somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এই লেখা শুরু হল এক মহান জামাতের নেতার পরিচয় উল্লেখ্য করে। ইতিহাসের ভুলে যাওয়া কথা

২৯ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ৯:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
দেখুন ছবি

তৎকালীন নেতৃবৃন্দের আশ্বাস রাজাকারদের বিচারের ব্যাপারে।

সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা : শেখ মুজিবের প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ


১০ জানুয়ারী পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে ঢাকায় ফিরে আসন শেখ মুজিবুর রহমান। ওই দিন রমনা রেসকোর্স ময়দানে ক্রন্দনরত অবস্থায় শেখ মুজিব বলেন, ‘বিশ্বকে মানবেতিহাসের এই জঘন্যতম হত্যাকান্ডের তদন্ত অবশ্যই করতে হবে। একটি নিরপেক্ষ আন্তর্জাতিক দল এই বর্বরতার তদন্ত করুক এই আমার কামনা।’ (দৈনিক বাংলা, ১১/১/৭২)

এরপর থেকে তিনি বিভিন্ন সভায়, সাংবাদিকদের সাথে আলোচনা কালে কিংবা দেশী-বিদেশী অন্যান্য প্রচার মাধ্যমে সাক্ষাত্কারে গণহত্যার নিন্দা করে বাংলার মাটিতে দালালদের অবশ্যই বিচার করা হবে বলে বক্তব্য রাখেন।

১০ জানুয়ারীর জনসভাতেই তিনি বলেন, ‘যারা দাকলালী করেছে, আমার শত শত দেশবাসীকে হত্যা করেছে , মা বোনকে বেইজ্জতি করেছে, তাদের কি করে ক্ষমা করা যায়? তাদের কোন অবস্থাতেই ক্ষমা করা হবে না, বিচার করে তাদের অবশ্যই শাস্তি দেয়া হবে।’ এ জন্য দায়িত্ব সরকারের হাতে ছেড়ে দেয়ার আবেদন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা দেখিয়ে দিতে চাই শান্তিপ্রিয় বাঙালীরা স্বাধীনতার জন্য রক্ত দিতে জানে, তেমনি শান্তি বজায় রাখতেও জানে।’

১২ জানুয়ারী প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শপথ গ্রহণ করার পর শেখ মুজিব গণহত্যাকারীদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেয়া যাবে না বলে দৃঢ়মত প্রকাশ করে বলেন, ‘লোমহর্ষক হত্যাকান্ডের কাহিনী আমারা শুনেছি, তবু বাংলার মানুষ এত নীচে নামবে না, বরং যা মানবিক তাই করবে, তবে অপরাধীদের আইনানুযায়ী অবশ্যই বিচার হবে।’ (দৈনিক বাংলা, ১৩/১/৭২)

১৪ জানুয়ারী আওয়ামী লীগ অফিসে তিনি আওয়ামী লীগ কর্মীদের প্রতিশোধ গ্রহণের পথ পরিহার করার জন্য বিশেষভাবে সতর্ক করে দিয়ে বলেন, ‘দালালদেরকে অবশ্যই দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া হবে।’ (পূর্বদেশ, ১৫/১/৭২)

৬ ফেব্রুয়ারী কলকাতার ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে দশ লক্ষ লোকের বৃহত্তম জন সমাবেশকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘যারা গণহত্যা চালিয়েছে তারা সমগ্র মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ করেছে, এদর ক্ষমা করলে ইতিহাস আমাকে ক্ষমা করবে না।’ (দৈনিক বাংলা, ৭/২/৭২)

ঢাকায় ২১ ফেব্রুয়ারী জনসভায় তিনি বলেন, ‘বাংলার মাটিতেই খুনীদের বিচার হবে।’(দৈনিক বাংলা ২৩/২/৭২)

৩০ মার্চ চট্টগ্রামের জনসভায় গণহত্যাকারীদের ‘নমরুদ’ বলে আখ্যায়িত করে তিনি প্রশ্ন করেন দালালদের ক্ষমা করা হবে কি না, সমবেত জনতা হাত তুলে বলে ‘না,’ ‘না।’ (পূর্বদেশ, ৩১/৩/৭২)

৩১ মার্চ খুলনার জনসভায় শেখ মুজিব বলেন, ‘বর্বর হানাদার বাহিনীর সাথে স্থানীয় সহযোগী রাজাকার, আলবদর, জামাত প্রভৃতি যোগ দেয়। তারা জনগণের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। যদি কেউ দালালদের জন্য সুপারিশ করতে আসে তবে তাকেই দালাল সাব্যস্ত করা হবে, দালালদের কখনোই ক্ষমা করে দেয়া হবে না।’ (পূর্বদেশ, ১/৪/৭২)

২৬ এপ্রিল তিনি দিল্লী স্টেটসম্যান পত্রিকার সাংবাদিক কুলদীপ নায়ারের সঙ্গে সাক্ষাত্কারে বলেন, ‘যারা গণহত্যা করেছে তাদের এর পরিণতি থেকে রেহাই দেয়া যায় না। এরা আমার ত্রিশ লাখ লোককে হত্যা করেছে। এদের ক্ষমা করলে ভবিষ্যত্ বংশধরগণ এবং বিশ্ব সমাজ আমাদের ক্ষমা করবেন না।’ (দৈনিক বাংলা, ৩০/৪/৭২)

৬ মে আমেরিকান ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশনের (এবিসি) সাথে এক টেলিভিশন সাক্ষাত্কারে শেখ মুজিব যুদ্ধাপরাধীদের প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমি অবশ্যই তাদের বিচার করব, এ ব্যাপারে বিতর্কের কোন অবকাশ নেই। যেখানে তারা ত্রিশ লাখ লোককে হত্যা করেছে সেখানে কোন দেশ কি তাদের ছেড়ে দিতে পারে? এই সাক্ষত্কারেই দালালদের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দালালদের কেসগুলো একটি তদন্ত কমিশন কর্তৃক বিবেচিত হবে। আমরা তদন্ত করছি এবং নির্দোষ লোকদের ছেড়ে দিচ্ছি, অবশ্য যারা অপরাধ সংগঠনের জন্য দায়ী নিশ্চিতভাবেই তাদেরকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হবে।’ (আজাদ, ১৫/৫/৭২)

১৯৭৩ সালের ৩০ নভেম্বর একটি আকস্মিক সরকারী ঘোষণায় দালাল আইনে সাজাপ্রাপ্ত এবং বিচারাধীন সকল আটক ও সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তির প্রতি সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করা হয়। ইতিপূর্বেকার সমস্ত প্রতিশ্রুতি, জনসভায় ক্রন্দন, মানব সমাজ ও ইতিহাসের কাছে দায়ী থাকার ভীতি প্রকাশ করে দেয়া বক্তব্য প্রতিজ্ঞা ইত্যাদি বিস্মৃত হয়ে শেখ মুজিবর রহমান ব্যক্তিগতভাবে বিশেষ নির্দেশ দেন যেন এক সপ্তাহের মধ্যে সমস্ত দালালকে ছেড়ে দেয়া হয়, যাতে তারা দেশের তৃতীয় বিজয় দিবস পালনের উত্সবে শরীক হতে পারে। প্রধানমন্ত্রী এই দালালদের দেশ গড়ার কাজে সামিল হওয়ার জন্য আহ্বান জানান।

সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার এক সপ্তাহের মধ্যেই মালেক মন্ত্রীসভার সদস্যবর্গ কেন্দ্রীয় শান্তি কমিটি এবং শান্তি ও কল্যাণ পরিষদের নেতৃবৃন্দ এবং বুদ্ধিজীবী হত্যার চক্রান্তকারী দালালসহ মূল স্বাধীনতা বিরোধীরা জেল থেকে বেরিয়ে আসে।


এভাবেই মানবেতিহাসের জঘন্যতম হত্যাকান্ড পরিচালনাকারী উম্মাদদের আবার স্বজন হারানো জনতার মাঝে ছেড়ে দেয়া হয়। এই সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পরও সরকারী গেজেটে আত্মগোপনকারী দালালদের নাম ঠিকানাসহ আদালতে আত্মসমর্পণ করার নির্দেশ এবং অন্যথায় সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার হুঁশিয়ারী জানিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জারী করা সমন প্রকাশিত হতে থাকে, কারণ ইতিমধ্যেই তা মুদ্রিত হয়ে গিয়েছিল।


একাত্তরের ঘাতক ও দালালদের কেন ক্ষমা করা হল এ নিয়ে আওয়ামী লীগ মহল ও বিরোধী মহলের ধারণা সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী। আওয়ামী লীগের আবেগাক্রান্তরা মনে করেন দালালদের ক্ষমা করাটা ছিল ‘বঙ্গবন্ধুর মহনুভবতা’, দালালদের পুনর্বাসনের জন্য তাঁকে কোন ভাবেই দায়ী করা যাবে না। অপেক্ষাকৃত যুক্তিবাদীদের বক্তব্য—পাকিস্তানে আটকে পড়া বাঙ্গালীদের উদ্ধার করার জন্য নাকি দালালদের ক্ষমা করতে তিনি বাধ্য হয়েছিলেন।

বিরোধী পক্ষ অবশ্য এ যুক্তি খন্ডন করে বলেছেন, আটকে পড়া বাঙ্গালীদের মুক্তির জন্য ৯৬ হাজার যুদ্ধবন্দী পাক বাহিনী যথেষ্ট ছিল। বিরোধী পক্ষের কেউ এভাবেও মুল্যায়ন করেছেন—‘........আওয়ামী লীগের মধ্যে সামগ্রিকভাবে যদি সাম্প্রদায়িক, ভারত ও সোভিয়েত বিরোধী ও মার্কিনপন্তী শক্তি সমূহের বৃদ্ধি না হতো তাহলে এই ক্ষমা প্রদর্শন আওয়ামী লীগ সরকারের দ্বারা সম্ভব হতো না। এই পরিবর্তন যদি না ঘটতো তাহলে ১৯৭১ সালের ডিসেম্বর এবং ১৯৭২ সালের প্রথমে যাদেরকে বাংলাদেশের ‘জাতশত্রু’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিলো, সেই জাতশত্রুদেরকে দেশগড়ার কাজে আহ্বান জানানো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর দ্বারা কিছুতেই সম্ভব হতো না।’ (বদরউদ্দিন উমর : যুদ্ধোত্তর বালাদেশ, পৃ:১১৯। প্রথম প্রকাশ : ঢাকা, মার্চ ১৯৭৫)


এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই, ব্যক্তিগতভাবে শেখ মুজিবর রহমান দালালদের ক্ষমা করার ক্ষেত্রে মহনুভবতা দেখাতে পেরেছেন শ্রেণীস্বার্থ অভিন্ন বলে। ’৭১ এর এই নৃশংস ঘাতকদের সঙ্গে এক যুগ পরেও আওয়ামী লীগের সৌহার্দ্যমূলক সম্পর্কের অবনতি যে ঘটেনি গত কয়েক বছরে তাদের কার্যকলাপই সেটা প্রমাণ করেছে। সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করার নামে আওয়ামী লীগ জামাতে ইসলামের মতো ঘাতকদের দলকে শুধু রাজনৈতক মর্যাদাই প্রদান করে নি, জামাতের নতুন করে শক্তিবৃদ্ধির পথও প্রশস্ত করেছে।


সাধারণ ক্ষমা প্রসঙ্গে শহীদ পরিবারবর্গ


’৭১-এর স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও বুদ্ধিজীবীদের মাতা, পিতা, স্ত্রী, ও পুত্ররা শেখ মুজিবুর রহমানের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণাকে কিভাবে দেখেন ঢাকার একটি সাপ্তাহিকে পরবর্তীকালে এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।


স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদ তরুণ মুক্তিযোদ্ধা রুমির মা লেখিকা জাহানারা ইমাম বলেছেন, ‘গণহত্যা, বুদ্ধিজীবী হত্যায় যাদের ভূমিকা সস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়েছিল, স্বাধীনতার পর পরই তাঁদের ফাঁসি হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু সাধারণ ক্ষমার জন্য তা হয় নি। তত্কালীন সরকারের সাধারণ ক্ষমার সিদ্ধান্ত ছিল মারাত্মক একটি ভুল। সেদিন ক্ষমা ঘোষণা না করা হলে ঘাতকরা নিজেদের সমাজে পুনর্বাসিত করার সুযোগ পেত না।.......


‘প্রখ্যাত সাংবাদিক শহীদ শহীদুল্লাহ কায়সারের স্ত্রী পান্না কায়সার বলেন, বর্তমানে রাজাকার, আল বদরদের যে দৌরাত্ম্য বৃদ্ধি পেয়েছে তা শেখ মুজিবের সাধারণ ক্ষমারই ফল। ওই ক্ষমা ছিল বিচার-বুদ্ধি হীন। সেদিন সরকার যদি ঘাতকদের বিচার করে সাজা দিত, তাহলে আজ এ অবস্থা হত না।


পান্না কায়সার বলেন, আওয়ামী লীগের প্রথম সারির কোন নেতা যুদ্ধে আপনজন হারান নি। ফলে স্বজন হারানোর ব্যথা তাদের জানা ছিল না। ঘাতকদের তারা সহজেই ক্ষমা করে দিতে পেরেছিলেন। তাই আজ খালেকের মত ঘাতকরা বুক ফুলিয়ে সমাজে ঘুরে বেড়াচ্ছে এবং নতুন হত্যার ইন্ধন যোগাচ্ছে। আমার মেয়ে যখন ঘাতক খালেকের বই পড়ে নানা প্রশ্ন করে, আমি উত্তর দিতে পারি না।...


‘দেশ স্বাধীন হবার একদিন আগে, ১৫ ডিসেম্বর আলবদর, রাজাকাররা এক পরিবারের তিন সহোদর ভাইকে ধরে নিয়ে হত্যা করে। পরদিন ১৬ ডিসেম্বর, যুদ্ধের চূড়ান্ত বিজয়ের দিনে রায়ের বাজার বধ্যবূমিতে তিন ভাইয়ের লাশ পাওয়া যায়। এই তিন ভাই হচ্ছেন শহীদ বদিউজ্জামান বদি, শহীদ শাহজাহান ও শহীদ করিমুজ্জামান ওরফে মল্লুক জাহান।


‘তিন শহীদ ভাইয়ের পিতা-মাতা অনেক আগেই মারা গেছেন। এখন শুধু শহীদ বদি’র বিধবা স্ত্রী ও চার ছেলেমেয়ে বেঁচে আছে। অপর দু’ভাই অবিবাহিত ছিলেন। বর্তমানে শহীদ বদি পরিবাদেরর সার্বিক দেখা শোনা করেন তাদের ফুপাতো ভাই মুক্তিযোদ্ধা শামসুল হুদা। তিনি ২ নম্বর সেক্টরে মেজর হায়দারের অধীনে যুদ্ধ করেছেন।


‘শহীদ বদি পরিবাবেরর মুখপাত্র হয়ে মুক্তিযোদ্ধা শামসুল হুদা আওয়ামী লীগ সরকারের সাধারণ ক্ষমা সম্পর্কে বলেন, রাষ্ট্র প্রধান যে কাউকে ক্ষমা করে দিতে পারেন। কিন্তু যারা লাখ লাখ স্বাধীনতাকামী লোককে হত্যা করেছিল তাদের ক্ষমা করে দেয়া অমার্জনীয় অপরাধ ছিল। ছিল একটি চরম ভুল সিদ্ধান্ত। তিনি বলেন, শুধু ক্ষমা নয়, ঐসরকার শহীদ পরিবারগুলোর প্রতি ন্যূনতম কৃতজ্ঞতাও প্রদর্শন করেনি।


‘সাধারণ ক্ষমার কারণে ৭১-এর ঘাতকরা আবার সক্রিয় হয়ে উঠেছে—এ কথা উল্লেখ করে শামসুল হুদা বলেন, এই দেশ যদি সত্যি স্বাধীন হেয়ে থাকে, তাহলে এই স্বাধীন দেশে ঘাতকদের রাজনীতি করার অধিকার বন্ধ করে দিতে হবে।


‘দশম শ্রেণীর ছাত্র শহীদ বদির পুত্র তুরানুজ্জামানের কাছে স্বাধীনতা যুদ্ধ, আল বদরদের হত্যাকান্ড সবই একটি ধোঁয়াটে ব্যাপার। কিছুটা বিভ্রান্তও সে। তবে ১৬ বছরের তুরান এ কথা বলেন যে, আমার পিতার হত্যাকারীদের বিচার না হওয়ায় আমি স্তব্ধ।


‘ঢাক বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিক্যাল অফিসার ও প্রগতিশীল আন্দোলণের অন্যতম সৈনিক শহীদ ডাঃ মর্তুজার স্ত্রী মিসেস মর্তুজা বলেন, যাদের প্রাণ গেছে , তাদের আত্মীয়- স্বজনরাই বুঝতে পেরেছেন, শেখ মুজিবের সাধারণ ক্ষমার মর্মান্তিক মর্ম।


‘স্বাধীনতাযুদ্ধের প্রারম্ভে হানাদার বাহিনীর দোসরদের হাতে নিহত, ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙারোর একুশে ফেব্রুয়ারী’ গানের অমর সুরকার শহীদ আলতাফ মাহমুদের স্ত্রী সারা মাহমুদ বলেন, সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা কোন ভাবেই উচিত হয় নি। সেদিন সাধারণ ক্ষমা না করা হলে, অন্তত: আমার স্বামীকে হত্যা করে কোথায় দাফন করা হয়েছিল তা জানতে পারতাম। কিন্তু সাধারণ ক্ষমার ফলে আমার স্বামীর বধ্য ভূমির ঠিকানা পাই নি।


‘তিনি বলেন, ঘাতকদের অনেকেকে আমরা চিনি। সেদিন যদি তাদের ফাঁসি দেয়া হতো তাহলেও কিছুটা শান্তি পেতাম । অন্তত: বুঝতাম যে, হত্যাকারীদের বিচার হয়েছে। তবে আখনও তাদের শাস্তি দেয়া যায়। আমি আশা করবো সরকার এটা বিচনা করবেন। মিসেস সারা মাহমুদ ঘাতকদের বর্তমান তত্পরতা সম্পর্কে বলেন, ’৭১ সালে পাকিস্তানী সৈন্যদের সঙ্গে মিলে যারা একের প এক হত্যাকান্ড চালিয়েছে, তারাই আজ সমাজে প্রতিষ্ঠিত হয়ে একইভাবেব কাজ করছে। আর এটা ঐ সাধারণ ক্ষমারই ফল।


‘শহীদ অধ্যাপক মোফাজ্জণ হায়দার চৌধুরীর স্ত্রী মিসেস মনোয়োরা চৌধুরী বলেন, ঘাতকদের সাধারণ ক্ষমা করা হবে তা আমরা ভাবরতই পারিনি। কিন্তু সরকার সাধারণ ক্ষমা করে দিলেন। আমরা ভেবেছিলাম শেখ মুজিবুর বহমান ঢাকায় এসে ঘাতকদের বিচার করবেন। কিন্তু তিনি তা করলেন না। শেখ মুজিব তো ব্যক্তিগতভাবেও আমদের চিনতেন। সে চেনা-জানাটুকুও কাজে লাগালো না।


‘স্বাধীনতাযুদ্ধের শুরুতে নিহত জ্যোতির্ময় গুহ ঠকুরতার বিধবা স্তী বাসন্তী গুহ ঠকারতা সাধারণ ক্ষমা সম্পর্কে বলতে গিয়ে প্রথমেই প্রশ্ন তোলেন যে, ১শ’ ৯৫ জন যুদ্ধ অপরাধী পাক সামরিক অফিসারদের কোন বিচার হলো না? শেখ মুজিব তো বহুবার বললেন, যুদ্ধ অপরাধী পাক সামরিক অফিসারদের বিচার করবেন। কিন্তু পারলেন না। আবার তিনি এ দেশীয় ঘাতকদেরও ক্ষমা করে দিলেন। আর এই ক্ষমাটাই সবকিছু এলোমেলো করে দিলো। সেদিন যদি ক্ষমা না করে অন্তত: দু’একজন ঘাতকেরও যদি সাজা হতো তাহলে অনেক শহীদ পরিবারই শান্তি পেতেন। তাছাড়া ঘাতকরাও আজ আর মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারতো না।


‘শহীদ অধ্যাপক সিরাজুল হকের স্ত্রী বেগম সুরাইয়া খানম বলেন, ঘাতকদের আমরা তো ক্ষমা করিনি। ক্ষমা করেছে সরকার। আমরা ন্যায় বিচার প্রত্যাশা করেছিলাম। কিন্তু তা পাইনি। এতে বছর পরে বিচার চাইবোই বা কার কাছে?’


‘শহীদ অধ্যাপক মোহাম্মদ সাদেকের স্ত্রী শামসুন্নাহার হতাশায়, ভয়ে কাতর। তিনি গভীর উদ্বেগ নিয়ে মেখ মুজিবের সাধারণ ক্ষমা সম্পর্কে বলেন, যাদের ক্ষমা করা হয়েছে তাদেরকে আমরা ঘৃণার চোখে দেখি। সেই ক্ষমার জোরে আজ সেই সব দালাল রাজাকাররা এখন আমাদের বাড়ি থেকে উত্খাতের চেষ্টা করছে।


‘তিনি বলেন, সাধারণ ক্ষমা একটা গুরুতর অপরাধ ছিল। সে সব ঘাতককে আমরা সবাই চিনি এবং জানি। তারা আমাদের চারপাশেই আছে। কিন্তু আমাদের করার কিছুই নাই।


‘এদেশের সংবাদপত্র জগতের উজ্জল ব্যক্তিত্ব এবং দৈনিক ইত্তেফাকের ‘মঞ্চ নেপথ্য’ কলামের লেখক সিরাজউদ্দিন হোসেনের জ্যৈষ্ঠ পুত্র শাহীন রেজা বলেন, শুধু সাধারণ ক্ষমা নয়, এর আগে বিচারের নামে প্রহসন করা হয়েছিল। হত্যার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের সুকৌশলে রেহাই দেয়া হয়। অথচ যাদের বিরুদ্ধে হত্যাকান্ডের কোন প্রমাণ ছিলনা তাদেরকে জেলে ঢোকানো হয়। এছাড়াও যারা হত্যার মূল পরিকল্পনা করেছিল তারাও অদৃশ্য হাতের ছোঁয়ায় সকল দায়-দায়িত্ব থেকে মুক্ত হয়ে যায়। এরকম প্রহসনমূলক বিচারর পর আবার আসলো সাধারণ ক্ষমা।


‘শাহীন রেজা বলেন, এ ধরনের হত্যাকান্ড পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। এর সাথে একমাত্র তুলনা হয় জার্মান একনায়ক হিটলারের ‘কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পের হত্যাকান্ডের। অথচ তত্কালীন সরকার জঘন্য হত্যাকারীদের ক্ষমা করে দিলেন। এটা অত্যন্ত গর্তিত কাজ হয়েছিল। আর এই সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে তত্কালীন সরকারের অদুরদর্শিতাই প্রমাণিত হয়েছিল।


তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার হত্যাকারীদের ক্ষমা করে দিয়েছিল বলেই আজ তারা সমাজ ও রাজরীতিতে পুনর্ববাসিত হয়েছে।


‘ইউনিট কমান্ডার শহীদ শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহের বাকির বৃদ্ধ পিতা শেখ মোহাম্মদ আবদুল বারী বলেন, শহীদদের রক্তের দাগ শুকাতে না শুকাতে আওয়ামী লীগ সরকার ’৭১-এর ঘতকদের ক্ষমা করে দিল। এই ক্ষমা ছিল এক অদ্ভুত খেয়ালীপনা। পৃথিবীতে এমন ঘটনা নজিরবিহীন। খুনীদের ক্ষমা করে দিয়ে যে অবস্থার সৃষ্টি করা হয়েছে তা মেনে নেয়া যায় না। তিনি বলেন, এটা অত্যন্ত সাধারণ বিষয় যে, যারা হত্যা করে, তাদের বিচার হওয়া উচিত। কিন্তু তা হয়নি। আর এই না হওয়াটা অমার্জনীয় অপরাধ হয়েছে।’(বিচিত্রা:স্বাধীনতা দিবস ’৮৭ বিশেষ সংখ্যা, পৃ: ২৮-৩৩)

পুনর্বাসনের সাধারণ পটভূমি


১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ মধ্যরাত্রিতে পাকিস্তানী সামরিক বাহিনী বাংলাদেশের সর্বত্র মানবেতিহাসের জঘন্যতম হত্যাকান্ডের সূচনা করে। নিরপরাধ নিরস্ত্র জনগনের উপর বর্বর বাহিনী আধুনিক সমরাস্ত্র নিয়ে ঝাপিয়ে পড়ে। তাদের সাথে যোগ দেয় বিহারীদের একটি বড় অংশ এবং এদেশে জন্মগ্রহণকারী কিছু বিশ্বাসঘাতক দালাল।


এই হত্যাকান্ডের খবর যাতে বিশ্ববাসী জানতে না পারে, তার জন্য পাক সরকার সর্বাত্মক প্রচেস্টা চালায়। সে সময় এখানে অবস্থানরত বিদেশী সাংবাদিকদের সামরিক প্রহরাধীনে বিমান বন্দরে এনে দেশ থেকে বের করে দেয়া হয়। যাবার আগে তাঁদের কাছ থেকে প্রায় সমস্ত নোট ও ফিল্ম ছিনিয়ে নেয়া হয়। এরপর থেকে বহির্বিশ্বে সংবাদ প্রেরণ এবং বিদেশী সাংবাদিকদের এদেশে আসার উপর কড়া সেন্সরশীপ আরোপসহ বিশ্ববাসীর কাছে গোপন করার জন্য সমস্ত প্রচেষ্টা চালানো হয়।


কিন্তু হত্যাযজ্ঞে এতই ব্যাপক ও ভয়াবহ ছিল যে তা চেপে রাখা অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। যে সমস্ত বিদেশী সাংবাদিক আত্মগোপন করে বা অন্য কোন উপায়ে দেশের ভেতরে থেকে যেতে পেরেছিলেন তাঁরা এই হত্যাযজ্ঞের বিস্তৃত বর্ণনা দিয়ে মর্মস্পর্শী প্রতিবেদন লিখতে থাকেন। এছাড়া সাংবাদিকসহ অন্যান্য য়ে সমস্ত আন্তর্জাতিক প্রতিনিধি দলকে খুনি চক্র ‘প্রদেশের অবস্থা স্বাভাবিক’ বলে দেখাবার জন্য নিয়ে এসেছিল, তাঁরাও হত্যাযজ্ঞের ভয়াভহতা চাক্ষুষ দেখে এ সম্পর্কে বিভিন্ন প্রতিবেদন লিখেছিলেন। এ সমস্ত প্রতিবেদনের দু একটির অংশবিশেষ উদ্ধৃত করলেই বোঝা যাবে এই হত্যাযজ্ঞ কত ভয়াবহ ছিল। নিউজ উইক পত্রিকায় ২০ জুন সাংবাদিক ক্লিফটন লিখেছিলেন, ‘আমার কোন সন্দেহ নাই য়ে, পূর্ব পাকিস্তানের শত শত জায়গায় মাই লাই ও লিডিসের ঘটনা ঘটেছে- এবং আরো ঘটবে বলেই আমার ধারণা। দ্বিতীয় মাহাযুদ্ধে পদকপ্রাপ্ত জনৈক অফিসার গ্যালাঘার আমাকে বলেছেন, -‘আমি ফ্রান্সে যুদ্ধের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা– নরম্যান্ডির হনন কেন্দ্র দেখেছি- কিন্তু এগুলোর কাছে সে কিছুই নয়। কান্না চেপে আত্মসম্বরণ করতে আমাকে অনেক বেগ পেতে হয়েছিল।’(১)


আই, পি, এম কারগিলের নেতৃত্বাধীন বিশ্ব ব্যাংক প্রতিনিধিদলের অন্যতাম সদস্য হেনডিক ভ্যানডার হেজিডেন হত্যাকান্ডের স্বরূপ প্রকাশের জন্য কুষ্টিয়া শহরের বর্ণনা দিয়ে তাঁর আনুষ্ঠানিক রিপোর্টে লেখেন, ‘শহরটিকে দেখাচ্ছিল দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে মিত্র বাহিনীর বোমার আঘাতে বিধ্বস্ত জার্মান শহরগুলোর মত। শহরের ৯০ ভাগ বাড়ি, দোকান, ব্যাংক পুরোপুরি ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। আমরা যখন ঘুরছিলাম সবাই তখন পালাচ্ছিল। অবস্থাটা ছিল পারমাণবিক হামলার পরদিনের সকালের মত।’(২)


এই ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞের বিবরণ জানতে পেরে সারা বিশ্বের সচেতন মানুষ প্রতিবাদমুখর হয়ে উঠেন। বিশ্বের বিভিন্ন নেতা গণহত্যার নিন্দা করে বক্তব্য রাখেন। এই প্রতিবাদের প্রকৃতি অনুধাবন করা যাবে জাতিসংঘের তত্কালীন মহাসচিব উথান্টের বক্তব্য থেকে। তিনি এই হত্যাকান্ডকে ‘ইতিহাসের অন্যতম করুণ ঘটনা এবং মানব ইতিহাসের অতি কলংকজনক অধ্যায়’ বলে আখ্যায়িত করেন।(৩)


১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১। ইতিহাসের জঘন্যতাম হত্যাযজ্ঞে ক্ষরিত এক সমুদ্র রক্তে স্নাত হয়ে জন্ম হল স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের। মুক্তির আনন্দে উদ্বেল হল জনতা।


কিন্তু এই আনন্দ ম্লান হয়ে যায় বিজয় লাভের মুহূর্ত থেকেই। ১৬ ডিসেম্বর থেকে এক সপ্তাহের মধ্যেই সারাদেশে অনুন্য পাঁচ হাজার বধ্যভূমি ও গণকবর আবিষ্কৃত হয়। পরবর্তী দু’মাস ধরে চলতে থাকে গণকবর আবিষ্কারের এই ধারা। অবস্থা এমন দাঁড়ায় যে দেশের প্রত্যেক ইউনিয়নে গড়ে অন্ততঃ একটি গণকবর আবিষ্কৃত হয়।


সারাদেশে আবষ্কৃত বধ্যভূমিতে অসংখ্য বিকৃত লাশের সংবাদ পেয়ে সমস্ত বিশ্ব স্তম্ভিত হয়ে পড়ে। সমগ্র মানবতার বিরূদ্ধে এই অপরাধের প্রতিবাদ জানিয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে আসতে থাকে শোকবার্তা। জাতিসংঘে গণহত্যার নিন্দা করে প্রস্তাব গ্রহণের উদ্যোগ নেয়া হয়। কায়রোতে আফ্রো-এশীয় গণসংস্থার সম্মেলনে বাংলাদেশে সুপরিকল্পিতভাবে নৃশংস হত্যাকান্ড সংঘটিত করার জন্য নিন্দা প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। মাদার তেরেসার নেতৃত্বাধীন ‘ক্রিসটাস’ সংস্থা থেকে বাংলাদেশের গণহত্যা ও নারী নির্যাতনের নিন্দা করে নির্যাতিতাদের সহায়তার জন্য মাদার তেরেসাকে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।


বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে মানবতাবাদী নেতৃবৃন্দ ও বুদ্ধিজীবীরা বাংলাদেশে আসেন। বিভিন্ন বধ্যভূমিতে অকল্পনীয় নির্যাতনের চিন্হসহ অজস্র বিকৃত মৃতদেহ এবং হাড়-কঙ্কালের স্তুপ চাক্ষুষ দেখে তাঁরা স্তম্ভিত হয়ে যান। আন্তর্জাতিক রেডক্রস, প্রতিনিধিদল এসেছিলেন মূলতঃ যুদ্ধবন্দী এবং তাদের দেশীয় দোসরদের বিচারের বিষয়ে প্রভাবান্বিত করার জন্য। কিন্তু দেশজুড়ে অসংখ্য বধ্যভূমিতে হত্যাকান্ডের ভয়াবহতা দেখে তাঁরা নিজেরাই এদের বিরুদ্ধে বিক্ষুদ্ধ হয়ে উঠেন।


বিশ্ব শান্তি পরিষদ প্রতিনিধি দলের নেত্রী মাদাম ইসাবেলা ব্লুম ২০/১/৭২ তারিখে সাংবাদিকদের বলেন, ‘শিয়ালবাড়ি বধ্যভূমিতে বাঙ্গালী হত্যাযজ্ঞের যে লোমহর্ষক নৃশংসতার স্বাক্ষর আমি দেখেছি তাতে আমি শোকাভিভূত ও সন্ত্রস্ত হয়ে গেছি। এই হত্যাকান্ড নাত্সী গ্যাস চেম্বারের হত্যাযজ্ঞের চেয়েও অনেক বিভত্স।’ তিনি দেশে ফিরে গিয়ে পরিষদের সভাপতির কাছ এই গণহত্যার জন্য আন্তর্জাতিক তদন্ত কমিশন গঠনের দাবী জানাবেন বলে জানান। (আজাদ, ২২/১/৭২)


বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধি সমন্বয়ে গঠিত দলটির অপর একজন সদস্য বলেন, ‘আমি যা দেখে এসছি তা আমি বিশ্বাস করতে চাই না। আমাকে আজীবন এই স্মৃতি মন থেকে মুছে ফেলার চেষ্টা করতে হবে।’


স্বাধীনতাযুদ্ধের সকমর্থক মার্কিন সিনেটের ডেমোক্র্যাট দলীয় সদস্য এ্যাডলাই স্টিভেনসন কুমিল্লা ও চট্টগ্রামের বধ্যভূমিগুলো দেখে এসে ৩০ জানুয়ারী বলেন, ‘বাংলাদেশে পাকবাহিনীর নৃশংসতা ছিল ভয়াবহ এবং মানবজাতির ইতিহাস তার কোন নজীর নেই। এই বর্বরতা মানুষের কল্পনাকেও ছড়িয়ে গেছে।’ (আজাদ,
৩১/১/৭২)

মার্কিন সিনেটের অপর সদস্য এডওয়ার্ড কেনেডি বলেন, ‘মানুষের মস্তিষ্কে এ’ধরনের বর্বরতার চিন্তা আসতে পারে এ’কথা ভাবতেও কষ্ট হয়।’ (আজাদ, ১৭/২/৭২)


ফরাসী সাহিত্যিক আঁদ্রে মালরো বলেন, ‘দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় নাত্সীদের নৃশংসতার নিদর্শন আমি দেখেছি, কিন্তু এখানকার নিশংসতা তার চেয়ে অনেক বেশী।’ (আজাদ, ১৩/৩/৭২)


সারা দেশে ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে যথাযথ বিচারের মাধ্যমে হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের জন্য দাবী ওঠে।


এই জঘন্য হত্যাকান্ডের খবর বিশ্ববাসীকে জানানোর জন্য এবং এর সাথে জড়িত পাক-সামরিক অফিসার ও তাদের এদেশীয় দালালদের বিচার করার জন্য দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় নাত্সীদের বিচারের উদ্দেশ্যে বার্টান্ড রাসেল, জ্যাঁ পল সার্ত, আঁদ্রে মালরো প্রমুখ বিশ্বখ্যাত ব্যাক্তিত্বের সমন্বয়ে যে ধরনের আন্তর্জাতিক কমিশন গঠিত হয়েছিল, সে ধরনের কমিশন গঠনের মাধ্যমে প্রকাশ্য বিচারের দাবী করা হয়। বিশ্বের অন্যান্য স্থান থেকেও আন্তর্জাতিক তদন্ত কমিশন গঠনের জন্য দাবী জানানো হয়।


ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীসহ অন্যান্য সদস্য এই হত্যাযজ্ঞকে নজীরবিহীন বর্বরতা বলে উল্লেখ করে এর বিচারের ব্যবস্থা করার আশ্বাস দেন। এই ভয়াবহ হত্যাকান্ডের জন্য দায়ী ব্যক্তিরা জেনেভা কনভেনশনের সুবিধা পাওয়ার অধিকার হারিয়েছে বলেও তারা মত প্রকাশ করেন।


কিন্তু এর ভেতর চলছিল ভিন্ন আর এক খেলা। স্বাধীনতাবিরোধী কুখ্যাত খুনী দালালদের জনরোষ থেকে বাঁচানোর জন্য আওয়ামী লীগ সরকার ১৬ ডিসেম্বর থেকেই প্রচেষ্টা চালানো শুরু করে। ১৬ ডিসেম্বর থেকে কুখ্যাত খুনী এবং দালালদের জন্য একমাত্র নিরাপদ আশ্রয়স্থল হয়ে দাঁড়ায় জেলখানা। কুখ্যাত দালালদের কাছ থেকে সে সময় আওয়ামী লীগ সরকারের কাছে ১১ হাজার লিখিত আবেদনপত্র পড়েছিল, তাদেরকে জেলখানায় সরিয়ে নেয়া জন্য। এদের বিচারের ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ সরকার কালক্ষেপণ নীতি গ্রহণ করেন।


১ জানুয়ারী ১৯৭২ তারিখে অস্থায়ী রাষ্ট্রপ্রধান সৈয়দ নজরুল ইসলামের সভাপতিত্বে মন্ত্রী পরিষদের এক বৈঠকে গণহত্যা তদন্ত কমিশন গঠনের সেদ্ধান্ত নেয়া হয়। হাইকোর্টের কর্মরত বা অবসরপ্রাপ্ত কোন বিচারপতি বা সমপর্যায়ের কোন মনোনীত ব্যক্তির নেতৃত্বে কমিশন পাকবাহিনী ও দালালদের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্তদের মৌখিক ও লিখিত সাক্ষত্কার গ্রহণ করে ব্যাপক রিপোর্ট পেশ করবেন বলে ঘোষণা করা হয়।

‘বাংলাদেশ দালাল অধ্যাদেশ ১৯৭২’ : ঘাতকদের রক্ষাকবচ


শেখ মুজিব ও তাঁর সরকারের অন্যান্য সদস্যদের এ ধরনে বক্তৃতা বিবৃতির পাশাপাশি চলতে থাকে দালালদের সুরক্ষার আয়োজন। বিভিন্ন মহল থেকে দালালদের বিচারের জন্য সংক্ষিপ্ত আদালোতের দাবীকে উপেক্ষা করে ২৪ জানুয়ারী জারী করা হয় ‘বাংলাদেশ দালাল (বিশেষ ট্রাইব্যুনাল) অধ্যাদেশ ১৯৭২’।দালালদের বিচারের জন্য এই আদেশ অনুযায়ী আসামীর ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপীল করার অধিকার থাকলেও ফরিয়াদীকে ট্রাইব্যুনালের বিচার্য অপরাধের জন্য অন্য কোন আদালতের বিচার প্রার্থনার অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়।


গণহত্যাকারী ও দালাল নেতাদের সুকৌশলে রক্ষার জন্যই প্রণীত হয়েছিল এই আইন। কারণ আইনের ৭ম ধারায় বলা হয়েছিল, থানার ভারপ্রাপ্ত ওসি যদি কোন অপরাধকে অপরাধ না বলেন তবে অন্য কারো কথা বিশ্বাস করা হবে না, অন্য কারও অভিযোগের ভিত্তিতে বিচার হবে না ট্রাইব্যুনালে। অন্য কোন আদালতেও মামলা দায়ের করা যাবে না। দালালদের আত্মীয়-স্বজনের ওসিকে তুষ্ট করার মত আর্থিক স্বচ্ছলতা ছিল, স্বজন হারানো নির্যাতিত দরিদ্র জনসাধারণের তা ছিল না।


২৮ মার্চ দালাল আইনে বিচারের জন্য সারাদেশের সমস্ত জেলায় মোট ৭৩টি বিশেষ ট্রাইব্যুনালে যেসব অপরাধের বিচার করা হবে তা অন্য কোন আদালতের এখতিয়ার বহির্ভূত বলে ঘোষণা করা হয়। এপ্রিল মাস থেকে দালাল আইনের বিচার কাজ শুরু হয়।


দালাল আইন কুখ্যাত খুনী দালালদের জন্য রক্ষাকবচ হিসাবে দেখা দেয়। যে শান্তি কমিটির মূল কাজ ছিল নিরপরাধ বাঙ্গালীদের হত্যা তালিকা প্রস্তুত করা এবং তাদের হত্যার জন্য পাকসেনাকে সহায়তা করা, তার সদস্যরা সর্বোচ্চ সাত বছরের কারাদন্ড পেয়ে নিস্তার পেয়ে যায়। শান্তি কমিটির নিজস্ব ঘোষণা অনুযায়ীই এর মূল কাজ ছিল তাদের ভাষায় ‘দুষ্কৃতকারী ও ভারতীয় চরদের তন্ন তন্ন করে খুঁজে বের করে সেনাবাহিনীর সহায়তায় তাদেরকে নির্মূল করা’, সুতরাং যে কোন দালালের সর্বোচ্চ শাস্তি পাওয়ার জন্য তার শান্তি কমিটির সদস্য প্রমাণিত হওয়াই ছিল যথেষ্ট।


৩০ নভেম্বর ১৯৭৩ তারিখে তথাকথিত সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আগে ৩১ অক্টোবর ১৯৭৩ পর্যন্ত দালাল-অধ্যাদেশে অভিযুক্ত মোট ৩৭ হাজার ৪ শত ৭১ জনের মধ্যে ২ হজার ৮ শত ৪৮ জনের মামলার নিষ্পত্তি হয়েছিল। এর মধ্যে দন্ডপ্রাপ্ত হয়েছিল ৭ শত ৫২ জন, বাকী ২ হাজার জন বেকসুর খালাস পেয়ে যায়। এর মধ্যে মৃত্যুদন্ড দেওয়া হয় মাত্র একজন রাজাকারকে। সুতরাং সহজেই প্রশ্ন উঠতে পারে, তাহলে কি গণহত্যাযজ্ঞের সেই ভয়াবহ দিনগুলোতে দালালরা কোন মানুষকে হত্যা করে নি, নির্যাতিত লক্ষ কোটি মানুষের জবানবন্দী কি সবই মনগড়া গল্প ছিল? নারকীয় বধ্যভূমিগুলিতে প্রাপ্ত বহুবিধ নৃশংস নির্যাতনের চিত্রসহ বিকৃত লাশগুলির সবই কি ছিল শুধু পাক সেনার শিকার?


দালাল আইনের অধীনে ট্রাইব্যুনালের বিচারও ছিল প্রহসন মাত্র। একটি দৃষ্টান্ত এ প্রসংঙ্গে দেয়া যেতে পারে। সাংবাদিক সাহিত্যিক শহীদুল্লা কায়সারের অপহরণকারী আল বদরটির বিরুদ্ধে হত্যার উদ্দেশ্যে শহীদুল্লা কায়সারকে অপহরণের অভিযোগ সুনিশ্চিতভাবে প্রমাণিত হয়েছিল, কিন্তু তবু তাকে মাত্র ৭ বছরের সশ্রম কারাদন্ড দেয়া হয়। গণহত্যার উদ্দেশ্যে শান্তি কমিটি, রাজাকার, আল বদর ইত্যাদি দলে যোগদানকারী ব্যক্তিদের এইভাবে লঘু শাস্তি দিয়ে কিছু দিনের জন্য কারাগারে রেখে বিক্ষুব্ধ জনতা এবং তাদের হাতে নির্যাতিতদের রোষানল থেকে রক্ষার ব্যবস্থা করা হয়।


দালাল রক্ষার এই ষড়যন্ত্র কুখ্যাত দালালদের তথাকথিত বিচার হওয়ার পূর্বে জনসাধারণের কাছে ধরা পড়ে নি। তবে সচেতন বুদ্ধিজীবী শেণী প্রথম থেকেই এই চক্রান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে আসছিলেন। এরপর যখন দেখা গেল সরাসরি গণহত্যায় নেতৃত্বদানকারী দালালরা নামমাত্র শাস্তি পেয়ে নিষ্কৃতি পাচ্ছে তখন এ ব্যাপারে সচেতনতা আরো বৃদ্ধি পায়।


২৩ জুলাই ১৯৭২ তারিখে দৈনিক বাংলায় এ বিষয়ে ‘দালাল আইন সংশোধনের প্রয়োজন’ শীর্ষক একটি রিপোর্টে লেখা হয় — ‘দেশ স্বাধীন হবার পর দালাল বলে যাদের আটক করা হয়েছে তদের শতকরা ৭৫ জনেরই মুক্তি পাবার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ এই বিপুল সংখ্যক ব্যক্তির বিরুদ্ধে কোন সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে না।


‘পুলিশের সংখ্যা এমনিতেই অপ্রতুল। তদুপরি কোলাবরেটরস অ্যাক্ট-এ অভিযোগ তদন্তের ভার দেয়া হয়েছে শুধু থানার ওসিকে। কিন্তু ওসির পক্ষে একা অসংখ্য মামলার তদন্ত করা এক প্রকার অসম্ভব।......

‘এ ছাড়া দালাল আইন সম্পর্কেও কিছু বক্তব্য রয়েছে আইন বিশেষজ্ঞদের। তাঁরা বলেছেন, দালাল আইন করা হয়েছে একটি বিশেষ পরিস্থিতিতে সংঘটিত অপরাধের বিচার করার জন্য। কাজেই সে অপরাধ প্রমাণের জন্য অনুসরণ করতে হয় একশ বছরের পুরনো ‘এভিডেন্স অ্যাক্ট’। এই অ্যাক্ট হয়েছে স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে সংঘটিত অপরাধের বিচার করার জন্য। কাজেই বিশেষ পরিস্থিতির অপরাধের প্রমাণের জন্য প্রণীত এভিডেন্স অ্যাক্ট অনুসরণ করতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে নানা জটিলতা। ফলে অপরাধ প্রমাণ করা হয়ে উঠেছে অনেক ক্ষেত্রে দুঃসাধ্য।......


‘একটা উদাহরণ দিলেই ব্যাপারটা বোঝা যাবে পরিষ্কার ভাবে। ধরা যাক একজন রাজাকার অপহরণ করেছে কোন এক ব্যক্তিকে, তার পর থেকে সে ব্যক্তির আর সন্ধান মেলেনি। এই অবস্থায় তাঁকে হত্যা করা হয়েছে এই সিদ্ধান্ত করা যায় স্বাভাবিকভাবেই। কিন্তু যদি সেই রাজাকারটির বিরুদ্ধে মামলা চলে দালাল আইনে, তবে তার বিরুদ্ধে আনা যাবে না হত্যার অভিযোগ। অভিযোগ আনা হবে হত্যার জন্যা অপহরণ করা হয়েছে। কারণ এভিডেন্স অ্যাক্টে হত্যার চাক্ষুষ সাক্ষ্য প্রমাণ না এনে খুনের অভিযোগ প্রমাণ করা যায় না। সুতরাং এক্ষেত্রে যদিও লোকটি খুন হয়েছেন তবুও আইনের মার-প্যাচে আসামীকে খুনী প্রমাণ করা যাবে না।’


বিভিন্ন মহলের প্রতিবাদের মুখে আওয়ামী লীগ সরকার বাধ্য হয় এ বিষয়টি বিবেচনা করার জন্য। ৪ আগস্ট ১৯৭২ তারিখে মন্ত্রীসভা সাব কমিটির এক বৈঠকে অপরাধীধের সর্বোচ্চ শাস্তি দানের বিধান রাখার জন্য দালাল আইন সংশোধনের বিষয় নিয়ে আরোচনা করা হয়। তবে বৈঠকে কোন সদ্ধান্ত নেয়া হয় নি।


এইভাবে কালক্ষেপণের খেলা চলতে থাকে। ১৯৭৩ সালের ১৩ জুলই তত্কালীন আইন মন্ত্রী মনোরঞ্জন ধর গণহত্যাকারীদের সহায়তাকারীদের বিচারের জন্য রাষ্ট্রকে ক্ষমতা দেবার উদ্দেশ্যে আনীত সংবিধানের প্রথম সংশোধনী বিল সংসদে উত্থাপন করেন। বিলটিতে বাংলাদেশ সংবিধানের ৭২ অনুচ্ছেদ সংশোধনের প্রস্তাব করে গণহত্যাকারীদের দোসরদের বিচার করার জন্য রাষ্ট্রকে নতুন আইন প্রণয়নের ক্ষমতা দেবার কথা বলা হয়।



এখন আমাকে বলুন কিভাবে এই সরকার রাজাকারদের বিচার করবে?

ক্ষমতার সাড়ে চার বছর পর এসে আপনি কি বিশ্বাস করেন আওয়ামীলীগ রাজাকারদের বিচার করবে যেখানে প্রধানমন্ত্রী হাসিনার বেয়াই এর বিরুদ্ধে রাজাকারীর অভিযোগ?

এত ত্যানা প্যাচানোর কোন জায়গা নেই যে প্রক্রিয়ায় এই সরকার তত্ত্বাবধায়ক বাতিল করেছিল সেই একই প্রক্রিয়ায় রাজাকারের বিচার করুক আমরা আছি সাথে। শুধু বিএনপি নিয়ে খেলা না খেললেই হোল। এরপরও কি বলবেন আমরা রাজাকারের বিচার চাই না?

রাজাকারের বিচার চাইতে যেয়ে বিএনপির সাথে রাজনৈতিক গন্ডগোলে জড়িয়ে পড়া ঈঙ্গিত দেয় সূদূর প্রসারী কিছুর। সেটা কি আপনারা ভাল ই জানেন।

আপনাদের আমি গ্যারান্টি দিলাম হাসিনা কোন দিন চায় নি আর চাবেও না রাজাকারের বিচার হোক যার পরিনতিতে শাহবাগ আন্দোলনের অপমৃত্যু।

দেখুন রাজাকারদের বিচারে নমুনাক্লিক করুন

কারন রাজাকারের বিচার চাইলে যে নিজের ঘর সামলাতে পারবে না।

কার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজাকার?

এই সেই হাসিনা যে বিএনপির সাথে কাধে কাধ মিলিয়ে স্বৈরাচারী এরশাদের পতন ঘটিয়ে আবার স্বার্থের টানে তাকে নিয়ে এক হয়ে আন্দোলন করে।

সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ৩:৩৮
২৮টি মন্তব্য ২৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:১৮


একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে কোন প্রজন্ম সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত? ১৯৭১ থেকে একটি সংক্ষিপ্ত ভাবনা

লিখেছেন মুনতাসির, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪৩

বাংলাদেশে দুর্নীতির প্রশ্নটি প্রায়ই ব্যক্তি বা দলের দিকে ছুড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু একটু গভীরে গেলে দেখা যায়, এটি অনেক বেশি প্রজন্মভিত্তিক রাজনৈতিক - অর্থনৈতিক বাস্তবতার সঙ্গে যুক্ত। ১৯৭১ এর পর... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭


ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে চাঁদগাজীর নাম দেখাচ্ছে। মুহূর্তেই আপনার দাঁত-মুখ শক্ত হয়ে গেল। তার মন্তব্য পড়ার আগেই আপনার মস্তিষ্ক সংকেত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

×