somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

Zodiac : সত্য ঘটনার একটি মুভি এবং সত্যিকারের সেই সিরিয়াল কিলার

০৩ রা মে, ২০১২ রাত ১২:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
মুভিটি অবশ্যই দেখবো। তার আগে চলুন শিউড়ে উঠার মতো এক রহস্যময় ও ভয়ংকর খুনীর ১০০% সত্য কাহিনী শুনি.......


পুলিশের তৈরী স্কেচে যোডিয়াক কিলার

যোডিয়াক কিলার। আমেরিকার খুব কুখ্যাত এবং কিছু কারণে বেশ বিখ্যাত একজন সিরিয়াল কিলার। ধারণা করা হচ্ছে ১৯৬০ সালের পর উত্তর ক্যালিফোর্নিয়াতে সে অনেকগুলো খুন করেছিলো। যোডিয়াক কিলারের পরিচয় এখনো অজানা। যোডিয়াক নামটি এই কিলারেই হাতে লেখা স্থানীয় বে এরিয়া প্রেসে পাঠানো কয়েকটি চিঠিতে দেয়া ছিলো। এই চিঠিগুলোতে চারটি cryptograms(এক ধরণের পাজল) দেয়া ছিলো, যার ৩টির সমাধান আজও হয়নি। ঠান্ডা মাথার এই খুনী Benicia, Vallejo, Lake Berryessa এবং San Franciscoতে ডিসেম্বর ১৯৬৮ এবং অক্টোবর ১৯৬৯এর মধ্যে খুনগুলো করে। ১৬ এবং ২৯ বছর বয়সের মধ্যে চার লোক এবং তিনজন মহিলা তার নিশানা হয়েছিল।

যোডিয়াক কিলার এর খুনগুলো

যদিও যোডিয়াক কিলার সংবাদপত্রে পাঠানো চিঠিতে ৩৭ খুন করার দাবী করেছিল, কিন্তু তদন্তকারীরা কেবল সাতটি আক্রমণ সম্পর্কেই এখন পর্যন্ত নিশ্চিত হয়, যার মধ্যে দুইজন বেঁচে যায়। খুন হওয়া হতভাগ্যরা হল-

১# ১৯৬৮ সালের ২০শে ডিসেম্বর Benicia শহর সীমার মধ্যে Lake Harmon রোডে David Arthur Faraday, বয়স ১৭ এবং Betty Lou Jensen, বয়স ১৬ কে গুলি করে খুন করা হয়।

২# ১৯৬৯ সালের ৪ই জুলাই Vallejo শহরের Blue Rock Springs Park এর পার্কিং এ Michael Renault Mageau, বয়স ১৯ এবং Darlene Elizabeth Ferrin, বয়স ২২ কে গুলি করে যোডিয়াক। Darlene মারা যায় কিন্তু ভাগ্যক্রমে Mageau বেঁচে যায়।

বেঁচে যাওয়া Michael Renault Mageau

৩# ১৯৬৯ সালের ২৯শে সেপ্টেম্বর Napa শহরের Lake Berryessa তে Bryan Calvin Hartnell, বয়স ২০ এবং Cecelia Ann Shepard, বয়স ২২ কে ছুরি দিয়ে নির্মমভাবে মারা হয়। যার মধ্যে Bryan বেঁচে গেলেও Cacelia মারা যায়।

বেঁচে যাওয়া Bryan Calvin Hartnell

৪# San Francisco শহরের Paul Lee Stine নামের একজন ট্যাক্সি চালককে ১৯৬৯ সালের ১১ই অক্টোবর গুলি করে খুন করা হয়।

হতভাগ্য সেই ট্যাক্সি ড্রাইভার

৩৭টা খুন দাবী করলেও শুধুমাত্র এই খুনগুলো সম্পর্কেই পুলিশ শিওর হয়েছিলো যে, এগুলো ‘যোডিয়াক কিলার’ এর করা। আরো অনেক খুন নিয়ে ‘যোডিয়াক কিলার’কে সন্দেহ করা হয়, কিন্তু তা আজো প্রমাণিত হয়নি।

বে এরিয়া প্রেসে পাঠানো যোডিয়াক কিলার এর চিঠিগুলো

যোডিয়াক কিলারকে নিয়ে সবাই জানতে পারে তার পাঠানো চিঠির মাধ্যমে। ১টি ছাড়া সবগুলো চিঠিই সে ১৯৬৯ সালে ধারাবাহিকভাবে পাঠিয়েছিল। তার শেষ চিঠি ছিলো ১৯৭৪ সালে। সবগুলো চিঠিই বে এরিয়া প্রেসে পাঠানো হয়েছিলো।

যোডিয়াক কিলার এর হাতে লেখা চিঠি

চিঠিগুলোর মধ্যে একটিতে আবার সে তার হাতে খুন হওয়া Paul Lee Stine এর রক্তমাখা শার্টের একটি টুকরা দিয়েছিলো। তবে এটা নিয়ে একটু বিতর্ক আছে।

চিঠিতে পাঠানো Paul Lee Stine এর রক্তমাখা শার্ট
এই চিঠিগুলোর জন্যই যোডিয়াক কিলার সবার আগ্রহে আসে এবং তুমুল কৌতুহলের সৃষ্টি করে।

চিঠিতে ব্যবহৃত নামের সাইন

এমনকি ১৯৬৯সালের ২০শে অক্টোবর যোডিয়াক কিলার টিভির লাইভ প্রোগ্রামে টেলিফোনের মাধ্যমে অংশগ্রহন করে। সেখানে সে নিজের নাম Sam বলে জানায়। সেই কথোকপনে তাকে সত্যিকারের একজন বিমর্ষ কিন্তু বিপদজনক মানুষ হিসেবেই মনে হয়েছিলো।

যোডিয়াক কিলার এর পরিচয়!!

এখন পযর্ন্ত যোডিয়াক কিলার এর আসল পরিচয় সবার কাছে রহস্যই আছে। তবে যোডিয়াক কিলার সন্দেহে পুলিশের গ্রেপ্তার হওয়া একমাত্র ব্যক্তিটি হলো Arthur Leigh Allen।

Arthur Leigh Allen
কিন্তু ট্যাক্সিতে পাওয়া হাতের ছাপ এবং চিঠির হাতের লেখা মিলিয়ে তা প্রমাণ করতে পারেনি পুলিশ। ফলে তাকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। কিন্তু ২+২=৪ মিলালেই প্রমাণ হয় সেই ছিলো যোডিয়াক কিলার এবং পুলিশও এই ব্যাপারে শিওর ছিলো। কিন্তু ছিলো না কোন প্রমাণ।

এর অনেকদিন পর এক মজার এবং খুব অদ্ভূত ঘটনা ঘটে। পুরো ঘটনাই খুব প্যাঁচিয়ে যায় যখন যোডিয়াক কিলার এর হাত থেকে বেঁচে যাওয়া Michael Renault Mageau ১৯৯২ সালে ড্রাইভিং লাইসেন্সের ছবি দেখে Arthur Leigh Allenকেই তাদের উপর আক্রমণকারী হিসেবে চিহ্নিত করে।

এই লাইসেন্স এর ছবিটি দেখেই Michael Renault Mageau যোডিয়াক কিলার হিসেবে Arthur Leigh Allenকে চিহ্নিত করে।

তাহলে পুলিশ যখন Arthur কে ধরেছিলো তখন হাতের ছাপ মিললো না কেন? খুব আজব না ব্যাপারটা? এই রহস্যটির সমাধান মনে হয় কোনদিনও জানা যাবে না আর। জানা যেতো যদি এই Michael Renault Mageau আরো আগে সেই সময়ে এই খুনীকে শনাক্ত করতো। কিন্তু পুরনো ভয়ংকর সেই রাতের ভয়ে এতদিন পযর্ন্ত আত্মগোপন করে ছিলো। ১৯৯২ সালেই এর কিছুদিন আগে Arthur Leigh Allen মারা যাওয়ায় তাকে আর ধরাও সম্ভব হয়ে উঠে নি।

যোডিয়াক কিলার আমেরিকায় এখন পযর্ন্ত সবচেয়ে জটিল এবং রহস্যভেদ না হওয়া কেস। আমেরিকায় এখনো এই কেস নিয়ে তদন্ত চলছে।

Zodiac মুভি
যোডিয়াক কিলার এর সম্পূর্ণ বিস্তারিত সত্য কাহিনী নিয়ে গুরু David Fincher(Fight Club & Seven) পরিচালিত Zodiac নামে একটি মুভি ২০০৭ সালে মুক্তি পায়।

দেখে ফেলেছেন হয়তো অনেকেই। না দেখা থাকলে মুভিটি অবশ্যই দেখবেন। তারকাবহুল এবং সম্পূর্ণ সত্য ও বিস্তারিত কাহিনী নিয়ে নির্মিত এই ছবিটি আমার কাছে অসাধারণ লেগেছে। আপনাদেরও ভাল লাগবে আশা করছি।কোন সত্য কাহিনী নিয়ে নির্মিত মুভি কার না ভালো লাগে? আর সেটা যদি হয় কোন ভয়ংকর খুনীকে নিয়ে তাহলে তো কথাই নেই।

Zodiac মুভিটির ডাউনলোড লিংক....
টরেন্ট ডাউনলোড লিংক

মিডিয়াফায়ার লিংক :
Password: urgrove.com
পার্ট ১ পার্ট ২ পার্ট ৩ পার্ট ৪ পার্ট ৫


*** এইবার ক্ষমাপ্রার্থনা সবার কাছে। অনেক আগের আমার একটি পোষ্ট এটা। তবে তখন সেটা ছোট এবং অসম্পূর্ণ ছিলো। মুভিটা আমার দারুণ প্রিয় এবং অনেকবার দেখা। ২দিন আগে আবার দেখলাম। মূলত মুভিটা দেখার পরেই এই ব্যাপারে নেটে ব্যাপক খোজখবর নেয়া। সেই ভালো লাগা থেকেই এইবার বিস্তারিত ঘটনাটি তুলে ধরলাম সবার কাছে।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:১৯
৭১টি মন্তব্য ৭১টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×