১৬ ডিসেম্বর ২০১৪, রুগী নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করছি কয়েকটা টেস্টের জন্য। টেস্টগুলো একেবারেই আর্জেন্ট ছিলো কিন্তু বিজয় দিবস বলে বেশ কয়েকটা ডায়াগনিস্টিক সেন্টারে ঘুরেও সুবিধা করতে পারলাম না। একেবারে সকালেই বের হয়ে ১০ টা বেজে গেছে, টেস্টগুলো খালি পেটে করতে হবে বলে অসুস্থ রুগীকে সাথে নিয়েই দৌড়াতে হচ্ছে এক মেডিক্যাল থেকে অন্য মেডিকেলে। তখন একজন বুদ্ধি দিলো ইবনে সিনায় যেতে, এখানে টেস্টের রেজাল্ট তাড়াতাড়ি পাওয়া যাবে আবার সবার জন্য ২৫ % ডিসকাউন্ট দেয় তারা।
আমি ইবনে সিনা সম্পর্কে মোটামুটি জানতাম, জামায়াতের এই প্রতিষ্ঠানের বিজয় দিবস পালনের ঝামেলা নেই সুতরং ওখানে গেলে একমাত্র কাজ হতে পারে। ইবনে সিনার প্রধান প্রতিষ্ঠাতা হলেন বিখ্যাত রাজাকার মীর কাসেম আলী। সৌদির টাকায় একে একে গড়ে উঠে ইবনে সিনা হাসপাতাল, ইবনে সিনা ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ইবনে সিনা ওষুধ কোম্পানি, ইবনে সিনা মেডিক্যাল কলেজ। কিন্তু টেস্ট করে রিপোর্ট খুব তাড়াতাড়ি প্রয়োজন বলে অগত্যা চেতনার চেতাচেতি থামিয়ে বাধ্য হয়ে ধানমন্ডি ৯ এর ইবনে সিনায় গেলাম।
সেখানে যেয়ে শুনলাম আলহামদুলিল্লাহ্ তারা সবাইকে ২৫% ছাড় দেয়। এই ছাড় হচ্ছে জেনারেল ছাড় আর তাছাড়া আছে কর্পোরেট ছাড়ের ব্যবস্থা যেখানে ৩৫ থেকে ৬০ % পর্যন্ত ছাড় দিতে পারবে তারা। কর্পোরেট ছাড় সম্পর্কে একটু জানতে গিয়েই বুঝতে পারলাম ইসলামী ব্যাংক, নয়া দিগন্তর মতো জামাতি বেশকিছু কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের সাথে তাদের চুক্তি আছে আপনি যদি সেই কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করেন তাহলে প্রতিষ্ঠানের আইডি কার্ড দেখিয়ে চুক্তি মোতাবেক ৩৫ থেকে ৬০ % ছাড় পেতে পারেন। যেহেতু ঐ সব কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করতে হলে আপনাকে জামায়াত শিবির করতেই হবে তাই সোজাসুজি বলা যায় যে আপনি যদি জামায়াত শিবিরের লোক হন তাহলে আপনি এই ডিসকাউন্ট পাবেন।
বললাম, আমি তো ঐ সব প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করি না আপনি দেখেন ২৫ % ডিসকাউন্টে কতো টাকা লাগবে। HTSH, CORTISOL, ACTH এই তিনটি টেস্টে তারা আমাকে জানালো ২৫ % ডিসকাউন্ট দেবার পর টাকা লাগবে ২৯৪৬ টাকা। বললাম ঠিক আছে রিপোর্টটা আর্জেন্ট লাগবে কতো তাড়াতাড়ি আপনারা দিতে পারবেন? তারা আমাকে জানালো রাত হবে অর্থাৎ ৮/৯ ঘণ্টার মতো লাগবে রিপোর্ট দিতে। টাকাটা কোন ব্যপার ছিলো না কিন্তু রিপোর্টটা এতো আর্জেন্ট ছিলো যে ৯ ঘণ্টা পরে রিপোর্ট দিলে তা কোন কাজেই লাগবে না। অবশেষে জামায়াতের আখড়া থেকে চলে আসলাম টেস্ট না করিয়েই।
তারপর ধানমন্ডি ২ এর পপুলারে গেলাম আবার চেষ্টা করতে। ওখানে যেয়ে আলো দেখতে পেলাম, ওরা জানালো খুব আর্জেন্ট ভিত্তিতে ৩ ঘণ্টার মধ্যে এই রিপোর্টগুলা দিতে পারবে। আর হিসাব করে জানালো টাকা লাগবে ২৭৩০ টাকা। জিগ্যেস করলাম আপনারা কোন ছাড় দিচ্ছেন? তারা বললো না তো কোন ধরণের ছাড় নেই। অবশেষে পপুলারেই টেস্ট করি এবং ৩ ঘণ্টার মধ্যে রেজাল্ট পাই। আমি তখনও হিসাব মিলাতে চাইছিলাম যে ২৫ % ছাড় দেবার পর ২৯৪৬ টাকা আর কোন ছাড় না দিয়ে ২৭৩০ টাকা ক্যামনে কি?
আসলে জামায়াতি ব্রেইনে সব কিছুই সম্ভব, পরবর্তীতে আরেকটা টেস্ট সম্পর্কে আপনাদের ধারণা দিচ্ছি তাহলেই বুঝবেন জামায়াত কি জিনিষ। LAYER NOTE G.B. (বানানটা ভুল হতে পারে, ডাক্তার বন্ধুদের চোখে পড়লে সংশোধন করে দিবেন কাইন্ডলি) নামের একটি টেস্ট করতে ঢাকা মেডিক্যালে লাগে মাত্র ১৫০ টাকা। বেসরকারি যেকোনো মেডিক্যালে এই টেস্টটা করতে ৬০০ – ৮০০ টাকা লাগে আর ইবনে সিনাতে এই টেস্ট করতে লাগে ১২০০ টাকা। জি ভাই ভুল শুনেন নি ১২০০ টাকা, তাও আবার ২৫ % ডিসকাউন্টে নাকি ১২০০ টাকা।
দয়া করে ২৫ % ছাড় দেখে লাফ দিবেন না, আশেপাশে বিবেচনা করবেন। এরা ২৫ % বলে আপনার মতো সাধারণ মানুষকে প্রলুব্ধ করে পকেট কাটছে ওদিকে জামায়াত শিবিরের লোকদের ৩৫ থেকে ৬০ % ছাড় দিয়ে ঠিকই আবার উপকার করছে। এই হচ্ছে জামায়াত আর এই হচ্ছে ইবনে সিনা।