somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ডাক্তার জলিল সাহেবের মৃত্যুর ঘোষণা দিয়ে দিয়েছেন........কিন্তু...........

১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১১ বিকাল ৫:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একটি হাসপাতালের হিমঘর। বেডে জলিল সাহেবের লাশ রাখা আছে। ডাক্তার ৩ঘন্টা আগেই যার হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে যাওয়ায় মৃত্যু ঘোষণা করেছেন। সেই লাশ এখন এখানে আনা হয়েছে। লাশের ব্যক্তি আবার হার্ট ডোনার। উদ্দেশ্য লাশের পোষ্টমর্টেম করে হার্টটি আলাদা করা।
একজন সিনিয়র ডাক্তার রাকিব এবং একজন ইন্টার্ণী ডাক্তার রাসেল সেই হিমঘরে আছে। লাশটির পোষ্টমর্টেম করার আগে তারা নিজেদের তৈরী করে নিচ্ছে।
রাসেল: স্যার। কি খবর? ভালো আছেন?
রাকিব: এইতো রাসেল। আছি আর কি...ভেবেছিলাম আজ বাসায় একটু তাড়াতাড়ি চলে যাবো। কিন্তু আর পারলাম না।
দুজনে মাস্ক, এপ্রোন ও গ্লাভস পড়তে পড়তে কথা চালিয়ে যাচ্ছিল। আস্তে আস্তে দুজনে লাশের সামনে এসে দাড়ালো। ডাক্তার রাকিবের আবার মাঝে মাঝে কুৎসিত রসিকতার বাতিক আছে। সে সামনে ঝুকে জলিল সাহেবের গালে জোড়ে ২টা থাপ্পঢ় মারলো। স্যারের এই জিনিষটা রাসেলের পছন্দ হয় না। রাকিব লাশের সাথে দেয়া ডাক্তারের রিপোর্টটি হাতে নিলো।
রাকিব: কজ অফ ডেথ তো দেখি হার্ট এটাক দেয়া আছে। ভালো। বেশিক্ষণ লাগবে না তাহলে।
রাসেল: লোকটার বয়স তো বেশী মনে হচ্ছে না স্যার। বেচারা!! অল্প বয়সেই মারা গেলো।
রাকিব: কপালে ছিলো!!! আর কিছু কি করা আছে??? দেখি রাসেল সার্জিক্যাল নাইফটা দেও।
রাসেল স্যারের হাতে সার্জিক্যাল নাইফটা দিলো। রাকিব লাশের সামনে ঝুকে দাড়ালো। আস্তে আস্তে নাইফ লাশের বুকের মাঝ বরাবর রেখে আস্তে আস্তে কাটতে কাটতে নিচে নামতে লাগলো। চারিদিক থেকে রক্ত ছড়াতে লাগলো। দুজনে একটু পিছনে সড়ে গেলো। ঠিক এমন সময় একজন নার্স রূমে দৌড়ে এলো।
নার্স: স্যার ১০৫নং রূমে ইমার্জেন্সী কল এসেছে। আপনাকে এখনই যেতে হবে।
রাকিব(একটু বিরক্ত): একসাথে কয় কাজ করবো আমি???
কিন্তু ইমার্জেন্সী কল। যেতেই হবে।
রাসেল: স্যার আমিও যেতে চাই।
রাকিব: চলো। এক কাজ করো। লাশটির উপর চাদর দিয়ে ঢেকে দাও। কিছুক্ষণ পরেই তো চলে আসছি।
রাসেল লাশটির উপর বুক থেকে চাদর দিয়ে ঢেকে রাখলো। তারপর দুজনেই রূম তালা দিয়ে বেরিয়ে পড়লো।
আসতে আসতে দুজনেরই অনেকক্ষণই লেগে গেল। হিমঘরে ঢুকেই দুজনে আর দেরী করলো না। তাড়াতাড়ি কেটে পরীক্ষা করে লাশটির পোর্ষ্টমর্টেম রিপোর্ট কোনমতে তৈরী করে হার্টটি আলাদা করে রেখে দিলো।

ওইদিনই ৫/৬ঘন্টার আগের কাহিনী। জলিল সাহেব গলফ খেলছিলেন। খেলতে খেলতে বলটি বলটি একটি ঝোপের ভিতর এসে পড়লো। জলিল সাহেব বলিটি খোজতে ঝোপের ভিতর গেলেন। হঠাৎ সামনে একটি ভয়ঙ্কর দর্শন সাপ দেখতে পেলেন। ছোট্ট একটি চিৎকার দিয়ে তিনি পড়ে গেলেন। সহকর্মীরা তাকে সাথে সাথে হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে ডাক্তার তার হার্ট এটাকে মৃত্যু হয়েছে বলে ঘোষণা দেন। সাপের কামড়টি সবারই চোখ এড়িয়ে যায়।
হঠাৎ করে জলিল সাহেবের ঘুম ভেঙ্গে গেল। মাথায় প্রচন্ড ব্যাথা করছে। সবকিছু মনে পড়তে তার কিছুটা সময় লেগে যায়। আস্তে আস্তে সব মনে পড়ে। তাকে সাপে কেটেছিলো এতটুকুই মনে আছে। কিন্তু এরপর কিছুই মনে করতে পারছেন না। কোথায় আছেন ভাবতে ভাবতেই দুজন ডাক্তারকে দেখতে পান। যাক হাসপাতালে আছেন তাহলে। কিন্তু শরীরের কোন অংশই নাড়াতে পারছেন না। চোখ খোলা...সব দেখতে পাচ্ছেন, শুনতে পাচ্ছেন এবং অনুভবও করতে পারছেন। কিন্তু কিছুই বলতে পারছেন না...শরীরের কোন অংশই নড়াতে পারছেন না। আজব তো!!! থাক ডাক্তার আছেন। সেটাই ভরসা।
হঠাৎ বয়স্ক একজন ডাক্তার তার গালে দুটা চড় মেরে বসলো!! ব্যাথায় কুকড়ে গেলেন। কিন্তু কিছুই বলতে পারছেন না। রোগীর সাথে একি আচরণ!!!
সেই বয়স্ক ডাক্তারকে হাতে একটা ফাইল নিয়ে বলতে শুনলেন হার্ট এটাকে মৃত্যু হয়েছে। কার কথা বলছে??? তার কথা নাকি???তিনি তো এখনো বেচে আছেন!! তাহলে এসবের মানে কি????
কমবয়স্ক একটা ছেলেকে তার জন্য একটু আফসোস করতে শুনলেন। জলিল সাহেব প্রাণপনে চেষ্টা করছেন মুখ দিয়ে কোন একটা শব্দ বের করতে বা শরীরের কোন অংশ নাড়াতে। কিন্তু কোনভাবেই পারছেন না। গাধাগুলো তার পায়ের নীচে সাপের কামড় দেখতে পায়নি??
বয়স্ক ডাক্তারের হাতে সার্জিক্যাল নাইফটি দেখে তিনি আতঙ্কে জমে গেলেন। বুঝে গেছেন তিনি এখন লাশকাটা ঘরে আছেন। তাকে এখন কি করা হবে সেটি তিনি ভেবেও ভুলে যেতে চাচ্ছেন।
প্রাণপনে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন মুখ দিয়ে অন্তত কোন একটি শব্দ বের করতে। কিন্তু পারছেন না। এদিকে বয়স্ক ডাক্তারটি সামনে এগিয়ে তার বুকের কাছে এগিয়ে আসলো।
আ::::: আআআআ....উফ উফ....আআআআ.........
প্রচন্ড অমানুষিক ব্যাথায় জলিল সাহেব শেষ হয়ে যাচ্ছেন। এর থেকে তো মরণও ভালো। প্লিজ তোমরা থামো। উফ উফ.....আআ....উফ উফ আর পারছি না। প্লিজ প্লিজ। নিজের রক্ত চারিদিকে ছড়াতে দেখছেন তিনি।
এমন সময় একজন নার্স দৌড়ে এলো। মনে আশা দেখা দিলেও নার্স এর কথায় নিভে গেলো। কম বয়স্ক ডাক্তারটি তার শরীর চাদরে ঢেকে দিয়ে লাইট বন্ধ করে দুজনেই বেরিয়ে পড়লো।
এদিকে জলিল সাহেবের অবস্হা খুব খারাপ। প্রচন্ড ব্যাথা করছে। প্রচন্ড। এর থেকে যদি মরে যেতো তাহলেও ভালো ছিলো। চাদরের ভিতর দিয়েই নিজের কাটা শরীরের ভিতরে তাকালেন তিনি। এখনো রক্ত বের হচ্ছে। প্রচন্ড ব্যাথা সত্ত্বেও জলিল সাহেব চিৎকার করার চেষ্টা করলেন। হঠাৎ মুখ দিয়ে মৃদু শব্দ বের করতে পারলেন। কিন্তু শরীরের কোন অংশ এখনো নাড়ানো যাচ্ছে না। যেটুকুই পারেন তিনি মৃদু শব্দেই চিৎকার করে যেতে লাগলেন। কিন্তু কেউ শুনতে পারছেন না। তারপরও চিৎকার করে যেতে লাগলেন। আস্তে আস্তে নিস্তেজ হয়ে যেতে লাগলেন। শেষবারের মতো চোখ বন্ধ করার আগে সেই দুই ডাক্তারকে দরজা খুলতে দেখলেন।
ডাক্তার দুজন বলতেই পারবেন না শুধু তাদের কারণে এবং তাদের হাতে এই লোকটির মৃত্যু ঘটেছে।

সাপটির নাম ছিলো Peruvian boomslang । খুবই দুষ্প্রাপ্য এই সাপটির কামড়ে মানুষের death-like paralysis অবস্হার সৃষ্টি হয়। আক্রান্তর সেন্স, অনুভূতি সব থাকে কিন্তু কোনভাবেই প্রকাশ করতে পারেন না। ডাক্তার যদি বুঝে সাথে সাথে ব্যবস্হা নেন তাহলে ২/৩ ঘন্টার মাঝেই সেন্স চলে আনে। নাহলে ১২/১৪ ঘন্টা লেগে যায় সেন্স আসতে।

গল্পটি পড়ার পর সবাইকে বলছি জলিল সাহেবের জায়গায় নিজেকে একবার শুধু চিন্তা করে দেখুন তো!!! ভয়াবহ।

খুব প্রিয় একজন লেখক Stephen King এর ছোট গল্প Autopsy Room Four এর ছায়া অবলম্বনে।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:২৭
৩৭টি মন্তব্য ৩৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×