somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দ্যা ভিট্রুভিয়ান ম্যানঃ লিওনার্দো দ্যা ভিঞ্চির একটি কালজয়ী সৃষ্টি 8-| 8-|

০৫ ই মার্চ, ২০১২ সকাল ১০:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ইতালির রেনেসাঁ যুগ । সে যুগের অনেক শিল্পী তাদের চিত্রকর্মে কিংবা শিল্পকর্মে ব্যাপকভাবে গোল্ডেন রেশিও এর ব্যবহার করতে থাকেন । কিন্তু কেন গোল্ডেন রেশিও ? এটা সম্ভবত এ কারণে যে ,কোন শিল্পে যতবেশি এর ব্যবহার করা সম্ভব তত বেশি সেই শিল্পকে বাস্তব বলে মনে হবে । আর এক্ষেত্রে এক্ষেত্রে লিওনার্দো দ্যা ভিঞ্চির দ্যা ভিট্রুভিয়ান ম্যান উল্লেখযোগ্য।



এই শিল্পকর্মটি ভিঞ্চি এঁকেছিলেন শুধুমাত্র কালি আর কলম ব্যবহার করে একটা A4 সাইজের কাগজে। ভিঞ্চি এই কাজে যার আইডিয়া আর থিওরি কে প্রকাশ করতে চেয়েছেন তিনি হচ্ছেন রোমান আর্কিটেক্ট ভিট্রুভিয়ান।ভিট্রুভিয়ান বিশ্বাস করতেন মানব দেহের এই সমানুপাত আর পরিমাপ স্বর্গীয় ব্যাপার-স্যাপার এবং তা সম্পূর্ণ নিখুঁত।




তবে একটা কথা, ভিঞ্চি কেন দ্যা ভিট্রুভিয়ান ম্যান আঁকার প্রয়োজন অনুভব করেছিলেন? এক্ষেত্রে বলা যেতে পারে , ভিঞ্চি আসলে বিশ্বাস করতেন মানবদেহ নিয়ে কাজ করা এই মহাবিশ্ব নিয়ে কাজ করার অনুরূপ। আসলে মানবদেহ হচ্ছে মডেল অফ পারফেকশন। মানুষের সাথে প্রকৃতির সম্পর্ককে এই চিত্রকর্ম টিতে তিনি তুলে ধরেছেন । এই একটি মাত্র ইলাসট্রেশনে বিভিন্ন বিচিত্র বিষয় যেমন চিত্রকলা, স্থাপত্যবিদ্যার অনুপমতা , মানব এনাটমি , আর প্রতিসমতা এই এতগুলো বিষয় সম্পর্কে তার আইডিয়া একসাথে স্পষ্টভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন, যা সমসাময়িক তো বটেই আজকের এই যুগেও রীতিমত ঈর্ষা জাগায়।



ভিঞ্চি এই চিত্রকর্মে যা তুলে ধরেছেনঃ
১..........সহজ ভাষায় বলতে গেলে এই ছবিতে প্রথমে আমাদের চোখে যা পড়ে তা হচ্ছে একজন মানুষ যদি সোজাসুজি দাড়িয়ে থাকে এবং তার হাত যদি ভুমির সাথে সমান্তরালে পাশের দিকে ছড়িয়ে দেয় তবে সে একটি বর্গক্ষেত্রে একদম নিখুঁতভাবে মিলে যাবে।
২...........অন্য দিকে লোকটি যদি তার পা প্রসারিত করে এবং হাত দুটিকে তার মাথার উপরের দিকে ছড়িয়ে দেয় ঠিক যেন স্কেচ-টার মত করে তাহলে তিনি অনায়াসে একটি বৃত্তের ভিতর তার পরিধির সাথে মিলে যাবে।
৩............উভয় ক্ষেত্রেই লোকটির নাভি থাকবে বৃত্তের কেন্দ্রে।



প্রাচীন জ্ঞান অনুযায়ী , মানবদেহকে বলা যেতে পারে এই বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের ব্লু প্রিন্ট আর এর কারণ হিসেবে বলা যেতে পারে বিভিন্ন ধরনের আনুপাতিক সামঞ্জস্যতা যা মানবদেহের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রতঙ্গের মাঝে লক্ষ্য করা যায়।আর এটা ভিঞ্চি সত্যিকার অর্থেই বিশ্বাস করতেন এবং তিনি তার এই ইলাস্ট্রেশনে মানবদেহের কাঠামো আর মহাবিশ্বের মধ্যে এই স্বর্গীয় সংযোগ তুলে ধরেছেন।


ও হ্যাঁ (যদিও একান্তই ব্যক্তিগত মতামত) ভিঞ্চি সম্ভবত বর্গ দ্বারা আমাদের এই পার্থিব দুনিয়ার অস্তিত্ব এবং একইসাথে বৃত্ত দ্বারা আধ্যাত্মিক দুনিয়ার অস্তিত্বকে কে প্রকাশ করেছেন।



অবশেষে সংকেত আর সৌন্দর্যের অপূর্ব মিশেলে দ্যা ভিট্রুভিয়ান ম্যান সারা বিশ্বের সৌন্দর্য ও শিল্প-পিপাসুদের চোখে ও মনে সবচেয়ে মূল্যবান চিত্রকর্মের আসনে আসীন হয়ে আছে। তাছাড়া এই অনন্য রুপায়ন টি মানবদেহের প্রতিসাম্যতার জন্যও সারাবিশ্বে সুপরিচিত।


আর এই মহামূল্যবান চিত্রকর্মটি সংরক্ষিত আছে ইতালির ভেনিস নগরীর Gallerie dell'Accademia তে। আর বিশেষ-বিশেষ উপলক্ষ পেলে তবেই এটা শুধুমাত্র প্রদর্শিত হয়।


দুইটি মজার গানিতিক সামঞ্জস্যতাঃ

১। উপরের ছোট লাল বৃত্তটাকে চাঁদ এবং নিচের বৃত্তটাকে আমরা পৃথিবী কল্পনা করতে পারি। এখন কথা হচ্ছে কল্পনা তো আমরা যা খুশি তাই করতে পারি কিন্তু মজাটা হচ্ছে বৃত্ত দুইটার ব্যাসের অনুপাত (r / R) , বাস্তবিক চাঁদ ও পৃথিবীর ব্যাসের অনুপাতের সাথে মিলে যায়।






২। ভিঞ্চির এই স্কেচ থেকে আরেকটি রহস্যময় সম্পর্ক যা পাওয়া গেছে , তা হচ্ছে ইজিপ্ট-এ গিজার পিরামিড থেকে। অবশ্য এটা আমার কাছে রহস্যের চেয়ে রোমাঞ্চকর –ই বেশী লেগেছে। নিচের চিত্রটিতে যে ত্রিভুজকে চিহ্নিত করা হয়েছে তা গিজার পিরামিডের জ্যামিতিক অনুপাতের (৫১ ডিগ্রি ৫১ সেকেন্ড) সাথে হুবুহু মিলে গেছে।






সমাপ্তি সঙ্গীত (শেষ কথা):
দ্যা ভিট্রুভিয়ান ম্যান ভিঞ্চির এমন একটি শিল্পকর্ম যা তিনি সৃষ্টি করছিলেন নিজের মানসিক প্রশান্তির জন্য। বিক্রি করার জন্য কিংবা কাউকে দেখানো বা সুন্দর করে সাজিয়ে রাখার জন্য সৃষ্টি করেননি।প্রকৃতপক্ষে এই মহান শিল্পকর্মটি আবিষ্কৃত হয় ভিঞ্চির মৃত্যুর-ও কয়েক শতাব্দি পরে ।আর দ্যা ভিট্রুভিয়ান ম্যান মানব দেহের রূপ ও আকৃতির প্রতি এই কালজয়ী মানুষটার গভীর অনুরাগ আর জ্যামিতির প্রতি ভালবাসা, একাগ্রতা এবং পরিশেষে ভিঞ্চির ভিতরকার লালন করা অধ্যবসায়ের প্রতীক।

ভিঞ্চির স্কেচ কালেকশন
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই জুলাই, ২০১২ সকাল ৮:৪২
৫২টি মন্তব্য ৫২টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×