"অভিমানীর মান কে ভাঙাবে শুনি? সে তো যোজন ক্রোশ দুরে। আমি তাকে দেখতে পাইনা, শুনতে পাইনা তার হাসির শব্দ, ছুঁতে পারিনা তার হাত, বসতে পারিনা তার কাছে......দুরত্ব আর নেটওয়ার্ক যে কারো জনম শত্রু হতে পারে তা এই ক'দিনে ভালো বুঝেছি। কল্পনাতে আর কতো!! সত্যিকারের ভোর চাই আমার...চাই সত্যিকারের আলো, আর সত্যিকারের তোমার হাত। যার সপর্শ আমার গাল থেকে, স্নিগ্ধ সেই আলো সরিয়ে আমার ঘুম ভাঙাবে....আমি প্রান ভরে সূর্যোদয় দেখবো।
তোমার তো কত কিছুতেই অনীহা! তবে মানুষের ছবি তোলার অনীহা, সুন্দরী রমনীদের মুখ অনেকটাই দুর করতে পারে কিন্তু। সে অভিজ্ঞতা আমার আছে। মনে পরে, সেই অর্নবির এক বোন সিডনি থেকে এলো, আর আমাদের সাথে প্রভাত ফেরিতে গেলো? কয়েকবার একটু ঢংঢাং করে বললো, আর তুমি রেডি হয়ে গেলে মডেল ফটোশুটে....এতো রাগ হয়েছিল আমার! তোমরা ছেলেরা পারোও বটে!!
আমাদের গল্পের শুরুটাও কিন্তু হয়েছিল অর্নবিকে দিয়েই।স মনে পরে? কথায় কথায় পার্টি দেয়া এই মেয়ের একটা হবি বলা যায়। আর তাতে "আসব না" বলাটা ওর বন্ধুদের জন্য বিশাল এক অত্যাচার। তাই তোমার মতো ওকে অগ্রাহ্য করার সাহস আমারও ছিলনা। শীতের সেই রাতে বার বি কিউর আয়োজন ছিল ওর ছাদে। বিশাল বন্ধু সার্কেলের মোটামুটি সবাই উপস্থিত ছিল, সাথে তুমিও। তোমার কথা শুনেছিলাম অনেক। কিন্তু ছাদের কোনায় গিটার হাতে হ্যাপি আখন্দের "আবার এলো যে সন্ধ্যা..." গানটি গাওয়ার মানুষটি যে তুমি, তা একদম বুঝতে পারিনি। কি ভীষণ সুন্দর কন্ঠ তোমার! দেরি করে আসাতে পুরো গানটি আর অসাধারন গায়কের পরিচয় ভাগ্যে জোটেনি তখন আমার।
সেদিন আমিও পার পাইনি। গান শিখিনি কখনও এই পাগলী বান্ধবীটি তা জানে, তবু গাইতে হলো ওর নাছোড়বান্দা স্বভাবের জন্য। কেন জানি সেদিন ওতোটা গো ধরিনি, হয়তো মনটা একটু উদাস ছিল তাই। বেশ সাহস করেই রবীন্দ্রনাথের "তোমায় গান শোনাবো.." গানটা গেয়েছিলাম। মনে পরে? আনাড়ী কন্ঠ হঠাৎ ভালো গেয়েছিল, নাকি শীতের সুন্দর রাত,কারনটা কি ছিল ঠিক জানিনা...তবে গানটি সেদিন আমার মান রেখেছিল। খাওয়া দাওয়া শেষে সবাই যখন নিজেদের মতো করে সময় কাটাচ্ছিলো, তুমি তখন দুটি কফির মগ হাতে করে আমার ঠিক আমার সামনে এসে বসলে। একটা মগ আমার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে, অদ্ভুত এক গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললে," আচ্ছা, ওটা নন্দিনীর গান না?"
আর কোনও কথা হয়নি সেদিন। তবে বাকিটা জীবন যে তোমার বকর বকর শুনেই কাটিয়ে দিতে হবে তা জানি। কি ভীষণ বলতে পারো তুমি! যদিও তা তোমার ফটোগ্রাফি আর গান বিষয়ক। তবে বোঝো, কি ভীষণ কষ্ট হচ্ছে এখন আমার। জলাশয়ের কাছের মানুষের কি মরুভূমির রৌদ্র সহ্য হয়? কতোদিন তোমার প্রানখোলা হাসি শুনিনা! আজও হঠাৎ লাইনটা কেটে গেলো....কি যেন বলতে চাইলে। সেই কথা শোনার অপেক্ষায় কান পেতে রইলাম সারাটা রাত্রি। যদি তুমি আসো! ফিসফিস শব্দে কানে কানে কিছু বলো! ক্লান্ত আমার দু'চোখ নিভে আসে তোমার অপেক্ষায়...."
ইতি
"মেয়েটি"
পরবর্তী পোস্ট:
উড়ো চিঠি - ছয়
পূর্ববর্তী পোস্ট:
উড়ো চিঠি - চার
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে অক্টোবর, ২০১৬ সকাল ১১:৪৪

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




