_ তুই এখনো ঘুমাচ্ছিস!আমরা এক্ষুনি বের হবো।এবার ওঠ বাবা,
_ আরেকটু ঘুমাই না মা।তোমরা যাও,
_ ঠিক আছে, খাওয়া টেবিলে রাখা আছে খেয়ে নিস।আমরা গেলাম।
_ . . .. ... ...
চুপচাপ শুয়ে থেকে বুঝিয়ে দিলাম আমি সকালের গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন।কয়েকদিন থেকে পরিপাটি হয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করছি।
.
ক্লাস নাইনে ছ্যাকা খাওয়ার পর থেকে কোনো দিনও পরিপাটি ভাবে ঘুম চোখে আসে নি।রাতের বেলার ঘুমও আজকাল আমাকে ভেবে মজা পায়।
সকাল বেলা ঘুমানোর একটা উপকারীতা আছে।এ সময়ের স্বপ্নগুলো রোমান্টিক হয়।অনেকটা জানালার পর্দা সরিয়ে ডেকে তোলার মতো বেপার।
রোদের আলো দেখিয়ে ঘুম ভাংগানোর মানুষকে কাছে পাওয়ার মতো বেপার।
.
আমিও দেখতাম।কেউ এসে আমাকে ডেকে তুলছে।এলো চুল মুখে ঝাপটে ডেকে তুলছে।পাড়ের ভাঁজ করা ছোট্ট একটু অংশ কানে গুজে হেসে মিটিমিটি হয়ে যাচ্ছে।
আজ আমি ঘুমের ঘোরে নেই।সত্যিই আমাকে কেউ একজন ডেকে তুলছে।সকাল বেলা স্বপ্নগুলার সত্যতা যাচাইয়ের জন্য বাস্তবে মন দিলাম।
_ এই যে মিষ্টার,, টেবিলে মাছি উড়ছে।সব খাবারে মাছিরা ডিম মেখে দিয়েছে।খাবেন কীভাবে?
_ আ আ আপনি এখানে!
_ হ্যা, আমি এখানে।কেনো,অন্য কারো আসার কথা ছিলো নাকি?
_ না মানে!আপনি আমার রুমে কীভাবে!
_ আরে!তুমি এমন করতেছো কেনো?আমি কী আসতে পারি না তোমার রুমে?
_ দেখুন আমার অনেক ভয় লাগছে,আপনি এখানে কিভাবে!?
_ আর কীভাবে, দরজা খোলা পেয়ে ঢুকে গেলাম। সব রুমে কাউকে না পেয়ে তোমার রুমেই আসলাম।
এতক্ষণে আমার হুঁশ ফিরেছে।আম্মু সকালে বের হবার সময় দরজা বন্ধ করে নাই।সেই সুযোগটা ইনি হাতিয়ে নিয়েছে।তারপরও আমার ভয় কাটছে না।মেয়েটাকে যে সরাসরি বলে দিবো বের হয়ে যেতে তাও পারছি না।
_এইই।
_ _________
_ তুমি কি কিছু ভাবছো?
_ জ্বি! না না,, ভাবছি না তো।ভাবছি না।
_ সকাল থেকে তো কিছু খেয়েছো বলে মনে হচ্ছে না।এখন কী খাবা?
_ জ্বি, আম্মু টেবিলে খাবার রেখে গেছে।
_ তুমি কি প্রায় সময় এমন খাবার খাও?
_ মাঝে মাঝে।
_ মাছির ডিম গুনতে পারো?
_ মাছির! কখনো চেষ্টা করে দেখিনি।চেষ্টা করলে পারা যাবে।
_ যাও, টেবিলের খাবার গুলা থেকে ডিম বের করো আর গুনো। বাসার কোন জিনিস কোন জায়গায় আছে ওটা বলে যাও।
_ কেনো? ওগুলো দিয়ে কি করবেন?
_ রান্না করে দিয়ে যাবো।ওগুলা খাবা।খাওয়ার প্রতি একটু যত্নশীল হও বুঝছো!
মেয়েটার পাগলামি সীমাহীন।এ রকম টা এবার প্রথম না।এর আগেও এমন হয়েছে অনেকবার।বাড়ীর মালিকের মেয়ে হিসেবে কোনো অহংকারবোধ নেই।জিনিসটা আমাকে নাড়া দেয়।তবে আমিও ইমোশান কন্ট্রোল করতে জানি।
সে রান্না করছে আর আমি তারে দেখে চলেছি।নিজের বউ হলে অবশ্যই সাহায্য করতে যেতাম।কিন্তু এখন সে অন্য কেউ।
.
সেও হয়তো ভাবছে আমি সার্থপর একটা।একটাবারও বলি না অনেক ঘেমে গেছো,একটু বসো এখানে।আদর করে এক গ্লাস পানিও এনে দিচ্ছি না।
_ কী দেখো?
_ কই না তো।আপনাকে দেখি না আমি।এমনি ওদিক তাকাইছি।
_ আমি কি একটাবার বলছি,তুমি আমাকে দেখো!?
_ সরি,আমি আপনাকেই দেখছি।
_ কেনো?
_ আপন কাউকে বলতে পারতাম,।আপনি তো আপন কেউ না।
_ ভিতুর মতো আপনি আপনি বললে কেউই আপন হবে না।
_ _______
_ চুপ করে আছো কেনো?
_ _______
_ রান্না হয়ে গেছে।আমি গেলাম।
_ আম্মু আসলে যাইয়েন।আর একটু বসেন,ঘেমে গেছেন খুব।
_ না।আমি আসি।
_ আচ্ছা।
ওর যাওয়ার পর পরই আম্মু চলে আসছে।উনার মুখে হাসির স্পষ্ট ছাপ।কী জানি কোথায় কার মেয়ে দেখতে গেছিলো,।এত করে বললাম বিয়ের জন্য আমার ইচ্ছা আরর শক্তি কিছুই নেই।শুনলো না।
_ কী হইছে!!তোমাকে খুশি খুশি দেখাচ্ছে কেনো?
_ তুই রান্না করছিস!?বাহ,, ভালোই তো রান্না করিস।
_ আমি করিনি তো।ঝুমুর এসে রান্না করে গেছে।
_ ও।যাক, মেয়েটা কে যেভাবে বলেছি ঠিক সেভবেই কাজ করেছে!
_ মানে? কী বললা!!
আম্মুর মতিগতি ঠিক ঠেকছে না।নতুন ফন্দি এঁটেছে নিশ্চিই।জানতেই হবে আমাকে।
.
কিছুক্ষণ পর দেখলাম ঝুমুর আবার আসছে।এবার আমার দিকে কোনো ভ্রুক্ষেপও নাই।সোজা আম্মুর রুমে চলে গেলো।আমিও আস্তে আস্তে গিয়ে ওর পিছনে দাড়ালাম।
_ আন্টি, আপনি যেভাবে বলেছেন ঠিক সেভাবে করবছি সব।আর ওর পছন্দের খাবার টাই রেঁধে দিয়েছি।
_ ______ ( আম্মু চুপ করে রইলো,ঝুমুর কে ব্যর্থ ইশারা করছে যে, আমি পিছনে,। )
_ এবার কিন্তু আর আন্টি ডাকবো না।আম্মু ডাকবো।আর ওকে বলে দিবেন, আমাকে যেনো তুমি করে বলে।
আর কিছু বলার সুযোগ দিই নি।ওর কান ধরে টেনে আমার রুমে নিয়ে আসলাম।
.
মেয়েটা লজ্জায় লাল হয়ে গেছে।কিছু বলতেও পারছে না।আবার লুকাতেও পারছে না।আমি তার লজ্জা ভাংগানোর চেষ্টা করে হাতটা ধরলাম।
_ তোমাকে লজ্জা চোখে ভয়ানক সুন্দর লাগে,ওটা কী তুমি জানো?
_ কী!
_ হ্যা,, অনেক আগেই লক্ষ করেছি সৌন্দর্য টা।
_ মিথ্যে কথা।তাহলে আগে বলো নি কেনো?
_ আমি তোমার ভিতু প্রেমিক হতে চেয়েছিলাম।
এবার সত্যিই সে লজ্জায় কেঁদে ফেলেছে।আমার সামনে কেঁদে দিয়ে আমাকে মেঘের ভেলায় ভাসাতে চাইছিলো না।
.
দূরে গিয়ে বলে উঠিলো "আর দরজা খুলে ঘুমাবা না।আমার মতো করে অন্য কেউ ঢুকে যাওয়া সইতে পারবো না।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:৪০