তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি সহমর্মিতা আছে এমন সহব্লগার আমাকে অনেক ধরনের তীর্যক মন্তব্য করেছেন। আমি এই ধরনের মন্তব্য সবসময় উপভোগ করি, যদি না সেটা নোংরা ভাষায় না হয়। আজকে আবারোও বলছি, বিএনপি'র নেতৃত্ব শূন্যতার জন্যই আওয়ামীলীগ অনেকগুলি অপকর্ম ও জাতির স্বার্থ বহির্ভূত কাজ করে পার পেয়ে যাচ্ছে। সরকারকে সব সময় সঠিক পথে রাখার জন্য বিরোধী দলের ভূমিকা অপরিসীম। একমাত্র নেতৃত্ব সংকটের কারণেই বিএনপি আওয়ামীলীগকে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারছে না। এর জন্য আওয়ামীলীগ যেমন প্রায়ই জাতির স্বার্থ বিবর্জিত কাজ করে যাচ্ছে, ঠিক তেমনি বিএনপিও বিপুল জন সমর্থিত পার্টি হয়েও ক্ষমতায় যেতে পারছে না!
সঠিক নেতৃত্ব ও গাইডলাইন না থাকলে যেখানে একটি পরিবারই ঠিক থাকে না সেখানে এমন বৃহৎ রাজনৈতিক দল ঠিক থাকবে কিভাবে? দড়ি ছাড়া গরু যেমন অনেক উটকো ঝামেলা সৃষ্টি করে ঠিক তেমনি বিএনপিও নেতৃত্ব শূন্যতার কারণে অহেতুক ঝামেলায় পড়ে।
তারেক জিয়া যখন বেগম জিয়া জেলে যাওয়ার পরে দলের নেতৃত্ব নেয় তারপর থেকেই বিএনপি দেশের রাজনীতি থেকে একটু একটু করে ছিটকে গিয়েছে। দলীয় প্রধানের ইমেজ দলকে যেমন শক্তিশালী করে ঠিক তেমনি বহির্বিশ্বেও একটি গ্রহণযোগ্যতা তৈরি করে। আজকে আপনি যদি বিএনপিকে কোন পরামর্শ দিতে চান তাহলে কিভাবে দেবেন। দেশের কোনো বুদ্ধিজীবী, রাজনৈতিক বিশ্লেষক, সাংবাদিক এমনকি জেলা পর্যায়ে তাদের রাজনৈতিক কর্মী যদি কোন পরামর্শ নিয়ে ঢাকায় আসে কিভাবে তারা সেগুলো নিয়ে আলাপ করবে? কেউ যদি তাদের দলীয় প্রধানের সাথে একান্ত সাক্ষাৎ করতে চায়, সে কিভাবে করবে, হোয়াটসঅ্যাপে? এ ধরনের যোগাযোগ কি নিরাপদ যোগাযোগ? কখনোই না। যার জন্য ডিসিশন মেকিংয়ে বিএনপি'র অনেক অসামঞ্জস্যতা থাকে। আর এসবের ভুক্তভোগী নিজ দলের কর্মীরা ও সাধারণ জনগণ।
দেশের মানুষের কথা বাদ দিলাম, একজন বিদেশী কূটনৈতিক সাংবাদিক যদি তারেক জিয়ার সাথে দেখা করতে চায় তাহলে কিভাবে করবে? এমনকি অনেক দেশী বিদেশী সাংবাদিক তার কাছে বারবার রিকোয়েস্ট করেও তার একটি বক্তব্য নিতে পারছে না। দেশের চলমান রাজনৈতিক সংকট নিয়ে তার বিশ্ব নেতাদের আকর্ষিত করে জোরালো কোন বক্তব্য নেই। এবারের নির্বাচনে আমেরিকা ও ইউরোপ যেভাবে ফোকাস রেখেছিল এই সুযোগটা শুধুমাত্র নেতৃত্বের দুর্বলতার কারণে বিএনপি নিতে পারেনি। আপনার সাথে বসে কফি খেয়ে কথা বললে, আপনার কাছ থেকে রাজনৈতিক পরিকল্পনা শুনলে, তখনই আপনার ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে অন্যরা ধারণা করতে পারবে। তারেক জিয়া বিদেশি কূটনৈতিক, সাংবাদিক এবং বিশ্ব নেতাদেরকে এ ধরনের কোনো সুযোগ দেয় না, নেয়ও না। এমনকি সারা বিশ্বে চলমান ইস্যুতে তার কোন জোরালো বক্তব্য ও অবস্থান দেখা যায় না। এগুলি থাকলে তার সম্পর্কে ইউরোপ, আমেরিকার ও বিশ্বের রাজনৈতিক স্টেক হোল্ডারদের ধারণা থাকতো।
যাইহোক সময়ের সাথে সাথে মানুষের রাজনৈতিক পরিপক্কতা বৃদ্ধি পায়। তারেক জিয়ার ক্ষেত্রে তেমনটি দেখা যাচ্ছে না। এতবড় একটি দলকে শুধুমাত্র নেতৃত্বের কারণে দীর্ঘ সময় ক্ষমতার বাইরে থাকতে হচ্ছে। তাদের জন্য ক্ষমতায় থাকা দলটি প্রায়ই বেপরোয়া আচরণ করে। এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার উচিত নিজেকে আরো উন্মুক্ত করে দেওয়া। নিজের রাজনৈতিক প্রজ্ঞা সম্পর্কে জানান দেওয়া। সে যদি এমনটি না করে, তাহলে মানুষ তার সম্পর্কে জানতে পূর্বের ও এখনকার মিডিয়া আর পত্র-পত্রিকার দ্বারস্থ হবে।
আর সেগুলি থেকে যদি তার সম্পর্কে কেউ জানে তাহলে এক বাক্যে বলে উঠবে “ওহ মই গড! হি ইজ টোটালি রং হেডেড!”