০১.
আমি ঈশ্বরকে বলেছিলাম আমাকে একটা সন্ধ্যাপ্রদীপ হতে দাও অথবা কোনো ফাউন্টেনপেন। তার বদলে সে আমাকে বানিয়ে দিল একটা ডানাভাঙ্গা শালিক পাখি! তাকে আমি তাই সময়ের বাক্সে ফেলে রেখে চলে এসেছি অনেক দূর। ভাঙ্গা ডানার ক্ষতটাতে কেউ চিরে দিলেও এখন আমি আর সন্ধ্যাপ্রদীপ হতে চাই না। বহুদিন আমি কারো কাছেই কোনো প্রার্থনা করি না..........
০২.
কিশোরবেলায় আমার একটা কবিতা লেখার খাতা ছিল। তাতে আমি নীল নীল বায়োস্কোপ ভরে দিয়ে খিল খিল করে হাসতাম আর তিনপাখার সব শালিকদের মুখ বেঁকিয়ে অভিশাপ দিতাম। কিছু কিছু শালিক আমার প্রিয় হওয়া সত্বেও তিন পাখার শালিকদের আমি ভীষণ ঘৃনা করি - কারণ তারা মধ্যগগনে উড়তে জানে এবং জানে কি করে আকাশকে করে তুলতে হয় উত্তপ্ত। তৃতীয় পাখাটা তাদের আলোর বেগে উড়তে সাহায্য করত। অতএব তারা আকাশের গায়ে একগাদা বারুদ ছুড়ে দিয়ে পালিয়ে যেত নতুন গ্রহে। কেবল আমি ভাঙ্গা ডানা নিয়ে উড়তে পারতাম না আর জ্বলন্ত আকাশের গনগনে আগুন গলে গলে আমার শরীরের উপর পড়ত। আমি একটা পুড়ে যাওয়া অমলেট হয়ে যেতাম, তখন ওই বাক্সবন্দী ঈশ্বর তার জাদুর কাঠি নেড়ে আমাকে একটা ফিনিক্স পাখি বানিয়ে দিত। ফিনিক্স হতে আমি ঘৃনা করি কেননা ফিনিক্সদের কখনো পূর্বজন্মের স্মৃতি মনে থাকে না........তারা দ্বিতীয়বার পুড়ে যাওয়ার জন্যই জন্মগ্রহণ করে........
০৩.
মাঝে মাঝে আমার একটা চিল হতে ইচ্ছে হয়। চিলদের কেউ ছোবল দিতে পারে না, তারা শক্তিধর! আমি ঘুমের মধ্যে স্বপ্ন দেখি চাঁদ সূর্যসহ সকল নক্ষত্রের পতন ঘটেছে এবং পাখিদের রাজা চিল হয়ে আমি আকাশে উড়ছি। ঘুম ভাঙ্গলে আবার আগের জায়গায় ফিরে আসি। যেহেতু আমি একটি পঙ্গু শালিক, অতঃপর এক শুশ্রুষাকক্ষ থেকে বের করে আমাকে ফেলে দেয়া হবে নতুন কোনো শুশ্রুষাকক্ষে। আমি এখন তার প্রতীক্ষায় বসে বসে দিন গুনি। বহুদিন আমি ঘুমের মধ্যেও কোনো স্বপ্ন দেখি না.........
০৪.
আমার মাঝে মাঝে ভীষণ গলা চড়িয়ে বলতে ইচ্ছে হয় যে, একটি ডানা ভাঙ্গা হলেও আমি একটি জীবন্ত শালিক। কিন্তু সমবেত শালিকদের প্রবল প্রতিরোধ আর গগনবিদারী চিত্কারের নিচে আমার কন্ঠস্বর চাপা পড়ে যায় আর আমি নরকের অগ্নিকুন্ডে বসে নিজের পরবর্তী দহনকালের জন্য প্রস্তুত হই মনে মনে। আমার হাতের কতগুলো রেখা মুছে গেছে, আমার ধারণা তারা হৃদয়রেখা ছিল। প্রকৃতি অনিয়ম পছন্দ করে না। ডানা ভাঙ্গা শালিকদের সম্ভবত হৃদয় রেখা থাকতে নেই, কেননা পৃথিবীতে তাদের আসলে কোথাও অস্তিত্ব নেই। তারা ছায়ার মত বাঁচে আর ছায়া হয়েই শূন্যে ভেসে যায়। আমি দেখতে পাই আমার দেহের ভিতর দিয়ে সবাই হেঁটে যায় আমাকে অগ্রাহ্য করে যেমন হেঁটে যায় শূন্যে। অতএব আমি জানতে পেরেছি যে আমি শুধু এক কায়াহীন ছায়া।
ঈশ্বরের ভুলে আমি শালিক হয়ে পৃথিবীতে চলে এসেছিলাম।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে মে, ২০১০ ভোর ৪:৪৫

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


