somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভালোবেসে মরতে পারি [নাটক]

১৯ শে মার্চ, ২০১৬ বিকাল ৩:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



[সংক্ষিপ্তকারে উক্ত নাটকের কিছু কথা]
গ্রামে মহসিন তালুকদার,আফজাল চৌধুরী ও খোকা মিয়া তিন সমবয়সী বন্ধু । এরা তিনজন ছোটকাল থেকেই বন্ধু । এরা প্রত্যেকেই অশিক্ষিত । মহসিন তালুকদারের এক ছেলে ও এক মেয়ে । মেয়ের নাম মিথিলা । মিথিলা খুব আল্লাদি ও অশিক্ষিত । তার ছেলে সুমন,সে বিয়ে করেছে । সুমন এর একটি ৮ বছরের মেয়ে আছে নাম টুনি । অপরদিকে আফজাল চৌধুরীর কোনো সন্তান নেই তার একমাত্র ভাতিজা নয়ন । নয়ন এতিম । নয়নকে লালন পালন করেছে তার চাচা চাচি । নয়ন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাষ্টার্স শেষ করেছে । মহসিন তালুকদার ও আফজাল চৌধুরী খুব ধনী । অপরদিকে খোকা মিয়া খুব গরিব । সে একজন দিনমজুর । তার একটি মাত্র মেয়ে নাম মৌমি । মৌমি বরিশালের বিএম কলেজে অনার্স ১ম বর্ষে পড়ে । তিন বন্ধু ও এলাকার লোকজন গ্রামের মোখলেছের চায়ের দোকানে প্রায়ই আড্ডা দেয় । সেখানে প্রায়ই এদের সকলকে নিয়ে কথাবার্তা ও আলোচনা সমালোচনা হয় । মহসিন তালুকদারের মেয়ে মিথিলা খুব আল্লাদি ও সাদাসিধে । সে সারাদিন তার ৮ বছরের ভাতিজি টুনিকে নিয়ে এদিক সেদিক ঘুরে বেড়ায় । কখনও সে ফুল ছিড়তে যায় আবার কখনও সে পাখির ছানা নামাতে য়ায় । আফজাল চৌধুরীর ভাতিজা নয়ন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ পাস করে গ্রামে আসে গ্রামের উন্নয়ন করতে । নয়নকে দেখে মিথিলা নয়নকে বিয়ে করার জন্য পাগল হয়ে যায় । কিন্তু নয়ন মিথিলাকে আপন বোনের মতো দেখে । অপর দিকে এলাকার এক বখাটে ছেলে ছদরুল মিথিলাকে বিয়ে করতে চায় । কিন্তু মিথিলা বখাটে ছেলেটিকে কোনো পাত্তাই দেয়না । মিথিলা শুধু নয়নকেই বিয়ে করতে চায় । তিন বন্ধুর মধ্যে খোকা মিয়া খুব গরিব । তার মেয়ে মৌমি অনার্স প্রথম বর্ষে পড়ে । মৌমির আচার আচরন কথাবার্তা অত্যান্ত সুন্দর । নয়ন এক পর্যায়ে মৌমিকে ভালোবেসে ফেলে । এদিকে মিথিলা নয়নকে বিয়ে করার জন্য পাগলের মত হয়ে যায় । মিথিলা একবারে খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে দেয় । মিথিলার কষ্ট দেখে মিথিলার বাবা মহসিন তালুকদার বাধ্য হয়ে তার বন্ধু অর্থাৎ নয়নের চাচা আফজাল চৌধুরীর কাছে মিথিলার বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যায় । কিন্তু মিথিলা অশিক্ষিত বলে আফজাল চৌধুরী মিথিলার বাবাকে অপমান করে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয় । অপর দিকে খোকা মিয়ার মেয়ে মৌমি আর আফজাল চৌধুরীর ছেলে নয়নের মধ্যে বিয়ে ঠিক হয় । খোকা মিয়া গরিব বলে আফজাল চৌধুরী প্রথমে এ বিয়েতে রাজি না থাকলেও পরবর্তিতে তার স্ত্রী ও তার ছেলের শিক্ষামূলক কথায় ও মৌমির গুনে বিয়েতে আফজাল চৌধুরী রাজি হয়ে যায়,এবং সে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে খোকা মিয়া বাড়ি যায় । বিয়ের খবর শুনে মিথিলা জ্ঞান হারিয়ে ফেলে । পরবর্তিতে মিথিলা বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করে । মিথিলা আত্মহত্যা করে প্রমান করে দিয়ে যায় যে,সে সত্যিই ভালোবেসে মরতে পারে ।
[সমাপ্ত]
ভালোবেসে মরতে পারি
[নাটক]

চরিত্র চিত্রন

চরিত্র- চরিত্রের নাম- আসল নাম
০১)নায়ক- নয়ন-
০২)নায়িকা- মৌমি-
০৩)বিয়ের জন্য মরতে পারে মেয়ে- মিথিলা-
০৪)মিথিলার ভাবি- নাম নেই-
০৫)মিথিলার ভাই- সুমন-
০৬)মিথিলার ভাইজি- টুনি-
০৭)প্রথম বন্ধু(মিথিলার বাবা)- মহসিন তালুকদার-
০৮)২য় বন্ধু(নয়নের চাচা)- আফজাল চৌধুরী-
০৯)৩য় বন্ধু(মৌমির বাবা)- খোকা মিয়া-
১০)মিথিলার মা- নাম নেই-
১১)নয়নের চাচি- নাম নেই-
১২)বখাটে ছেলে- ছদরুল-
১৩)নয়নের বন্ধু- রনি-
১৪)চায়ের দোকানদার- মোখলেছ-
১৫)কাজী- নাম নেই-
১৬)মিথিলার খালাতো বোন- নূপুর-
১৭)মিথিলার বান্ধবী- তানিয়া-
১৮)মৌমির বান্ধবী- সালমা-
১৯)মিথিলাদের কাজের লোক- জহুর-
২০) নয়নদের কাজের লোকঃ- রুহুল-
২১)মিথিলার পাশের বাড়ির ভাবিঃ- নাম নেই-










ভালোবেসে মরতে পারি
[নাটক]


মহসিন তালুকদার,আফজাল চৌধুরী ও খোকা মিয়া তিন সমবয়সী বন্ধু । এরা তিনজন ছোটকাল থেকেই বন্ধু । এরা প্রত্যেকেই অশিক্ষিত । মহসিন তালুকদারের এক ছেলে ও এক মেয়ে । মেয়ের নাম মিথিলা । তার ছেলে সুমন,সে বিয়ে করেছে । সুমন এর একটি ৮ বছরের মেয়ে আছে নাম টুনি । অপরদিকে আফজাল চৌধুরীর কোনো সন্তান নেই তার একটি ভাতিজা আছে নাম তার নয়ন । আফজালল চৌধুরী নয়নের একমাত্র ছোট চাচা । নয়নের মা বাবা ওর তিন বছর বয়সে দুর্ঘটনায় মারা যায় । নয়ন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাষ্টার্স শেষ করেছে । মহসিন তালুকদার ও আফজাল চৌধুরী খুব ধনী । অপরদিকে খোকা মিয়া খুব গরিব । সে একজন দিনমজুর । তার একটি মাত্র মেয়ে নাম মৌমি । মৌমি বরিশালের বিএম কলেজে অনার্স ১ম বর্ষে পড়ে ।
১ম দৃশ্য
[দুপুরের সময়,রান্না ঘরের কাছে উঠানে কথোপকথন]
মিথিলাঃ- ওই টুনি মোর লগে ল ।
ভাবিঃ- এই দুহাইররা হালে আবার টুনিরে লইয়া কই যাবি মিথিলা?
মিথিলাঃ- ভাবি ঐ সাইডের পতে বড় আম গাছে ঘুঘুতে ডিম পারছে দেহি ছাও অইচে নাহি,হেইয়া মুই টুনিরে লইয়া দ্যাখতে যামু ।
টুনিঃ- লও হুবুজান কি মজা ছাও দ্যখতে যামু । মার লগে আর কতা কওয়া লাগবে না,লও ।
মিথিলাঃ- হ টুনি ল জলদি ল ।
ভাবিঃ- যেরম হুবু,হেইরম ভাইজি ।
মিথিলাদের কাজের লোক(জহুর)ঃ- কি আপা আমহে ছাও নামাইতে যান?
মিথিলাঃ- হয় জহুর ভাই মুই ছাও নামাইতে যাই ।
মিথিলাদের কাজের লোক(জহুর)ঃ-আল্লায় দেলে যান,ছাও আইজগো আনতে পারলে ঐ ছাও দিয়া মোরা বড় এট্টা বোনভাত খামু ।
মিথিলাঃ- ইস বোন ভাত খাওয়ার কি সখ ।
[এখান থেকে উভয়ের প্রস্থান]
(চরিত্র-মিথিলা,মিথিলার ভাবি,টুনি,ও জহুর)
২য় দৃশ্য
[দুপুরের সময়ই পথের দৃশ্য]
[ঘুঘুর ছানা নামানোর জন্য মিথিলা আর টুনি যাচ্ছে]
মিথিলাঃ- টুনি তরতরি ল । আইজ ঘুঘুর ছাও আনমুই আল্লায় দেলে ।
টুনিঃ- কি মজা হুবুজান,কি মজা মোরা আইজ ছাও আনমু ।
মিথিলাঃ-হয় তুই এইহানে খারা টুনি । মুই গাছে উইড্ডা দেহি ছাও কতো বড়ো অইচে ।(এই বলে মিথিলা গাছে উঠে গেল)
টুনিঃ- ঠিকাছে হুবুজান ।(টুনি নিচে দাড়িয়ে আছে)
মিথিলাঃ- ইস ছাও বড় অয় নায়,আরাক দিন আবার আমু । এহন বাড়ি ল টুনি(মিথিলা গাছ থেকে নামলো)
টুনিঃ- হ হুবুজান লও ।
[চরিত্র-মিখিলা ও টুনি]
৩য় দৃশ্য
[দুপুর দুইটার সময় ঘরের ভিতরের দৃশ্য]
মিথিলার ভাইঃ- ও বউ মোগো মিথিলা কোতায়?
মিথিলার ভাবিঃ- ক্য হে পাখির ছাও নামাইতে গেছে ।
মিথিলার ভাইঃ- পাগলি বুইন আমার । বুইনডারে বিয়া দেওয়া লাগবে ।
মিথিলার ভাবিঃ- আমহের বুইনরে বিয়া দেলে মুই দিহি এল্লাহ অইয়া যামু?
মিথিলার ভাইঃ- হ্যতে কি অবে মাইয়া মানুষ তো পরের ঘরেতো যাওয়াই লাগবে । তুমি যেরম মোর ঘরে আইচো বউ । এদিকে মোর ধারে আও ।(মিথিলার ভাই ওর ভাবিকে জড়িয়ে ধরলো)
[এ পর্যায়ে মিথিলার ভাই আর ভাবি চলে যাবে সংক্ষিপ্ত গানের ভূবনে]
(চরিত্র- মিথিলার ভাই ও ভাবি)
৪র্থ দৃশ্য
[দুপুর ৩ টার সময় । ঘরের ভিতরের দৃশ্য]
মহসিন তালুকদার(মিথিলার বাবা)ঃ- ও মিথিলার মা মোগো মিথিলা আয় নায়?
মিথিলার মাঃ- না হে পাখির ছাও নামাইতে গেছে ।
মিথিলার বাবাঃ- হাহা, মোর মাইয়াডা জম্মের সহজ সরল । অরে যে মুই কত আল্লাদ দি ।
[মিথিলা ও টুনির আগমন]
মিথিলার বাবাঃ-কিরে মা ছাও পাইছো?
মিথিলাঃ- না বাজান ছাও বড় অয় নায় ।
টুনিঃ- হয় দাদা ছাও এহন ও ছোট্ট ।
মিথিলাদের কাজের লোকঃ- আহ আফা আমহে এডা কি কইলেন মুই আরো বোন ভাত খাওয়ার জিন্নে বইয়া রইছি ।
মিথিলাঃ- জহুর ভাই ছাও বড় অইলেই তুমি বোন ভাত খাইতে পারবা ।
মিথিলার মাঃ- মা আয় টুনিরে লইয়া মোরা সবাই একসাথে ভাত খামু ।
মিথিলার বাবাঃ- হয় ও বউমা ভাত বারো মিথিলা আইচে মোরা এক লগে সবাই ভাত খামু ।
মিথিলার ভাবিঃ- হয় আব্বা ভাত মুই বারতে আচি । (ডাইনিং রুমে বসে বলতেছে)
[চরিত্র-মিথিলা,টুনি,মিথিলার বাবা,মিথিলার মা,মিথিলার ভাবি,কাজের লোক জহুর]
৫ম দৃশ্য
[সন্ধার একটু পর মোখলেছের দোকানের দৃশ্য]
এদিকে তিন বন্ধু গেছে মোখলেছের চায়ের দোকানে ।
মহসিন তালুকদারঃ- এ খোকা আর আবজাল তোরা ব মোরা চা খাই ।
মোখলেছঃ- আসসালামুআলাইকুম । আমহেরা কেমন আচেন চাচারা?
আফজাল চৌধুরী- এইতো মোরা সবাই ভালো আচি ।
খোকা মিয়াঃ- এ মোখলেইচ্চা মোগো তিন বন্দুরে চা দে । করা হইররা দিস ।
মোখলেছঃ- দেতে আচি । তা আবজাল চাচার ভাইরপো বোলে ঢাহা বিশ্ববিদ্যালয়ইদ্দা বড় ডিগ্রী লইয়া আইতে আচে?
আফজাল চৌধুরী- হয় এইতো আর চাইর পাঁচটা দিন পর মোর ভাইরপো নয়ন গ্রামে আবে ।
মহসিন তালুকদারঃ- তোর ভাইরপোর মতো শিক্ষাতো আর ভালো পোলা মোগো এই নিজামপুর গ্রামে তো আর এট্টা ও নাই ।
মোখলেছঃ- ঠিক কইছেন চাচা । এই ন্যান আমহেগো চা ।
খোকা মিয়াঃ- হয় আসলেই ওর ভাইরপো উচ্চ শিক্ষাতো । আর মহসিনের মাইয়া মিথিলা ওতো খুব সহজ সরল আর আল্লাদী ।
মহসিন তালুকদারঃ- খোকা তোর মাইয়া মৌমি ওতো শিক্ষাতো আর ভালো এট্টা মাইয়া ।
আফজাল চৌধুরী- হয় ঠিক কইচো মহসিন,মৌমি সত্যিই ভালো এট্টা মাইয়া ।
মোখলেছঃ- হয় মৌমি আপার মোতো ভালো মাইয়া আর এই নিজামপুর গ্রামে খুইজ্জা পাওয়া যাবেনা । মিথিলা আপায়ও জম্মের ভালো আর সহজ সরল কিন্তু মিথিলা আপারে ল্যাহাপরা হিয়াইলেনা চাচায় ।
খোকা মিয়াঃ- হয় । মোর মা মরা মাইয়াডারে যে মুই কতো কষ্ট হইররা পড়াইয়া যাইতে আচি । তোরা দোয়া হরিস ।
আফজাল চৌধুরীঃ- এ মোখলেছ টাহা পরে নিস । এহন মোরা যাই । এ ল তোরা ।
মোখলেছঃ- ঠিকআছে ।
[সকলের প্রস্থান]
[চরিত্র-মহসিন তালুকদার,আফজাল চৌধুরী,খোকা মিয়া ও মোখলেছ]
৬ষ্ঠ দৃশ্য
[সকালবেলা উঠানের দৃশ্য]
মিথিলাঃ- ও জহুর ভাই এই ন্যাও টাহা মোর লাইগ্গা বাজাইরদা চুরি ফিতা আর লিবস্টীক লইয়া আবা । আইজ মুই হাজমু ।
জহুরঃ- এ আমহের জহন হাজার সখ অরচে হেলেতো আনাই লাগে । দ্যান টাহা দ্যান ।
মিথিলাঃ-ভালোতা আইন্নো কিন্তু জহুর ভাই?(জহুরকে মিথিলা টাকা দিল)
জহুরঃ- আইচ্ছা আমহের জিন্নে মুই সব এক নাম্বার জিনিসই আনমু ।
মিথিলার ভাবিঃ- মোর নোনোদের আবার আইজগো হাজার সখ ওডলে ক্যা? আইচ্চা জহুর ভাই তুমি হাজুনি লইয়া আও । মোর আল্লাদি নোনোদরে আইজ মুই নিজের আতে হাজাইয়া দিমু
জহুরঃ- ঠিকাচে ভাবি মুই যাইতে আচি ।
মিথিলাঃ- হিহি আমার ভাবি কত্ত ভালো ।
[সকলের প্রস্থান]
[চরিত্র-মিথিলা,জহুর ও মিথিলার ভাবি]
৭ম দৃশ্য
[সকাল দশটার সময় ঘরের ভিতরের দৃশ্য]
খোকা মিয়াঃ- এ মৌমি আইজ কলেজে যাবিনা?
মৌমিঃ- জ্বি বাবা যাবো,কিন্তু আমার কাছেতো টাকা নাই ।
খোকা মিয়াঃ- তোর ধারে যে টাহা নাই হেডা মুই জানি । আর হেইর জিন্নে মুই আবজালের ধাইরদা ২০ টাহা লইয়া আইচি ।
মৌমিঃ- বাবা তুমি আমার জন্য আর কত কষ্ট করবা বলো?
খোকা মিয়াঃ- মা এডা মোর কষ্ট না এডা মোর সুখ । তুই ছারা কি মোর আর কেউ আচে নাহি? যা মা কলেজে যা । তোর মায় মইররা যাওয়ার পরইতো মুই এহন তোর মা বাপ সব ।
মৌমিঃ- জ্বি বাবা আমি কলেজে যাচ্ছি ।
[মৌমির প্রস্থান]
[চরিত্র-খোকা মিয়া ও তার মেয়ে মৌমি]
৮ম দৃশ্য
[দুপুরের সময় ঘরের ভিতরের দৃশ্য]
এদিকে আফজাল চৌধুরি ও তার স্ত্রী ডাইনিং টেবিলে দুপুরের ভাত খাচ্ছে আর কথা বলছে ।
আফজাল চৌধুরীঃ- বউ এট্টা খবর আচে নয়ন কাইলগো ঢাহাইদ্দা আইতে আচে ।
আফজাল চৌধুরীর বউঃ- এই নাহি খবর । আল্লাহ তুমি নয়নরে সুহে লবে বাড়ি পাডাইও ।
আফজাল চৌধুরীঃ-হয় দোয়া হরো । ও মোর এউক্কা মাত্র ভাইরপো । বড় ভাবি আগে মইররা গেলে,হেইরপর মোর ভাইও মইররা গেলে । পোলাডায় গেলে এতিম অইয়া ।
আফজাল চৌধুরীর বউঃ- হয় মোরাতো নয়নরে মোগো পোলার মতই দেহি । অরে অর মা বাপের কষ্ট মোরা কোনোদিন বোঝতে দিই নাই । মুই অর চাচি অইলেও মোরে ও মার মোতো দ্যাহে । আমহে জানেন নয়নের জিন্নে মুই কত কিচু বানাইয়া রাকচি ।
আফজাল চৌধুরীঃ- ভালো হরছো । বউ মোগো ঐ কামের পোলা রুহুলরে ভোলান দ্যাও ।
আফজাল চৌধুরীর বউঃ- এ রুহুল এ এদিকে আয় ।
[রুহুলের আগমন]
রুহুলঃ- জে খালাম্মা ভো্লাইচেন ক্যা?
আফজাল চৌধুরীর বউঃ- তোর খালুর ধারে হোন ।
রুহুলঃ- খালু কইন ।
আফজাল চৌধুরীরঃ- কাইলগো মোগো নয়ন ঢাহাইদ্দা বাড়ি আবে । তুই পুহুরদা সবচাইয়া বড় মাচটা ধইররা থুবি ।
রুহুলঃ- জে খালু কিমজা নয়ন ভাই আবে । ওরে আল্লা মুই সবচাইয়া বড় মাচটাই ধইররা থুমু ।
আফজাল চৌধুরীর বউঃ- ঠিকাচে তুই এহন যা ।
[সবার প্রস্থান]
[চরিত্র-আফজাল চৌধুরী,আফজাল চৌধুরীরর স্ত্রী ও কাজের লোক রুহুল]
৯ম দৃশ্য
[বিকালবেলা]
মিথিলাঃ- ও ভাবি মোরে হাজাইয়া দ্যাও মুই আইজ আবার ছাও নামাইতে যামু টুনিরে লইয়া ।
ভাবিঃ- আয় দেতে আচি তোরে হাজাইয়া ।(মিথিলাকে ওর ভাবি সাজাইয়া দিল)
মিথিলাঃ- ভাবি তয় মুই এহন যাই ।
মিথিলার ভাবিঃ- হ যা তুই ।
[মিথিলা আর টুনি রওয়ানা হলো]
মিথিলার মাঃ- এ মিথিলা এই বিহাইল্লাহালে হালে যাইস না ।
মিথিলার বাবাঃ- না যাউক ও । ও মোর আল্লাদি মাইয়া ।
টুনিঃ- হয় মোরা এহন যামু হে হে ।
মিথিলার ভাইঃ- এ মুই তোর লগে আমু?
মিথিলাঃ- না ভাইজান তুমি যাইয়া হরবা কি? তোমার যাওয়া লাগবে না ।
মিথিলাদের কাজের লোক জহুরঃ- আপা তয় আইজগো মোনে অয় বোন ভাত খাইতে পারমু আনে?
মিথিলাঃ- দোয়া হইররো ।
[চরিত্র- মিথিলা,টুনি,মিথিলার বাবা,মা,মিথিলার ভাই,ভাবি,ও জহুর]
১০ম দৃশ্য
[বিকালবেলা পথ দিয়ে যাচ্ছে]
[ঘুঘুর ছানা নামানোর জন্য মিথিলা আর টুনি যাচ্ছে]
মিথিলাঃ- জানিনা আল্লাহ মুই যে কবে বিয়া হরমু,
মোনের মোতো পোলা যে মুই কই খুইজ্জা পামু ।
যামু মুই হেই পোলার ঘরে যামু ।(মিথিলা একটু পাগলের মত দোলবে দোলবে আর গানের সুরে এই কথাগুলো বলবে)
টুনিঃ- ওহ হুবুজান তুমি কি কও?
মিথিলাঃ-বুঝবিনা তুই । তুই এইহানে খারা টুনি । মুই গাছে উইড্ডা দেহি ছাও কতো বড়ো অইচে ।(এই বলে মিথিলা গাছে উঠে গেল)
টুনিঃ- ঠিকাছে হুবুজান ।(টুনি নিচে দাড়িয়ে আছে)
মিথিলাঃ- ইস ছাও দেহিনা,কিচুতে মোনে অয় খাইয়া হালাইচে ।(এই বলে মিথিলা কান্না করে দিল)
টুনিঃ- হুবুজান তুমি কাইন্দো না ।
[চরিত্র- মিথিলা ও টুনি]

১১ তম দৃশ্য
[পড়ন্ত বিকেলে পথের দৃশ্য]
[এদিকে আফজাল চৌধুরীর ভাইপো নয়ন চৌধুরী ঢাকা থেকে গ্রামের পথ দিয়ে আসছে । তার ঘাড়ে একটা ঝুলানো ব্যাগ]
বখাটে ছেলে ছদরুলঃ- কিরে নয়ন কেমন আছিস?
নয়নঃ- জ্বি ভালো । আপনি কেমন আছেন ভাই?
বখাটে ছেলে ছদরুলঃ- ভালো । তুই কি পাশ করছো নয়ন ।
নয়নঃ- আমি এম কম করেছি ।
বখাটে ছেলে ছদরুলঃ- তুই কম করতে গেছিস ক্যান,এম বেশি করতে পারলিনা?
নয়নঃ- হাহা ভাই আপনি বুঝবেন না ।
বখাটে ছেলে ছদরুলঃ- এই এলাকায় আমার সামনে কেডা বেশি বোঝে বলতো?
নয়নঃ- না ভাই আপনিই বোঝেন ।(বলদ একটা মনে মনে বলবে)
[বখাটে ছেলে ছদরুলের প্রস্থান]
নয়নঃ- কিরে টুনি মামুনি তুমি এইখানে কি করো ।
টুনিঃ- চাচা আমহে আইচেন? হুবুজানে না গাছে ওড়চে ছাও নামাবে,কিন্তু হুবুজানে ছাও দ্যাহেনা এইর জিন্নে কান্দে ।(টুনি ওর আঙ্গুল গাছের দিকে দিয়ে বলতেছে)
নয়নঃ- কি বলো মিথিলা গাছে?
মিথিলাঃ- ছাওগুলা আবার কিতে খাইয়া হালাইলে ।(কেঁদে কেঁদে)
নয়নঃ- ঐ মিথিলা ঐ গাছ থেকে নাম,কাঁদিসনা বোকা মেয়ে ।
মিথিলাঃ- নয়ন ভাই নাহি?নামতে আচি ।(মিথিলা গাছ থেকে নামলো এবং চোঁখের জল ওড়না থেকে মুছলো)
নয়নঃ- এ মিথিলা তুই শুধু গায় গাতরে বড় হইচো,বুদ্ধি তোর হয় নায় । এত বড় একটা মেয়ে কখনও গাছে ওঠে,আর এরকম কান্না করে? তো্র মধ্যেতো সেই ছোটকালের মত পাগলামি এখনও আছে ।
মিথিলাঃ- নয়ন ভাই মুই না ঘুঘুর ছাও নামাইতে ওঠছালাম,কিন্তু হ্য কিতে জানি খাইয়া হালাইচে ।
নয়নঃ- ইস তোর জন্য ছাও বসে থাকবে আনে । এখন বল তুই কেমন আছো?
মিথিলাঃ- ভালো ছেলাম না,তয় এহন মুই ভালো ।
নয়নঃ-ওহ কিন্তু তুই এখন ভালো কেনো?
মিথিলাঃ-নয়ন ভাই তোমার লগে দ্যাহা অইচেনা হেইয়ার জিন্নে । ওরে মোনের মোতো পোলা মুই খুইজ্জা পাইয়া গেচি ।
নয়নঃ- এ তুই কি বলো মিথিলা?মাথা ঠিক আছেতো তোর?যা এখন টুনিরে নিয়া বাড়ি যা । পাগল যেনো কোথাকার ।
মিথিলাঃ- হ ভাই মুই তোমার জিন্নে পাগল ।
নয়নঃ- বোকা মেয়ে যা বাড়ি যা ।(হেসে দিয়ে)
মিথিলাঃ- মুই তোমারে বিয়া হরমু নয়ন ভাই ।(মনে মনে বলবে)
[সকলের প্রস্থান]
[চরিত্র- মিথিলা,টুনি,নয়ন.ও বখাটে ছেলে ছদরুল]
১২ তম দৃশ্য
[সন্ধার সময়]
নয়নঃ-ও চাচি তুমি কোথায়?
নয়নের চাচিঃ- বাবা তুমি আইছো?(হাসি মুখে খুঁশি হয়ে)
নয়নঃ- জ্বি চাচি আসছি কেমন আছো তুমি?(এই বলে ওর চাচিকে পায়ে সালাম করলো)
নয়নের চাচিঃ- বাবা তোমার সালাম হরা লাগবে না তু্মি মোর বোহে আও ।(নয়নকে ওর চাচি বুকে জড়িয়ে ধরলো । (কেঁদে দিল দুজনে)
নয়নঃ- চাচায় কোথায় চাচি?
নয়নের চাচা আফজাল চৌধুরীঃ- বাবা তুমি আইছো?
নয়নঃ- জ্বি চাচা ।(এই বলে নয়ন ওর চাচার পায়ে সালাম করলো)
নয়নের চাচাঃ- বাবা তুমি মোর বোহে আও ।(বুকে জড়িয়ে ধরলো)
রুহুলঃ- ভাইজান আমহে আইচেন? আমহের জিন্নে পুহুরের সবচাইয়া বড় মাছটা ধইরচি ।
নয়নঃ- ধন্যবাদ রুহুল ভাই ।
[চরিত্র-নয়ন,নয়নের চাচি,চাচা ও কাজের লোক রুহুল]
১৩ তম দৃশ্য
[সন্ধার সময় ঘরের ভিতরের দৃশ্য]
[এদিকে মিথিলা আর টুনি বাড়িতে আসলো]
জহুরঃ- কি আফা ছাও পাইচেন?
মিথিলাঃ- না জহুর ভাই মোগো বোন ভাত খাওয়া অবেনা । ছাও কিতে জানি খাইয়া হালাইচে ।
মিথিলার বাবাঃ- থাউক মা মোন খারাপ হরিসনা । ও বউমা মিথিলা আর টুনিরে ঘরে লইয়া যাও । অগো ভাত দ্যাও । সন্ধা হইয়া গ্যাচে এহন পর্যন্ত প্যাডে কিচু পরে নাই ।
মিথিলার ভাবিঃ- হয় আব্বা । এ তোরা আয় ঘরে আয় ।
মিথিলার মাঃ- এ এতকুন তোরা হরচো কি?
[তিনজন ঘরের মধ্যে প্রবেশ করলো]
মিথিলাঃ- ভাবি মুই বিয়া হরমু । তুমি এট্টু ভাইজানরে বুঝাইয়া কইও । ভাইজানে জানি বাজানরে আর মায়রে বুঝায় ।
ভাবিঃ- তুই কারে বিয়া হইরবি? তোরে আবার বিয়া হরবে কেডা বোকদা?(একটু হেঁসে দিয়ে)
টুনিঃ- কি মজা হুবুজানের বিয়া,হুবুজানের বিয়া,হে হে ।
মিথিলাঃ- ভাবি মুই নয়ন ভাইরে বিয়া হরমু ।
ভাবিঃ- এহ কাম আছেতো নয়নের মত এট্টা শিক্ষিত পোলা তোর মোতো মাইয়ারে বিয়া হরবে আনে । ল্যাহাপড়া তো কিচ্ছুই জানোনা । স্কুলের চৌকাডা তামাইত ড্যাংগাও নাই ।
মিথিলাঃ-ভাবি দ্যাহো এই সোমস্ত কতা কইলে মুই কিন্তু বিষ খাইয়া মইররা যামূ । নয়ন ভাইরে ছারা মুই বাঁচমুনা । হ্যারে মোর ভালো লাইগগ্যা গ্যাচে ।
ভাবিঃ- পাগল জানি কোতারগো । ঠিকাছে রাইতে মুই তোর ভাইজানরে বুঝাইয়া কমু আনে ।
মিথিলাঃ- উম্মাহ । ঠিকাছে ভাবি ।(ভাবিকে একটা চুমা দিল মিথিলা)
[সকলের প্রস্থান]
[চরিত্র- মিথিলা,টুনি,মিথিলার মা,বাবা,ভাবি ও জহুর]

১৪ তম দৃশ্য
[সকালবেলা মোখলেছের দোকানের দৃশ্য]
[মোখলেছ মিয়ার দোকানে আড্ডা,তিন বন্ধু আসছে সকালে চা খেতে]
মহসিন তালুকদারঃ- এ মোখলেইচ্চা মোগো তিনজনারে তিনডা চা দে । চিনি কোম দিস ।
মোখলেছঃ-আমহেরা বয়েন চাচা,মুই চা দেতে আচি ।
খোকা মিয়াঃ- এ মোখলেইচ্চা মোরে এট্টা পান দিস ।
মহসিন তালুকদারঃ- কিরে আবজাল তোর ভাইরপো নয়ন আইচে বোলে বাড়ি?
আফজাল চৌধুরীঃ- হয় নয়ন কাইলগো বিয়ালে বাড়ি আইচে ।
মোখলেছঃ- চাচা আমহের ভাইরপো বোলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দিয়া বড় ডিগ্রিী লইয়া আইছে?(এই ন্যান আমহেরা চা,পান ন্যান)
খোকা মিয়াঃ- হয় হোনলাম তোর ভাইরপো লেহাপড়া শ্যস কইররা দ্যাশে আইচে । গ্রামের মানসের জিন্নে কি জানি কাম হরবে?
আফজাল চৌধুরীঃ- হয় তোরা ঠিকই হোনছো । এ খোকা তোর মাইয়াডারে বিয়া দ্যাওনা ক্যা?আর লেহাইয়া পড়াইয়া হইরবি কি?
খোকা মিয়াঃ- না মোর মাইয়ারে মুই এতো হহালে বিয়া দিমুনা । লেহাপড়া শ্যাস অবে হেইর পর বিয়া দিমু ।
মোখলেছঃ-হয় চাচা ঠিক কতা কইচেন । মুই ফাইব পর্যন্ত পইরছি মুইতো ল্যাহাপড়ার মর্ম কিচুডা বুঝি । পরে বিয়া দ্যান মৌমি আফারে । আর মহসিন চাচার মাইয়া ডারেতো একদোম পড়াইলেনা ।
মহসিন তালুকদারঃ- হোন মোখলেইচ্চা তুই দোহানদার,দোহানদারের মোতো থাক । বেশি কতা কইসনা । এর আগে একদিন কইচো,কিচু কই নাই । তোর কয় টাহা অইচে এই নে ।
আফজাল চৌধুরীঃ- এ খোকা কাইল কিন্তু মোর বাড়ি একদম বেইন্নাহালে যাবি । মোর ক্ষ্যতে কাম হরতে অবে । মুই কিন্তু থাকতে পারমু নানে । মোর বেইন্নাহালে দক্ষিনপাড়ায় এট্টা শালিসি আচে ।
খোকা মিয়াঃ- ঠিকাছে দোস্ত যামু আনে । মোখলেইচ্চা পানে যে সুবারি দেচে হ্য একদম ট্যাংগার আডির মতো । দাত এক্কালে ভাইঙ্গা যায় ।(খোকা্ মিয়া পান চাবাচ্ছে আর বলতেছে)
মোখলেছঃ- চাচা মোর দোস কি? সুবারি কি মুই পয়দা হরি?
মহসিন তালুকদারঃ- এ ল মোরা এহন যাই ।
[সকলের প্রস্থান]
[চরিত্র- তিন বন্ধু ও চায়ের দোকানদার মোখলেছ]
১৫ তম দৃশ্য
[রাতে ঘরের ভিতরের দৃশ্য]
[রাতে মিথিলার ভাবি আর মিথিলার ভাইয়ের সাথে কথোপকথন]
মিথিলার ভাবিঃ- এই হোনচো মোগো মিথিলা তো নয়নরে বিয়া হরতে চায় । তুমি এট্টু তোমার মা বাপরে খুইল্লা কও ।
মিথিলার ভাইঃ- মিখিলার লগে কি তোমার ও মাথা খারাপ ওইচে নাহি?
মিথিলার ভাবিঃ- ক্যা কি অইচে?
মিথিলার ভাইঃ- নয়ন অইচে উচ্চ ল্যাহাপড়া । আর মোগো মিথিলা কি ক কইয়া খ কইতে পারে,যে ও নয়নরে বিয়া হরতে চায় । নয়ন কি জীবনে অরে বিয়া হরবে? মুই এ কতা মা বাপরে কইতে পারমু না সামনে আর এইসব কতা মোর ধারে কবা না । এহন ঘুমাও ।
[চরিত্র- মিথিলার ভাই ও ভাবি]
১৬ তম দৃশ্য
[ভোরে পুকুরপাড়ের দৃশ্য]
[মিথিলা ও মিথিলার বান্ধবী তানিয়ার মধ্যে পুকুরপাড়ে বসে কথা]
মিথিলাঃ- তানিয়া জানো মুই না নয়ন ভাইরে পচন্দ হইরচি । হ্যারে মুই বিয়া হরমু ।
তানিয়াঃ- হেইয়া নাহি?তয় নয়ন ভাই কি তোরে বিয়া হরতে রাজি অবে?
মিথিলাঃ- মুই এ ঘডনা ভাবিরে সব বুঝাইয়া কইচি । ভাবি ভাইজানরে সব বুজাইয়া রাইতে কইচে মোনে অয় ।
তানিয়াঃ- তয়তো ভালো,দ্যাখ তোর কপাল খুইল্লা যায় নাহি ।
মিথিলাঃ- দোয়া হরিস বন্ধু ।
তানিয়াঃ- এই আহাস বাহাতরে সাক্ষি রাইক্কা তোর জিন্নে মুই দোয়া হরলাম । তোর ইচ্চা জানি পুরন অয় ।
মিথিলাঃ-তোরে থ্যংকু । তুই আবার কেউর ধারে এ কতা কইসনা ।
তানিয়াঃ- মোরে উন্দুরে কামরাইচে তো যে মুই এইয়া আবার মানসের ধারে কইতে যামু । তয় মুই এহন বাড়ি যাই তুই ও যা ।
মিথিলাঃ-ঠিকাচে যাইতে আচি ।
[উভয়ের প্রস্থান]
[চরিত্র-মিথিলা ও তানিয়া]
১৭ তম দৃশ্য
[সকাল ৯ টার দিকে পথের দৃশ্য]
[পথ থেকে খোকা মিয়ার শিক্ষিতা মেয়ে মৌমি আসছে,অপর দিক থেকে নয়ন আসছে]
নয়নঃ- এই তুমি মৌমি না?
মৌমিঃ- জ্বি নয়ন ভাই আমি মৌমি । আপনি গ্রামে কবে আসলেন? শুনলাম আপনি নাকি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লেখাপড়া কমপ্লিট করেছেন?
নয়নঃ- হ্যা মৌমি । তুমি এখন কিসে পড়ো?
মৌমিঃ- নয়ন ভাই আমি বরিশাল বিএম কলেজে অনার্স প্রথম বর্ষে পড়ি ।
নয়নঃ- ওহ ভালো,ভালো । এগিয়ে যাও । তোমার আব্বা খোকা চাচায় কেমন আছে?
মৌমিঃ- জ্বি ভালো আছে । আপনার পরিবারের সবাই ভালো আছেতো,আপনার চাচা চাচি?
নয়নঃ- হ্যা মৌমি সবাই ভালো আছে । আচ্ছা ঠিকাছে তুমি এখন কলেজে যাও ।
মৌমিঃ- ঠিকাছে নয়ন ভাই । আপনার সাথে কথা বলে বেশ ভালো লাগলো ।
(নয়ন কিছু সময় দাড়িয়ে মৌমির দিকে তাকিয়ে রইলো । মৌমি ও হাটে আর নয়নের দিকে একটু একটু তাকায়)
[উভয়ের প্রস্থান]
[চরিত্র-নয়ন ও মৌমি]
১৮ তম দৃশ্য
[বিকালবেলা ফুলবাগানের দৃশ্য]
[ফুল বাগানে মিথিলা ফুল ছিড়তে আসছে]
নয়নঃ- এই মিথিলা তুই কি করিস এইখানে?
মিথিলাঃ-ওহ নয়ন ভাই আমহে । মুই না এইহানে ফুল ছেড়তে আইছি ।
নয়নঃ-হাহা ফুল দিয়া কি করবি?
মিথিলাঃ-নয়ন ভাই আমহেরে দিমু কিন্তু আমহে তো হ্যার আগে চইল্লা আইচেন ।
নয়নঃ- কেনো আমাকে ফুল দিয়া কি করবি?
মিথিলাঃ- নয়ন ভাই আমহেরে মোর জম্মের ভালো লাগে হেইর জিন্নে ।
নয়নঃ- আচ্ছা আচ্ছা ঠিকাছে পগলি মেয়ে দে আমাকে ফুল দে ।
মিথিলাঃ- এই ন্যান ।(নয়ন ফুলটি নিল)
নয়নঃ-ধন্যবাদ মিথিলা, যা এখন বাড়ি যা ।
মিথিলাঃ- যাইতে আচি ।
[নয়ন চলে গেলো]
(নয়ন চলে যাওয়ার পরে মিথিলা নয়নকে নিয়ে হারিয়ে গেল গানের ভূবনে)
[চরিত্র-নয়ন ও মিথিলা]
১৯ তম দৃশ্য
[পড়ন্ত বিকালে পথের দৃশ্য]
নয়নঃ-চাচা কেমন আছেন?
খোকা মিয়াঃ- এইতো বাপজান ভালো আছি । তুমি কি রোহম আচো ।
নয়নঃ- জ্বি চাচা ভালো । আপনার কাজকর্ম কেমন চলছে?
খোকা মিয়াঃ- এইতো আল্লায় দেলে ভালো তোমাগো দোয়ায় । দিন আনি দিন খাই । হেইয়ার উপার আবার মা মরা মাইয়াডারে পরান লাগে ।
নয়নঃ- চাচা একটু কষ্ট হলেও আপনি মৌমিকে পড়িয়ে যান । দরকার হইলে আমি হেল্প করবো ।
খোকা মিয়াঃ- ঠিাকাছে বাপজান । মোগো বাড়ি বেড়াইতে যাইও ।
নয়নঃ- আচ্ছা চাচা সময় হইলে যাবো ।
[উভয়ের প্রস্থান]
[চরিত্র-নয়ন ও খোকা মিয়া]
২০ তম দৃশ্য
[পরের দিন দুপুরে রান্না ঘরের দৃশ্য]
মিথিলাঃ- ভাবি তুমি ভাইজানরে বিয়ার কতা কইচো?
ভাবিঃ-কইচি । কিন্তু তোর ভাইজানে তোর মা বাপরে এই কতা কইতে পারবে না ।
মিথিলাঃ-ভাবি তুমি কি কও । যাউক মুই নিজেই আইজগো বাপজানরে আর মায়রে কমু । নয়ন ভাইরে মুই বিয়া হরমুই হরমু ।
ভাবিঃ- তোর য্য ইচ্চা হেইয়া হর ।
[ঘরের ভিতরের দৃশ্য]
[মিথিলার বাবা মায়ের রুমে মিথিলার আগমন । মহসিন তালুকদারকে তার স্ত্রী অর্থাৎ মিথিলার মা পান বানিয়ে দিচ্ছে আর মহসিন তালুকদার খাচ্ছে]
মিথিলাঃ-বাপজান মোরে বিয়া দিয়া দ্যও মুই নয়ন ভাইরে বিয়া হরমু ।
মিথিলার বাবাঃ- বামন অইয়া চান্দের গায় হাত দেতে চাও । তোরে জিবনে নয়নের মোতে এট্টা শিক্ষাতো পোলায় বিয়া হরবে? পাগলি মাইয়া জানি মোর কোতার ।
মিথিলার মাঃ- মাইয়াডারে নষ্ট হরার গোড়ায় সব আমহে । ল্যাহা পড়া হিহাইলেন্না । এক্কালে মাইয়াডা আল্লাদে ব্যাড়া বাইয়া গ্যাছে । নয়নের মোতো পোলায় অরে বিয়া হরবে আনে । খাইয়া বইয়াতো আর কোনো কাম নাই । হারাদিন খালি মাইয়াডা লাফালাফি হরতে থাহে । যা এহাইন্দা যা তুই ।
মিথিলাঃ- দ্যাহো তোমরা আমারে যদি নয়ন ভাইর লগে বিয়া না দ্যাও হেলে কিন্তু মুই গলায় দড়ি দিয়া মরমু ।
মিথিলার বাবাঃ- হাহা পাগলি মাইয়া মোর আয় মোর বোহে আয় মা,এ কতা কয় না ।
মিথিলার মাঃ- সব নষ্টের গোড়ায় আমহে ।
[মিথিলা রাগ করে চলে গেলো]
[চরিত্র-মিথিলা,মিথিলার ভাবি,মা ও বাবা]
২১ তম দৃশ্য
[বিকালবেলা বাগানের দৃশ্য]
এলাকায় এক উদ্ভট টাইপের ছেলে আছে নাম ছদরুল । ছেলেটি খুব বখাটে । দুই হাতে বেসলাইট সহ অনেক কিছু পরা । চুল বড় বড় । খুব স্টাইল দেখাইয়া হাটে সে ।
ছদরুলঃ-মিথিলা এই ফুলটি নাও । আই লাভ ইউ জান ।
মিথিলাঃ- ছদরুল ভাই আমহে এ কি কইতে আচেন ।
ছদরুলঃ- মিথিলা আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচবোনা । আমি তোমাকেই বিয়া করবো জান ।
মিথিলাঃ- এ কইলে আর হইলে মুই নয়ন ভাইরে বিয়া হরমু । নয়ন ভাইরে ছারা মুই বাঁচমুনা ।
ছদরুলঃ- হাহাহা নয়ন কি তোমাকে জীবনে বিবাহ করবে?করবে না । আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচবোনা । চলো আজই তোমাকে আমি বিয়া করমু ।(মিথিলার হাত টান দিয়ে ছদরুল এই কথা বললো)
মিথিলাঃ- দ্যাহেন ছদরুল ভাই মুই কিন্তু বাজানরে সব কইয়া দিমু । আমহে এহন হহালে যান,নায় কিন্তু মুই চিককইর দিমু ।
ছদরুল- ঠিকাচে আমি যাইতেছি কিন্তু আমি তোমাকে বিয়ে করেই ছাড়বো ।
মিথিলাঃ- এহ বিয়া হরার কি সখ ।
[উভয়ের প্রস্থান]
[চরিত্র-মিথিলা ও বখাটে ছদরুল]
২২ তম দৃশ্য
[পরের দিন সকালে মোখলেছের চায়ের দোকানের দৃশ্য]
[মোখলেছের চায়ের দোকানে নয়ন ও নয়নের বন্ধু রনির আগমন]
নয়নঃ-মোখলেছ ভাই কেমন আছেন?আমাদের দুইটা চা দেনতো ।
মোখলেছঃ- এই আল্লায় দেলে ভালই আছি । তা ভাইজান আমহে বোলে এলাকার কি জানি উন্নয়ন করবেন । ঢাকাইদ্দা তো বড় শিক্ষা লইয়া আইছেন আমহে ।(এই ন্যান ভাইজান আমহেগো চা)
নয়নঃ- হ্যা মোখলেছ ভাই এলাকার উন্নয়ন করবো বলেই এলাকায় এসেছি । রনি দোস্ত তুই আমার কথাগুলো খেয়াল করে সুনিশ ।
রনিঃ- আচ্ছা ঠিকাছে নয়ন তুই বল ।(উভয় বন্ধু চা খাচ্ছে,মোখলেছ পান চাবাচ্ছে)
নয়নঃ- শোন আমি চাচ্ছি এলাকার উন্নয়ন করতে,যেমন বাল্যবিবাহ,বহুবিবাহ,যৌতুক,আত্মহত্যা,কুসংস্কার ইত্যাদি দূর করতে ।
মোখলেছঃ- হ ভাইজান এডা খুব ভালো কাম অবে ।
রনিঃ- দোস্ত তোর উদ্দেশ্য খুব ভালো । তবে এ কাজে আরো লোক দরকার ।
নয়নঃ- হ্যা লোকতো লাগবেই । কেনো জসিম,রিয়াজ,সাব্বির,ফয়সাল ওদের সকলকেই আমি এ ব্যপারে বলবো ।
মোখলেছঃ- ভাইজান ঐ যে আমহের চাচার বন্ধু খোকা চাচার মেয়ে মৌমি আপায় কিন্তু অনেক ভালো এট্টা মাইয়া । জ্ঞান,বুদ্ধি,শিক্ষা দিক্ষা আল্লায় দেলে সব আচে । মৌমি আপারে কিন্তু এই কামে খাডাইতে পারেন ।
নয়নঃ- মোখলেছ ভাই আপনি ঠিক কথা বলছেন । দেখি আমি এখনই ওদের বাড়ি যাবো এ বিষয়ে কথা বলতে ।তাছাড়া খোকা চাচায় ও আমাকে তাদের বাড়ি যেতে বলছে । এই রনি চল ।
[উভয়ের প্রস্থান]
[চরিত্র-নয়ন,রনি ও মোখলেছ]
২৩ তম দৃশ্য
[প্রায় দুপুরের কাছাকাছির দৃশ্য]
রনিঃ- দোস্ত তুই যা,আমার বাড়িতে একটু কাজ আছে ।
নয়নঃ- আচ্ছা ঠিকাছে ।
[মৌমিদের বাড়িতে নয়নের আগমন]
নয়নঃ- মৌমি বাড়ি আছো নাকি?
মৌমিঃ- কে? ও নয়ন ভাই! এতো গরিবের বাড়ি হাতির পারা । বসেন ভাই ।(মৌমি একটা চেয়ার টেনে দিল)
নয়নঃ- কি সব কথা বলছো । শোনো মেৌমি আমি চাই এলাকা থেকে,বাল্য বিবাহ,বহুবিবাহ,যৌতুক,আত্মহত্যা,কুসংস্কার ইত্যাদি দূর করতে । আর আমাদের সাথে তোমার কাজ করতে হবে ।
মৌমিঃ-ওহ এটিতো নয়ন ভাই খুব ভালো একটি উদ্দোগ । আমি আছি আপনার পাশে ।
নয়নঃ- ধন্যবাদ । চাচায় কোথায়?
মৌমিঃ- আব্বা কাজে গেছে ঐ কান্দায় নয়ন ভাই ।
নয়নঃ- আরে তুমি বারবার আমাকে ভাই ভাই বলছো কেনো মৌমি? নাম ধরে ডাকোনা ।
মৌমিঃ- কি বলেন ভাই আপনিতো আমার বড় ।
নয়নঃ- দেখো মৌমি তোমাকে আমি সেই ছোটকাল হতেই পচন্দ করি । তাছাড়া তোমার আলাপচারিতা,কথাবার্তা আমাকে দারুনভাবে মুগ্ধ করেছে । ঢাকা থেকে আসার পর তোমাকে প্রথম দিন দেখে আমি সারা রাত ঘুমাতে পারিনি । actually আমি তোমাকে ভালো বেসে ফেলেছি ।
মৌমিঃ- আমিতো মেয়ে মানুষ তাই বুক ফাটেতো মুখ ফাটেনা । আমিও তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি । কিন্তু লজ্জায় বলতে পারি নাই । তাছাড়া তোমার ফ্যমিলি অনেক ধনি । আর আমরাতো খুব গরিব ।
নয়নঃ-দেখো মৌমি ভালোবাসায় গরিব ধনী বলে কোনো কথা নাই । আমি তোমাকে ভালোবাসি এটাই শেষ কথা । আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই । তোমাকে ছাড়া আমি বাঁচবো না মৌমি ।(এই কথা বলে দুজন দুজনাকে কেঁদে দিয়ে জড়িয়ে ধরলো)
[এখান থেকে দুজন হারিয়ে যাবে গানের ভূবনে]
নয়নঃ- মৌমি তোমার জন্য আমি একটা ফোন নিয়ে এসেছি । এই ফোনটি নাও আমি এটাতেই ফোন দিয়ে তোমার সাথে কথা বলবো ।
মৌমিঃ- না তুমি আবার ফোন আনছো কেনো?এটা আমার লাগবেনা ।
নয়নঃ- আরে ধরো মৌমি ।(মৌমি ফোনটা নিল)
[খোকা মিয়ার আগমন]
খোকা মিয়াঃ- মৌমি মা এই বাজারডা নে ।(হাতে তার একটা লাউ ও ব্যগে বাজার)
মৌমিঃ- বাবা রাখো এইখানে ।
নয়নঃ- চাচা আসসালামুআলাইকুম ।
খোকা মিয়াঃ- কিরে বাবাজি তুমি কহন আইলা? এ মৌমি বাবাজিরে খাইতে কিছু দেছো?
নয়নঃ- না চাচা কিছু দিতে হবেনা ।
মৌমিঃ- আপনারা বসেন । আমি মুড়ি আর গুড় নিয়া আসছি ।
(মৌমি মুড়ি আর গুড় নিয়া আসলো,নয়ন আর খোকা মিয়া খাইলো)
নয়নঃ- চাচা আমি এখন বাড়িতে যাচ্ছি ।
খোকা মিয়াঃ- কি কও বাবা খাইয়া দাইয়া যাবা ।
মৌমিঃ- হ্যা তাই ।
নয়নঃ- না চাচা আমি এখন যাই অন্য এক সময় আসবো । মৌমি থাকো ।
[নয়নের প্রস্থান]
[চরিত্র-নয়ন,রনি,মৌমি ও খোকা মিয়া]
২৪ তম দৃশ্য
[বিকালবেলা বাগানে মৌমি ও মৌমির বান্ধবী সালমার মধ্যে কথোপকথন]
সালমাঃ- কিরে মৌমি তোরে খুব খুঁশি খুঁশি লাগতেছে কারনটা কি?
মৌমিঃ- শোন সালমা আমিনা প্রেমে পরে গেছি ।
সালমাঃ- তাই নাকি?কার প্রেমে পরিছিস?
মৌমিঃ- আফজাল চাচার ভাইপো নয়নের প্রেমে ।
সালমাঃ- তাই নাকি তোর কপাল তো অনেক ভালো । নয়ন ভাই কত মিক্ষিত ও ভদ্র একটি ছেলে ।
মৌমিঃ- হ্যা আমি মুলত নয়নকে ছোটকাল থেকেই পচন্দ করি নয়ন ও তাই ।
সালমাঃ- ওহ আচ্ছা তাহলেতো তোর প্রেম স্বার্থক । বিয়ে করে নিস ।
মৌমিঃ- ভয় তো এইটা নিয়ে ওরাতো অনেক ধনি ।
সালমাঃ- ধনী হইলে কি হবে নয়ন ভাইতো তোকে ভালোবাসে । আচ্ছা এখন আমরা উঠি ।
[উভয়ের প্রস্থান]
[চরিত্র- মৌমি ও সালমা]
২৫ তম দৃশ্য
[সকাল বেলা পুকুরপাড়ের দৃশ্য]
মিথিলাঃ-নয়ন ভাইরে মুই বিয়া হরমু কি মজা । ঐ মৌমি কই যাও?এদিকে আয় ।(পুকুরপাড়ের সিড়ির উপর বসা)
মৌমিঃ- ওহ মিথিলা তুই এখানে কি করো? আমি কলেজে যাচ্ছি ।
মিথিলাঃ- তুই এইহানে বহ,এট্টু কতা কই তোর লগে ।(মিথিলার তখন চোখ পরলো মৌমির মোবাইলের দিকে)
মৌমিঃ- জ্বি বল তুই কেমন আছো?
মিথিলাঃ- এ তুই মোবাইল পাইলি কোতায়? তোরাতো জম্মের গরিব । টাহা দেছে কেডা?
মৌমিঃ- আমি এ মোবাইলটা কিনি নাই । এটা নয়ন আমাকে দিছে ।
মিথিলাঃ- কি কইলি তুই,নয়ন ভাই তোরে দেচে?(এই কথা বলে মিথিলা মৌমিরে হাত থেকে মোবাইলটা নিয়ে পুকুরে ফেলে দিল)
মৌমিঃ- মিথিলা তুই এটা কি করলি?
মিথিলাঃ- মুই কি হরমু ক? থাউক তুই রাগোইস না । মুই তোরে এট্টা মোবাইল দিমু আনে ।(মিথিলার চোঁখে পানি)
[মৌমি কোনো কথা না বলে মুখ কালো করে চলে গেল]
[চরিত্র- মিথিলা ও মৌমি]
২৬ তম দৃশ্য
[দুপুর বেলা ডাইনিং টেবিলে খাওয়ার দৃশ্য]
এদিকে নয়ন,নয়নের চাচা আফজাল চৌধুরী ও নয়নের মা ডাইনিং টেবিলে খেতে বসছে ।
নয়নের চাচা(আফজাল চৌধুরী)ঃ- কই পোলাডারে বড় ঐ মাছের মাথাডা দ্যও । কতদিন পর পোলাডায় বাড়ি আইচে ।
নয়নের চাচিঃ- হ দেতে আচি । পোলাডায় এতদিন কি খাইচে না,না খাইচে ।
নয়নঃ- না চাচি আমাকে দিতে হবেনা । তুমি মাছের মাথাটা চাচাকে দাও ।
[এর মধ্যে নয়নের বাড়িতে মিথিলার আগমন]
মিথিলাঃ- নয়ন ভাই কও তুমি কেমন আচো? তোমারে মুই দ্যাখতে আইচি ।
নয়নঃ- ওহ তাই তা বসো । ও চাচি মিথিলাকে ভাত দাও ।
মিথিলাঃ- না মুই ভাত খামুনা । তোমারে মুই কতদিন দেহিনা হেইর জিন্নে আইচি,ভাত খাইতে আই নাই ।
নয়নের চাচি- হাহা মিথিলা মা তুই ব ভাত খাবি আনে ।
মিথিলাঃ- না চাচি মুই ভাত খামুনা ।
নয়নঃ- শোন মিথিলা তুই আমার আপন ছোট বোনের মোতো ।
মিথিলাঃ- তুমি খালি বুইন বুইন হরো ক্যা? মুই যাই এহন ।(এ কথা বলে মিথিলা রাগ করে চলে গেল)
নয়নের চাচাঃ- হাহা মাইয়াডা জম্মের সহজ সরল ।
[সবার প্রস্থান]
[চরিত্র-নয়ন,মিথিলা ও নয়নের চাচা,চাচি]
২৭ তম দৃশ্য
[রাতে ঘরের মধ্যের দৃশ্য]
এদিকে মিথিলার খাওয়া দাওয়া একবারে বন্ধ ।
মিথিলাঃ- বিয়া মুই নয়নর ভাইরে হইররাই ছারমু । নয়ন ভাইরে ছারা মুই বাঁচমুনা ।
টুনিঃ- ও হুবুজান তুমি হারাদিন কি কও । লও মায় ভাত খাইতে ভোলায় ।
মিথিলাঃ- না মুই ভাত খামুনা ।
মিথিলার ভাবিঃ- এ তুই ভাত খাবিনা? ল ভাত খাইতে ল ।
মিথিলাঃ- ভাবি তুমি এট্টু বাজানরে কও নয়ন ভাইর লগে মোরে বিয়া দেতে ।
ভাবিঃ- মুই পারমুনা । তোর যদি বিয়ার খাউজ থাহে তয় তুই যাইয়া আব্বারে ক ।
[মিথিলা কান্না করতে করতে ওর বাবার রুমে প্রবেশ করলো]
মিথিলার বাবাঃ- কি অইচে তোর মা?কান্দো ক্যা?
টুনিঃ- দাদা জানো হুবুজানে হারাদিন কিচ্ছু খায়নায়,আর খালি কান্দে ।
মিথিলাঃ- বাপজান মোরে নয়ন ভাইর লগে বিয়া দিয়া দ্যাও নায় কিন্তু মুই বাঁচমুনা ।
মিথিলার বাবাঃ- কি কও মা নয়ন অইচে কত উচ্চ শিক্ষিত । নয়ন কি তোর মতো এট্টা অশিক্ষিত মাইয়ারে বিয়া হরবে মা?
মিথিলার মাঃ- সব আমহের আল্লাদ । মাইয়াডা এহন আল্লাদে ব্যাড়া বাইয়া গেছে ।
মিথিলাঃ- বাপজান তুমি তোমার বন্ধুরে এট্টু বুঝাইয়া কও । না কইলে কিন্তু আমি বিষ খামু ।
মিথিলার বাবাঃ- কি কও তুই মা । আইচ্চা কান্দিসনা তুই,মু্ই কাইলগোই আবজালের বাড়ি যামু ।
(এ কথা শুনে মিথিলা খুব খুঁশি,চোঁখের জল মূছলো)
[মিথিলার প্রস্থান]
[চরিত্র-মিথিলা,টুনি,মিথিলার ভাবি ও মিথিলার বাবা মা]
২৮ তম দৃশ্য
[সকালবেলা পথের দৃশ্য]
নয়নঃ- মৌমি তোমার মোবাইল বন্ধ পাই কেনো?
মৌমিঃ- মোবাইলটা মিখিলা রাগ করে পানিতে ফেলে দিয়েছে ।
নয়নঃ- কেনো?
মৌমিঃ- তুমি আমাকে মোবাইলটা দিছো তাই । তোমার নাম শোনার সাথে সাথেই রাগ করে ভেঙ্গে ফেলছে ।
নয়নঃ- যাক কিছু মনে করোনা জান । মিথিলা একটু বোকা সোকা ও সহজ সরল টাইপের । এখন শোনো আমি চাচ্ছি তোমাকে বিয়ে করতে ।
মৌমিঃ- তোমার চাচা চাচি কি এ বিয়ে মেনে নিবে?
নয়নঃ- শোনো মৌমি সব আমি দেখবো । আমি চাচিকে সব বুঝিয়ে বলবো ।
মৌমিঃ- আচ্ছা ঠিকাছে জান । দেখো তুমি বুঝাইতে পারো কিনা ।
[উভয়ের প্রস্থান]
[চরিত্র-নয়ন ও মৌমি]
২৯ তম দৃশ্য
[দুপুরবেলা ঘরের ভিতরের দৃশ্য]
[আফজাল চৌধুরীর বাড়িতে অর্থাৎ নয়নদের বাড়িতে মিথিলার বাবা মহসিন তালুকদারের আগমন]
আফজাল চৌধুরীঃ- কিরে মহসিন তুই এই বেইন্নাহালে মোর বাড়ি?
মহসিন তালুকদারঃ- আইচি এট্টা কতার কাম কইতে ।
আফজাল চৌধুরীঃ- কি আবার তোর কতার কাম?
মহসিন তালুকদারঃ-তোর পোলা নয়নের লগে মোর মাইয়ার মিথিলার বিয়া দেতে চাই ।
আফজাল চৌধুরীঃ- ইস মগের মুল্লুক পাইচে । অর অশিক্ষিত পাগলা মাইয়ার লগে মোর উচ্চ শিক্ষিত পোলারে বিয়া দিমু আনে ।
নয়নঃ- চাচা আপনি এটা কি বলেন আমিতো মিথিলাকে আমার আপন ছোট বোনের মত দেখি । ওরে বিয়া করবো কিভাবে বলেন?
মহসিন তালুকদারঃ- দ্যাহো বাপজান মাইয়াডা আমার তোমারে বিয়া হরার জিন্নে একদম খাওয়া দাওয়া,নাওয়া সব ছাইররা দেছে । তোমারে বিয়া হরার জিন্নে পাগল অইয়া গেছে ।
আফজাল চৌধুরীঃ- পাগল অয় অউক,হেইর জিন্নে মোর পোলার লগে মুই জিবনেও তোর মাইয়ারে বিয়া দিমুনা ।
মহসিন তালুকদারঃ- দ্যাখ দোস্ত মোর মাইয়াডারে বাঁচা তুই । আল্লারস্তে বিয়াডা দিয়া দে তুই ।
আফজাল চৌধুরীঃ- জীবনেও না । তুই এহন হহালে যা । নায় কিন্তু মুই বন্দু টন্দু কিছু দেকমুনা । যা এহন যা ।(চিৎকার দিয়ে)
[মহসিন তালুকদার মন খারাপ করে অপমানিত হয়ে চলে আসলো]
[চরিত্র-মহসিন তালুকদার,আফজাল চৌধুরী ও নয়ন]
৩০ তম দৃশ্য
[দুপুরবেলা ঘরের ভিতরের দৃশ্য]
মৌমি ঘরের এক কোনে মন খারাপ করে বসে আছে ।
খোকা মিয়াঃ- কি মা তোর অইচে কি? মুখ কালা ক্যা?
মৌমিঃ- বাবা আমি নয়নকে ভালবাসি । নয়নও আমাকে ভালবাসে । নয়ন আমাকে বিয়ে করতে চায় ।
খোকা মিয়াঃ-দ্যাখ মা গরিবের সব আশা কোনোদিন পুরন অয়না । নয়নরা কত ধনী । নয়নের চাচা আবজাল এডা কোনোদিনও মাইন্না নেবেনা ।
মৌমিঃ- বাবা আমি নয়নকে ছাড়া বাঁচবোনা । নয়ন বলছে ও আমাদের বিষয়ে ব্যাপারে ওর চাচা চাচিকে সব বুঝিয়ে বলবে । এখন কি হয় না,না হয় ।(কেঁদে দিয়ে)
খোকা মিয়াঃ- কান্দিসনা মা মোগো জিন্নে আল্লায় আচে । এহন মোরে ভাত দে মা । তোর কষ্ট মুই বুঝি । তোর বাপ মা সব ইতো মুই । হেই তোর ৩ বচ্ছর বয়সের সোমায় তোর মায় মইররা গেছে । আল্লার ধারে দোয়া হরা ছারা মোগো আর কেনো উপায় নাই ।
মৌমিঃ- আচ্ছা ঠিকাছে বাবা । আসো ভাত খেতে আসো ।(মৌমির মুখ কালো)
[চরিত্র-মৌমি ও খোকা মিয়া]
৩১ তম দৃশ্য
[দুপুরবেলা ঘরের ভিতরের দৃশ্য]
এদিকে মহসিন তালুকদার আফজাল চৌধুরীর বাড়ি থেকে অপমানিত হয়ে রাগে ঘরের মধ্যে গম গম করে ঢুকতেছে ।
মিথিলাঃ- বাপজান কি খবর মোরে নয়ন ভাই বিয়া হরবে?
মিথিলার বাবাঃ- একদম তুই কোনো কতা কবিনা । তোর মতো অশিক্ষিত মাইয়ারে নয়ন বিয়া হরবে না । আমারে আবজাল অপমান হরচে ।
মিথিলাঃ-বাপজান তুমি কি কও?(কেঁদে দিয়ে)
মিথিলার ভাবিঃ- মিথিলা আয় ভাত খাইতে আয় ।
মিথিলাঃ- ভাবি তুমি যাও মুই ভাত খামুনা । ও আল্লা তুমি এ কি খবর হুনাইলা ।
মিথিলার ভাইঃ- দ্যাখচো তোর জিন্নে আইজ বাপজান কতো অপমানিত অইলো । বাপজানের এলাকায় এট্টা সম্মান আছে । বাপজানে সবজাগা শালিশি মালিশি হরে ।
মিথিলাঃ- নয়ন ভাই তুমি আমারে বিয়া না হরলে তোমার খবর আচে হু ।( মিথিলা এক কথা বারবার বলতেছে আর কাঁদতেছে)
[চরিত্র-মিথিলা,মিথিলার বাবা,ভাই ও ভাবি]
৩২ তম দৃশ্য
[রাতে ঘরের ভিতরের দৃশ্য]
নয়নের চাচিঃ- কিরে বাপ তোর মোন খারাপ ক্যা?
নয়নঃ- চাচি আমি না মৌমিকে ভালবেসে ফেলেছি । আমি মৌমিকে বিয়ে করতে চাই ।
নয়নের চাচিঃ- দ্যাখ বাপ এডা তুই কি হুনাইলি? অরা তো গরীব তোর চাচায় কি জীবনে এডা মাইন্না নেবে?
নয়নঃ- চাচি আমার মা বাবা বলতে তোমরাই । তুমি একটু চাচাকে বুঝাও না । মৌমিকে ছাড়া আমি বাঁচবো না ।
নয়নের চাচিঃ- আইচ্চা বাপ আমার,তুই চিন্তা হরিসনা আইজ রাইতেই তোর চাচারে সব মুই খুইল্লা কমু ।
নয়নঃ- ঠিকাচে চাচি । তুমি অনেক ভালো ।
[চরিত্র- নয়ন ও নয়নের চাচি]
৩৩ তম দৃশ্য
[রাতে ঘরের ভিতরের দৃশ্য]
নয়নের চাচিঃ- এ হোনো এট্টা খবর আচে?
নয়নের চাচাঃ- কি খবর কও?
নয়নের চাচিঃ- মোগো নয়নতো আমহের বন্ধু খোকা মেয়ার মাইয়া মৌমি না কি জানি অরে বিয়া হরতে চায় ।
নয়নের চাচাঃ- এডা তুমি কোনো কতা কইলা খোকা তো জম্মের গরীব । অর মাইয়া আনলে মোর মানিজ্জাত থাকপে?
নয়নের চাচিঃ- দেহো গরীব অইলে কি অবে মাইয়াডা কিন্তু শিক্ষিত আচে । আর মাইয়াডা খুব ভালোও ।
নয়নের চাচাঃ- হোনো নয়নের বাপে মইররা যাওয়ার সময় আমারে কইয়া গেছে মুই জানি নয়নরে কোনো কষ্ট না দি । ঠিকাচে মুই রাজি । কাইলগো হেলে খোকা মেয়ার ধারে যামু মুই প্রস্তাব লইয়া ।
নয়নের চাচিঃ- আলহামদুলিল্লা । তয় মুই এহনই নয়নরে খবরডা দিয়া আই ।
নয়নের চাচাঃ- যাও ।
[নয়নের রুমে ওর চাচির প্রবেশ]
নয়নের চাচিঃ- বাপজান তোর চাচায় এই বিয়ায় রাজি অইচে । কাইলই খোকা মেয়ার লগে বিয়ার কতা কইতে যাবে ।
নয়নঃ- ওহ চাচি তোমারে যে আমি কি বলে ধন্যবাদ দেবো ।(এই বলে খুঁশিতে নয়ন ওর চাচিকে একটা চুমা দিল)
রুহুলঃ- কি ভাইজানের হেলে বিয়া অবে কি মজা কি মজা বিয়া খামু ।
নয়নের চাচিঃ বাপজান তয় তুই থাক । আর রুহুল তুই যাইয়া ঘুমাইয়া পর । বেইন্নাহালে তোর খালুর লগে তুই ও যাবি খোকা মেয়ার বাড়ি ।
রুহুল- ঠিকাছে চাচিজান ।
[নয়নের রুম থেকে ওর চাচি ও রুহুলের প্রস্থান]
[চরিত্র-নয়ন,নয়নের চাচা,চাচি ও রুহুল]
৩৪ তম দৃশ্য
[সকালবেলার দৃশ্য]
[পথ দিয়ে আফজাল চৌধুরী ও তার কাজের লোক রুহুল যাচ্ছে হাতে মিষ্টি নিয়ে খোকা মিয়ার বাড়ির উদ্দেশ্যে । রুহুল আফজাল চৌধুরীর মাথায় ছাতা ধরে আছে]
আফজাল চৌধুরীঃ- মৌমি মাইযাডাতো খুব ভালো ।(হাটে আর কথা বলে)
রুহুলঃ- কি কন খালুজান মৌমি আপায় জম্মের ভালো মাইয়া ।
আফজাল চৌধুরীঃ- দেকপি আনে রুহুল,খোকা বিয়ার খবর হুইন্না জম্মের খুঁশি অবে আনে ।
রুহুলঃ- হ্যাতো খুঁশি অবেই ।
[খোকা মিয়ার বাড়িতে আফজাল চৌধুরী ও তার কাজের লোক রুহুলের আগমন]
আফজাল চৌধুরীঃ- কিরে খোকা খবর কি তোর?
খোকা মিয়াঃ- কি এই বেইন্নাহালে গরীবের বাড়ি হাতির পারা? তোগো আতে আবার মিষ্টি ক্যা?
আফজাল চৌধুরীঃ-খবর লইয়া আইচি,ভালো খবর ।
জহুরঃ- হয় খালুজানে জম্মের ভালো খবর লইয়া আইচি ।
খোকা মিয়াঃ- কি খবর কওনা ক্যা?
আফজাল চৌধুরীঃ- তোর মাইয়ারে মোগো নয়নের জিন্নে বই কইররা নেতে চাই । অরা দুইজন দুইজোনারে ভালোবাসে ।
[মৌমি আড়ালে দাড়িয়ে শুনতেছে]
খোকা মিয়াঃ- মাশাল্লাহ । এতো সত্যিই জম্মের ভালো খবর ।
আফজাল চৌধুরীঃ- তয় কিন্তু এট্টা শর্ত আচে খোকা ।
খোকা মিয়াঃ- কি শর্ত দোস্তো?
আফজাল চৌধুরীঃ- হোন তুই আর মানসের বাড়ি কাম হরতে পারবি না । মুই তোরে বাজারে বড় এট্টা দোহান উডাইয়া দিমু তুই হেই দোহান দিবি ।
খোকা মিয়াঃ- ঠিকাচে মুই তোর শর্তে রাজি ।
আফজাল চৌধুরীঃ- এহন খোকা বিয়াডা তুই কবে হালাইতে চাও?
খোকা মিয়াঃ- এই সামনের শুক্কুরবার হালাইলে ভালো অয় ।
আফজাল চৌধুরীঃ- ঠিকাছে টাহা পয়সা লাগলে মোর ধাইরদা নিস । তুই বিয়ার আয়োজন হর । এই নে কিছু টাহা । বিয়ার কাড ছপাইস । বোঝনা মোর এট্টা মানিজ্জাত আচেনা । এ রুহুল ল যাই মোরা ।
খোকা মিয়াঃ- ঠিকাছে কাড ছাপামু আনে । তয় তোরা এহন থাক ।
রুহুলঃ- না মোরা আমহেগো বাড়ি বিয়ার পরে থাকমু ।
[উভয়ের প্রস্থান]
খোকা মিয়াঃ- এমা তুই খবরতো হোনচো । আল্লার দরবারে লাক শুকরিয়া । এহন তোর খালাতো বুইন নূপুরের মোবেল নাম্বারডা এট্টু দে । তোর বিয়ায় মাইয়াডারে ঢাহাইদ্দা আইতে কমু ।
মৌমিঃ- বাবা এই নাও নূপুর আপুর মোবাইল নাম্বার ।(মৌমি মোবাইল নম্বর একটি কাগজে লিখে দিল)
খোকা মিয়াঃ- তায় তুই থাক মুই ঐ মোখলেইচ্চার দোকাইনদা মোবেল কইররা আই ।
মৌমিঃ- জ্বি বাবা ।
[খোকা মিয়ার প্রস্থান]
[চরিত্র-আফজাল চৌধুরী,খোকা মিয়া,রুহুল ও মৌমি]
৩৫ তম দৃশ্য
[দুপুরবেলা মোখলেছের দোকানে ফোনের কথোপকথনের দৃশ্য]
[মোখলেছের দোকানে খোকা মিয়ার আগমন]
খোকা মিয়াঃ- এ মোখলেচ এ নে এই কাগজডা ধর । ঐ কাগজের নাম্বারে এট্টু ফোন দে ।
মোখলেছঃ- হয় দেতে আচি । ন্যান এই ধরচে ফোন,আমহে কতা কন ।
খোকা মিয়াঃ- এ কেডা মোগো নূপুর না? মুই তোর খালু খোকন ।(খোকা মিয়া মোবাইলটা কানে নিয়া কথা বলবে)
নূপুরঃ- জ্বি খালু আমি নূপুর । আপনি কেমন আছেন?
খোকা মিয়াঃ- এই আচি আল্লায় রাকচে ভালো । এহন হোন মা এট্টা খবর আচে । মোগো মৌমির বিয়া ঠিক অইচে ।
নূপুরঃ- ওহ ভালো খবর খালু । তা ছেলে কি করে?
খোকা মিয়াঃ- পোলা এমএ পাশ হরচে মা । খুব উচ্চু বোংশের পোলা । এহন মা তুই মোগো বাড়ি চইল্লা আয় । বোঝনা মৌমির বিয়া ।
নূপুরঃ- ঠিকাছে খালু আমি আগামীকাল ঢাকা থেকে রওয়ানা দেবো । আপনি তো জানেন যে মাবাবা এমেরিকা আছে ।
খোকা মিয়াঃ- হয় মা হ্যাতো মুই জানি নায় মুই তোর মা বাপরে দাওয়াত দেতামনা । তুই সুহেলবে কাইলগো আইস মা । এহন মুই রাহি ।
নূপুরঃ- ঠিক আছে খালু রাখেন । ভালো থাকেন ।
খোকা মিয়াঃ- এ মোখলেচ এই নে তোর মোবেল । আর সব হোনচোতো । বিয়ায় তোর ও দাওয়াত,যাইস কইলো । আর এই টাহা নে ।
মোখলেছঃ- আলহামদুল্লিাহ ভালো খবর । হয় মুই সব হুনচি । ঠিকাচে মুই বিয়ায় যামু আনে । আর চাচা টাহা লাগবে না । আমহে এহন যান ।
[খোকা মিয়ার প্রস্থান]
[চরিত্র-খোকা মিয়া,মোখলেছ ও নূপুর]
৩৬ তম দৃশ্য
[বিকালবেলা ঘরের ভিতরের দৃশ্য]
[বিয়ের কার্ড নিয়ে খোকা মিয়ার মিথিলার বাবা মহসিন তালুকদারের বাড়িতে আগমন]
মহসিন তালুকদারঃ- কি খবর খোকা?
খোকা মিয়াঃ- আরে তালুকদার সুখবর আচে । মোর মাইয়ার লগে এই সামনের শুক্রুরবার আবজালের পোলা নয়নের লগে বিয়া । আর এইডা অইচে হেই বিয়ার কাড ।
মহসিন তালুকদারঃ- কি এই নাহি ঘঢনা । ঠিকাচে তুই যা ।
(বিয়ের কার্ড দেখে মহসিন তালুকদার ও তার স্ত্রী খুব মনক্ষুন্ন হয়েছে,ব্যথা পেয়েছে)
[খোকা মিয়ার প্রস্থান]
এদিকে বিয়ের ঐ কার্ডটি মহসিন তালুকদার তার ঐ সামনের বারান্দায় রেখে সে আর তার স্ত্রী ঘরের ভিতর চলে যায় । মিথিলা এসে দেখতে পায় ঐ কার্ডটি । মিথিলা দেখে খুব কষ্ট পায় । সে খাওয়া দাওয়া সব ছেড়ে দেয় । আনমনা হয়ে যায় ।
[চরিত্র-খোকা মিয়া,মহসিন তালুকদার,মিথিলার মা ও মিথিলা]
৩৭ তম দৃশ্য
[পড়ন্ত বিকেলবেলা বাহিরের দৃশ্য]
[মৌমি ও নয়ন বাহিরে ঘুরতে বের হইছে]
নয়নঃ- জান তোমাকে আমি আজীবনের জন্য পেয়ে যাবো ।(পথে হাটে আর বলে)
মৌমিঃ- জ্বি । আমিও আজীবনের জন্য তোমাকে পেয়ে যাবো জান ।
[এর মধ্যে প্রাইভেটকারে নূপুরের আগমন । নূপুর গাড়ি থেকে খুব এ্যকশনে নামলো]
মৌমিঃ- আপু কেমন আছো তুমি?
নূপুরঃ- জ্বি ভালো । নয়ন তুমি এখানে?(অবাক হয়ে)
মৌমিঃ- কেনো আপু তুমি নয়নকে চিনো নাকি ।
নয়নঃ- হ্যা আমাকে চিনে । কিন্তু তুমি নূপুর এখানে?
নূপুরঃ- আমি চিনি মানে আমি আর নয়ন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একসাথে লেখাপড়া করছি । আর নয়ন মৌমি আমার আপন খালাতো বোন ।
মৌমিঃ- ওহ তাতো ভালো খবর,তোমাদের সাথে দেখা হয়ে গেলো ।
নয়নঃ- ওহ আচ্ছা তাহলে তুমি মৌমির খালাতো বোন । ভালো । আচ্ছা আমি যাচ্ছি । মৌমি আর নূপুর তোমরা বাসায় চলে যাও ।
মৌমি+নূপুরঃ- আচ্ছা ঠিক আছে । বাই বাই ।
[সকলের প্রস্থান]
[চরিত্র-মৌমি,নয়ন ও নূপুর]
৩৮ তম দৃশ্য
[পরেরদিন শুক্রবার সকালবেলার দৃশ্য]
মিথিলার ভাবিঃ- এ মিথিলা তোর কি অইছে । তুই ঘরের মধ্যে বইয়া রইচো ক্যা ।
(মিথিলা কোনো কথা বলেনা । সে জানালা দিয়ে একনজরে বাহিরে তাকিয়ে আছে)
[মিথিলার পাশের বাড়ির ভাবির আগমন]
পশের বাড়ির ভাবিঃ- কি টুনির মা মিথিলার কি অইচে?
মিথিলার ভাবিঃ- আরে কইয়েন না বুয়া মিথিলা কোনো কতা কয়না ।
পাশের বাড়ির ভাবিঃ- এ মিথিলা কি তুই কোনো কতা কওনা ক্যা্? তুই দিহি আগে দুহারে বিয়ালে বাইরে যাইতি ঘোরতে ।
টুনিঃ- ও হুবুজান তোমার কি অইচে?
মিথিলাঃ- তোমরা যাও মোরে এট্টু এল্লাহ থাকতে দ্যাও ।
মিথিলার ভাবিঃ- হয় বুয়া লইন মোরা যাই,বাইরে যাই । এ টুনি ল ।
[উভয়ের প্রস্থান]
[চরিত্র-মিথিলা,টুনি,মিথিলার ভাবি ও মিথিলার পাশের বাড়ির ভাবি]
৩৯ তম দৃশ্য
[শুক্রবার জুমার নামাজের পরে বিয়ের দৃশ্য]
শুক্রবার এসে গেল । খোকা মিয়ার বাড়ি বিয়ের আয়োজন হলো । বরযাত্রিও এসে গেছে । কিন্তু বিয়েতে মহসিন তালুকদার আসেনি । নূপুর ও মৌমির বান্ধবীরা মৌমিকে বউ সাজে সাজালো ।
আফজাল চৌধুরীঃ- খোকা মেয়া কাজী সাহেবরে বিয়া পরাইতে ক ।
খোকা মিয়াঃ- হয় ও কাজী সাব বিয়া পরান ।
কাজীঃ- আচ্ছা পড়াইতেছি ।
[বিয়ে পড়ানো হয়ে গেল । সবাই এখন খাওয়া দাওয়া করতেছে]
এদিকে এই বিয়ের খবর শুনে মিথিলার খুব খারাপ অবস্থা । সে সারাদিন না খাওয়া । সে বাধ্য হয়ে বিষ খাইল ।
মিথিলার ভাবিঃ- এ কেডা কোতায় আচেন । মিথিলা বিষ খাইচে ।
মিথিলার ভাইঃ- কি কও তুমি । ও বাপজান মিথিলার খুব খারাপ অবস্থা । ধরেন অরে হাসপাতালে লইয়া যাইতে অবে ।
মিথিলার বাবাঃ- হায়রে কি অইচে মোর মাইয়ার? এ তোরা ধর অরে হাসপাতালে লইয়া যাইতে অবে ।(কেঁদে দিয়ে)
[মিথিলা ছটফট করতেছে]
মিথিলাদের কাজের লোক জহুর দৌড় দিয়া খোকা মিয়ার বিয়ের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলো ।
বখাটে ছেলে ছদরুলঃ- ও জহুর ভাই কি অইচে দৌড়াও ক্যা?
জহুর- আরে ভাইজান মোগো মিথিলা আপায় বিষ খাইচে ।
ছদরুলঃ- কি কও?(এই বলে ছদরুল দৌড় দিয়ে মিথিলাদের বাড়ি গেলো)
[চরিত্র- আফজাল চৌধুরী,খোকা মিয়া,মৌমি,নূপুর,কাজী,মোখলেছ,জহুর ও বখাটে ছেলে ছদরুল সহ অনেকে]
৪০ তম ও শেষ দৃশ্য
[বিয়ে হয়ে যাওয়ার পরের দৃশ্য]
[বিয়ে বাড়িতে জহুরের আগমন]
জহুরঃ- নয়ন ভাইজান মোগো মিথিলা আপায় বিষ খাইছে ।
নয়নঃ- কি বলো জহুর ভাই ।
মৌমিঃ- ইস কি খবর দেলা ।
নূপুরঃ- এ চলো আমরা সবাই সেখানে যাই ।
নয়নঃ- এ আপনারা সবাই চলেন এলাকাবাসী,আমরা মিথিলাকে দেখতে যাবো ।
খোকা মিয়াঃ- হয় সবাই লইন ।
আফজাল চৌধুরীঃ- হয় হয় সবাই তরতরি লইন ।
[এদিকে মিথিলাকে নদীর নিকট নিয়ে আসা হলো । নৌকায় করে হাসপাতালে নেওয়ার জন্য । ছদরুল পানিতে নেমে ভিজে মিথিলাকে নৌকায় উঠিয়ে দিল । নৌকায় মিধিথলার মা,বাবা,ভাই,ভাবি সবাই কান্না করতেছে । নৌকা ছেড়ে দিল মাঝি । নৌকা চলে গেল নদীর মাঝখানে ।]
নয়নঃ- মিথিলা বিষ খাইলো কেনো?
ছদরুল- নয়ন ভাই মিথিলা আপনাকে খুব ভালোবাসতো । সে আপনাকে বিয়ে করতে চাইছিল । কিন্তু বিয়ে করতে পারেনি তাই বিষ খেয়েছে ।
নূপুরঃ- ছি নয়ন তুমি একটি সহজ সরল মেয়ের ভালোবাসা বুঝলানা । কি লাভ হলো তোমার উচ্চ শিক্ষিত হয়ে?
[এ কথা শুনে নয়ন ও মৌমি কেঁদে দিল]
(এদিকে নয়ন,মৌমি ও নূপুরসহ এলাকাবাসী এসে নদীর পাড়ে দাড়ালো । কিন্তু তারা মিথিলার নাগাল পেলনা)
[নৌকার দৃশ্য]
মিথিলাঃ- নয়ন ভাইরে বিয়া হরতে পারলাম না মুই ।(তখনই মিথিলা নৌকায় বসে মারা যায় । বেজে ওঠে এক নিদারুন করুন দঃখের গান)
মিথিলা প্রমান করে গেছে যে সে সত্যিই ভালোবেসে মরতে পারে ।
[চরিত্র- আফজাল চৌধুরী,খোকা মিয়া,মৌমি,নূপুর,কাজী,মোখলেছ,জহুর,বখাটে ছেলে ছদরুল,মিথিলা,টুনি,মিথিলাদের পরিবারের সবাই ও এলাকাবাসী]
[সমাপ্ত]



































সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে মার্চ, ২০১৬ বিকাল ৩:০০
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

মামুনুলের মুক্তির খবরে কাল বৃষ্টি নেমেছিল

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৯


হেফাজত নেতা মামুনুল হক কারামুক্ত হওয়ায় তার অনুসারীদের মধ্যে খুশির জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ তো বলল, তার মুক্তির খবরে কাল রাতে বৃষ্টি নেমেছিল। কিন্তু পিছিয়ে যাওয়ায় আজ গাজীপুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

×