‘বাল’ ও ‘বাকশাল’ – একটি রাজনৈতিক পোস্ট
পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে জানা যাচ্ছে বর্তমান আওয়ামী লীগ বাকশালের রাজনৈতিক ভাবধারাতেই রয়েছে। আর এই কথাটি উল্লেখ করে দলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব-উল আলম হানিফ বলেছেন, বাকশালের ‘কৃষক-শ্রমিক’ শব্দ দুটি বর্তমান আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুক্ত করার কোনো চিন্তা-ভাবনা আমাদের নেই। সেই দুইটি শব্দ যোগ করলে যে প্রলয় হয়ে যাবে তা বর্তমান ‘বাল’ নেতৃত্ব খুব ভাল করেই জানে। কেননা ‘বাকশাল’ মানেই গনতন্ত্র হত্যা, বিরোধীদের কন্ঠরোধ, বহুদলীয় গনতন্ত্রের মৃত্যু, আর বাকস্বাধীনতার টুঁটি চেপে ধরা।
তবে, তাদের চিন্তা চেতনায় এখনও তারা বাকশালের চিন্তা-চেতনা ও দর্শনকে ধারণ করে। সব দলকে সঙ্গে নিয়ে একটি প্লাটফর্মের মাধ্যমে ঐক্যবদ্ধভাবে বাকশালের চিন্তা-চেতনাকে কাজে লাগিয়ে তারা মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে কাজ করতে চায়।
হানিফের মতে জাতীয় ঐক্যের মধ্য দিয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশ কৃষক-শ্রমিক আওয়ামী লীগ (বাকশাল) গঠন করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যার পর সামরিক জিয়াউর রহমান রাজনৈতিক দলের রেজিস্ট্রেশনের সময় গায়ের জোরে কৃষক-শ্রমিক শব্দ দুটি বাদ দেন। জেনারেল জিয়া এটি করেছিলেন, কারণ কৃষক-শ্রমিককে তারা গোড়া থেকেই শত্রু মনে করেন। কিন্তু হানিফ ভুলে গেছেন পঞ্চম সংশোধনীর একটি অন্যতম বাতিলকৃত ধারা হচ্ছে কৃষক-শ্রমিক সঙ্ক্রান্ত।
কৃষক-শ্রমিক শব্দটি নতুন করে আওয়ামী লীগে যুক্ত করা হবে কী না, এ সম্পর্কিত প্রশ্নের উত্তরে হানিফ বলেন, নতুন করে এটা যুক্ত করার চিন্তা-ভাবনা দলের নেই। তবে, বাকশালের চিন্তা-চেতনাকে ধারণ করে তারা সামনের দিকে এগিয়ে যেতে চান। বাকশাল ‘বাল’-পন্থীদের জন্য একটি নাইট মেয়ার। তারা এই ঘটনাটিকে মন থেকে কখোনই মুছে ফেলতে পারবে না। তাদের কাছে ইতিহাসের এক মুর্তিমান আতঙ্ক আর চরম শিক্ষার নাম হল বাকশাল।
বঙ্গবন্ধুর বাকশাল গঠনের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে হানিফ বলেন, জাতির জনক ১৯৭৪ সালে বাকশাল গঠন করে কৃষক-শ্রমিক মেহনতী মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে নতুন কর্মসূচি দিয়েছিলেন। তিনি সরকারের বিকেন্দ্রীকরণসহ বিভিন্ন পরিকল্পনা হাতে নিয়েছিলেন। তার ওইসব পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে সারা দেশে সমভাবে উন্নয়ন হতো। প্রশাসন কেন্দ্রীকরণের জন্য আজ ঢাকা শহর বসবাসের অনুপযোগী হয়ে গেছে। অপরদিকে পল্লী অঞ্চল অবহেলিত রয়ে গেছে।
হানিফ ভুলে গেছেন গ্রাম সরকারের মত প্রোগ্রাম এ দেশে চলে নাই। তিনি ভুলে যাচ্ছেন যে তাদের সরকার এখন পর্যন্ত উপজেলা পরিষদকে কার্যকর করতে পারে নাই। তারা সংসদ সদস্যদের পূজনীয় করতে যেয়ে স্থানীয় সরকারকে দূর্বল করে তুলছেন। তিনি বলতে ভুলে গেছেন যে বাকশালের নামে যে গভর্নরের শাসন তারা চালু করতে চেয়েছিলেন, তা এ দেশের জনগন প্রত্যাখান করেছে। তিনি হয় তো বোঝাতে চেয়েছেন বাকশাল বানালে আজকে ‘বাল’-এর যে সব ‘ডগ’ ফাদাররা আছেন তাদের লাইসেন্স দিতে ‘বাল’-এর খুব সুবিধা হতো।
বিএনপি মহাসচিবের মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবি প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নির্বাচন দাবির আগে বিএনপিতে নিজেদের জনপ্রিয়তা যাচাইয়ের পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের দেড় বছরের কর্মকাণ্ডের বিষয়ে জনমত যাচাই করে ‘দি ডেইলি স্টার’ পত্রিকায় একটি জনমত জরিপ প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, এ মুহূর্তে নির্বাচন হলে দেশের ৪১ শতাংশ মানুষ আওয়ামী লীগে ও ২০ শতাংশ বিএনপিকে ভোট দেবেন।
হানিফ মনে হয় ভুলে যাচ্ছেন যে তিনি যে জনমত জরিপের কথা টেনেছেন, তার পরেও আরো একটি জরিপ হয়েছে। সেটার ফলাফল খুবই খারাপ। সেটা দেখেই বি-এন-পি’র নেতারা মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবী তুলেছেন। হানিফ কি ভুলে গেলেন তার বাচাল নেত্রীর কয়েক বছর আগেকার কথা-বার্তাগুলা? সে সময়ে তার নেত্রী আর তার চারপাশের হুক্কাহুয়া বলনেওয়ালারা সব সময়েই মধ্যবর্তী নির্বাচন, সংখ্যানুপাতে সংসদের আসন বন্টন, ‘না’-ভোট, উপজেলা নির্বাচন ইত্যাদি কথা বলে বটতলা গরম করে রাখতেন!
জনপ্রিয়তা যাচাইয়ের জন্য যখন-তখন নির্বাচনের প্রশ্ন তোলা অগণতান্ত্রিক মনোভাবের লক্ষণ অভিযোগ করে তিনি বলেন, জনগণের সমর্থনেই বর্তমান সরকার দেশ পরিচালনা করছে। খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের মতো তথাকথিত জাতীয়তাবাদী নেতার মনে বিভিন্ন সময়ে মধ্যবর্তী নির্বাচনের খেয়াল চাপতে পারে। তাই বলে যখন-তখন নির্বাচন হতে পারে না। তাদের পুরাতন কথাগুলা আজকে কেন তাদের কাছেই খারাপ শোনায়?
এই জন্য কি ‘বাল’-এর সে সব কথা আজ বি-এন-পি বলতেছে?
“নির্বাচনকে ছেলের হাতের মোয়া ভেবে তা অপব্যবহারের আবদার কখনও গণতন্ত্রসম্মত নয়” - হানিফ সাহেব আর তার নেত্রী যদি এই কথাটা সবসময়ের জন্যে মনে রাখেন তা হলে বাংলাদেশের জন্য ভাল হবে আগামীতে।
জিয়াউর রহমানের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ পুনরুজ্জীবিত হয়েছে বিএনপি নেতাদের এমন বক্তব্যের জবাবে তিনি বলেন, গোয়েন্দা সংস্থার সহযোগিতা, রাজনীতিকদের চরিত্র হনন ও দল ভাঙা-গড়ার অপকৌশল এবং অসুস্থ প্রক্রিয়ায় বিএনপি নামক দলটির জন্ম হয়। সেনাছাউনি থেকে যে দলের প্রতিষ্ঠাতা জেনারেল জিয়াউর রহমান পেছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতা দখল করেছে, তার পক্ষে আওয়ামী লীগের মতো দেশ-জনতার প্রাণের দলের পুনরুজ্জীবন কতটুকু সম্ভব? এ ধরনের বালখিল্য উক্তির মধ্য দিয়ে বিএনপির রাজনৈতিক দেউলিয়াপনার প্রমাণ মেলে।
সমস্যাটা হচ্ছে ‘বাল’ যেমনটা বলে, সেই মতবাদ মোতাবেক, তারা জনগণের মাঝ থেকে উঠে আসা একটি রাজনৈতিক দল। তারা স্বাধীনতার যুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছে। ইতিহাসে তাদের এই স্থান কেউ নড়াতে পারবে না। কিন্তু দেশ স্বাধীন হবার পরে এই দলটি তাদের অপশাসনের কারনে ক্ষমতা থেকে বিতাড়িত হয়েছিল ( এখানে উল্লেখ করি মালেক উকিল [ ১৯৭৫ সালে সংসদের স্পিকার ]-এর বক্তব্য। তার নেতার মৃত্যুতে লন্ডনে বসে বলছিলেন ‘ফেরাউনের হাত থেকে দেশ বাঁচলো’ ), ফের ক্ষমতায় আসতে পারে নাই, এমন কি জিয়ার সামরিক শাসনের সময়ে সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে কোন কার্যকর আন্দোলনই গড়ে তুলতে পারে নাই।
কেননা সে সময়ের ‘বাল’-কে এ দেশের মানুষ বিশ্বাস করতে পারে নাই। এমন কি শেখ হাসিনা যে আত্ম-বিশ্বাস নিয়ে ১৯৯১ সালের নির্বাচনের আগে ‘ভাবী’ প্রধাণমন্ত্রী হিসেবে নিজেকে ভেবে যে ভাষন দিয়েছিলেন, তাই তো দেশের মানুষ অপছন্দ করে ভোটের সময় বুঝিয়ে দিয়েছিল। শেখ হাসিনা ওয়াযেদ সে সময়ে নিজের হাত কামড়েছিলেন নিশ্চয়।
হিসাব করে দেখান, ‘বাল’ ১৯৭৩ সালের কারচুপির নির্বাচন ছাড়া আর কতদিন ক্ষমতায় ছিল? এই হিসাব কি তাদের ব্যর্থতার প্রমান নয়?
হানিফ আরো বলেছেন, ‘গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপদানের ক্ষেত্রে যে কোনো প্রতিবন্ধকতা এদেশের জনগণ আপন ইচ্ছায় রুখে দাঁড়াবে’। কথাটা কি তিনি তাদের দলের ইতিহাস থেকে শিক্ষা থেকে বলেছেন? তাদের বিরুদ্ধে [ ‘বাল’-এর বিরুদ্ধে ] এমন রুখে দাঁড়াবার অনেক ঘটনাই ইতিহাসের পাতায় লেখা হয়ে আছে।
না হলে ‘জাতির পিতা’র পুরো পরিবারকে মেরে ফেলল কর্নেল তাহের আর কোথাকার কোন অখ্যাত মেজর [ ততদিনে বঙ্গবন্ধু তাকে মেজর জেনারেল পদে বসিয়েছেন ] জিয়ার মদদে কয়েকটা লোক, আর শেখ সাহেবের আপন লোক তোফায়েল [ এখনকার কলংকিত এমপি শাওনের ‘ডগ’ ফাডার ] তার ‘রক্ষী বাহিনী’ নিয়ে চুপচাপ কেটে পড়ল?
মালেক উকিলের কোন আত্মীয় কি 'বাল'-এর রাজনীতি করে? তোফায়েল কেন এখন ব্যাক-সিটে? হানিফ কেন এখন বড় নেতা?

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



