somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিএনপির আসলে কতটুকু প্রয়োজন জামায়াতের ভোট- ২

২৩ শে জুলাই, ২০১৪ সকাল ১১:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গত পর্বে আমরা দেখলাম, জামায়াতের ভোটব্যাংকের এবং সেই ভোট উঠানামার হিসাব। এই পর্বে আমরা দেখব, বিএনপির ভোটে জামায়াতের অবদান কতটুকু?

২০০১ এর নির্বাচনের পূর্বে গঠিত হয় ৪ দলীয় ঐক্যজোট। দলগুলো হল বিএনপি, জামায়াত, বিজেপি ও ইসলামি ঐক্যজোট। এই জোট মোট ২১৪ টি আসনে জয়লাভ করে যেখানে-
বিএনপি- ১৯৩ জামায়াত- ১৭ বিজেপি- ২ এবং ইসলামি ঐক্যজোট- ২ টি আসন লাভ করে।
অন্যান্য বড় দলগুলোর মধ্যে আওয়ামীলিগ ৬২ টি ও জাতীয় পার্টি ১৮ টি আসন পায়।

কেউ কেউ ভাবতে পারেন, বিএনপির এই বিপুল বিজয়ে জামায়াতের ভাল ভুমিকা আছে। কিন্তু পরিসংখ্যান বলে ভিন্ন কথা। জামায়াতের ইতিহাসে সবচেয়ে ভাল নির্বাচনী ফলাফল ছিল ১৯৯১ এর নির্বাচনে। তাঁর পরবর্তী প্রতিটি জাতীয় নির্বাচনে তাদের ভোট ধারাবাহিকভাবে কমেছে। উল্টোদিকে বিএনপির ভোট প্রতি নির্বাচনে ধারাবাহিকভাবে বেড়েছে, শুধুমাত্র ২০০৮ এর ব্যতিক্রম ছাড়া।

১৯৯৬ এর নির্বাচনেই কেবল জামায়াত ৩০০ আসনে প্রার্থী দেয়। জয়লাভ করে মাত্র ৩ টি আসনে, পিরোজপুর- ১, নীলফামারী- ৩, সাতক্ষীরা- ২। ২০৭ টি আসনে জামায়াত মোট প্রদত্ত ভোটের ১০ শতাংশেরও কম পায়। বাকি ৯০ টি আসনে ১০% এর উপরে ভোট পায়। ২য় অথবা ৩য় স্থান লাভ করে ৬২ টি আসনে। সমগ্র বাংলাদেশে মোট প্রদত্ত ভোটের ৮.৬১% পায় জামায়াত, যা ২২২ আসন নিয়ে অংশ নেয়া ১৯৯১ সালের নির্বাচনে ছিল ১২.১৩%।
মজার বিষয় হচ্ছে, ১৯৯৬ এ জামায়াত যে ৯০ টি আসনে ১০% এর অধিক ভোট পেয়েছে, তাঁর ৬০ টিতে বিএনপি এবং ৩০ টিতে আওয়ামীলীগ বিজয়ী হয়েছিল। অর্থাৎ জামায়াতের ভোট মূলত বিএনপির প্রাধান্য থাকা এলাকাগুলোতেই বেশি, যেখানে বিএনপি জয়ী হতে পারে জামায়াতের সহযোগিতা ছাড়াই।

২য় অথবা ৩য় অবস্থানে থেকে জামায়াত ১০% ভোট পেয়েছে এমন আসন ছিল ৬২ টি। ২০০১ সালে ঐ ৬২ আসনের ৪৯ টিতে জয়লাভ করে ৪ দলীয় জোট। মনে হতে পারে, এই জয়ে জামায়াতের ভোটের ব্যাপক ভূমিকা আছে। কিন্তু বাস্তবতা হল ঐ ৬২ আসনের ৩০ টিতে আওয়ামীলীগ ৯১,৯৬,০১ এর কোন নির্বাচনেই জিততে পারেনি। ২২ টি আসনে ৩ নির্বাচনেই বিএনপি অথবা জামায়াতের প্রার্থীরা জয়লাভ করেছেন। ২২ টির বাইরে ১৫ টি আসনে ৯৬ এর নির্বাচনেই বিএনপি বা জামায়াতের প্রার্থীরা জয়লাভ করেছেন।

অর্থাৎ জামায়াতের সাথে জোট করে বিএনপির লাভ হয়েছে মাত্র ১২ টি আসন(৪৯-২২-১৫=১২)। ১৯৩ আসনের মধ্যে ১২ টি খুব বেশি নয়। এই আসনগুলোতেও জামায়াতের ভোটের কারণে নাকি বিএনপির জোয়ারের কারণে জয় এসেছে তা নিয়ে বিতর্ক হতেই পারে।

২০০৮ এর ভরাডুবির নির্বাচনে ঐ ৬২ টি আসনের মাত্র ১৫ টি রক্ষা করতে সক্ষম হয় ৪ দলীয় জোট। এ নির্বাচন প্রমান করেছে যে “জামায়াত অন্যান্য দলের মত না, তাদের নিজস্ব সলিড ভোটব্যাংক আছে”- এ ধারণাটি কত বড় ভুল। ঢাকা, বরিশাল ও সিলেট বিভাগে তাদের ভোট পাওয়ার হার খুবই নগণ্য। তবে জেলাওয়ারি জামায়াতের কিছু ভোট আছে। এর বাইরেও কিছু জেলাতে তাদের ছাত্রসংগঠন ইসলামি ছাত্রশিবিরের শক্ত অবস্থান আছে, যেমনঃ রংপুর, কুমিল্লা, সিলেট, কুষ্টিয়া। জামায়াতের শক্ত ঘাঁটিগুলোর মধ্যে রয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ, পিরোজপুর, নীলফামারী, সাতক্ষীরা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, গাইবান্ধা, বগুড়া, খুলনা। এর বাইরে সেই অর্থে জামায়াতের ভোটব্যাংক নেই।

গত বছর অনুষ্ঠিত ৫ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থীরা ৫৭% করে ভোট পেয়েছেন, যার ভেতরে গাজীপুর ও বরিশাল সিটিতে জামায়াতের ভোট খুবই কম। জামায়াতের ভোট ১৫% করে ধরলেও বিএনপির ৪২% ভোট থাকে যা ২০০১ এ প্রাপ্ত ভোটের চেয়ে বেশি।

অনেকে হয়ত বলবেন, সাম্প্রতিক উপজেলা নির্বাচনে জামায়াতের আশাতীত ভাল ফলাফলের কথা( বিশেষ করে ভাইস চেয়ারম্যান পদে)।
আমার নিজের জেলা চাঁদপুরের (যেখানে জামায়াতের বেইল নাই!) সদর উপজেলা নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান পদে জামায়াতের প্রার্থী বিজয়ী হওয়ার কারণ খুজতে গিয়ে জানলাম বিএনপির প্রার্থী ছিল সর্বজনস্বীকৃত অসৎ এবং দুর্নীতিবাজ। একারনেই মানুষ তাকে ভোট দেয় নাই। এখন যেখানে থাকি, অর্থাৎ সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার নির্বাচনে জামায়াতের প্রার্থীর ৪ কোটি টাকা খরচ করে বিজয়ী হওয়ার কথা শুনলাম, যা রীতিমত অবিশ্বাস্য। এছাড়াও ব্যাপকভাবে ধর্মের ব্যাবহারের বিষয়টি তো রয়েছেই।

সবশেষে কোটি জাতীয়তাবাদীর আশা, জামায়াতকে ব্যাবহার করে ছুড়ে ফেলা হবে। সৌদি আরবে তারেক জিয়ার সাথে মাসুদ সাইদির ছবি হয়তো সেই আশায় জল ঢেলে দেয়। কিন্তু আশা ছাড়ি না, কারণ “মানুষ বাঁচে আশায় আর দেশ বাঁচে ভালবাসায়”।

বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ জিন্দাবাদ।।
জাতীয়তাবাদী বাংলাদেশ জিন্দাবাদ।।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×