বেগম জিয়ার বর্তমান একটি মন্তব্য নিয়ে আওয়ামীলীগ যে ভাবে মিথ্যাচারে উঠে পরে লেগেছে তাতে মনে হতে পারে বাংলাদেশ আর্মি এই দেশের জন্য অমঙ্গল। কি ছিল বেগম জিয়ার সেই বক্তব্য?
‘সেনাবাহিনীরও দেশের প্রতি কর্তব্য আছে। তারা নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করবে না। মানুষ খুন করবে আর তারা চেয়ে চেয়ে দেখবে? কাজেই সেনাবাহিনী সময়মতোই তাদের দায়িত্ব পালন করবে।’
এই সেই কথা যা নিয়ে আওয়ামী নেতারা দেশে তোলপাড় শুরু করছে। কি এমন খারাপ বক্তব্য?
আচ্ছা এই বক্তব্য আলোচনা করার আগে একটু পেছন ফিরে যাই দেখি কেন আওয়ামীলীগের এই আর্মি ভীতি।
শেখ মুজিব কখনো আর্মি পছন্দ করতেন না এর জন্য তার যৌক্তিক কারন ছিল, ফিল্ড মার্শাল আয়ুব আর জেনারেল ইয়াহিয়া দু’জনের হাতেই বঙ্গবন্ধু চরমভাবে নিগৃত হয়েছেন। আয়ুব পরবর্তী সাড়ে দশ বছর মুজিব নির্জন কারা প্রকোষ্টে কাটিয়েছেন। এই আয়ুবই বঙ্গবন্ধুকে ১৯৬৮ সালে কুখ্যাত আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় মৃত্যু দন্ডপ্রাপ্ত অভিযোগ করে। দেশব্যাপী গন অভ্যুত্থানে সে যাত্রা সে রেহাই পায়।
১৯৭১ সালে পাকিস্তান বন্দী থাকা অবস্থায় এক সামরিক আদালত তাকে দোষী সাবাস্ত করে মৃত্যুদন্ড প্রদান করে।প্রিজন্ সেলের পাশেই কবর খনন করা হল। পরম সৌভাগ্য ঐ রাতেই যুদ্ধ বিরতি ঘোষনা হল।
এ্যান্থনী মাসকারেনহাসের এ লিগাসী অভ ব্লাড থেকে জানা যায় ১৯৭৪ সালে সালের ফেব্রুয়ারী মাসে মুজিব নিজেই তাকে বলে তিনি শক্তিশালী সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে। ‘আমরা পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মত একটা দানব তৈরী করতে চাই না’
মুজিব হয়ত তার ব্যাক্তিগত তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকে বাংলাদেশের সেনাবাহিনীকে কখনো বড় করে দেখেনি।
এই পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৭৩ সালে আরব ইসরাইল যুদ্ধে বাংলাদেশ যখন মিশর কে সাহায্য করে বিমান ভর্তি করে বাংলাদেশের উৎকৃষ্ট মানের চা পাঠিয়ে আনোয়ার সাদাত তার কৃতজ্ঞতা স্বরূপ বাংলাদেশকে ৩০টি টি-৫৪ দিতে চায়। তিনি ট্যাঙ্ক বহর গ্রহন করতে উৎসাহ দেখালেন না।
সেনাবাহিনীর ব্যাপারে তার চিন্তা ভাবনা এ উপহারকে একটা কটাক্ষ বলে মুজিব মনে করেন।
অবশেষে পররাষ্ট্র দপ্তর আর তার মন্ত্রীবর্গ তাকে বুজাতে সক্ষম হল আনোয়ার সাদাতের এই শুভেচ্ছা উপহার কোন অবস্থাতেই ফিরিয়ে দিতে পারেনা।
১৯৭৪ সালে সালের জুলাই মাসে ৩০টি টি-৫৪ ট্যাঙ্ক আর ৪০০ রাউন্ড ট্যাঙ্কের গোলা বাংলাদেশে পৌছায়। ফার্ষ্ট বেঙ্গল ল্যান্সার্স – বাংলাদেশের এক মাত্র সাঁজোয়া রেজিমেন্ট গ্রহন করে ট্যাঙ্কগুলো।
শুধু মুজিব না তৎকালীন অন্যান্য তার সব নেতাই এই সেনাবাহিনী সম্পর্কে ঘৃনা পোষন করতেন। এই সেনাবাহিনী যখন যুদ্ধক্ষেত্রে জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করছে, তখন আওয়ামী নেতারা কলিকাতায় নিরাপদে দিন কাটাচ্ছে। মুজিবের বুজা উচিত ছিল এই সেনাবাহিনী মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে এই দেশ জন্মের পিছনে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছে। এই সেনাবাহিনী অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধাদের ন্যায় ক্ষমতা চায়নি। মুজিবের প্রতি পূর্ন আনুগত্য দেখিয়ে আসছিলো তারপর ও তাদের প্রতি আওয়ামী বিদ্বেষ কোন অংশে কমেনি।
সেনা বাহিনীর ক্ষমতা খর্ব করার জন্য আওয়ামী প্রচেষ্টা স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু থেকেই ছিল। অক্টোবর মাসে অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকারের সাথে ভারতের এক গোপন চুক্তি করে যা সাত দফা নামে চুক্তি নামে পরিচিত। (মাসুদুল হক এর বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ‘র’ এবং সি আই এ পৃঃ ৮১)
কি ছিল সাত দফাঃ
১। যারা সক্রিয়ভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিল তারাই শুধু প্রসাশনিক পদে নিয়োজিত থাকবে। বাকীদের চাকুরী চ্যুত করা হবে এবং সেই শূন্যপদ পূরন করবে ভারতীয় কর্মকর্তারা।
২। বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর প্রয়োজনীয় সংখ্যক ভারতীয় সৈন্য বাংলাদেশে অবস্থান করবে (কতদিন অবস্থান করবে তার সময় সীমা নির্ধারন করা হয়না) ১৯৭২ সালের নবেম্বর মাস থেকে আরম্ভ করে প্রতি বছর এ সম্পর্ক পুনরীক্ষনের জন্য দু দেশের মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে
৩। বাংলাদেশের কোন নিজস্ব সেনা বাহিনী থাকবে না।
৪। অভ্যন্তরীন আইন শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য মুক্তিবাহিনীকে কেন্দ্র করে একটি প্যারামিলিশিয়া বাহিনী গঠন করা হবে
৫। সম্ভাব্য ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে অধিনায়কত্ব দেবে ভারতীয় সেনা বাহিনীর প্রধান, মুক্তিবাহিনীর সর্বাধিনায়ক নন, এবং মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে মুক্তিবাহিনী ভারতীয় বাহিনীর অধিনায়কত্বে থাকবে।
৬। দু দেশের বানিজ্য হবে খোলা বাজার (ওপেন মার্কেট) ভিত্তিক। তবে বানিজ্যর পরিমান হিসাব হবে বছর ওয়ারী আর যার যা পাওনা হবে সেটা ষ্টার্লিং এ পরিশোধ হবে
৭। বিভিন্ন রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সম্পর্কের প্রশ্নে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলবে এবং ভারত যতদূর পারে এ ব্যাপারে বাংলাদেশ কে সহায়তা দেবে।
কি কারনে আওয়ামীলীগ কে ভারতীয় দালাল (ভাদা) বলা হয় এই চুক্তির পর সেটা আর নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না।
এবার আসি বেগম জিয়ার বক্তব্যে
খালেদা জিয়া কি বলেছেন?
‘সেনাবাহিনীরও দেশের প্রতি কর্তব্য আছে। তারা নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করবে না। মানুষ খুন করবে আর তারা চেয়ে চেয়ে দেখবে? কাজেই সেনাবাহিনী সময়মতোই তাদের দায়িত্ব পালন করবে।’
তিনি ধন্যবাদ দিয়েছেলিন, শাহজাহানপুরে সেনা মোতায়েনের পরে সেখানে কোনো গুলিবর্ষণ না করেই তারা শান্তিশৃঙ্খলা ফিরিয়ে এনেছিল। তিনি বলেছিলেন, আমাদের সেনাবাহিনী বিদেশে শান্তিরক্ষায় কাজ করে। দেশে বিশৃঙ্খলা হলে তারা সময়মতো কাজ করবে। আমাদের সেনাবাহিনী জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে বিদেশে শান্তিরক্ষায় কাজ করছে। তাদের দেশে যদি শান্তি না থাকে তাহলে বিদেশিরা বলবে আমাদের সেনাবাহিনী নিজের দেশে শান্তি রক্ষা করতে পারছে না। এসব আজ ভাববার সময় এসেছে।
এ বলার মানে কি সেনাবাহিনীকে দেশের ক্ষমতা দখল করতে বলা? বিনা গুলিতে সেনাবাহিনী যেখানে একটা বিরাট ঝামেলা মিটিয়ে ফেলেছে সেখানে কি সেনাবাহিনী একটা ধন্যবাদ ও আশা করতে পারেনা। নাকি ম খা আলমগীরের মত নির্দেশে দিয়ে ১৭০ জন নিরীহ মানূষ হত্যা করে সেনাবাহিনীর সর্বাধিনায়ক একটা মানবাধিকার পুরুস্কার পাওয়া উচিত ছিল খালেদা জিয়া কি এটাই বলবে?
এখানে উস্কানির কি হল অথচ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেছেন, জনগণ ও গণতন্ত্রের ওপর খালেদা জিয়ার আস্থা নেই। তাই তিনি ক্ষমতায় যেতে বিকল্প পথ খুঁজছেন। তিনি সেনাবাহিনীকে উস্কে দিচ্ছেন। দেশের সাধারণ মানুষ তো তা হতে দেবে না। খালেদা জিয়া যে আগুন নিয়ে খেলছেন তাতে কোনোদিন সফল হতে পারবেন না বলে তিনি হুশিয়ারি দিয়েছেন। আজ সকালে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের দলীয় কার্যালয়ে মহানগর আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
জনাব মাহাবুব অনেক খেলা খেলেছেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কিন্তু হুযুগে মাতাল না । দেশের সেনাবাহিনী নিয়ে মিথ্যাচার করবেন না। সেনাবাহিনী কোন পুতুল খেলা না। এরা বিশ্বস্ত দেশ প্রেমিক।
ওয়ান ইলেভেনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় জিয়া পরিবার। সে কখনো চাইবে না আর একটি ওয়ান ইলেভেন আসুক। কিন্তু সেই জন্য জাতীয় স্বার্থ কে সমুন্নত রাখতে আর কিছু নিরীহ জীবনহানি না হবার জন্য সেনাবাহিনীকে ধন্যবাদ দেবার মানসিকতা খালেদা জিয়ার ই আছে। আর শেখ হাসিনা সরকার সেটাকে নিয়ে সুবিধাবাদী ভূমিকায় অবতীর্ন হতে বিন্দু মাত্র দ্বিধা করে না।
এই আওয়ামীলীগের সময়ই একদিনে ৫৭ জন আর্মি অফিসার হত্যা হয়। সেই সময় কিছু আওয়ামী নেতাদের নিয়ে বিভিন্ন কানাঘুষা চলে, তার কোন জবাব আজো পাওয়া যায়নি। কেন? পৃথিবীর ইতিহাসে একদিনে ৫৭ জন আর্মি অফিসার কোথাও খুন হয়নি যেটা হয়েছে আওয়ামী আমলে।
সরকারের এখন বেসামাল অবস্থা অভ্যান্তরীন আর আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে যার ফল শ্রুতিতে ৫৫টি মুসলিম দেশের কয়টি রাষ্ট্র প্রেসিডেন্টের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছে আমরা জানতে চাই।
আমার ব্লগে আমি কাউকে ব্লক করিনা যদিনা সে অশ্লীল ভাষা প্রয়োগ করে। আমিশুধু দুটো নিরীহ প্রশ্ন করেছিলাম আর একটু আলোচনা করেছিলাম স্ব ঘোষিত বিএনপি বিদ্বেষকারী জনাব দায়িত্ববান নাগরিক এবং জনাব দিকভ্রান্ত পথিক এর দুটো পোষ্টে এতে উনারা আমাকে ব্লক করে দিয়েছে। আমি উনাদের দাওয়াত দিলাম পারলে আমার ব্লগে এসে যেন আমাকে প্রশ্ন করে। ভিন্নমত থাকবেই সেটা আলোচনায় বেরিয়ে আসবে। সেটা যেন কেঊ ব্যাক্তিগত বিদ্বেষের কারন না হয়।
আমার দোস্ত হাসান বালবৈশাখী আওয়ামী বিশেষ অজ্ঞ কে আমি আমন্ত্রন জানাচ্ছি কিছু জ্ঞানগর্ভ বক্তব্যর জন্য। যদিও উনি বলেন আমি নাকি ইবলিশ। নাউযুবিল্লাহ। আমার শয়তানি সব নষ্ট রাজনীতির বিরুদ্ধে।
একটা ব্যাপারে আমি পরিস্কার বলতে চাই এইদেশে রাজাকারের বিচার আমরা সবাই চাই। কিন্তু সেই বিচারকে যেভাবে দলীয়ভাবে নিয়ে বিএনপি আর জামাতকে এক করে ফেলার পায়তারা নোংরা আওয়ামী মানসিকতা করে ছিল তার দায়ভার আওয়ামীলীগ কেই করতে হবে। সাধারন মানুষের চেতনাকে নোংরাভাবে ব্যাবহার করার ইতিহাস একমাত্র আওয়ামীলীগেরই আছে। যার জ্বলন্ত প্রমান শাহবাগের পবিত্র আন্দোলন। যাকে নোংরা ভাবে দলীয়করন করে পুরো আন্দোলন ধবংস করা।
মনে রাখবেন জামাত আর বিএনপি একনা।
সত্য উন্মোচিত হোক।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ১২:৪৮