হরতাল তথ্য:
--------------
**১৯৯১-১৯৯৬: আওয়ামী লীগ হরতাল দেয় ১৭৩ দিন। ।
**১৯৯৬-২০০১: বিএনপি হরতাল দেয় ৫৯ দিন। ।
**২০০১-২০০৭: আওয়ামী লীগ হরতাল দেয় ১৩০ দিন। ।
**২০০৯-২০১৩: বিএনপি হরতাল দেয় ২৫ টার মতো। ।
(সামান্য কিছু প্লাস / মাইনাস হতে পারে)
আজকে শেখ হাসিনা হরতালে বিপক্ষে শক্ত অবস্থান নিলেও প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা এখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের পক্ষে দৃঢ়ভাবে অবস্থান নিলেও এক সময় তিনিই বলেছিলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও বিরোধীদলবিহীন কোনো নির্বাচন জনগণ মেনে নেবে না। নির্বাচনের নামে যে কোনো প্রহসনের নির্বাচন জনগণ প্রতিরোধ করবে। একই সঙ্গে তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় পার্টিকে নিয়ে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন। এই তিন দলের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিল পাস এবং বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেয়ার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাফল্য কামনা করে বলেছিলেন, জনগণের অপরিসীম ত্যাগ ও তিন দলের আন্দোলনের ফলে বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার দাবি মানতে বাধ্য হয়েছে। বাঙালি জাতি আরেকবার প্রমাণ করেছে, জনতার ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামের কাছে কোনো স্বৈরাচারী শক্তিই টিকে থাকতে পারে না। ন্যায় ও সত্যের সংগ্রাম সব সময় জয়ী হয়।
এর আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে ’৯৪, ’৯৫ ও ’৯৬ সালের আন্দোলনে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি এবং জামায়াতে ইসলামী অভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে মোট ৯৬ দিন হরতাল, অবরোধ এবং অসহযোগ কর্মসূচি পালন করে। এর মধ্যে ৭০ দিন হরতাল-অবরোধ এবং ২৬ দিন অসহযোগ। এসব কর্মসূচিতে সকাল-সন্ধ্যা হরতালের পাশাপাশি একটি লাগাতার ৯৬ ঘণ্টা, ২টি ৭২ ঘণ্টা এবং ৫টি ৪৮ ঘণ্টার হরতাল ডাকা হয়।
খেয়াল করে দেখুন শেখ হাসিনার কত বড় দ্বিমুখিতা।
’৯৬ সালের ৩ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আয়োজিত এক জনসভায় বলেছিলেন, প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ভেবেছেন রোজার মাসে হরতাল হবে না। ইচ্ছেমতো ভোট চুরি করে একদলীয় নির্বাচন করিয়ে নেবেন। কিন্তু তিনি জানেন না, রোজার মাসেও যুদ্ধ হয়েছিল।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফতোয়া
আন্দোলনের এক পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে টার্গেট করে হরতালের কর্মসূচি দিয়েছিল আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জামায়াত। এক্ষেত্রে ’৯৬ সালের নির্বাচেন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া যেখানেই নির্বাচনী সফরে গিয়েছিলেন সে জেলাতেই হরতাল ডেকেছিল আওয়ামী লীগ, জামায়াত ও জাতীয় পার্টি। এসব কর্মসূচিতে ব্যাপক ভাংচুর, বোমাবাজি, ককটেল নিক্ষেপ, অগ্নিসংযোগ এবং গোলাগুলির ঘটনা ঘটে এবং সহিংসতায় নিহত হয় অর্ধশতাধিক মানুষ, আহত হয় সহস্রাধিক। ’৯৬ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি দৈনিক সংবাদে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, শুধু ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের দিন হরতাল ও গণকারফিউ কর্মসূচিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষে ১৫ জন নিহত এবং আহত হয় আরও ছয় শতাধিক মানুষ।
অথচ এই বিএনপি আজকে শেখ হাসিনার পটুয়ায়াখালী যাওয়া উপলক্ষ্যে হরতাল থেকে বিরত থাকে। একি ভদ্রতা নাকি সন্মান। যে তোমাকে সন্মান দেয় না তাকে কেন সন্মান দেবে?
স্টাফ রিপোর্টার : মহানগর আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় গতকাল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও বিরোধী দলবিহীন কোনো নির্বাচন জনগণ মেনে নেবে না। নির্বাচনের নামে যে কোনো প্রহসনের নির্বাচন জনগণ প্রতিরোধ করবে। আমি একটি অর্থবহ নির্বাচন চাই।
তিনি বলেন, এক ব্যক্তির ক্ষমতার মোহই দেশকে সংঘাত ও সন্ত্রাসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। ভোটচুরি আমরা বরদাশত করতে পারি না। জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্যই আমরা নিরপেক্ষ নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করছি। এই দাবি মেনে না নিলে যদি দেশে অস্বাভাবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় তবে তার দায়ভার সরকারকেই নিতে হবে। দাবি না মানলে প্রধানমন্ত্রীর যে পরিণতি হবে তার জন্য আওয়ামী লীগ দায়ী থাকবে না। শেখ হাসিনা আজকের অবরোধ কর্মসূচি ও আগামী ৩ ও ৪ জানুয়ারি ৪৮ ঘণ্টার হরতালকে সফল করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, দাবি আদায় না করে ঘরে ফিরবেন না। সবাই মাঠে নেমে পড়ুন, যে কোনো ত্যাগ স্বীকারের জন্য প্রস্তুত থাকুন।...
তিনি বলেন, বিরোধী দলের আন্দোলনের সাথে জড়িত কেউ যদি মোনাফেকি করে সরকারের সাথে নির্বাচনে যায়, তবে তার সম্পর্কে আপনারা যা খুশি তাই ব্যবস্থা নেবেন। ... শেখ হাসিনা বিরোধী দলের দাবি নিয়ে জনগণের কাছে যাবার জন্য দলীয় নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেন এবং বলেন, কেন আমরা তত্ত্বাবধায়ক সরকার চাই, সরকার কিভাবে বিরোধী দলের দাবি নিয়ে ষড়যন্ত্র করছে তা জনগণকে বুঝাতে হবে। মহিলা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ নেতৃবৃন্দকেও জনগণের কাছে যেতে হবে। (দৈনিক ইনকিলাব : ৩০ ডিসেম্বর শনিবার, ১৯৯৫)
এই আমলের দুধের বাচ্চা আর ছাগলের বাচ্চা ছাড়া সবাই জানে ওই সময় ইত্তেফাক আর ইনকিলাব কতখানি জনপ্রিয় ছিল।
২০১০ নভেম্বরে প্রধান বিরোধীদল বিএনপি হরতাল ডাকার পরপরই ব্যবসায়ী মহল আইন করে ‘হরতাল’ বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছিল। কিন্তু একে ‘গণতান্ত্রিক অধিকার আখ্যা’ দিয়ে এ অধিকার হরণ করা যাবে না বলে মন্তব্য করেছিলেন সরকারের এক মন্ত্রী।
হরতালের কারণে এখন বিরোধীদলের যতই সমালোচনা করেন না কেন আগামীতে আবার বিরোধীদলে গেলে তাকেও একই কাজ করতে হবে। এ চিন্তায়ই হয়তো হরতাল বন্ধে কোনো আইন প্রণয়নের পক্ষে নয় বর্তমান সরকার। ২০০১ সালে নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাও হরতাল না দেয়ার প্রতিজ্ঞা করেছিলেন। কিন্তু নির্বাচনে পরাজয়ের পর সেই প্রতিজ্ঞা তিনি আনন্দের সাথে ভঙ্গ করেছেন।
এবার তার শাসনামলেই সরকারি দলের ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগের ডাকেও একটি হরতাল হয়েছে।
সাহস থাকলে কালকে পার্লামেন্টে আইন করে হরতাল বন্ধ করুন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। আমরা আপানার সাথে আছি। জানি পারবেন না। কারন সামনের নির্বাচনের পরই বাসে আগুন দেবার কর্মসূচী নিয়ে নামবে আপনার সোনার ছেলেরা আপনার নির্দেশে।
বিএনপি আজকে হরতাল করছে আপনার স্বৈরাশাষনে অতিষ্ঠ হয়ে। আপনার নির্দেশে পুলিশের গুলিতে ১০০ ওপর মানূষ মারা গেছে তারা কি রাজাকার ছিল?
আরো খুন করার আগে আপানাকে একটু সমযে দেবার জন্য এই হরতাল একটি মাইল ফলক হয়ে থাকবে। পারলে হরতাল নিষীদ্ধ আইন করুন
আরো দেখুন হরতাল নিয়ে কিছু তথ্যঃ
তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠায় আওয়ামী লীগ, জামায়াত ও জাতীয় পার্টির অভিন্ন কর্মসূচি হিসেবে ’৯৪, ’৯৫ ও ’৯৬ সালে ডাকা হরতাল, অবরোধ এবং অসহযোগের কিছু চিত্র—
১৯৯৪ সাল : ২৬ এপ্রিল ( হরতাল), ১০ সেপ্টেম্বর (অবরোধ), ১১, ১২ ও ১৩ সেপ্টেম্বর (হরতাল), ২৭ সেপ্টেম্বর (অবরোধ), ৩০ নভেম্বর (অবরোধ), ৭ ও ৮ ডিসেম্বর (হরতাল), ২৪ ডিসেম্বর (অবরোধ), ২৯ ডিসেম্বর (অবরোধ)।
১৯৯৫ সাল : ২, ৩ ও ৪ জানুয়ারি (হরতাল), ১৯ জানুয়ারি (অবরোধ), ২৪ ও ২৫ জানুয়ারি (হরতাল), ১২ ও ১৩ মার্চ (লাগাতার ৪৮ ঘণ্টা হরতাল), ২৮ মার্চ (ঢাকা অবরোধ), ৯ এপ্রিল (৫ বিভাগে হরতাল), ২ ও ৩ সেপ্টেম্বর (লাগাতার ৩২ ঘণ্টা হরতাল), ৬ সেপ্টেম্বর (সকাল-সন্ধ্যা হরতাল), ১৬, ১৭, ১৮ সেপ্টেম্বর (লাগাতার ৭২ ঘণ্টা হরতাল), ৭ এবং ৮ অক্টোবর (পাঁচ বিভাগে লাগাতার ৩২ ঘণ্টা হরতাল), ১৬, ১৭, ১৮ এবং ১৯ অক্টোবর (লাগাতার ৯৬ ঘণ্টা হরতাল), ৬ নভেম্বর (ঢাকা অবরোধ), ১১, ১২, ১৩, ১৪, ১৫ এবং ১৬ নভেম্বর ( প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যা হরতাল), ৯, ১০ এবং ১১ ডিসেম্বর (লাগাতার ৭২ ঘণ্টা হরতাল), ১৭ ডিসেম্বর (সকাল-সন্ধ্যা হরতাল), ৩০ ডিসেম্বর (দেশব্যাপী অবরোধ)।
১৯৯৬ সাল : ৩ ও ৪ জানুয়ারি (লাগাতার ৪৮ ঘণ্টা হরতাল), ৮ ও ৯ জানুয়ারি (লাগাতার ৪৮ ঘণ্টা হরতাল), ১৭ জানুয়ারি (সকাল-সন্ধ্যা হরতাল), ২৪ জানুয়ারি (সিলেটে ১১ ঘণ্টা হরতাল), ২৭ জানুয়ারি (খুলনায় সকাল-সন্ধ্যা হরতাল), ২৮ জানুয়ারি (খুলনায় অর্ধদিবস হরতাল), ২৯ জানুয়ারি (ঢাকায় সকাল-সন্ধ্যা হরতাল), ৩০ জানুয়ারি (চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল), ১ ফেব্রুয়ারি (বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় হরতাল), ৩ ফেব্রুয়ারি (অর্ধদিবস হরতাল), ৭ ফেব্রুয়ারি ফেনীতে (সকাল ৬টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত হরতাল), ৮ ফেব্রুয়ারি (ফেনীতে হরতাল), ১০ ফেব্রুয়ারি (রাজশাহীতে হরতাল), ১১ ফেব্রুয়ারি (সিরাজগঞ্জে হরতাল), ১৩ ফেব্রুয়ারি (দেশব্যাপী অবরোধ), ১৪ এবং ১৫ ফেব্রুয়ারি (দেশব্যাপী ৪৮ ঘণ্টা লাগাতার হরতাল), ২৪, ২৫, ২৬ ও ২৭ ফেব্রুয়ারি লাগাতার অসহযোগ), ৯ মার্চ থেকে ৩০ মার্চ পর্যন্ত লাগাতার ২২ দিন অসহযোগ।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



