somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যে পাথর একবার পাহাড় থেকে নেমেছে সে তার গন্তব্যে পৌঁছবেই ...

১০ ই নভেম্বর, ২০১৬ রাত ৯:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



"যে পাথর একবার পাহাড় থেকে নেমেছে সে তার গন্তব্যে পৌঁছবেই। কোথাও সে বাধা প্রাপ্ত হবে, কোথাও তার গতি শ্লথ হবে কিন্তু যেখানে যাবার সেখানে সে যাবেই" হোসে মার্তির এই বিখ্যাত উক্তি লেখা হয়েছিল ফিদেলের জন্মের আগে তবে বোধকরি ফিদেলের জন্যেই। যার নেতৃত্ব নতুন করে লিখেছে কিউবার ইতিহাস। যিনি মুক্তির বার্তা পৌছে দিয়েছেন প্রতিটি কিউবানের ঘরে।

১৫৯২ সালে কলম্বাসের জাহাজ এসে ভীড়ে কিউবার বন্দরে। তারপর প্রায় তিনশ বছর স্পেনের অধীনে ছিলো কিউবা। ১৮৯৫ সালে প্রথমবারের মতো হোসে মার্তির নেতৃ্ত্বে স্পেনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে যুদ্ধ ঘোষণা করে কিউবা। যুদ্ধ ক্ষেত্রেই নিহত হন মার্তি। উনবিংশ শতকে স্পেনের কাছ থেকে কিউবা কিনে নেয়ার প্রস্তাব রাখে আমেরিকা। তবে স্পেন সেটা বিক্রি করতে রাজি হয়নি। তাই মার্সির বিদ্রোহকে কাজে লাগাতে চেষ্টা করে আমেরিকা। চার বছর স্থায়ী যুদ্ধে পরাজিত হয় স্পেন। তবে আমেরিকা নিজেরা শাসনভার গ্রহণ করলো না। অনুগত সরকার বসিয়ে দূর থেকে নিয়ন্ত্রণ করতে লাগলো দেশটির অর্থনীতি-রাজনীতি-নিরাপত্তা।

ফিদেল ক্যাষ্ট্রো’র পিতা এঞ্জেলো ক্যাষ্ট্রো ছিলেন তরুন স্প্যানিশ সৈনিক। কিউবাতে এসেছিলেন স্পেনের হয়ে যুদ্ধ লড়তে। পরাজিত হয়ে দেশে ফিরেও যান। পরে ভাগ্যের অন্বেষনে তিনি কিউবাতে এসে কাজ নেন চিনির কারখানায়। পরিশ্রম আর উদ্যোমের কারণে বিভিন্ন কাজ করে তিনি রীতি মত ভূস্বামী বনে যান। ফিদেলের মাতা লিনা ছিলেন কিউবান আদিবাসী। গরীব কৃষকের মেয়ে। ধর্মভীরু লিনা পড়াশোনা জানতেন না। ন্যায় অন্যায় বোধটা ফিদেল তার মায়ের কাছেই শিখেছেন। প্রেমে পড়ে ছিলেন এঞ্জেলো এবং লিনা। প্রণয় থেকে পরিণয়। জন্ম হয় ফিদেল ক্যাষ্ট্রো’র। সময়টা ১৩ আগষ্ট ১৯২৬। ঝড়-বাদলের মধ্য রাতে।

প্রথম ধর্মপিতা ফিদেল সান্টোস এর ফিদেল আর পিতার পদবী ক্যাস্ট্রো মিলিয়ে পাঁচ বছর বয়সে আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে নাম রাখা হয় ফিদেল ক্যাষ্ট্রো। খ্রিষ্টানদের নাম রাখা হয় ব্যাপটাইজ করার মধ্য দিয়ে। কিউবাতে জন্মের পর সকলের-ই একজন ধর্মপিতা ঠিক করা হতো। তখন লোকের আয়ু ছিলো কম। নানা অসুখে বিসুখে মারা যেত তারা। তো বাবা মারা গেলে সেই ধর্মপিতা সন্তানের দেখাশোনা করবেন এটাই ছিল নিয়ম। ব্যবসায়ী বন্ধু ফিদেল সান্টোস কাজের চাপে সময় বের করতে পারছিলেন না। এদিকে ফিদেলেরও বয়স বেড়ে যাচ্ছিলো। তাই পাঁচ বছর বয়সে একজন হাইতিয়ান সরকারী চাকুরীজীবী লুই হিকর্ট'কে ফিদেলের ধর্মপিতা করে ব্যাপটাইজ করা হয়। মিশনারি বোর্ডিং স্কুল ‘কলেজ ডু ডোলারেস’ এ ফিদেলের শিক্ষা জীবন শুরু হয়। বাস্কেটবল, বেসবল আর পাহাড়ে ওঠা ছিলো ফিদেলের প্রিয় খেলা। পাহাড়ের চূড়ায় ওঠা ছিল ফিদেলের নেশা আর স্কুল বাস্কেটবল’এ চ্যাম্পিয়ানশীপ অর্জন ছিল তার চ্যালেঞ্জ। স্কুল শেষ করে ফিদেল ভর্তি হন হাভানা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিষয়ে পড়তে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরের সময় সেটা। কিউবার সম্পত্তির উপর জনগনের কোন অধিকার ছিলো না। ৮০ ভাগ সম্পদের উপর অধিকার ছিলো কয়েকটি বিদেশি কোম্পানীর হাতে। তারুন্যের প্রথম প্রেম, হাভানা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শনের ছাত্রী মিত্রার সাথে বিয়ে করেন ফিদেল। অনন্য সুন্দরী মিত্রা ছিলেন ধনী পরিবারের মেয়ে। বাতিস্তা সরকারের পারিবারিক বন্ধু। যার বিরুদ্ধে পরে ফিদের আন্দোলনে নেমেছিলেন। ছয় বছরের বিবাহিত জীবনে তাদের এক পুত্র সন্তান জন্ম নেয়। পারস্পারিক ঐক্যমতের ভিত্তিতে তারা বিচ্ছেদের চুক্তি স্বাক্ষর করেন।

বাস ভাড়াকে কেন্দ্র করে সরকার বিরোধী এক আন্দোলনের মধ্য দিয়ে শুরু। কিউবার রাজনীতি মঞ্চে অভিষেক ঘটলো ফিদেলের ।যোগ দিলেন কিউবান পিপলস পার্টিতে। একসময় ফিদেল দলটির প্রধান এডুয়ার্দো চিবাসের প্রধান সহকারী হন। সে সময় রাজনীতির পাশাপাশি পলিটিক্যাল ইকোনোমিতে উচ্চশিক্ষার জন্য চেষ্টা করছিলেন তিনি। কিন্তু ১৯৫২ সালের একটা ঘটনা জীবনের সব হিসাব নিকাশ বদলে দেয়। এক সময় চিবাস তৎকালীন শিক্ষা মন্ত্রীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির সুনির্দিষ্ট কতগুলো অভিযোগ তোলেন। সরকার চিবাসকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন অভিযোগ প্রমাণের। রেডিও স্টেশনের মালিক চিবাস রেডিও অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দুর্নীতি বিরোধি অভিযান পরিচালনা করতেন। চিবাস ফিদেলকে নিয়ে যান উক্ত স্টেশনে, সরকারের দুর্নীতি এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের বিরুদ্ধ এক আবেগঘন বক্তৃতা রাখেন। চ্যালেঞ্জের প্রতি উত্তরে যথেষ্ট প্রমাণ পত্র হাজির করতে ব্যর্থ চিবাস লাইভ সম্প্রচারিত বক্তৃতার এক পর্যায়ে লাইসেন্সকৃ্ত পিস্তল দিয়ে নিজের মাথায় গুলি করেন। ব্যক্তিগত অপমানবোধের মুক্তির এই ঘটনা বদলে দেয় কিউবার ইতিহাস। এসময় ফিদেলকে কিউবান পিপলস পার্টির প্রধানের দায়িত্ব নেয়ার অনুরোধ করা হলে তিনি সেটা উপেক্ষা করেন। কেননা পিপলস পার্টির সাথে ফিদেলের কিছু মতাদর্শগত পার্থক্য ছিলো।

রাজনীতির মাঠে নামেন ফিদেল। ১০ জনকে নিয়ে গঠন করেন একটি রাজনৈতিক সেল। দলটির নাম রাখেন “মুভমেন্ট”। ভাই রাউল ক্যাষ্ট্রোও ছিলেন সেই দলের সদস্য। তাদের প্রথম এবং প্রধান লক্ষ্য ছিলো বাতিস্তা সরকারকে উৎখাত করা। ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে দলের সদস্য সংখ্যা। দলের জন্য অস্ত্র সংগ্রহের জন্য তারা মনকাডা ক্যান্টনমেন্ট আক্রমনের সিদ্ধান্ত নেন। ১৯৫৩ সালের ২৬ জুলাই রাতে ১২০ জন মিলে অপারেশনের যাওয়ার পরিকল্পনা করা হয়। সামনে থাকবে ৮০ জন ব্যাক আপে ৪০জন। চরমভাবে ব্যর্থ হয় সেই অভিযান। মাত্র ১৯ জন পালিয়ে সিয়েরা মিয়েস্ত্রা পাহাড়ে আশ্রয় নেয়। বাকিদের অনেকে মারা যায়, অনেকে পালিয়ে যায়, অনেক দলত্যাগ করেন।

পরদিন-ই মার্শাল জারি হয়। মারাত্মক আহতদেরকে ডাক্তারের শরনাপন্ন করানো ছাড়া আর কোনো উপায় ছিলো না। সিদ্ধান্ত হলো আহতদেরকে সান্তিয়াগো ডু কিউবার আর্চ বিশপের মাধ্যমে চিকিৎসার ব্যবস্থা করানো হবে। ৩জন রওনা হয় সান্তিয়াগোর উপকূলের দিকে। পাহাড়ি পথের দীর্ঘ যাত্রায় ক্লান্ত হয়ে ভোর রাতে তারা একটা কুড়ে ঘরে বিশ্রাম নেয়ার জন্য থামে। ক্লান্তিতে ঘুমিয়েও পড়েন। ঘুম ভাঙ্গে বুটের লাথিতে। আর্চ বিশপের ফোনে আড়ি পেতেই মুলত সেনাবাহিনী এই অভিযানে নামে। দড়ি দিয়ে হাত বেধে তিনজনকে লাইন করে দাঁড় করানো হয়। নাম জিজ্ঞেস করতেই ফিদেল সহ বাকি দুই জন নিজেদের নাম বানিয়ে বলে। সৈন্যরা তাদেরকে বসতে বললে তারা বলে গুলি করলে দাঁড়ানো অবস্থাতেই করো। কৃষাঙ্গ লেফটেন্যান্ট পেড্রো সারিয়া সৈন্যদেরকে গুলি করতে বারন করেন। বন্দীদেরকে ক্যান্টনমেনটে নিয়ে যাওয়াকে যথার্থ বিবেচনা করে ৩জনকে হাত বাধা অবস্থায় হাঁটিয়ে হাইওয়ে পর্যন্ত নিয়ে যান। এক পর্যায়ে ফিদেল পেড্রোর কানের কাছে মুখ নিয়ে বলেন আমি-ই ফিদেল। লেফটেনেন্ট চমকে উঠে বলেন, “ আর কাউকে বলবে না, কিছুতেই বলবে না, এ নাম আর একবারও উচ্চারন করবে না আর”। লেফটেনেন্ট জানতেন ক্যান্টনমেন্টে নিয়ে গেলে বন্দিদেরকে আর জীবিত রাখা হবে না। তাই তিনি প্রচলিত আইনের আওতায় বিচার পাওয়ার জন্য ৩জনকে থানায় সোপার্দ করেন। বিপ্লব সফল হওয়ার পর এই লেফটেনেন্টকে ফিদেল প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্টের প্রধান করেন।

বিচারে ১৫ বছরের জেল হয় ফিদেলের। মার্তে ছিলেন ফিদেলের প্রথম অনুপ্রেরণা। জেলখানার বন্দী জীবনে তিনি কার্ল মার্কস’এর উপর বিস্তর পড়াশুনা করেন। জেলে বসেই আবার নতুন দল গঠন করেন। নাম দেন “মুভমেন্ট ২৬ জুলাই” সংক্ষেপে এম-২৬-৭। আন্দোলনের নাম দেন ২৬ জুলাই আন্দোলন। ২২ মাস জেল খাটার পর আসন্ন জাতীয় নির্বাচন উপলক্ষ্যে সাধারণ ক্ষমায় মুক্তি পান ফিদেলসহ অন্যান্যরা। বাতিস্তা সরকার তার কফিনের শেষ পেরেকটা তখনই ঠুকে দেন। ফিদেল এবং রাউল চলে যান মেক্সিকোতে। সামরিক অভ্যুত্থানের পরিকল্পনাকে সফল করতে গেরিলা বাহিনী গঠনে মনোযোগী হন। প্রশিক্ষক হিসেবে পান স্প্যানিশ জেনারেল আলবার্তো বায়ো'কে। পরিচয় ঘটে চে' গুয়েভারা’র সঙ্গে। ডাক্তার হিসেবেই গেরিলা দলের সক্রিয় সদস্য হন চে'। ১৯৫৬ সালের ২৫ নভেম্ভর রাতে ৮২জন সহযোদ্ধাকে নিয়ে ‘গ্রানমা’ নামের একটা ছোট জাহাজে করে মেক্সিকো থেকে কিউবার উদ্দেশ্যে রওনা হন ফিদেল। পৌঁছানোর কথা ৩০ ডিসেম্বর। উপকূলে যোগ দিবে অভ্যন্তরীন আরেকটি দল। প্রতিকূল আবহাওয়ার মধ্যে তারা যখন কিউবা উপকূলে পৌঁছে। কোস্ট গার্ড টের পেয়ে সেনা বাহিনীকে খবর দেয়। শুরু হয় বন্দুক যুদ্ধ। শেষ পর্যন্ত ২২ জন সিয়েরা মিয়েস্ত্রা পাহাড়ে পৌছাতে সক্ষম হয়। বাকিরা মারা যায়, পালিয়ে যায়, অনেকে আবার ধরাও পড়ে। সিয়েরা মিয়েস্ত্রা পাহাড়ে থেকেই আখ চাষীদের প্রশিক্ষিত করে ছোট ছোট গেরিলা দল গঠন করেন ফিদেল। পুরো বিপ্লবে মনকাডা পাহাড়ের গেরিলা যুদ্ধের কথাও সমান উল্লেখযোগ্য।

মাত্র তিনশ জন গেরিলা বাতিস্তা সরকারের আশিহাজার সৈন্যের সেনাবাহিনীকে নাজেহাল করে ছাড়ে। ২৫ মাস ধরে চলে সেই যুদ্ধ। এই পচিশ মাসের প্রতিটি দিন প্রতিটি রাত ফিদেল ছিলেন যুদ্ধক্ষেত্রে। একদিন তিনি যুদ্ধক্ষেত্রের বাইরে ছিলেন। ১৯৫৮সালের ২৪ ডিসেম্বর। দুটো জীপে চড়ে কয়েকজন সঙ্গীকে নিয়ে ফিদেল সেদিন তার মে’কে দেখতে যান। “নিউইয়র্ক টাইমস” এক সাংবাদিক গোপনে সিয়েরা মিয়েস্ত্রা পাহারে এসে ফিদেলের সাক্ষাৎকার সংগ্রহ করেন। সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে এই কিউবার আন্দোলনের কথা, সংগ্রামের কথা গোপণ যুদ্ধ প্রস্তুতির কথা। কিউবাতে বাতিস্তার জনসমর্থন নেমে আসে শূন্যের কোঠায়। ১৯৫৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর বাতিস্তা হাভানা ছেড়ে পালিয়ে যায় মেক্সিকোতে। ক্ষমতায় বসিয়ে রেখে যান এক সেনা অফিসারকে, যিনি ছিলেন কিউবার ধনীক শ্রেণীর মদতপুষ্ট। সিয়েরা পাহাড় থেকে বের হয়ে কিউবার দ্বিতীয় শহর সান্তিয়াগো ডু কিউবা দখল করে ফিদেল। হাভানার দিকে অগ্রসর হন তিনি। খবর পেয়ে পালিয়ে যায় সেনা অধ্যুষিত সেই সরকার। হাভানায় পৌঁছে কয়েক লাখ মানুষের সামনে বক্তৃতা রাখে ফিদেল। জন সমুদ্র থেকে সেদিন উড়ানো হয় শান্তির প্রতীক কবুতর। উড়তে উড়তে এক কবুতর এসে বসে ফিদেলের কাঁধে। জনগনের কাছে তিনি হয়ে ওঠেন সৌভাগ্যের বার্তা বাহক।

বিপ্লবের পর সরাসরি ক্ষমতা দখল করেননি ফিদেল। অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয় বিচারপতি উরুশিয়াকে। ফিদেল হলেন বিপ্লবী সেনা বাহিনী প্রধান। সরকার চালানো তো আর ছেলে খেলার বিষয় নয়। অভিজ্ঞতা থাকা চাই। সেই সময় ফিদেল, রাউল, চে, আবেল সবার বয়সই ত্রিশের কোঠায়, কারো কারো ত্রিশের নিচে। সেই সময় কিছু জটিলতা দেখা দিলে উরুশিয়া জনগনের দাবীর মুখে পদত্যাগে বাধ্য হন। প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেন ফিদেল। চে’ দায়িত্ব নেন অর্থ দপ্তরের। জাতিসংঘে কিউবাকে প্রতিনিধিত্ব করা প্রথম অধিবেশনে চার ঘন্টার এক বক্তৃতা রাখেন। সম্ভবত সেটাই জাতি সংঘের সব থেকে লম্বা বক্তৃতা। ক্লান্তিহীন ভাবে কথা বলতে পারেন তিনি। কিউবা,আমেরিকা থেকে যে দেশের দূরত্ব মাত্র ৯০ মাইল। চিনি এবং তামাকের জন্য পৃথিবী বিখ্যাত। কিউবাতে সবাই শিক্ষিত। বেকারত্ব শূন্য কোঠায়। বর্তমানে কিউবানদের গড় আয়ু ৭৫ বছর।

১৯৬১ সালের এপ্রিলে কিউবাতে অতর্কিত বিমান হামলা চালায় আমেরিকার প্রেসিডেন্ট কেনেডী সরকার। সবটুকু শক্তি দিয়ে আক্রমণ প্রতিহত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। চে’ নেয় পশ্চিমাঞ্চলের দায়িত্ব, রাউল নেউ দক্ষিনের আর ফিদেল থাকেন হাভানাতে। বে অব পিগস এ এক সর্বাত্মক যুদ্ধ হয়। মাত্র ৭টি বিমান ছিলো কিউবার। সেটা দিয়েই তারা মার্কিন নৌবহরে হামলা চালায়। কিউবান’রা সবটুকু শক্তি ঢেলে নেমে পড়ে স্থল যুদ্ধে। শতাধিক যোদ্ধা নিহত হয় সে যুদ্ধে। এক যোদ্ধা বোমার আঘাতে মারাত্মক আহত হয়ে রক্তাত্ত অবস্থায় ক্রলিং করে গিয়ে একটা বাড়ির দরজায় নিজের রক্ত দিয়ে লেখে, ‘ফিদেল’। তারপরই সে মারা যায়। ‘ফিদেল’ নামটার মধ্যেই হয়তো কিউবান’রা খুঁজে নিয়েছিলেন মুক্তির মন্ত্র। পিছু হটতে বাধ্য হয় আমেরিকা। সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট ক্রশ্চেভের সঙ্গে সামরিক চুক্তি করেন ফিদেল। সেই অনুযায়ী সোভিয়েত ইউনিয়ন কিউবার মাটিতে মিসাইল বসায়। যদি মিসাইল না সরানো হয় তবে সোভিয়েতের বিরুদ্ধে আণবিক যুদ্ধ বাধানোর ঘোষনা দেন কেনেডি। মিসাইল সরিয়ে নেয় সোভিয়েত ইউনিয়ন। অরক্ষিত হয়ে পড়ে কিউবা।

সব বিপর্যয় কাটিয়ে এখন পর্যন্ত কিউবা টিকে আছে কারণ প্রতিটি কিউবান নাগরিক মনে করেন “আমিই কিউবা”। যে জাতি প্রলোভনকে প্রত্যাখান করতে পারে সে জাতিকে সহজে পরাজিত করা সম্ভব নয়। অন্তত কিউবান'রা তার প্রমাণ রেখেছেন। বহুবার হত্যা চেষ্টার পরো বহাল তবিয়তে আছেন ফিদেল। কারন তাকে বাঁচিয়ে রেখেছে তার জনগন। কারণ তিনি জনগনের সাথে মিশে আছেন, তাদের সাথে মিশে অবিরাম যুদ্ধ করে যাচ্ছেন। কিউবার রাষ্ট্রীয় সব দায়িত্ব থেকে স্বেচ্ছায় সরে দাঁড়িয়েছেন ফিদেল। তার থাকা কিংবা না-থাকার উপর যে কিউবার ভবিষ্যত নির্ভর করেনা, সেটার জন্যই তার এই সিদ্ধান্ত। তিনি মনে করেন, “অন্যকে দায়ী করে লাভ নেই, অন্যের উপর ভরসা করে লাভ নেই, অন্যের চাটুকারিতা করেও লাভ নেই। আস্থা রাখতে হবে নিজের উপর, হতে হবে আত্মবিশ্বাসী”।

তথ্য ঋণ- শাহাদুজ্জামান স্যার
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০২০ ভোর ৬:১৫
১৩টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আইনের ফাঁকফোকর-০৩

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪২

যেকোনো চাকরির নিয়োগের পরীক্ষা চলছে। সেটা পাবলিক সার্ভিস কমিশন, বিভিন্ন সংস্থা, বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক বা উপজেলা পর্যায়ের কোনো কার্যালয়ে হতে পারে। এই নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস হতে পারে। একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্পঃ অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১২

(১)
মাছ বাজারে ঢোকার মুখে "মায়া" মাছগুলোর উপর আমার  চোখ আটকে গেল।বেশ তাজা মাছ। মনে পড়লো আব্বা "মায়া" মাছ চচ্চড়ি দারুণ পছন্দ করেন। মাসের শেষ যদিও হাতটানাটানি চলছে তবুও একশো কুড়ি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সিকান্দার রাজার চেয়ে একজন পতিতাও ভালো।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৭

সিকান্দার রাজা কোকের বোতল সামনে থেকে সরিয়ে রাতারাতি হিরো বনে গেছেন! কিন্তু তাকে যারা হিরো বানিয়েছেন, তারা কেউ দেখছেন না তিনি কত বড় নেমকহারামি করেছেন। তারা নিজেদেরকে ধার্মিক বলে দাবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×