somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

২০১০ সালে মোট খুন হয়েছে ৩২৯১, তিন মাসে গুপ্তহত্যা ২৯৪

০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০১১ সন্ধ্যা ৬:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সেন্টার ফর মিডিয়া রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং ৪ ডিসেম্বর প্রকাশিত করেছে বার্ষিক মানবাধিকার প্রতিবেদন ২০১০। প্রতিবেদনের চৌম্বক অংশ ব্লগারদের জন্য ধরা হলো।

সেন্টার ফর মিডিয়া রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং (এমআরটি) গবেষণা ও প্রশিক্ষণমূলক বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি এমআরটি’র গবেষণা কার্যক্রমের অন্যতম লক্ষ্য। তারই ধারাবাহিকতায় ২০১০ সালের ১২ মাসে সংঘটিত বিভিন্ন অপরাধের পরিসংখ্যান নিয়ে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে দেশের প্রধান জাতীয় দৈনিকগুলোর সংবাদকে ভিত্তি ধরা হয়েছে।

খুন
২০১০ সালে মোট খুন হয়েছে ৩২৯১টি। প্রতিদিন গড়ে খুন হয়েছে ৯ জনেরও বেশি। এর মধ্যে গত মার্চ মাসে রাজধানীতে বিয়ে দিতে রাজি না হওয়ায় মেয়ের প্রেমিকের হাতে স্বামী-স্ত্রী নিহত হওয়ার ঘটনা এবং এপ্রিল মাসে রাজধানীতে পুলিশ কর্মকর্তা গৌতম কুমার রায় সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত হওয়ার খবরটি ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। এপ্রিল মাসে রাজধানীতে পুলিশ কর্মকর্তা গৌতম কুমার রায় সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত হওয়ার রেশ কাটতে না কাটতেই ১৪ দিনের মাথায় মে মাসের ৪ তারিখে এসআই মিজানকে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করার ঘটনাটি আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতির বহি:প্রকাশ। এছাড়া মে মাসেই কুমিল্লায় আব্দুর রশীদ (৭০) নামের এক বৃদ্ধ মুক্তিযোদ্ধাকে মাত্র ১৬০ টাকার জন্য হত্যা করা হয়।
তাছাড়া ২৪ জুন ঢাকার মোহাম্মদপুরে পরকীয়ায় মায়ের অনৈতিক কাজ দেখে ফেলায় মা আয়েশা ও তার প্রেমিক আরিফ একসঙ্গে নৃশংসভাবে হত্যা করে স্কুল ছাত্র ৬ বছরের শিশু সামিউলকে।

উল্লেখ্য, বছরের প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও খুনের ঘটনা ঘটেছে। বিশ্লেষণে দেখা যায়- চাঁদাবাজি, এলাকায় প্রভাব বিস্তার, জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধ, যৌতুক ও প্রেমঘটিত কারণে এসব খুনের ঘটনা ঘটেছে।

গুপ্তহত্যা
বেড়েই চলেছে গুপ্তহত্যা। গত তিন মাসে দেশে ২৯৪টি গুপ্তহত্যার ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ডিসেম্বর মাসে দেশে গুপ্তহত্যার ঘটনা ঘটেছে ১০৫টি। অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে গুপ্তহত্যার ঘটনা ঘটেছে যথাক্রমে ৯৩ ও ৯৬টি।


আইন-প্রয়োগকারী সংস্থার হাতে মৃত্যু
২০১০ সালে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে মৃত্যু হয়েছে ১৭০ জনের। এর মধ্যে তথাকথিত বন্দুকযুদ্ধেই বেশিরভাগ নিহত হয়েছে।

ধর্ষণ
গত বছর সারাদেশে ধর্ষণের শিকার হয় মোট ৫১১ জন। যার মধ্যে ২৭২ জন নারী ও ২৩৯ জন শিশু। গণধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ১১৪ টি ।
উল্লেখ্য, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ক্ষমতাসীন দলের সমর্থনপুষ্ট ছাত্রলীগ জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। এদের মধ্যে চূয়াডাঙ্গায় একজন গৃহবধু এএসআই কর্তৃক ধর্ষণের শিকার হন, যশোরে এক গৃহবধু আনসার সদস্য ও জয়পুরহাটে ৮ বছরের এক শিশু গ্রামপুলিশের দ্বারা ধর্ষণের শিকার হন।

সীমান্ত সন্ত্রাস
বছরের ১২ মাসে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে বিএসএফ ও নাসাকাকর্তৃক নিহত হয়েছেন ১১৬ জন। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বিএসএফ বাংলাদেশীদের গুলি করে হত্যা করেছে। এছাড়া সীমান্তে বিএসএফের নির্যাতনে আহত হয়েছেন ১৬৩ জনেরও বেশি। এছাড়াও বিএসএফ কর্তৃক অপহৃত হয়েছেন ১২১ জন।

রাজনৈতিক সংঘর্ষ

গত বছর দেশের বিভিন্ন স্থানে রাজনৈতিক সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন ২৩৪ জন। আর আহত হয়েছেন ১৫৮৮৬ জন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন দল ও সহযোগী সংগঠনের গ্রুপিংয়ের কারণে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া আওয়ামী লীগ-বিএনপি, আওয়ামী লীগ-জাতীয় পার্টি কিংবা আওয়ামী লীগ-জামায়াত সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে। শুধু ক্ষমতাসীন দল ও সহযোগী সংগঠনের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে নিহত হয়েছে ১১৭ জন।

সাংবাদিক নির্যাতন ও মিডিয়া নিয়ন্ত্রণ
২০১০ সালের একটি বড় সময় কেটেছে সংবাদপত্র নিয়ন্ত্রণ ও সাংবাদিক নির্যাতনের অসংখ্য ঘটনা নিয়ে। যমুনা টেভিশিন, চ্যানেল ওয়ান বন্ধ, ফেসবুক বন্ধ ঘোষণা, আমারদেশ পত্রিকার প্রকাশনা বাতিল এবং এর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক প্রকৌশলী মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার করে রিমাণ্ডে নির্যতানের ঘটনা দেশবাসী উৎকণ্ঠার মধ্যে পর্যবেক্ষণ করে। এতে প্রায় সহস্রাধিক মিডিয়া কর্মী বেকারত্বের ফলে চরম মানবেতর পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়। পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে ক্ষমতাসীনদের হাতে নির্যাতনের শিকার হন ২০৬ জন সাংবাদিক। নিহত হন ৪ জন । (সাপ্তাহিক ২০০০-এর সিলেট প্রতিনিধি ফতেহ ওসমানি ২৯ এপ্রিল মারা যান এবং এটিএন বাংলার ক্যামেরাম্যান শরিফুল ইসলাম মিঠুকে দুবৃত্তরা শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করে। তাছাড়া ১২ আগস্ট মাইটিভির খুলনা ব্যুরো প্রধান এম এ হাসানের লাশ গলিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। ) এছাড়াও বিভিন্ন চ্যানেলের টকশো’র ওপর সরকারি নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। বন্ধ করা হয়েছে কয়েকটি জনপ্রিয় টকশো’র সম্প্রচার।

ইভটিজিং ও নারী নির্যাতন
সারাদেশে ইভটিজিং মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। ডিসেম্বর মাসেই ইভটিজিংয়ের শিকার হওয়ার ২৩৭টি ঘটনা পত্রিকায় এসেছে। এর মধ্যে ৫ তরুণী ইভটিজিং এর অপমান সইতে না পেরে আত্মহত্যা করে। ইভটিজিংয়ের ঘটনায় ডিসেম্বর মাসে ৪৫ জন বখাটের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা ও জরিমানা এবং ২৬ জনকে গ্রেফতারের ঘটনা ঘটেছে। উল্লেখ্য, গত নভেম্বর মাসে ইভটিজিংয়ের শিকার হওয়ার ২২৫টি ঘটনা পত্রিকায় আসে। এর মধ্যে ৩ জন তরুণী ইভটিজিং এর অপমান সইতে না পেরে আত্মহত্যা করেন। ইভটিজিংয়ের ঘটনার প্রতিবাদ করায় প্রাণ দিতে হয় ৫ জনকে। তাছাড়া গত তিন মাসে যৌতুক ও অন্যান্য কারণে স্বামীগৃহে নির্যাতনের পর জীবন দিতে হয় ৮০ জন নারীকে। যার মধ্যে অক্টোবর মাসে ১৮, নভেম্বর মাসে ৩৫ ও ডিসেম্বর মাসে ২৭ জন নারীকে জীবন দিতে হয় ।
ইভটিজিংয়ের ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন দলের সমর্থনপুষ্ট বখাটেদের উপস্থিতি লক্ষ্যনীয়।

আত্মহত্যা
সাম্প্রতিক সময়ে আত্মহত্যার সংখ্যা ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে। শুধু মে মাসে ৩৬ জন, জুনে ৪৯, জুলাই ৪২, আগস্টে ৪৪, সেপ্টেম্বর মাসে ৬৭, অক্টোবর মাসে ৪৬, নভেম্বর মাসে ৩৬ ও ডিসেম্বর মাসে ৩৯ জন আত্মহত্যা করেছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন দলের সমর্থনপুষ্ট বখাটেদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে তরুণীরা আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছে। এছাড়া ইভ টিজিং, পারিবারিক কলহ, ঋণের টাকা পরিশোধ করতে ব্যর্থ হওয়া অন্যতম কারণ বলে জানা গেছে।

চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই ও চাঁদাবাজি
২০১০ সালে সারাদেশে চুরি, ডাকাতি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে মোট ২২৬২টি। এসব ঘটনায় নিহত হয়েছে ২৮০ জন। আর আহত হয়েছে ২৮০৫ জন।

সড়ক দুর্ঘটনা
গত বছর সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে ৪৪৮১জন। যা গড়ে প্রতিদিন ১২ জনেরও বেশি। এসব ঘটনায় আহত হয়েছেন ১৫৫৬৯ জন অর্থাৎ প্রতিদিন গড়ে ৪২ জনেরও বেশি।

রিপোর্টটির বিস্তারিত পড়তে পারেন এখানে
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:১২
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×