somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মানবচেতনার তীর্থযাত্রী মীজান রহমানের জন্মদিন

১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১০ বিকাল ৫:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মানবচেতনার তীর্থযাত্রী মীজান রহমানের জন্মদিন

নতুনদেশ ডটকম

মীজান রহমান । গণিতজ্ঞ অথবা কথাসাহিত্যিক,পরিচিতি হিসেবে একটি অপরটিকে ছাড়িয়ে যায় নি:সন্দেহে। সাফল্যের দৌড়ে একটি আরেকটিকে পেছনে ফেলে এগিয়ে যেতে পারে নি। কিন্তু এসব কিছুকে ছাড়িয়ে আরো একটি পরিচিতি তার নামের সঙ্গে একান্তে মিশে গেছে । মানবচেতনার তীর্থযাত্রী তিনি, মানুষকে ভালবেসে, মানুষের ভালোবাসার কাব্য রচনা করে করে তিনি আবির্ভূত হয়েছেন হয়েছেন উজ্জল এক নক্ষত্ররুপে। তার সেই আলোরচ্ছটায় উদ্বাসিত হচ্ছে উত্তর আমেরিকা।

উত্তর আমেরিকায় এখন আর মীজান রহমানের আলাদা পরিচিতির প্রয়োজন হয় না। তবু বলে নেওয়া ভালো, ড: মীজান রহমান, জন্ম ১৯৩২ সালের ১৬ই সেপ্টেম্বর। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক, পরবর্তীকালে বিলেতের কেমব্রিজ ও কানাডার নিউ ব্রান্সউইক বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর পড়াশোনা শেষ করে ১৯৬৫ সালে অটোয়ার কার্লটন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনায় যোগ দেন। একটানা তেত্রিশ বছর শিক্ষকতা করে অবসর গ্রহণ করেন ১৯৯৮ সালে। কিন্তু তাতেও তিনি ছাড়া পাননি। বর্তমানে তিনি একই বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন Professor Emiritus I Distinguished Research Professor হিসেবে কর্মরত আছেন। এর বাইরে তিনি আলাদা আলাদাভাবে ইউএসএ-এর বার্কলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর আলবার্তো গ্রুনবাম এর সঙ্গে এবং যৌথভাবে নেদারল্যাণ্ডের গণিতবিদ এরিখ কোয়েলিংক ও মিশরের গণিতবিদ মুরাদ ইসমাইলের সঙ্গে গণিত বিষয়ক গবেষণার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। গতমাসে হংকং এর ‘ইউনিভার্সিটি অব হংকং’-এ দু সপ্তাহের একটি গণিত বিষয়ক গবেষণাপত্রের কাজে সময় কাটিয়েছেন। এর বাইরে দর্শনশাস্ত্রের উপর তাঁর অগাধ পাণ্ডিত্য এবং আগ্রহের কারণে অতি সহজেই অন্য দশজন থেকে মীজান রহমানকে আলাদা করা যায়।

গণিতশাস্ত্রের প্রখ্যাত পণ্ডিত জর্জ গ্যাসপারের সঙ্গে রচিত তাঁর গণিতবিষয়ক গ্রন্থ Basic Hyper-geometric Series (1990) আধুনিক গণিতের একটি উল্লেখযোগ্য ও অপরিহার্য গ্রন্থ হিসেবে স্বীকৃত।

একাডেমিক ব্যুৎপত্তি ও ব্যস্ততার পাশাপাশি মীজান রহমান তাঁর আবাল্যের ভালোবাসা সাহিত্য ও সমাজ ভাবনার সঙ্গেও সংশ্রব বজায় রাখেন সাধ্যমত। তারই ফলস্বরূপ তাঁর সাহসী ও সংবেদনময়, মৌলিক ও মানবিক রচনার সুনির্বাচিত একটি সংকলন প্রকাশিত হয় ১৯৯৪ সালে ‘তীর্থ আমার গ্রাম’ নামে। এরপর আরো কয়েকটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। সেগুলো হলো ‘তীর্থ আমার গ্রাম’ (১৯৯৪), ‘লাল নদী’ (২০০১), ‘প্রসঙ্গ নারী’ (২০০২), ‘অ্যালবাম’ (২০০৩), ‘অনন্যা আমার দেশ’ (২০০৪), ‘আনন্দ নিকেতন’, ‘দুর্যোগের পূর্বাভাষ’ (২০০৭), ভাবনার আত্মকথন’ (২০০৮, অনুষ্টুপ, কলকাতা), ‘শুধু মাটি নয়’ (২০০৯)।

কানাডার অটোয়ার কার্লটন বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের খ্যাতনামা অধ্যাপক মীজান রহমানের সাহিত্যের সঙ্গে সংশ্রব প্রথম যৌবন থেকেই, যখন তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃতী ছাত্র। কবি শামসুর রাহমান, সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক, কবি শহীদ কাদরী প্রমুখের সমসাময়িক। প্রায় একইসঙ্গে লেখালেখি শুরু করেন আনওয়ার মীজান নামে, গদ্য এবং পদ্য। প্রথমে উচ্চশিক্ষার্থে ও পরে কাজের উদ্দেশ্যে কানাডায় প্রবাসী হবার পর দীর্ঘদিন লেখালেখির সঙ্গে সম্পর্কহীন থাকেন, যদিও তাঁর চেতনা ও অনুভূতির জগতে সাহিত্যের সৃজন প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকে নিরন্তর। এরই বিলম্বিত বহি:প্রকাশ দেখা যায় ১৯৯০ সালে অটোয়া থেকে প্রকাশিত বাংলা পত্রিকা মাসিক ‘বাংলাদেশ’ এর পাতায়।

লেখকজীবনের নবপর্যায়ের প্রথম রচনাটি প্রকাশমাত্রই তিনি বিপুল পাঠকপ্রিয়তা অর্জন করেন এবং তারপর আর পেছন ফিরে তাকাননি। ব্যক্তিগত জীবনে দুইজন কৃতী পুত্রের জনক ড: মীজান রহমান ২০০২ সালে তাঁর ৪১ বছরের জীবনসঙ্গিনী পারুল রহমানকে হারিয়েছেন।

টরন্টো থেকে প্রকাশিত সাবেক সাপ্তাহিক ‘দেশে বিদেশে’, বার্লিংটন থেকে প্রকাশিত ‘আমরা’, নিউইয়র্কের সাপ্তাহিক ‘প্রবাসী’, মন্ট্রিয়লের অধুনালুপ্ত ‘দেশদিগন্ত’ আমেরিকা থেকে প্রকাশিত ‘পড়শি’সহ উত্তর আমেরিকার অন্যান্য নানাবিধ প্রকাশনাসমূহে তিনি নিয়মিত লিখতে শুরু করেন। তাঁর ভিতরের দীর্ঘদিনের অবরুদ্ধ আবেগ, চিন্তা ও রসের স্রোতখানি যেন মুক্তধারার মতো বেরিয়ে আসে শতজলঝর্ণার বেগে। আর তাতে অবিরত আনন্দে স্নাত হতে থাকেন প্রবাসের অগণিত তৃষ্ণার্ত পাঠককুল, যাঁরা তাঁর লেখার মধ্যে খুঁজে পান নিজেদের সংকট ও সংগ্রাম, আশা ও ভালোবাসা, স্মৃতি ও স্বপ্নের বিশ্বস্ত প্রতিভাস। সেইসঙ্গে মুক্তবুদ্ধির অনুরাগী ও বিশ্বমানবতায় বিশ্বাসী উদার ও আধুনিক মানুষেরা তাঁকে পান একজন বিশ্বস্ত মিত্ররূপে- যিনি ধর্মান্ধতা, সাম্প্রদায়িকতা, মৌলবাদ ও যাবতীয় পশ্চাদপদ চিন্তা ও চর্চার বিরুদ্ধে তাঁর নির্ভীক লেখনিকে সর্বদা সচল ও সোচ্চার রাখেন।

২০০৪ সালে মন্ট্রিয়লের ......সদেরা সুজন ‘মানব চেতনার তীর্থচারী একজন মীজান রহমান’ নামে একটি সম্পাদিত গ্রন্থ প্রকাশ করেন। ২০০৪ সালে মীজান রহমান সাহিত্যে ‘দেশেবিদেশে’ এ্যওয়ার্ড লাভ করেন। ২০০৫ সালে ইউএসএ-এর স্প্রিংগার (Springer) পাবলিকেশন থেকে ‘Theory and Applications of Special Functions’ নামে একটি বই প্রকাশিত হয় যেটি মীজান রহমানকে উৎসর্গ করা হয়েছে। লেখক ও নাট্যকার আকতার হোসেন ২০০৬ সাল থেকে প্রবাসী তরুণদের উৎসাহিত করতে ‘ড: মীজান রহমান সাহিত্য পুরস্কার’ দিয়ে আসছেন। চলতি বছর কলকাতার দেশ পত্রিকার ‘বইসংখ্যা ২০১০’ সংখ্যায় ‘অনাবাসী মননে বাংলাদেশ’ শিরোনামে তাঁর লেখা নিয়ে আলোচনা ছাপা হয়েছে। টরন্টোর জনপ্রিয় অনলাইন পত্রিকা নতুনদেশ ডটকমে তিনি নিয়মিত লিখছেন।


মেধা ও মননে অনন্য এক মানুষ ভিন্নমাত্রার কথাসাহিত্যিক মীজান রহমানের জন্মদিন ১৬ সেপ্টেম্বর। বিরল প্রতিভাবান এই ‌’মানবচেতনার তীর্থযাত্রী’কে তাঁর জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানাতে নতুনদেশ আয়োজন করেছে বিশেষ প্রকাশনার। লেখক মীজান রহমান, মানুষ মীজান রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা মিশ্রিত কিছু অনুভুতি স্থান পেয়েছে এই বিশেষ আয়োজনে। মীজান রহমান আপনাকে জন্মদিনের অফুরান শুভেচ্ছা , শুভ জন্মদিন মীজান রহমান।
http://www.notundesh.com/sroddhanjoli.html
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশ একদিন মাথা উঁচু করে দাঁড়াবেই

লিখেছেন নতুন নকিব, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:৫৩

বাংলাদেশ একদিন মাথা উঁচু করে দাঁড়াবেই

ছবি এআই জেনারেটেড।

ভিনদেশী আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে সত্যের বজ্রনিনাদে সোচ্চার হওয়ার কারণেই খুন হতে হয়েছে দেশপ্রেমিক আবরার ফাহাদকে। সেদিন আবরারের রক্তে লাল হয়েছিল বুয়েটের পবিত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজাকারের বিয়াইন

লিখেছেন প্রামানিক, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:০৪


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

রাজাকারের বিয়াইন তিনি
মুক্তিযোদ্ধার সন্তান
ওদের সাথে দুস্তি করায়
যায় না রে সম্মান?

কিন্তু যদি মুক্তিযোদ্ধাও
বিপক্ষতে যায়
রাজাকারের ধুয়া তুলে
আচ্ছা পেটন খায়।

রাজাকাররা বিয়াই হলে
নয়তো তখন দুষি
মেয়ের শ্বশুর হওয়ার ফলে
মুক্তিযোদ্ধাও খুশি।

রচনা কালঃ ১৮-০৪-২০১৪ইং... ...বাকিটুকু পড়ুন

দাসত্বের শিকল ভাঙার স্বপ্ন দেখা এক ক্রান্তদর্শী ধূমকেতু ওসমান হাদী।

লিখেছেন মুঃ গোলাম মোর্শেদ (উজ্জ্বল), ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪২

বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে দেশে যে ধরণের রাজনৈতিক সংস্কৃতি চালু হয়েছে, তাহলো বিদেশী প্রভুরদের দাসত্ব বরণ করে রাজনৈতিক দলগুলোর রাষ্ট্র ক্ষমতায় গিয়ে দেশের মানুষের উপর প্রভুত্ব করা , আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

দিপুকে হত্যা ও পোড়ানো বনাম তৌহিদী জনতা!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৫


পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস বিডি লিমিটেড (Pioneer Knitwears (BD) Ltd.) হলো বাদশা গ্রুপের (Badsha Group) একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। বাদশা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান কর্ণধার হলেন জনাব বাদশা মিয়া, যিনি একইসাথে এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাজানো ভোটে বিএনপিকে সেনাবাহিনী আর আমলারা ক্ষমতায় আনতেছে। ভোট তো কেবল লোক দেখানো আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।

লিখেছেন তানভির জুমার, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:২২



১০০% নিশ্চিত বিএনপি ক্ষমতায় আসছে, এবং আওয়ামী স্টাইলে ক্ষমতা চালাবে। সন্ত্রাসী লীগকে এই বিএনপিই আবার ফিরিয়ে আনবে।সেনাবাহিনী আর আমলাদের সাথে ডিল কমপ্লিট। সহসাই এই দেশে ন্যায়-ইনসাফ ফিরবে না। লুটপাট... ...বাকিটুকু পড়ুন

×