জ্বল), ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪২

বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে দেশে যে ধরণের রাজনৈতিক সংস্কৃতি চালু হয়েছে, তাহলো বিদেশী প্রভুরদের দাসত্ব বরণ করে রাজনৈতিক দলগুলোর রাষ্ট্র ক্ষমতায় গিয়ে দেশের মানুষের উপর প্রভুত্ব করা , আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

দিপুকে হত্যা ও পোড়ানো বনাম তৌহিদী জনতা!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৫


পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস বিডি লিমিটেড (Pioneer Knitwears (BD) Ltd.) হলো বাদশা গ্রুপের (Badsha Group) একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। বাদশা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান কর্ণধার হলেন জনাব বাদশা মিয়া, যিনি একইসাথে এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাজানো ভোটে বিএনপিকে সেনাবাহিনী আর আমলারা ক্ষমতায় আনতেছে। ভোট তো কেবল লোক দেখানো আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।

লিখেছেন তানভির জুমার, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:২২



১০০% নিশ্চিত বিএনপি ক্ষমতায় আসছে, এবং আওয়ামী স্টাইলে ক্ষমতা চালাবে। সন্ত্রাসী লীগকে এই বিএনপিই আবার ফিরিয়ে আনবে।সেনাবাহিনী আর আমলাদের সাথে ডিল কমপ্লিট। সহসাই এই দেশে ন্যায়-ইনসাফ ফিরবে না। লুটপাট... ...বাকিটুকু পড়ুন

×