ছোটবেলা থেকেই প্রচন্ড ভয় পেতাম তাকে...। সারাটিদিন খালি পাহারা দিতাম কখন উনি বাসা থেকে বের হয়ে যান...। উনি বাসা থেকে বের হওয়ার ৩ মিনিটের মাথায় আমাকে আর কেউ বাসায় খুঁজে পেতো না। আর বাসায় ফেরার পর প্রায় প্রতিদিনই পিঠে পরতো ধুপধাপ... কারণটা খুবই সহজ... উনার প্রায় ২-৩ ঘন্টা পর বাসায় ফেরা। তবে একটা বিষয় উনি কোনদিনই বুঝতে পারেননি, সেটা হলো স্কুল পালানো। কারণ এই বিষয়টাতে আমি ছিলাম খুবই পারদর্শী।
ছোটবেলায় খালি মনে মনে ভাবতাম কবে বড় হবো... কবে এই বন্দিজীবন থেকে মুক্তি পাবো...। স্কুল পেড়িয়ে কলেজে এসেও যখন সেই বন্দি দশা ফুরালোনা, ঠিক করলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে উঠলে কিছু্তেই বাসায় থেকে পড়বোনা। আমাকে অবশ্যই ঢাকার বাহিরে কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে হবে...। পড়লামও তাই। একটু একটু করে বুঝতে লাগলাম স্বাধীনতার সাধ। কিন্তু সাধটা ভালোমতো বোঝার আগেই ফুরিয়ে গেল মধুর সে জীবন। তখনো ভালোমতো বুঝিনি টানটা কোথায়...। বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষদিনগুলো আমার খুব কষ্টে কেটেছে, কেন তা আর একদিন লিখবো। তবে অন্য কষ্টগুলোর মাঝে সবচেয়ে কষ্টের যে মুহুর্ত্বটা তাড়া করে প্রতিটিক্ষণ, তা হলো হাসপাতালের মেঝেতে বসে মাস্টার্স-এর থিসিসটা লেখা। কারণ সেই মুহুর্ত্বে তার হার্টে অপারেশন করতে হয়েছিলো। আর যেহেতু আমিই একমাত্র ছেলে, তাই আমাকেই সব দেখাশুনা করতে হয়েছিলো। এরপর একে একে আরো বেশ কয়েকটা কষ্টের মাস শেষে পেয়েছিলাম স্বপ্নের স্বাধীনতা... একটা চাকুরী।
ঢাকার বাহিরে চাকুরী। ইচ্ছামতো আড্ডা দেয়া, যতরাতে ইচ্ছা ঘরে ফেরা... কেউ আর স্বাধীনতায় বাধা দেওয়ার নেই। তারপর... সময়ের ধারাবাহিকতায় চলে আসলাম হাজার মাইল দুরে, আকাশ, সাগর পাড়ি দিয়ে। আজ আমার জীবনে তার কোন বিধিনিষেধের ছোঁয়া নেই...
বাহিরে আসার ২-৩ মাসের মাথায় আবার তার হার্ট এটাক... অপারেশন থিয়েটারে যাওয়ার আগমুহুর্ত্বে বললেন... তুই কোন চিন্তা করিসনা। ইনশাল্লাহ্ ঠিক হয়ে যাবে...। দীর্ঘ প্রতিক্ষার প্রতিটি মুহুর্ত্বকে সেসময় এক একটি যুগ মনে হলো...। মহান আল্লাহ্-র কাছে অসীম কৃর্তগ্গতা তিনি আজ সুস্থ।
কিন্তু আজ আমি সেই ছোটবেলার বন্দি জীবনকে খুব মিস করি। তাকে মিস করি যেকোন সিদ্ধান্ত নেয়ার সময়। আজ আমি বুঝতে পারি তার সকল শাসন ছিলো আমার সুন্দর ভাবিষ্যতের জন্য। আজ প্রতিটি রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে তার কথা মনে পরে... মনে পরে সকালে ঘুম থেকে উঠার পরই। আজ ইচ্ছা করে তার মুখোমুখি বসে থাকতে... ইচ্ছা করে তাকে একটু জড়িয়ে ধরতে...
সে আমার বাবা... আমার আদর্শ... বাবা খুব মিস করি তোমায়... কতদিন তোমায় দেখিনা। আবার কবে দেখবো? একটা মুহুর্ত্ব ছিলো তোমার কাছ থেকে পালিয়ে পালিয়ে বেড়ানোর, যখন তুমি কাছে ছিলে...। আর এখনকার মুহুর্ত্বগুলো তোমাকে কাছে পেতে চায়, যখন তুমি অনেক দুরে...। কেন জানিনা চোখটা ভিজে আসছে জলে... মনের মাঝে একটা কথাই ভেসে আসছে বারবার বাবা তোমায় ভালোবাসি...
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জুলাই, ২০১০ সকাল ৯:৫৮

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



